STORYMIRROR

Nityananda Banerjee

Action Classics Crime

4  

Nityananda Banerjee

Action Classics Crime

আকাশের রঙ ফ্যাকাশে

আকাশের রঙ ফ্যাকাশে

5 mins
360


চতুর্দশ অধ্যায়


ইতিমধ্যে একটা কল এল অফিসের আই আর সুপারভাইজার ব্রজদার কাছ থেকে । ব্রজদা বলে অবশ্য ওঁর সহকর্মীরা ডাকেন ; আমি বলতাম মি: চ্যাটার্জী বলে । 

ওঁর নাম ব্রজদুলাল চট্টোপাধ্যায়। নৈহাটির দিকে বাড়ী । প্রতিদিন নৈহাটি থেকে যাতায়াত করেন শিয়ালদহ ট্রেনে এবং শিয়ালদহে বাসে বাদুড়ঝোলা ঝুলতে ঝুলতে টেলিফোন ভবনের সামনে নেমে পড়েন । টেলিফোন ভবনের মুখোমুখী সি টি ও বা সেন্ট্রাল টেলিগ্রাফ অফিস । । ইংরেজ আমলে ১৮৫০ সাদে লর্ড ডালহৌসির উদ্যোগে এটি তৈয়ারী করা হয় । বর্তমানে এটি হেরিটেজ বিল্ডি !

ফোন পেতে মন প্রফুল্ল হয়ে গেল । প্রায় দু'বছর ওঁর সঙ্গে কাটিয়েছি। ভদ্রলোক নাকেদমে কাজ করেন। ফাঁকিবাজ নন। 

বললাম - হ্যাঁ মি: চ্যাটার্জী ! বলুন কেমন আছেন ?

- স্যার , একটি বিশেষ কথা বলতে আপনাকে ডিস্টার্ব করলাম ।

বললাম - সে কি কথা ! ডিসটার্ব বলছেন কেন ? বলুন কি বলবেন ?

- স্যার আজ দু'দিন এক ভদ্রমহিলা এসে আপনার সঙ্গে দেখা করতে চাইছেন । বলছেন তাঁর নাকি আপনাকে ভীষণ প্রয়োজন । 

- ভদ্রমহিলা ! তাঁর নামধাম কিছু জানেন ?

- তা তো জানি না স্যার । ওই শিউলি রায় আছে না ! মিস শিউলি রায় - সে আমাকে বলল ' ব্রজদা, আপনার কাছে তো স্যারের ফোন নং আছে - একবার স্যারকে জানিয়ে দেবেন ওই ভদ্রমহিলার কথা । তাই আপনাকে ...

আমার বুকে কে যেন হাতুড়ির ঘা দিতে লাগল । কে এই ভদ্রমহিলা? যিনি এর আগেও অফিসে এসেছিলেন !

ব্রজবাবুকে তা' নিয়ে কিছু বললাম না । বললাম 

- বেশ ! আপনি শিউলির কাছে ওনার ফোন নং নিয়ে আমাকে দেবেন তো । আমি কথা বলব ।

ব্রজবাবু ' ঠিক আছে স্যার ' বলে ফোন রেখে দিলেন।

আমার মনে হল কলকাতায় যাচ্ছি তো; একবার না হয় অফিসে যেয়ে ভদ্রমহিলাকে দেখে আসব । শিউলি রায়ের সঙ্গেও কথা বলব । সে তো নিশ্চয় ভদ্রমহিলাকে চেনে বা তাঁকে দেখেছে । 

বিকেলের ট্রেনে শিয়ালদহে পৌঁছে একটা পরিচিত হস্টেলে উঠলাম। বড়দার সঙ্গে কথা হয়ে আছে; উনি সকাল সকাল যাবেন ২৬/২ সূর্য্যসেন স্ট্রীটে। আমি তাঁর ডাক পেলে তারপর যাব । সময় হিসেব করে নিলাম। দশটায় বড়দা রওনা হবেন । সূর্য্যসেন স্ট্রীটে পৌঁছানো থেকে আলাপ পরিচয় হতে অন্তত ঘন্টাখানেক তো লাগবেই। সেই ফাঁকে একবার সি টি ওতে যাব । যদি ভদ্রমহিলার সঙ্গে দেখা হয় ।

কথামত বড়দা বেরিয়ে পড়লেন ঠিক দশটায় । আমিও পিছু পিছু সি টি ওর উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম । পৌঁছে অফিসের সবার সঙ্গে কথা বলতে বলতে কি করে যে দেড়ঘন্টা কেটে গেল বুঝতেই পারলাম না ।

ভদ্রমহিলা সেদিন আসেননি । মিস শিউলি রায় এবং সুনেত্রার খোঁজ নিতে জানা গেল উঢয়ে পাঁচ দিনের ছুটি নিয়েছে। কাজেই ওখান থেকে বেরিয়ে পড়লাম। কোথায় যাব ভেবে পাচ্ছি না ; এদিকে অন্তত দু'ঘন্টা কেটে গেছে বড়দার থেকে কোন খবর না পেয়ে চিন্তিত হয়ে পড়লাম।

বয়স্ক মানুষ। বলেছিলাম একলা না যেতে । কথা শুনলেন না । বললাম একসাথে যাই; আমি না হয় কাছাকাছি কোন জায়গায় অপেক্ষা করব - তাও শুনলেন না । 

এ ভাবে বি বা দী এলাকায় উদ্দেশ্যহীন ঘুরে বেড়াচ্ছি । এদিকে দুপুর গড়িয়ে বিকেল শেষ হতে চলল - বড়দার কোন নির্দেশ পাচ্ছি না ভেবে ভীষণ চিন্তায় পড়লাম ।

২৬/২ সূর্য্যসেন স্ট্রীট - ঠিকানাটা ভুলে যাননি তো ! তা তো হতে পারে না । তাহলে তিনি নিশ্চয় ফোন করতেন । নাকি ফোনটা হস্টেলে ফেলে এসেছেন ? 

ফোন যে করব - সাহসে কুলিয়ে উঠতে পারিনি । এদিকে সন্ধ্যাও গতপ্রায় । মনে দুশ্চিন্তা হল । ২৬/২ এর মালিক কুখ্যাত বীরেশ্বর রক্ষিত । যদি বড়দার পরিচয় পেয়ে ওঁকে .....

নাহ্ আর ভাবতে পারছি না। এ

কবার ফোন করে জেনে নিই। ফোন করলাম - ফোন তুললেন না । আবার করলাম

 - তাও তুলছেন না । এক মিনিট পর আবার করলাম; এবার এক নারীর কন্ঠস্বর ভেসে এল । 

উদ্বিগ্ন হয়ে বললাম - মি: উৎসব রায়চৌধুরী আছেন ?

উত্তর এল - না, তিনি হস্টেলে ফোন ফেলে গিয়েছেন ।

আপনি কে বলছেন স্যার ?

আমার উত্তর দিতে ইচ্ছে করল না । ফোন কেটে দিয়ে ২৬/২ অভিমুখে পা বাড়ালাম ।

এই প্রথম - হ্যাঁ, এই প্রথমবারের জন্য নিজেকে অভিভাবকহীন মনে হল । আর এই নিখোঁজের পিছনে যে তথাকথিত লঙ্কেশ্বর ওরফে বীরেশ্বর রক্ষিতের পুরোপুরি হাত আছে সে বিষয়ে কোনরূপ সন্দেহ রইল না ।

আমি সোজাসুজি ওখানে না গিয়ে নিকটস্থ পুলিশ চৌকির শরণাপন্ন হলাম ।

কর্তব্যরত অফিসার আমাকে দেখে প্রশ্ন করলেন - আপনার আবার কি হল ?

তিনি এমন ভাবে প্রশ্নটা করলেন যেন আমি ওঁর পূর্বপরিচিত ।

ভেবে পেলাম না অফিসারটি আমাকে কি ভাবে চিনলেন। আমি বললাম - স্যার ! আমি সেন্ট্রাল টেলিগ্রাফ অফিসের পূর্বতন চিফ সুপারিন্টেণ্ডেন্ট।

আমি ভেবেছিলাম অফিসারটি আমার পরিচয় পেয়ে একটু নড়েচড়ে বসবেন । কিন্তু তাঁর কোন ভাবান্তর দেখলাম না । এমনকি বসতেও বললেন না । আমি বললাম - স্যার ! আমার বৃদ্ধ বড়দাকে সকাল দশটা থেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না ।

অফিসার বললেন - সঙ্গে ফটো এনেছেন ? তাহলে একটা কাগজে বিবরণ লিখে ছবি জমা দিয়ে যান । আমরা খুঁজে দেখব ।

- স্যার উনি ২৬/২ সূর্য্যসেন স্ট্রীটে যাবেন বলে বেরিয়েছিলেন....

- তো ? ওখানে যাননি ?

- তা' জানি না স্যার । 

অফিসার বললেন - আগে ওখানে খবর না নিয়ে চলে এলেন মিসিং রিপোর্ট করতে ?

আমি অফিসারকে বোঝাতে চাইলাম ওটা বীরেশ্বর রক্ষিতের বাড়ী । যেতে ভয় করে ।

বললেন - তাহলে আপনার বড়দা ওখানে কি মরতে গিয়েছিলেন?

- তাইই তো বলতে চাইছি স্যার । আমার মনে হচ্ছে বীরেশ্বর রক্ষিতই ওঁকে নিরুদ্দেশ করেছেন !

- বীরেশ্বর রক্ষিতের সঙ্গে আপনাদের কি সম্পর্ক ?

- সম্পর্ক কিছু নেই স্যার । 

অফিসার আমার কথা শুনে হো হো করে হেসে উঠলেন।

- কোন সম্পর্ক নেই; আর আপনার বড়দা সেখানে চলে গেলেন ? উনি কি বীরেশ্বর রক্ষিতের কোন সাগরেদ ?

প্রকারান্তরে অফিসার আমাকে বুঝিয়ে দিলেন বীরেশ্বর কে । বললেন - বীরেশ্বর রক্ষিতের বাড়ীতে হানা দেওয়া সম্ভব নয় । আপনি লালবাজারে কোন এসিস্ট্যান্ট কমিশনারের কাছে যান । যদি কোন ব্যবস্থা উনি করেন। আর শুনুন , আপনি নাকি কেন্দ্র সরকারের প্রাক্তন আমলা । বীরেশ্বর রক্ষিতকে জানলেন কি ভাবে ? 

আমি তো শাঁখের করাতের মুখে পড়লাম । একে তো ২৬/২ উপরন্তু লঙ্কেশ্বরের সঙ্গে পরিচয়ের কথা বললে তো মহাশয় আমাকে হাজতে ভরে দেবেন । একটু কায়দা করে সব দোষ বড়দার ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে বললাম - স্যার আমি তো এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না । যা জানেন বড়দাই ভালো বলতে পারবেন। কিন্তু তাঁকে তো পাওয়া যাচ্ছে না - তাই বলছিলাম যদি একটু সাহায্য করেন বীরেশ্বর বাবুর সঙ্গে কথা বলে !

অফিসারটি খানিক ভেবে বললেন - আপনার বড়দার ফোনে ফোন করে দেখুন উনি কোথায় আছেন!

- বহুবার চেষ্টা করেছি স্যার । শেষে জানতে পারলাম উনি ফোন হস্টেল ফেলে গেছেন। তাই আপনার সাহায্য চাইছি।

অফিসারটি বললেন - ভেরি সরি টু সে - বীরেশ্বর রক্ষিতকে অযথা জ্বালাতন করার অনুমতি নেই । সেই জন্য আপনাকে এ সি সাহেবের কাছে যেতে বলেছি ।

কোন হেল্প পাওয়া যাবে না ধরে নিয়ে ফাঁড়ি থেকৈ বেরিয়ে এলাম । 

অফিসার বললেন - আপনি নিজে গিয়ে দেখে আসুন না হয় !

আমি অফিসারকে শুকনো একটা থ্যাঙ্কস জানিয়ে বিদায় নিলাম ।

( চলবে )



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Action