অদল বদল
অদল বদল
পাশাপাশি দুই গ্রাম বকুলপুর আর গোবিন্দপুর দুই গ্রামে মহা ধুমধাম। মাঘ মাস। আর কাকতালীয় ভাবে আজকে দুইগ্রামের প্রতাপশালী জমিদার বাবুলাল রায়ের জ্যেষ্ঠা কন্যা মাধবীদেবী আর শিবনাথ চৌধুরীর কনিষ্ঠা কন্যা মালিনীদেবীর বিয়ে। দুই জমিদারবাড়িতেই আজ সকাল থেকে মহা ধুমধাম,আর সন্ধ্যা হবার সাথে সাথেই জমকালো আলোকসজ্জা আর সানাইয়ের সুর।
বাবুলাল দাপুটে জমিদার।কিন্তু,আজ দিনটা তাঁর জীবনে বড়ো বিশেষ এক হর্ষ বিষাদে মাখা দিন। আজ তাঁর বড়ো মেয়ে মাধবী এক নতুন পরিবারের সদস্যা হতে চলেছে। মাধবীকে বিদায় জানাতে হবে। এই যন্ত্রণা যে কিরকম-তা একজন বিবাহযোগ্যা মেয়ের বাবাই বুঝতে পারেন। কিন্তু আজ তার কন্যা নতুন এক জীবন শুরু করতে চলেছে,এইজন্য তাঁর মনে আজ হর্ষও উপস্থিত।
মাধুর বিয়ে হচ্ছে প্রতাপগড়ের জমিদার অজিত সিংহরায়ের জ্যেষ্ঠ পুত্র সমিতের সঙ্গে। যখন বাবুলাল স্বয়ং বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিলেন ,তখন দেখেছিলেন সিংহরায়দের জমিদারির ঠাঁটবাঁট কমলেও সমিত ছেলেটা খুব ভালো,সর্বোপরি শিক্ষিত ।
কিন্তু,আজ
পাত্রপক্ষের জাঁকজমক দেখে চোখ কপালে উঠে গেল বাবুলালবাবুর। জমকালো পোষাক পরে কালো সুসজ্জিত ঘোড়ার ওপর চড়ে মুখ ঢেকে এসেছে হবু পাত্র।সাথে রয়েছে ব্যান্ডপার্টিও।কেমন যেন খটকা লাখল বাবুলালের! কন্যাপক্ষ যখন পাত্রপক্ষকে সুস্বাগতম জানাচ্ছিল, তিনি তার কাছে গিয়ে বলেন,"বাবা ,তুমি সমিত তো!"পাত্র কিছু না বলে দূরে সরে যায়।সন্দেহ আরও বেড়ে যায় তার সম্বন্ধী মানে হবু পাত্রের বাবাকে দেখে।ইনি অজিতবাবু নন!
সন্দেহ নিরসন হল কিছুক্ষণ পর। যখন তার বাড়িতে হইহই করে ঢুকল অজিত সিংহ আর শিবনাথ চৌধুরীর লোকেরা। আর কিছুই না,পথ ভুল আর তাতেই পাশাপাশি দু গাঁয়ের জমিদারবাড়ির হবু পাত্রপক্ষের অদল বদল হয়ে গিয়েছে।যাদের যাওয়ার কথা ছিল বাবুলালের বাড়িতে তারা গেছে শিবনাথের বাড়িতে আর যাদের যাওয়ার কথা ছিল শিবনাথের বাড়িতে তারা গেছে বাবুলালের কাছে। এ যেন শেক্সপীয়ারের কমেডি অব এররস! যাই হোক,অবশেষে সব ভুল বোঝাবুঝি শেষে বাবুলালের ছাদনাতলাতেই বিয়ে হল একটা নয় দুটো-একটা মাধবী-সমিত,আর একটা মালিনী-ঋষভ।সব ভেদাভেদ ভুলে বিবাহের সানাইয়ের সুরে মিলে গেল রায়বাড়ি আর চৌধুরীবাড়ি