Atrayee Sarkar

Romance Others

3  

Atrayee Sarkar

Romance Others

অলৌকিক ভালবাসা

অলৌকিক ভালবাসা

24 mins
262


জীবনের পথে চলতে চলতে

কখনও লাগে পায়ে কাঁটা 

কখনও চলি ফুলের ওপর দিয়ে

যেই ফোটে পায়ে কাঁটা 

তখনই যন্ত্রণায় কাঁদতে থাকি 

যখন ফুলের মধ্যে হারিয়ে যাই

তখন মুখটা হাসিতে ভরে ওঠে


জীবন যাত্রায় কখন কি হবে, আমাদের কাছে সবসময়ই থাকে অজানা। কখনও মনে হয়, কিছু ফেলে এসেছি, কখনও পাই নতুন কিছু।

 অনেক কথা বলে ফেললাম,,, কিন্তু দেবযানী আর রুদ্রর কথাই বলিনি এখনও। চলুন শুনি।


২০১৯ সালে দেবযানী বাঙ্গালোরে চাকরি করতে গেছিল। ২৫০০০ টাকার চাকরি,,, দূরে হলেও না করা যায় না ।

প্রথমে দেবযানী একটা মেসে ওঠে।

অফিসে প্রথম দিন গিয়ে আলাপ হয় বহু কলিগ, বস ও সিনিয়ারদের সাথে।

ধীরে ধীরে কিছু মেয়ে কলিগের সাথে দেবযানীর বন্ধুত্বও হয় যায়। তাদের ই মাধ্যমে ১ মাস বাদে দেবযানী জানতে পারে একটা এপার্টমেন্টে একজন তাঁর একটা ফ্ল্যাট ভাড়া দিচ্ছে ,,,যেটার ভাড়া অনেকটা কম।

দেবযানী অফিস থেকে বাড়ি ফেরার সময় ওখানে যায় ।

-" নমস্কার, আমি দেবযানী রায়। আমি শুনলাম যে আপনি এখানে আপনার একটা ফ্ল্যাট ভাড়া দিচ্ছেন, তাই আমি এসছিলাম। এই বাড়িটার ভাড়া কতো?"

বাড়িওয়ালা-" এই ফ্ল্যাটটা কালই একজন ভাড়া নিয়েছে। আপনাকে আমি আর ভাড়া দিতে পারব না।"

শুনে, দেবযানীর মনটাই ভেঙ্গে গেল। অনেক আশা নিয়ে ও এসছিল, যে কম ভাড়ায় একটা ফ্ল্যাটে থাকবে। কিন্তু আশাটা যেন নিরাশা হয়ে গেল ।

--" এখানে আর কি কেউ ভাড়া দেয়না??"

দেবযানীর কথা শেষ হওয়ার আগেই শুনল কে বলছে " ফ্ল্যাটের চাবিটা দিন না।"

পেছন ফিরে তাকিয়ে,, দেবযানী দেখে রুদ্র সেন দাড়িয়ে আছে ।

   রুদ্র সেন দেবযানীর কম্পানির ই একজন কলিগ আর রুদ্রর সাথে দেবযানীর সবসময়ই কথা কাটাকাটি হত।

রুদ্রর বয়স ২৮

দেবযানীর তখন ২৬ বছর বয়স ।

দেবযানী, রুদ্রর দিকে তাকিয়ে ছিল কিছুক্ষণ তারপরেই কিরকম বিরক্তর রূপে চলে যাচ্ছিল। যার মাধ্যমে বোঝাই যায়, দেবযানী জেন মনে মনে ভাবছিল "বিরক্তিকর। খালি আমার সাথে বদমাইসি করতে আসবে। কি যায় আসে আমার? বন্ধুদের মাধ্যমে অন্য কোথাও ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে নেব। আমার পেছনে লেগে, এই ছেলেটা যে কি আনন্দ পায় কে যানে। মরগে যা।"

সবকিছু ভেবে যখন দেবযানী চলে যাচ্ছিল, হঠাত ও শুনল রুদ্র ওকে দাঁড়াতে বলছে।

" তুমি কি এখানে থাকতে পারবে দেবযানী?? দুটো রুম আছে ।"

রুদ্রর এই কথা শুনে দেবযানীর রুদ্রর দিকে চুপ করে তাকিয়ে ছিল।

কথাটা এতোটাই অদ্ভুত ছিল দেবযানীর কাছে, যে ও কোন উত্তর ই খুঁজে পাচ্ছিল না। যে কলিগটার সাথে ওর একটু রাগারাগি থাকে, আজ সে সাহায্য করবে বলছে? সূর্য কি আজ পশ্চিম দিকে উঠল নাকি??দেবযানীর মন যেন উথাল পাতাল করছিল। প্রশ্নের পর প্রশ্ন ওর মনে জেগে উঠছিল। এ কি আবার কোন বদমাইসি করতে চায় নাকি? নাকি, সত্যিই হেল্প করতে চাইছে?

একজন ছেলের সাথে থাকবই বা কি করে? লোকের তো কাজই হচ্ছে যা নয় তাই বলা।

এরই মাঝে রুদ্র বলে ওঠে--" কি হল বলবে তো? নাকি সারাক্ষণ ভাবতে থাকবে? তোমার ভাবনার তো কোন শেষ নেই। ।"

মনে মনে দেবযানী বলছিল " যেই ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকব ঠিক করলাম, সেটা তো নিয়েই নিয়েছে, আর মেজাজ দেখাচ্ছে,, দেখ, যেন নিজের ফ্ল্যাটে থাকতে দিচ্ছে আমায়। মরণ।

কিন্তু কিছু করারও নেই ।

দেবযানী ভাবতে থাকল এখন কোথায় ভাড়া বাড়ি খুঁজব? যাক গেয়ে হ্যা ই বলে দি।

দেবযানী--" আপনার যদি অসুবিধা না হয়,, তাহলে থাকতে পারব। ভাড়ার টাকা ও দেব। "

রুদ্র--" ঠিক আছে, কাল আপনার সবকিছু নিয়ে চলে আসুন ।"

সেদিন রাতে মেসে ফিরতে ফিরতে দেবযানী ভাবছিল " আমার কপালটাই পোড়া। ওর সাথেই থাকতে হবে, যাকে আমার সহ্য হয় না। ভগবানের যে এ কি খেলা কে জানে।"

পরেরদিন অফিস থেকে ফিরে,, নিজের সবকিছু নিয়ে দেবযানী ওই ফ্ল্যাটটাতেই চলে আসে ।

বাড়িতে ঢোকার পর,, দেবযানী ওর মাকে ফোন করে ।

দেবযানী--" মা কেমন আছো?"

--" ভালো । মেসে ঠিক আছিস তুই? "

দেবযানী--" মা আমি একটা ভাড়া ফ্ল্যাটে ঢুকেছি,,, কিন্তু,,"

দেবযানীর কথা শেষ হওয়ার আগেই অরুণিমাদেবী,বলে ওঠেন- "ভালো তো,, আবার কিন্তুর কি হয়েছে??"

দেবযানীর মায়ের নাম ছিল অরুণিমা রায়

দেবযানী--" মা,, আসলে,,,"

দেবযানীকে আমতা আমতা করে কথা বলছে শুনে অরুণিমাদেবী জিজ্ঞেস করেন--" কি হয়েছে? সবকিছু খুলে বল না। এরম আজেবাজে ভাবে কথা বলছিস কেন? মাকে পরিষ্কার করে সব কথা বলতে পারছিস না?

দেবযানী--" মা, আসলে এখানে কাউকে তো চিনিও না। যে ফ্ল্যাটটা ভাড়া নেব ভেবেছিলাম ওটা আমার অফিসের একজন কলিগ ভাড়া নিয়ে নিয়েছেন,,

--" মানে?? তাহলে তুই এখন কোথায় আছিস??"

--" তোমার এই একটা অভ্যাস,, পুরো কথাটা বলতে দেবে না।"

--" তা, বলছিস তো না। আমার মাথাটা গুলিয়ে পাক করছিস। একবার বললি ফ্ল্যাটে আছিস আর এখন বলছিস, ফ্ল্যাটটা অন্য একজন ভাড়া নিয়ে নিয়েছেন। তোর মাথাটা আজও কাজ করে না।"

--" তোমার কথাটা শেষ হয়েছে? না আরও কিছু বলবে?"

--" স্পষ্ট করে সবকিছু বল।"

মা ও একজন ছেলে,, কিন্তু খুবই ভাল। উনিই বলেছেন, এখানে দুটো ঘর আছে,, আমি থাকতে পারি। এখন আমি আর এখানে কোথায় ঘর খুঁজব? আর ফ্ল্যাটটাও অফিসের কাছাকাছি। আমি তাই এই ফ্ল্যাটটাতেই এসেছি থাকতে।"

অরুণিমাদেবী সবকিছু শুনে একটু খারাপ লাগছিল, দেবযানী একজন অবিবাহিত পুরুষের সাথে থাকছে । কিন্তু ব্যাঙ্গালোর একটা অজানা জায়গা,, সেখানে দেবযানীর পক্ষে আরো ভাড়া বাড়ি খোঁজা,, সত্যি অসম্ভব। মেসে থাকার চেয়ে এখানে থাকা তাও ভালো । ওনার গলাটা যেন কেমন শুকিয়ে যাচ্ছিল। সবকিছু ভেবে উনি আস্তে আস্তে বললেন--" ঠিক আছে থাক,, কিন্তু সবসময় নিজের ঘরে থাকবি। ওর ধারে কাছে যাবি না। তুই বাচ্ছা নস,, যে আমায় সবকিছু তোকে বলতে হবে। বি কেয়ারফুল। "

--" সেটা আমি ঠিক করে নিয়েছি মা। ওর কাছাকাছি আমি যাবই না। তবে তোমায় না বলে শান্তি পাচ্ছিলামনা। "

অরুণিমাদেবী--" যা খেয়ে নিয়ে এবার ঘুমিয়ে পর। কাল তো অফিস আছে।"

দেবযানী--" হমম্ । Goodnight মা।"

--" Goodnight মনা। ভাল থাকিস। "

মায়ের কথায় দেবযানী মনে জোর পেয়ে, শান্তিতে খেয়ে শুয়ে পরে।

পরের দিন দেবযানী উঠে বাথরুম খুঁজছিল। কিন্তু কোথায় দেখতে না পেয়ে বলে ওঠে--" একি?? বাথরুম কোথায়?? এ আবার কিরকম বাড়ি? বাথরুম নেই? "

--" বাথরুম নেই এমন কোন বাড়ি থাকতে পারে? ভাবতেও পার বটে।"

দেবযানী--" কোথায় বলবে তো রুদ্র?? "

--"আমার ঘরে attached। কিছু করার নেই। এটাই ইউস করতে হবে। এটা তো আমার বাড়ি নয়।"

দেবযানীর মনে ভাসছিল " যত আমার একে অপছন্দ,, তত এর সাথে আমায় চুপ করে adjust করতে হবে। দূর, বিরক্তিকর।"

রুদ্র--" মনে মনে যে আমায় গালি গালাজ দিচ্ছ বুঝতেই পারছি। কিন্তু কোন উপায় নেই, বাড়িটা আমার নয়।

রাগ না দেখিয়ে,,,দেখে নাও কটা বাজে। "

--" আমি মোটেও গালাগাল মারছি না। কিন্তু আমি যখন বাথরুমে যাব, আপনাকে আপনার ঘর থেকে বেরোতে হবে। এইটুকু তো আমি আপনার থেকে এক্সপেক্ট করতে পারি? যে আপনি cooperade ? "

--" আমি তো বলিনি, আমি cooperade করব না। অবভিয়াসলি আমি ঘর থেকে বেরিয়ে যাব।"

--" রাতে দরকার পরলেও, করবেন তো?"

--" হ্যা।"

--" থাঙ্কস রুদ্র।

কিন্তু সময় দেখাতে আমায় হবে না। আমি জানি কটা বাজে। আমি টিফিন করে নিয়ে নিয়েছি এমনকি ব্যাগ ও গোছান হয়ে গেছে। স্নান করে, ব্রেকফাস্ট করেই আমি চলে যাব অফিসে। আমি লেট কখন করি না।"

--" It's okay দেবযানী। আমায় এতো বলার দরকার নেই। গেট রেডি। "

দেবযানীর মনে মনে ভাবছিল" নিজেকে কি মনে করে কে যানে, রুদ্র? অফিসের সি ই ও যেন। দূর, মরগে যা। ওর জন্য ভেবে সময় নষ্ট করার কোন মানে হয় না।"

দেবযানী আর রুদ্র, দুজনকেই ৮ টার মধ্যে অফিসে যেতে হত। তাই রোজ সকাল ৬:৩০ এ উঠে দুজনে নিজেরাই ব্রেকফাস্ট খেয়ে আর টিফিন বানিয়ে নিয়ে চলে যেত।

ফ্ল্যাটের ভাড়া ছিল ১৪০০০ টাকা।

দেবযানী, ৬০০০ টাকা দিত আর রুদ্র ৮০০০ টাকা।

এইভাবেই দিন কেটে যাচ্ছিল। ওরা দুজনেই ফর্মালি থাকত।

কিন্তু ২০২০ সালে যে এরম একটা রোগ আসবে কে জানত।

২০২০ সাল থেকে সকলের work from home হয়ে গেল।

ঘরের মধ্যে থেকেই দেবযানী আর রুদ্র ল্যাপটপে কাজ করতে থাকত।

রবিবার ছিল সেদিন, আর ২০২২ এর জানুয়ারি মাস।

 দেবযানীর গান খুব প্রিয় ছিল।

সেদিন দেবযানী গান গাইছিল--" এলো যে শীতের বেলা,, এল যে শীতের বেলা, বরষ পরে,,,

রুদ্র--" উফ! এই চুপ কর তো।

শীতকাল এসছে বলে কি আনন্দ। জ্যাকেট পড়ে থাকতে হচ্ছে, লেপ, কম্বল নিতে হচ্ছে,, আর ইনার কি আনন্দ। অন্য কোথাও গিয়ে আনন্দে নাচ। জঘন্য লাগে আমার শীতকাল। "

--" ইস!! তোমার মতন আনরোম্যানটিক বোধহয় আর কেউ হয় না, রুদ্র।

এটা,, কবিগুরুর একটা গান,, যা সকলের প্রিয়। শীতকালেরই গান এটা। কবিগুরুর গান কেও শ্রদ্ধা করতে যান না।"

রুদ্র--" নাও,, শুরু হয়ে গেল লেকচার।"

--" আমি লেকচার মারছি?? কবিগুরুর গান সকলের আজও প্রচন্ড প্রিয়। হিন্দি গানের চেয়েও বেশি। "

-- তোমার ভাট বকা বন্ধ হয়ে গেলে, তোমায় বলে দি,, যারা গিটার বাজায়,, তাদের মনের মধ্যেও গানের সুর বাজে।"

--" মানে তুমি আনন্দের সাথে গিটার বাজাতে পারবে আর আমি রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইতে পারব না??"

--" আমি তো, সেটা বলিনি।

অন্য কোথাও গিয়ে গাও।"

--" কেন??? এটা তোমার মামারবাড়ি?? যে,, যা তুমি করতে বলবে আমায় মুখ বুজে তাই ই করতে হবে??"

রুদ্র--" উফ!! তোমার মতন ঝগড়ুটে বোধহয় আর কেউ নেই, এ পৃথিবীতে।

দোহাই তোমার,, রবিবার দিন, শান্তিতে একটু কাগজ পড়তে দাও। চেঁচামেচি করার আমার কোন ইচ্ছে নেই। অসহ্যকর।"

 - " সত্যিই অসহ্যকর হয়ে গেছে তোমার behaviour এখন। যা পার তাই বলতে থাক।

গান শুনলে যদি তোমার বাজে লাগে,, তাহলে কানে তুল গুজে রাখ।"।

--" কি করলে তুমি একটু চুপ করবে দেবযানী,,বলতে পার??"

দেবযানী--" তোমার নিজের যা মনে হয় তাই কর। আমি অন্য কোথাও ই চলে যাচ্ছি। বিরক্তিকর। একা থাক। "

--" As You Wish। "

দেবযানী চলে যাওয়ার পরই,, রুদ্র দেখে ওর প্রিয় বন্ধু মিহির ফোন করেছে।

--" মিহির,,, কিরে কেমন আছিস?? আর কবে বিয়ে করতে চলেছিস সুমি কে?"

মিহির, সুমি, রুদ্র, একই কলেজে পড়ত। ওখানেই,, সুমির সাথে বন্ধুত্ব হয় মিহিরের। আর তারপর সেই বন্ধুত্ব নদীর মতন গড়াতে গড়াতে, ভালবাসার দিকে চলে যায়। মিহিরের সাথে সুমির বিয়ে হবে ঠিক ই হয়ে গেছিল।

মিহির বলল--" তোর মতন ই আছি। কাজের পর কাজ। "

--" ফালতু কথা বলিস না। আমি জানি তুই সুমির সাথে রোজ ফোনে ভিডিও কলিঙ করে গল্প করিস। বল কবে বিয়ে ঠিক হল?"

মিহির অল্প হাসতে হাসতে বলে--" তুই সবসময়,, আমার মনের কথা পড়ে নিশ।"

রুদ্র--" টেলিপ্যাথি। "

মিহির--" জানুয়ারির ২৮ তারিখ। "

--" রিয়ালি?? আমি তো যাব ই।"

মিহির--" তুই কেমন আছিস, রুদ্র? "

--" ৫০% মরে গেছি, ৫০% বেঁচে আছি??"

মিহির--" এসব কি আলফাল বকছিস??"

--" আর কি বলব তোকে। একটা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছি, একদিন দেখি আমার ই অফিসের একজন মেয়ে কলিগ এসে ওই ফ্ল্যাটটাই ভাড়া নেওয়ার কথা বলছে। আমি এই ফ্ল্যাটটা ভাড়া নিয়েছি শুনে মুখ গোমরা করে চলে যাচ্ছিল। ফ্ল্যাটে দুটো রুম আছে। একা একা তো থাকতে পারব না, তাই ওকে বললাম, যদি অসুবিধা না হয় থাকতে পারে। আর ভাবলাম মেয়ে তো, সত্যিই,, কোথায় ভাড়া বাড়ি খুঁজবে এখন।

দিয়ে যে নিজের পায়ে নিজে কুরুল মারছি তো জানতাম না।"

--" মানে?? কি অসুবিধা হয়েছে ওর সাথে?"

--" প্রচন্ড ভালবাসে চেঁচামেচি করতে। নিয়ে আমার কানের মাথা খায়।"

--" কি নিয়ে তোর সাথে মেয়েটার অশান্তি হয়?"

--" বারান্দায় বসে খবরের কাগজ পড়ছি আর ওর এখনই গান গাওয়ার ইচ্ছে জাগল। কানের সামনে গান গাইতে লাগল। গান গাইলে কাগজ পড়া যায়?"

--" ব্যাস, এইটুকুই? গান নিয়ে ঝগড়া?"

--" আরে না। বিরিয়ানি খেতে ভালবাসি,, তাই আনতে চাই,, চেচাতে থাকবে, বিরিয়ানি খাবে না।

রেগে গিয়ে বলে ফেলেছিলাম এটা তোমার বাড়ি,, ওমনি, বলে উঠল আমিও ভাড়ার টাকা দি, আমার ও তাই। সাপ ফোঁস করলে যেমন হয়।

  শীতের সময় বেশ গরম জলে তোমার স্নান করা উচিত, মোজা পড়, লেপ নাও,,বকেই যাবে। আর ও যা বলবে আমায় তাই করতে হবে। তখন রাগ উঠে যায়। চেঁচামেচি শুরু হয়ে যায়, তোমার যা ইচ্ছে আমায় তাই ই করতে হবে।

এবার সাঁপ তো ছবল মারবেই।"

মিহির--" যাকে তুই সাঁপ বলে অপমান করছিস,, আমার তো তাকে খুবই ভাল মানুষ লাগছে।"

--" বা,,বা। হঠাত কি হল তোর??"

--" রুদ্র, তুই যে ওর এত তিরস্কার করছিস,, তুই একবার ও ভেবে দেখেছিস, ও তোর কত খেয়াল রাখে??

কোন খাবারটা তোর খাওয়া ঠিক নয়, ও সেটা দেখে,, তুই গরম জলে স্নান করলে তোর শরীর ভাল থাকবে বলে ও চেঁচামেচি করে,, মোজা পড়লে, তোর ঠান্ডা লাগবে না,, এটাও ভাবে।

একই ঘরে থেকে,, কার সাথে বেশি ঝগড়া হয় জানিস?? যে খুব আপন হয়।

পরের সাথে তো কথাই বলি না আমরা। নিজের মনকে প্রশ্ন করে দেখ,, তোর মন কি চায়। রাখি রে। বাই। ভাল থাকিস। "

-" বাই, মিহির। তুই ও ভাল থাকিস। "

মিহিরের কথা শুনে রুদ্রর মন যেন কোথায় হারিয়ে গেছিল। সমুদ্রের মধ্যে ডুবে গেছে মনে হচ্ছিল। ভাবছিল " সত্যিই তো ওর সাথে এত কেন আমি ঝগড়া করি??"

রুদ্রর সাথে ঝগড়া হওয়ার জন্য দেবযানীর মন ভেঙ্গে গেছিল। দেবযানী পরেরদিন তাই নিজের মাকে ফোন করে

--" মা,, কেমন আছ?"

অরুণিমাদেবী--" বেঁচে আছি।"

--" এইরম ভাবে কথা বলছ কেন? কোন কিছু হয়েছে??"

--" না রে মনা, কিছু হয়নি। তবে,, তুই চলে গেছিস,, তাই খুব একা একা লাগে।"

--" আমারও খুব একা লাগে জান মা। কাউকে পাই না, যার সাথে একটু গল্প করতে পারব। "

--" কি হয়েছে?? তোর গলাটা এরম কাঁদ কাঁদ লাগছে কেন??"

--" কিছু না, মা। মা, বাবাকে ছাড়া আমার কি আনন্দ লাগতে পারে??"

--" সত্যি কথা বল। লুকবি না কিছু।"

--" কালকে,,একটু গান গাইছিলাম বারান্দায় গিয়ে,, রুদ্র, যা নয় তাই বলে দিল। ওর যেন মনে হয় আনন্দ লাগে আমায় আঘাত দিতে। দিক। নিজেও একদিন এরম উত্তর পাবে।"

--" ওর সামনে গিয়ে কেন গাইছিলিস??"

--" না,,, আসলে, বারান্দায় রোদ এসেছিল, তাই গেছিলাম। ওর সামনে নয়।"

--" গেছিলিস,, তো রোদের মধ্যে একটু থেকে চলে আসতিস। ওইখানেই তোর মনে হল গান গাই? ঘরে এসেও তো গাইতে পারতিস?

জানিস তো রুদ্র আর তোর মন এক কথা ভাবে না। তুই ডান দিকে গেলে, ও বাঁদিকে যায়, আর তুই দক্ষিণ দিকে গেলে ও উত্তর দিকে যাবেই।

এত বছরেও তোদের ঝগড়া করা আর শেষ হল না। যখন জানিসই, ওর সাথে তোর বনে না,, তুই ওর ধারে কাছে যাবি না। এত বড় হয়ে গিয়েও, তোর মগজে বুদ্ধি এল না। এখনও আমায় বোঝাতে হয়।

যেটা বললাম, সেটাই করবি।"

--" হ্যা মা। তাই ই করব।"

দেবযানী,, এরপর থেকে রুদ্রর সাথে সেরম আর কথাই বলত না।

দেবযানী আর রুদ্র নিজেরাই নিজেদের রাতের খাবার বানিয়ে নিত।

 রুদ্র রাতে , শুধু বায়রে একটা দোকান থেকে রুটি কিনে আনত ।

একদিন রুদ্র দেখে, দোকানটা বন্ধ । সেটা দেখে ওর মন খারাপ হয়ে যায় ।

দেবযানীর খাওয়াই হয়ে গেছিল।

রুদ্রকে মনমরা অবস্থায় দেখে দেবযানীর অবাক লাগে।

বলে ওঠে-" এরম মন মরা হয়ে বসে থাকার কারণ কি আমি জানতে পারি??"

রুদ্র--" কি করবে তুমি শুনে? তুমি তোমার মতন থাক।"

দেবযানী--" বা,,,বা। কথা বার্তার ছিড়ি দেখ না। বেশ বলতে হবে না।"

রুদ্র--" রাগারাগি কোর না প্লিজ, দেবযানী। রুটির দোকানটা বন্ধ হয়ে গেছে আর রাতে আমার ভাত খেতে ইচ্ছেই করে না।"

দেবযানী--" জানোই তো একটা বিচ্ছিরি রোগ এসছে, রাত ৯:০০ অব্দি কে দোকান খোলা রাখবে? একটু আগে আনতে পারলে না।"

--" তোমার কথাটা শুনে আমার খুব হাসি পাচ্ছে জান? "

দেবযানী--" What??

সত্যি কথা বল রুদ্র। আসলে যখন তুমি বুঝতে  পেরেছ তুমি বোকাম করেছ, আর আমি সেটা বুঝে গেছি,, বলে তোমার গা জ্বলছে। কারণ হাস্যকর কিছু কথাই আমি বলিনি আমি।"

রুদ্র--" তুমি আর কোন জন্মে হাস্যকর কথা বল? পায়ের ওপর পা দিয়ে ঝগড়া করতেই তোমার ভাল লাগে। "

দেবযানী--" অশান্তিটা নিজে করছ। হাসার কি হল??"

রুদ্র--" ওই যে বললে,, একটা রোগ এসেছে। রোগ কি অতিথি নাকি? যে আসবে আর চলে যাবে। করোনা হচ্ছে মারাত্মক ভয়ংকর ভাইরাস, যেটা খুব বাজে ভাবে ছড়িয়ে গেছে পুরো পৃথিবীতে আর ২০২২ সালেও এর কোন ট্রিটমেন্ট বেড়য়নি। রোগটা হলেই তাই মারা যাচ্ছে মানুষ।"

দেবযানী--" খাবে তো শুধু, রুটি। এতো বচন দেওয়ার কি আছে?"

রুদ্র--" আমার এখন আটা মেখে রুটি করতে ইচ্ছে করছে না। আমি পাউরুটি খেয়ে শুয়ে পড়ব।"

দেবযানী--" রাত্রিবেলা তুমি পাউরুটি খাবে? তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে? আটা মেখে রুটি করতে পর্যন্ত পারছ না??"

রুদ্র--" এই থামত। আমার আর চেঁচামেচি ভাল লাগছে না। খেয়ে, শুতে দাও। আই এম টায়ার্ড। "

দেবযানী--" কি অলস মাইরি। এই সর, সর এখান থেকে। পাউরুটির প্যাকেট খুলবে না।"

রুদ্র বিরক্ত হয়ে উঠে চেঁচিয়ে বলে--"মানে??তাহলে কি আমি তোমার মাথা খাব??"

দেবযানী--" ওটাই খাও, খুব ভাল হবে।"

রুদ্র রেগে গিয়ে বলে--" এত রাতে আমায় বিরক্ত করা বন্ধ কর। যাও এখান থেকে।চিল্লান ছাড়া কি আর কিছু জান না??"

দেবযানী--" এই শোন, আমার না,, এখানে থাকার কোন ইচ্ছেই নেই।

তুমিও তো আমায় ৫০০ টা কথা শোনান ছাড়া আর কিছু জান না।

একদম চুপ কর রুদ্র। আমি রুটি করে দিচ্ছি, পনিরের তরকারি আছে,, ওটা দিয়েই খেয়ে, শুয়ে পড়বে। আমার আর ভাল লাগছে না।

কি পরিমানের মাথামোটা,, রাতে নাকি পাউরুটি খাবে। Indigestion হয়ে যাবে।"

দেবযানীর কথা শুনে রুদ্র একেবারেই চুপ হয়ে গেছিল। ভাবছিল " বা,,বা? এটা কি বাস্তব না ও স্বপ্ন দেখছে??

যে মেয়েটার সাথে এতক্ষণ ধরে পাগলের মতন চেঁচামেচি হচ্ছিল,, সে ই রুটি করে দিচ্ছে ওর জন্য?

Very Strange। পাল্টে গেছে নাকি? কে জানে? তবে,, এ মেয়ে পাল্টানোর মানুষ নয়,, আর যাই হোক। তাহলে কি সত্যিই ও আমার খুব খেয়াল রাখে? না রাখলে তো করত না কিছু আমার জন্য। "

দেবযানী--" এই নাও খাও। খেয়ে, বাসনটা ধুয়ে নিয়ে শুয়ে পোড়। "

রুদ্র--" থাঙ্ক ইউ দেবযানী। তবে একটু দাঁড়াও না। একাএকা খেতে ভাল লাগে না।"

--" থাঙ্কস কথাটা ভাল লাগছে না। আরও ৫০০ টা কথা শোনাও আমায়,, সেটাই ভাল হবে।"

--" Sorry দেবযানী। এইরকম আর করব না।"

--" একদম বোল না এই কথাটা। মিথ্যে হয়ে যাবে। সবকিছু পাল্টানো যায়,,,

দেবযানীর কথা শেষ হওয়ার আগেই রুদ্র বলে --" কিন্তু মানুষের মন নয়। তাই তো??

আমার মন কি খুব খারাপ দেবযানী??"

দেবযানী,,, রুদ্রর দিকে চেয়েছিল।

--" রাত হয়ে গেছে রুদ্র। খেয়ে নাও, আমি এখানেই আছি। কাল রোববার নয় বৃহস্পতিবার। তারাতারি ঘুম থেকে উঠতে হবে তো। অফিস যাচ্ছি না বলে, বেশি কাজ ঘারে চাপিয়ে দিয়েছে। সারাদিন খেটে শেষ হয়ে যাচ্ছি,, তাই। তুমি তো কখনও কখনও ৮ টায় ঘুম থেকে উঠছিলে। চেঁচামেচি করে,, তোমার ঘরের দরজায় ধাক্কা মারতে,, হয়েছিল, আমায়। এরম করলে হবে? ৭ টার সময় উঠতেই হবে।"

--" সারাটা দিনে,, একটুও রেস্ট নেওয়ার সময় দিচ্ছে না যান। ঘুম আসবে না আমার বল?? "

--" ওই জন্যই তুমি সকালে এক কাপ কফি আর মুরি খাচ্ছ, দুপুরে ম্যাগি আর রাতে আলুভাজা কর,, আর রুটি নিয়ে আন?? এরম খাওয়া কি উচিত রুদ্র??

জানি,, তোমায় আমার চেয়েও বেশি কাজ করতে হয়। তাবলে কি নিজের শরীর টাই বিসর্জন দেবে?? এরম খাওয়ার পর তোমার শরীরটা আর ভাল থাকবে???"

--" কি করতে পারি? এখন তো রান্নারলোক ও রাখা সম্ভব নয়। কখন রান্না করব আমি??"

দেবযানী--" আমি করে দেব। তুমি খাবে। এটাই শেষ কথা। "

রুদ্রর খাওয়া যতক্ষণ না শেষ হল, দেবযানী টেবিলে বসে একটু কথা বলল।

রুদ্র খেয়ে উঠে দেবযানীকে বলল-- "Goodnight দেবযানী and থ্যাঙ্কস। তুমি না থাকলে, আমার পাশে আজ আর কেউ থাকত না।"

দেবযানী--" এতো থ্যাঙ্কস দেওয়ার কি আছে? ৪ বছর ধরে আছি আমরা একসাথে। Unknown তো নই। Goodnight রুদ্র। "

ঘরে গিয়ে রুদ্র ভাবছিল, " যখন দেবযানীর সাথে আমার এত ঝগড়া হয়,, তাহলে আজ আমি ওকে দাঁড়াতে বললাম কেন? "

 

দেবযানীর মন ও ভাবছিল " যাকে আমার একদম ভাল লাগে না,, তার ভালোর জন্য আমি আজ তাকে রুটি বানিয়ে খাওয়ালাম?? কিন্তু কেন?? যাই হোক, ভাল কাজ ই করেছি। ভেবে কাজ নেই। মা তো বলেইছে, কারোর ভাল করলে, ভাল ফল ই পাওয়া যায়। শুয়ে পড়ি। কাল বৃহস্পতিবার,, তারাতারি ঘুম থেকে উঠে ফুলের মালা আনতে হবে।"

পরের দিন সকালে দেবযানী উঠে দেখে, বেশ কুয়াশায় ভর্তি চতুর্দিক। বৃষ্টিও পড়ছে অল্প। তখন ও ভাবে " এখন আমি ফুল আনব কি করে??"

বৃহস্পতিবার,, দেবযানী পুজো না দিয়ে থাকতেও পারত না।

দেবযানী ভাবল-" হমম। রুদ্রকে বলি আনতে। "

দেবযানী--" রুদ্র,,,,,, রুদ্র একটু শোন না।"

রুদ্র ভাবছিল-" কি ব্যাপার? যে মেয়ে আমার ধারে কাছে আসে না, সে আমায় আজ ডাকছে? যাকে গেয়ে,, যাই একবার। আবার না ঝগড়া শুরু করে দেয়।"

রুদ্র--" কি হয়েছে দেবযানী?? ডাকছ কেন??"

--" রুদ্র তুমি তো জান, আমি রোজ বৃহস্পতিবার পুজোদি, তো একটা হেল্প করবে??"

--" কি বল। নিশ্চয়ই করব।"

--" রুদ্র বায়রে বৃষ্টি পড়ছে। আমার বায়রে বেড়তে ভয় লাগছে। তুমি যদি একটু ফুল, মালাটা এনে দাও ভাল হয়। প্লিজ। "

--" অনলাইনে তো পাওয়া যায় ফুল। কিনে নাও।"

--" কিন্তু খুব কস্টলি। ঈশ্বরের জন্য এইটুকুও করতে পারবে না??"

--" এসব পুজো আচ্ছা আমি মানি না। কিন্তু তুমি আমায় কাল যেভাবে হেল্প করেছ, আমি নিশ্চয়ই করব। স্কুটিতে যাব আমি। হেলমেট টা দাও। স্কুটিতে গেলে মাথাটা ভিজবে না আর জ্যাকেটের ওপর রেনকোট পড়ে নেব।

--" হ্যা দিচ্ছি। দাঁড়াও।"

-" এই নাও রুদ্র, তোমার হেলমেট আর আর রেনকোট। টেক কেয়ার। আমি জানি আমি ঠিক করছি না। বাট,,, সিরিয়াসলি, এরম শীতের মধ্যে যদি বৃষ্টি না পড়ত, আমি নিজে চলে যেতাম। "

--" আচ্ছা, ঠিক আছে, এরম মন খারাপ করে বলোনা। কাল তো তুমি আমার জন্য কত কি করলে,, আর আমি এইটুকুও করতে পারব না?? হয় কোনদিন? আমি নিয়ে আনছি। চিন্তা কোর না।" ( রুদ্র)

রুদ্র চলে যেতে দেবযানীর মন কেমন ছটফট করছিল। কেন করছে সেটা নিজেই বুঝছিল না দেবযানীর।

হঠাত বেলের আওয়াজ শুনে,, দেবযানী দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দেয়।

--" এই নাও ধর ফুল আর মালা।"

এই বলে রুদ্র হেলমেট খুলল।

দেবযানী--" ইস!! তোমার চুল তো অল্প ভিজে গেছে। ঘরে চল। রেনকোট টা খোল। থ্যাঙ্ক গড, জ্যাকেটটা সেরম ভেজেনি। কিন্তু অল্প হলেও ভিজেছে, খোল জ্যাকেটটা, তোমার তো আরও একটা জ্যাকেট আছে। এই জ্যাকেটটা না খুললে তোমার ঠান্ডা লেগে যাবে,, আর এখন ঠান্ডা লেগে গেলেই করোনা আর কতকি টেস্ট করতে বাধ্য করে দেবে। "

রুদ্র,, দেবযানীকে চুপ করে দেখছিল।

দেবযানী,, রুদ্রর জ্যাকেটটা খুলে দেয়।

--" এই নাও, তোমার এই জ্যাকেটটা পড়। আর তোমায় অন্য শার্ট দিচ্ছি,, ওটাও তোমার চেঞ্জ,,,,,"

কথাটা বলতে বলতে দেবযানী চুপ করে যায়। দেবযানী আর রুদ্র,,, দুজনই দুজনের দিকে তাকিয়ে ছিল। কখনও কখনও চোখের মাধ্যমেও হৃদয়ের কথা প্রকাশ করা যায়। ওরা তাই ই করছিল।

 দেবযানী, রুদ্রর একদম কাছে চলে এসেছিল।

 দেবযানী তারপর চোখ সরিয়ে রুদ্রকে বলে--" এই নাও তোমার শার্ট,,,,,,, এটা,,,,,,, পড়ে নাও।

আমি,,,,,,,,,, পুজো দি,,তে যাচ্ছি।

থাঙ্কস,,, রুদ্র। "

বলে দেবযানী ঘর থেকে বেড়িয়ে যাচ্ছিল।

ঠিক সেই সময় রুদ্র বলে ওঠে--" শার্টটাও তো চেঞ্জ করে দিতে পারতে। চলে যাচ্ছ কেন, দেবযানী??? দরজার দিকে মুখ করে নিলে কেন???

এদিকে একটু তাকাও না। একবারের জন্য।

দেবযানী রুদ্রর দিকে একটু তাকানোর পরেই চোখ সরিয়ে নেয়।

দেবযানী--" তোমার কি হা,,,ত নেই,, যে জামা চেঞ্জ করতে পারবে না??

আমার,,,,,,, কাজ আছে,,,,,,,,,,, যাচ্ছি।"

রুদ্র--" দাঁড়াও না,,,,,,,, এক কাপ কফি তো করে দিতে পার?"

--" অবভিয়াসলি।"

কথাটা বলে দেবযানী, রুদ্রর ঘর থেকে চলে যায়।

রুদ্রর জন্য কফি করে আনে যখন দেবযানী,,,রুদ্রর ঘরের দরজা বন্ধ ছিল।

দেবযানী,, রুদ্রর ঘরের কাছে গিয়ে, দরজায় nock করে বলে--" রুদ্র,,,,,, কফি হয়ে গেছে,,, দরজাটা খুলে নিয়ে নাও।"

--" ঘরের মধ্যে এস না। ছিটকানি খুলে দিয়েছি।"

দেবযানী,, ঘরের দরজাটা আস্তে আস্তে খুলে দেখে,,, রুদ্র ফুল প্যান্ট পড়ে আছে কিন্তু শার্ট পড়েনি।

দেখেই,,,, দেবযানী দরজাটা আবার ভেজিয়ে দিয়ে,, দরজার বায়রে থেকে বলে

  " তুমি শার্ট পড়নি কেন?? তারাতারি পড়ে নাও,,, কফিটা নইলে ঠান্ডা হয়ে যাবে।"

--" পড়ছি,, শার্ট। আসলে,, গা টা towel দিয়ে মুচ্ছিলাম। এস এবার,,, শার্ট পড়ে নিয়েছি। "

দেবযানী তারপর রুদ্রর ঘরে ঢুকে,, ওকে কফি দিয়ে চলে যাচ্ছিল।

রুদ্র তখন বলে ওঠে-" তোমার জন্য করনি, দেবযানী??"

--" না।" ( দেবযানী)

রুদ্র--" কেন?? একসঙ্গে খেতে কত ভাল লাগে।

তোমার জন্য ও করনা,, তুমি আমি মিলে খাব।"

দেবযানী আবার ও রুদ্রর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে ছিল।

--" তুমি আমি মিলে???"

--" হ্যা। কেন খাওয়াই যায় না? নিজেই তো বললে,, আমরা Unknown নই।"

--" আচ্ছা,, আনছি। ব্রেকফাস্ট ও বানিয়েছি। "

--" তোমার চোখটা বোধহয় কিছু বলতে চাইছে দেবযানী। তাই খালি খালি তোমার চোখের দিকে তাকিয়ে ফেলছি।"

--" এত ইয়ার্কি মের না। এখন ইয়ার্কি মারার সময় নয়। আমাদের দুজনকেই, জবের কাজ করতে হবে। খাবার টা নিয়ে আনছি,, তুমি খেতে খেতে কাজ কর।"

--" না,, খাব না,, যদি তুমি আমার সাথে বসে না খাও।"

--" এটা কি পাগলামি শুরু করেছ তুমি এখন?? তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে, রুদ্র??"

--" হমম। অল্প।"

--" পাগল একটা। চাকরিটা গেলে না,, নাটক বেড়বে, তোমার। ট্রাই টু বি সিরিয়াস, রুদ্র। জব এক মুহূর্তে পাওয়া যায় না।"

--" Ok ok মহারানি,, কাজ করে নিয়ে গল্প করব। রেগে, চটে বোম হয়ে যেও না। তবে,, একসঙ্গে ব্রেকফাস্ট তো খেতে পারি? নাকি সেটাও মানা??"

--" হমম। নিয়ে আনছি।"

ব্রেকফাস্ট খেয়ে, রুদ্র আর দেবযানী জবের কাজ করতে থাকে, ল্যাপটপে,, নিজেদের ঘরে বসে।

সারা সকাল কাজ করে,, দেবযানী দুপুরে লাঞ্চ তৈরি করে রুদ্রকে ডাকতে থাকে।

রুদ্র উত্তর দিচ্ছে না দেখে,, দেবযানী রুদ্রর ঘরে যায়।

রুদ্র তখন ল্যাপটপে কাজ করছিল।

--" রুদ্র আমি কখন থেকে তোমায় ডাকছি,, তোমার কি কানে যায় না কথাটা??"

--" দেবযানী,, এখন খাওয়ার সময় নেই আমার কাছে। তুমি খেয়ে নাও,, আর আমার খাবারটা টেবিলে ঢাকা দিয়ে রেখে দাও। "

--" আমি না,, আর পারি না তোমাকে সামলাতে। একটা না একটা বাহানা করবেই।"

--" আরে, আমি খুব ব্যস্ত। কি করব? রেহাই নেই তো।"

--" খাবারটা আমি এই ছোট টেবিল টায় রেখে যাচ্ছি। খেয়ে নেবে।"

--" এত কেন ভাব দেবযানী,, আমাকে নিয়ে? বাদ দাও না আমার কথা। নিজে খেয়ে নাও।"

--" আমার পেছনে লাগাটা তো তোমার একটা হ্যাবিট, রুদ্র। এটা তো আমার কাছে নতুন নয়।"

--" কেন?? আমি তোমার লেজ নাকি,, যে তোমার পেছনে আটকে থাকব।"

--" ইউ!"

বলে দেবযানী রুদ্রর সাথে একটু মারামারি করতে থাকে। করতে করতে,, রুদ্রর গায়ের ওপরই পড়ে যায়,, আর রুদ্রর দিকে তাকিয়ে থাকে।

এলো মেঘ যে এলো ঘিরে 

বৃষ্টি সুরে সুরে সোনায় রাগিনী,

মনে স্বপ্ন এলোমেলো

এই কি শুরু হলো প্রেমের কাহিনী

এলো মেঘ যে এল ঘিরে

বৃষ্টি সুরে সুরে সোনায় রাগিনী

মনে স্বপ্ন এলোমেলো

এই কি শুরু হল প্রেমের কাহিনী

রিমঝিম এ ধারাতে চায় মন হারাতে,

রিমঝিম এ ধারাতে চায় মন হারাতে।"

তারাতারি উঠে দেবযানী রুদ্রকে বলে--" ইয়ার্কি মারার, তোমার কাছে প্রচুর সময় আছে,,,, খাওয়ার সময় নেই??? খাবারটা খেয়ে নিয়। আমি যাচ্ছি।"

--" কোথায় যাচ্ছ??"

--" তোমার মাথায়। "

--" রিয়ালি? যেও না দেবযানী। মাথা ব্যথা করবে।"

--" চুপ কর। খাবারটা খেয়ে নিয়।"

--" যো আজ্ঞিয়া। " ( রুদ্র)

বিকেলে দেবযানী কফি, স্ন্যাক্স নিয়ে রুদ্রর ঘরে আসে। তখন ৫ টা বাজে।

 দেবযানী কফি স্ন্যাক্স নিয়ে এনেছে দেখে রুদ্রর খুব ভাল লাগে।

--" এই নাও রুদ্র। চল খেয়েনি। "

--" চপ??"

--" হ্যা। আমি বানিয়েছি। আমার এগুলো বানাতে খুব ভাল লাগে। খেয়ে বল কেমন হয়ছে।"

--" দেখি খেয়ে।

ইস!! কি বিচ্ছিরি। খুব বাজে।"

--" এত ভাল চপ টাকে তুমি বলছ বাজে?

খেতে হবে না তোমায় আর,,,, ফেলে দাও।"

--" এই, sorry, sorry, sorry। খুবই ভাল হয়েছে। আমি একটু মজা করছিলাম। "

--" আর আমার কিরম লাগবে,, একটু ভাববে না??

তুমি একা খাও। আমি চলে যাচ্ছি এখনই। "

--" বড্ড রেগে যাও তুমি।"

--" হাত ছাড় আমার,,, রুদ্র। ভাল লাগছে না।"

--" এত রাগারাগি করলে কি ভাল লাগে, বল? চল না একটু আনন্দ করি।"

-" আমাকে নিয়ে ইয়ার্কি মারা??"

--" না, না। একটু গিটার বাজিয়ে গান গাইতে ইচ্ছা করছে। একা একা কি ভাল লাগে? বস না,, দেবযানী।"

রুদ্রর কথাতে, দেবযানী রুদ্রর সাথে, একটা খাটে বসে থাকে।

--" আন্তাকশারি খেলবে একটু দেবযানী?"

--" আমার সাথে কেউ কিন্তু জিততে পারে না। তুমিও হেরে যাবে।"

--" আচ্ছা?? দেখা যাক কে যেতে। যদি আমি জিতে যাই,, আমার একটা ইচ্ছে কিন্তু ফুলফিল করতে হবে।"

--" ও,, এটা বেট?? বেশ। তবে জেনে রাখ তোমায়ই আমার মনের ইচ্ছা পূর্ণ করতে হবে।"

--" বেশ,, দেখা যাক কে জেতে।"

রুদ্র-" মেরে সাপনোকে রানী কাব আয়েগী তুম, আয়ী রুত মাস্তানি কাব আয়োগী তুম, বিতি জায়ে zindegi কাব আয়োগী তুম, চালি আ,, ও চালি আ।"

দেবযানী--" আজ মেয়ে উপর, আসমান নিচে, আজ মেয়ে আগে, zamana হ্যায় পিছে। আজ মেয়ে উপর, আসমান নিচে।"

রুদ্র" চুরাকে দিল মেরা গোড়িয়া চলি......"

দেবযানীর--" ল্যাকজা গ্যলে, কে ফির হসিন রাত হো না হো, শায়েদ ফির ইস জানম ম্যায় মুলাকত হো না হও

ল্যকজা গলে"

রুদ্র ' ল' ওয়ার্ড দিয়ে গান খুজে পাচ্ছিল না।

দেবযানী তাই হাসি মুখে বলতে থাকে-" ল১, ল২, ল৩, ল৪, ল৫, ল৬, ল৭, ল৮, ল৯,"

রুদ্র--" লড়কি বড়ি অনঞ্জানি হ্যেয়ে........

য়ে তো ভোহি দিভানি হ্যেয়....... হো, ও..."

এবার ও দিয়ে দেবযানী এবার গান মনে করতে পারছিল না।

রুদ্র এবার হাসি মুখে বলছিল-' ও১, ও২, ও৩, ও৪, ও৫, ও৬,

দেবযানীর মন ছটফট করছিল,, ও কখনও হেরে যায় না, আর আজ রুদ্রর কাছে হেরে যাবে। এ হয় না।

--" ও ৭, ও৮, ও৯, ও১০।"

এরপর রুদ্র হাসছিল। আর দেবযানী রেগে যাচ্ছিল।

--" কি হল দেবযানী? তুমি যে বললে সবাইকে তুমি হারিয়ে দাও। আজ কি তোমায় ভূতে ধরেছিল??"

--" আমার রাগিয়ে, তোমার তো সবসময়ই আনন্দ লাগে।"

--" আমি কোথায় রাগালাম? এটা তো একটা গানের খেলা ছিল।"

--" বল,,, তোমার মনের কি ইচ্ছে আমায় ফুলফিল করতে হবে।"

--" You have to dance with me

--" What?? এই আমি নাচ জানি না। যা পারবে তাই ই করতে হবে নাকি??"

--" আমার হাত ধরেই একটু নাচ, না, দেবযানী। এস না,, একবার করে দেখি।"

--" এবার জিতে গেছ। অল্প হলেও তোমার মনবাঞ্ছা পূর্ণ করতে হবে।

Music????

" Humko Sirf Tumse Pyar Hai

Humko Sirf Tumse Pyar Hai

Kah rahi hai dil ki bekhudi

Baas tumhara intezar hai "

এই গানটা চালিয়ে রুদ্র আর দেবযানী একসাথে নাচছিল।

দেবযানী হাসি মুখে বলে ওঠে--" কি গো? ছাড় আমায়। আমি কি আর্টিস্ট নাকি??"

তারপরই দেবযানীর ফোন বেজে ওঠে

--" হ্যালো মিসস দেবযানী, হ্যাপি বার্থ ডে।"

--" বাবা তোমার সেই মজা, ঠাট্টা করা আর থামল না।"

--" হাঃ, হাঃ, হাঃ। আশীর্বাদ করি ভাল থাকিস মা।"

অরুণিমাদেবী--" হ্যাপি বার্থ ডে আমার সোনা মা।

বার্থ ডে তো পালন করতে পারছিস না, বুঝতেই পারছি। "

--" ছাড় না মা। আমি কি কচি বাচ্ছা যে কেক, গিফ্ট আনতেই হবে।"

অরুণিমাদেবী--" জানি রে মনা, কিন্তু জন্মদিনে একটু আনন্দ করতে তো ইচ্ছা করেই। আমি তো কিছু পাঠাতেও পারব না। খারাপ লাগছে খুব। "

--" খারাপ লাগার কি হয়েছে মা? তোমার আর বাবার ভালবাসা পাঠিয়। ওটাই সবচেয়ে বড় গিফ্ট হয়ে যাবে আমার কাছে।"

--" চুপ কর। খুব পাকা হয়ে গেছিস এখন। মায়ের ও তো মন বলে কিছু আছে? আমার ই ইচ্ছা হচ্ছে তোর জন্মদিন পালন করি।"

--" তুমি এখনও আমায় বাচ্ছা ভাব। "

--" মায়ের কাছে তার সন্তান আজীবন ই ছোট থাকে, জানিস? ছোটবেলায় তোকে কত ভালবেসে, বকে, বড় করেছি, আমি কি ভুলতে পারি?"

--" লাভ ইউ মা।"

--" লাভ ইউ টু সোনা। নিজের খেয়াল রাখিস।"

--" হমম। বাই মা,, ৬:৩০ বাজে,,,

--" ল্যাপটপের সামনে বসে জবের কাজ করতে হবে।"

--" হমম, মা, তাই ই। করোনা রোগটা যায়ও না,, যে একটু বেড়বো। ৩ বছর ধরে ঘরে বসে কাজ করছি।"

--" বায়রে বেড়নোর কথা এখন একদম ভাববিও না। শরীরটা ভাল রাখা খুব important।

--" হমম। ঠিকই বলেছ। তাই তো বেড়োই না। তাও তোমরা থাকলে ভাল লাগত। ব্যাঙ্গালোর,, একদম অন্যরকম। তবে ৪ বছর ধরে থাকতে থাকতে, কিছুটা হ্যাবিটুয়েটেড হয়ে গেছি।

বাই মা। বাই বলতে ইচ্ছা করছে না যান। "

--" যানি। আমি তো তোর মা। আমার মনও তো এক কথা ভাবছে। মন খারাপ করিস না। তোকে জীবনে এগোতে হবে তো। ভাববি না অত্যন্ত। রাখি মনা কাজ কর।"

--" বাই mom। "

ফোন রেখে, দেবযানী দেখে রুদ্র ঘরে নেই।

দেবযানী,, রুদ্র, রুদ্র করে চেঁচাতে থাকে।

 তারপর শোনে,, দরজা চাবি দিয়ে কেউ খুলছে। দেখে ভয়ে দেবযানী জোরে চেঁচাতে থাকে

--" তুমি যে ই হও। আমি কিন্তু মেরে ফেলব তোমাকে। খুন করে দেব তোমার আমি।"

দেবযানী বড় একটা flowervase ছিল, ওটা হাতে তুলে নিয়েছিল।

 তারপর সবকিছু দেখে অবাক হয়ে যায়।

--" মেরে ফেলে,, একদম খুন করে দেবে??

এতো ক্রিমিনাল কিল্লার তুমি??"

--" টেনে না,, থাপ্পড় মারব তোমায় এবার,, রুদ্র। একবার ও ভেবে দেখেছ,, আমি কত ভয় পেয়ে গেছিলাম। মানে,, আমায় তুমি,,,

দেবযানীর কথা শেষ হওয়ার আগেই, দেবযানীর ঠোঁটে আঙুল রেখে রুদ্র বলে--"চুপ,,, একদম চুপ। কেন বলনি আজ তোমার জন্মদিন?? এইটুকুও কি আমায় বলা যায় না??"

ঠোঁট থেকে রুদ্রর আঙুল সরিয়ে দেবযানী বলে--" কি করব বলে আমি রুদ্র? আমি কি ছোট বাচ্ছা,,যে বলব, রুদ্র আমার আজ জন্মদিন, তুমি কেক, গিফ্ট নিয়ে আন? আর তোমায়,,,,,"

দেবযানীর কথা শেষ হওয়ার আগেই রুদ্র বলে ওঠে--" আর তোমায় আমি কেনই বা বলব,, তুমি তো আমার কেউ হওনা। কি তাই তো??"

দেবযানী অন্যদিকে তাকিয়ে ছিল।

রুদ্র--" ওই দিকে তাকিয়ে আছ কি? আমার দিকে তাকিয়ে বল। "

--" হাত ধরে টানছ কেন এইভাবে??"

--" দেখ কি এনেছি।"

দেবযানী দেখে রুদ্র কি সুন্দর কেক নিয়ে এনেছে ওর জন্য।

--" এত সুন্দর কেক আনার,,,"

রুদ্র--" চুপ। চল কেক কাট, আর আমি ভিডিও তুলব। "

দেবযানী হেসে বলে--" তুমি না একটা পাগল। "

রুদ্র--" না, আমার পা সোজা। কেক কাট না।"

ভিডিও তুলল রুদ্র।

রুদ্রকে দেবযানী কেক কেটে খাওয়াল, রুদ্র ও দেবযানীকে কেক খাওয়াল।

কেকটা কিছুটা খেয়ে রেখে দিল।

--" রুদ্র ৭:৩০ বেজে গেছে,, এবার চল জবের কাজ করেনি। "

রুদ্র--" Okay।"

রাত তখন ১০ টা বেজে গেছে। তখন দেবযানী আর রুদ্র, ডিনার করতে ডাইনিং টেবিলে আসে।

রুদ্র দেখে দেবযানী কিছু খাবার গরম করছে। রুদ্র গিয়ে বলে

--" কি করছ??"

দেবযানী--" সকালের তরকারি, মাছটা গরম করে নিয়েছি। আটাও মেখে ফেলেছি, এক্ষুনি রুটি করে ফেলব।"

--" ওগুলো কালকের জন্য রেখে দাও। "

দেবযানী--" মানে???"

রুদ্র--" মানে,, বিরিয়ানি অতো ভালবাস না,, friedrice নিয়ে এনেছি,, চিকেন কারি,, চাটনি তো তোমার খুব প্রিয়,, ওটা নিয়ে এনেছি।"

দেবযানী,, রুদ্রর চোখের দিকে তাকিয়ে ছিল।

রুদ্র--" কি হল?? শুনে অবাক হয়ে গেছ।"

দেবযানী--" অবাক করে দেওয়ার মতনই করেছ। কোথায় রেখেছ?? ফ্রিজে?"

রুদ্র--" না,, ওই বড় বাসনগুলো দিয়ে, বক্স গুলো ঢাকা দিয়ে রেখেছিলাম,, ফর, সারপ্রাইজ। "

--" খাবার নিয়ে এরম কেউ করে রুদ্র? এরপর, এরম আর করবে না।

নিয়েই এনেছ যখন, চল খাই।"

খাওয়া শেষ করার পর দেবযানী রুদ্রকে হাসি মুখে বলে--" Thanks a lot রুদ্র। এবার যে জন্মদিনটা এতো ভাল যাবে, আমি কল্পনাও করিনি।"

রুদ্র--" চোখটা একটু বন্ধ কর।"

দেবযানী--" কেন??"

--" উফ!! আমি তো আর মেরে ফেলব না, দেবযানী। চোখটা বন্ধই কর না।"

দেবযানী মজা করে বলছিল--" বলা, যায় না। তোমার মাথার তো একেবারেই স্ক্রু তো খোলা,, যদি করে ফেল।"

রুদ্র--" তোমার মাথার স্ক্রু একদম ই ঢিলা। বন্ধ কর না চোখটা।"

দেবযানী--" Okay, করছি।"

দেবযানী চোখ বন্ধ করে নেয়।

রুদ্র--" হাত টা পাতো। "

দেবযানী--" আবার হাত??"

রুদ্র--" হ্যা।"

দেবযানী হাত পাতার পর, দেবযানী বুঝতে পারল, ওর হাতে কিছু একটা আছে। তারাতারি চোখ খুলে নেয়। চোখ খোলার পর ওটার দিকে ও শুধু তাকিয়ে ছিল।

--" গিফ্ট?? গিফ্ট ও এনেছ??"

রুদ্র--" জন্মদিন তো রোজ রোজ আসেনা। বছরে একবার আসে। তাই গিফ্ট ও এনেছি। ঘরে গিয়ে গিফ্টটা খুলে দেখে বোল,,, কেমন লাগল। "

দেবযানী--" যা ই হোক না কেন,, আমার খুব প্রিয় হবে।"

রুদ্র--" খুলে তো দেখ।"

দেবযানী--" হমম। দেখছি।"

 দেবযানী নিজের ঘরে গিয়ে গিফ্ট টা খুলে দেখে অবাক হয়ে যায়। তারপর রুদ্রর কাছে যায়।

রুদ্র জিজ্ঞেস করে দেবযানীকে,, যে ওর কেমন লেগেছে গিফ্ট টা।

দেবযানী--" এ গিফ্ট যাকে দেবে, তারই পছন্দ হয়ে যাবে।"

রুদ্র--" তোমার কেমন লেগেছে বল না।"

দেবযানী--" হিরের দুল কেন কিনতে গেলে??"

রুদ্র--" আবার। বলবে তো কেমন লাগল।"

দেবযানী--" বলব,, তবে আগে বল,, গিফ্ট প্যাকের ভেতরে, একটা ছোট কার্ডে যে quote টা লেখা আছে,, ওটা কার লেখা?"

রুদ্র--" কোন quote টা?"


You Baby Are So Special To Me 

You baby are so special to me,

You are more special than anyone else can be. 

I find myself dreaming about you every day and night,

And when I wake up in the morning I see your face 

Like a ray of sunlight.

Your Kisses give me the strength to go forward in my life

The moment When I spend some time with you 


Always remains

 A glamourus moment for me 

I forget everything, when I stay with you

You are my Life

দেবযানী--" এই quote টা। "

রুদ্র--" বাদ দাও না, ওটা। ফেলে দাও। "

দেবযানী--" রুদ্র আমি শুধু জিজ্ঞেস করেছি এটা কে লিখেছে।"

রুদ্র--" আমি।"

দেবযানী--" সত্যি কথা এটা??"

রুদ্র-" হ্যা।"

দেবযানী রুদ্রর ঠোঁট suck করত রুদ্র অবাক হয়ে যায়। হওয়ারই কথা। আসলে ভেবেছিল, দেবযানী রেগে যাবে।


দেবযানী--" কি হল,, বললে না তো কেমন লাগল। 

কোমর ধরে টানছ কেন? আমি তো তোমার সামনেই বিছানায় বসে আছি।"

--" তোমায় হৃদয়ের মধ্যে ঢুকিয়ে নেওয়ার জন্য। "

দেবযানী হাসতে হাসতে বলে--" তুমি একট পুরো পাগল। "

-- আমায় ও তো তোমার ঠোঁট টা suck করতে হবে। নইলে ভাল লাগে??"


--" কি করছ রুদ্র,, ছাড়। আমার গলায় kiss কোর না।"


রুদ্র--" কেন?? দেবযানী,, তুমি আমার হৃদয়,, জান?? 🫀 

সেদিন তো শার্ট টা খুলতে দিলে না। আজ খুলি।"

--" হমম, জানি। তাই তো আমি তোমায় নিজৈর হৃদয়টা দিয়ে দিয়েছি। 

শার্ট খুলে কি করবে,, পাগল??"

রুদ্র-" দেখব, তুমি আমায় কত ভালবাসা।

Can you kiss my cheast??"

--" এই আমরা বিবাহিত নই। শুয়ে পড়লে।"

রুদ্র--" রাত ১২ টা বাজে,, শোবোনা?? 

দেবযানী,, Will you marry me?"

দেবযানী, রুদ্রর ঠোঁট টা suck করে, রুদ্রকেই জিজ্ঞেস করে--" কি বুঝলেন??"

রুদ্র--" That,, YOU ARE MINE & I'M YOURS"

দেবযানী--" YES,, FOREVER OUR LOVE WILL NEVER GO AWAY TILL WE ARE GONE"



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance