STORYMIRROR

Nityananda Banerjee

Action Classics

4  

Nityananda Banerjee

Action Classics

আকাশের রঙ ফ্যাকাশে

আকাশের রঙ ফ্যাকাশে

5 mins
352

সপ্তম অধ্যায়

২৬/২ সূর্য্যসেন স্ট্রীটের মালিক শ্রী বীরেশ্বর রক্ষিত একজন ডাকসাইটে মস্তান । হঠাৎ করে রাজনৈতিক পালা বদল হলে বীরেশ্বরের উত্থান হয় । খিদিরপুর অঞ্চলে তার কাজের গণ্ডী বেঁধে দেওয়া হয়েছিল ।

বাম আমলে পাত্তা না পাওয়া বীরেশ্বর হঠাৎ করে তার ভাগ্যে শিকে ছিঁড়েছিল । খিদিরপুর ডকে মাল ওঠা নামা থেকে শুরু করে , হাট-বাজার , শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রভৃতি স্থানেও তার আধিপত্য অকস্মাৎ বৃদ্ধি পেয়ে গেল ।

টাকাকড়ির অভাব বাম আমলেও ছিল না ; তবে পুলিশের সঙ্গে রফা করতে গিয়ে অর্দ্ধেক অর্থ সেখানেই দিতে হত । এখন সে অবস্থা নেই । পুলিশকে মান রক্ষা করতে কিছু দেন বটে তবে তা' দাবী হিসাবে নয়; নিজের পথ সুগম করে রাখার জন্য ।

ইদানিং বঙ্গদেশে দুর্নীতি মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে বলে তার কদরও শাসক মহলে বৃদ্ধি পেয়েছে । ফলে পুলিশকে অনুদান দিতে হয় মাত্র যা ; তার ইনকামের এক শতাংশও নয়।

প্রশাসনকে হাতের মুঠোয় পেলে যা হবার তাই হয় - স্বেচ্ছাচারিতা বাড়ে, কেচ্ছার প্রাকার তৈরী হয় । তারও হয়েছে । আগে পৈতৃক নিবাসটুকুই ছিল সবেধন নীলমণি। একতলার ঘরগুলো ভাড়া দিয়ে কিছু ইনকাম হত । তা'তে বড়জোর খাওয়া পরা চলে যেত ।

বীরেশ্বর এত অল্পে সন্তুষ্ট নয় । সুতরাং আর্থিক উন্নতির জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিতেই হয় । ভাগ্য গুনে নেতাদের স্নেহ ভাজন হয়ে ওঠেন । মিটিং মিছিলে লোক ধরে আনার কাজ পান ।

এমনিতেই মস্তান ; তায় রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়া পেয়ে তিনি হয়ে ওঠেন ভয়াল ময়দানবের মত । বাম আমলে গ্রামের দিকে দেখেছিলেন নেতারা গৃহস্থের রান্নাঘর পর্য্যন্ত ধাওয়া করতেন । তিনি আরও একটু উন্নত পন্থায় কখনও কখনও কারও বেডরুমেও ঢুকে যেতেন , অবশ্যই গায়ের জোরে ।

ছেলে বুড়ো সবাইকে জড়ো করতেন মিছিলে । এ শুধু নেতাদের মন জয় করতে নয় ; তাঁর নিজেরও স্বার্থ ছিল। সুযোগ বুঝে কোন কোন বাড়িতে ডাকাতিও করিয়ে দিতে লাগলেন । বীরেশ্বরের নাম শুনলেই মানুষ জন ভেতরে ঢুকে পড়েন ।

তখন তাঁর সদ্য যৌবন । দুরমুশ করা শরীর নিয়ে শরীরচর্চায় কোন খামতি রাখেন না । জিমে যান বিনা পয়সায় । জিমের মালিক জানেন একটু এদিক ওদিক হলেই জিম ঝিমঝিম করবে।

একদিন বীরেশ্বর জিমে এসেছেন । তাঁর মত আরও কয়েকজন এসেছেন যাদের মধ্যে মিস তমালী দাসও ছিলেন ।

তমালী দাস কোন নামকরা পরিবার থেকে আসেননি । মা বাবার একমাত্র সন্তান । বাবা কেন্দ্রীয় সরকারের উচ্চ মধ্যবিত্ত অফিসার । মেয়ের সুরক্ষার জন্য তিনি ওঁকে জিমে দিয়েছিলেন রীতিমত টাকা খসিয়ে ।

বীরেশ্বর যেয়ে তমালীকে বলল - আই লাভ ইউ ।

তমালীর মনে বিশাল ঝড় উঠল । তাঁর গাট্টাগোট্টা চেহারা দেখে কোন ছেলে বা তার পরিবার তমালীকে পছন্দ করছিল না । এমতাবস্থায় কেউ তাঁকে প্রস্তাব দেবে তা' তমালীর ধারণার বাইরে ছিল ।

মিস তমালী দাস মনে মনে খুব খুশী হলেন। কিন্তু বীরেশ্বরের কাণ্ড -কারখানা তিনি জানতেন বলে গোল গোল করে চোখ পাকিয়ে তাঁর দিকে চাইলেন ।

বীরেশ্বর মানুষের অন্তর পড়তে জানেন । কি লেখা আছে তাতে তা' মনে করিয়ে দিয়ে বললেন - রাজী হও; না হও, কথার কোন হেরফের হবে না । আজই তুলে নিয়ে যাব । অবশ্য আশঙ্কিত হবার কারণ নেই ; আমি তোমাকে ..

তমালী অবাক। কোন কথাই মুখ দিয়ে বেরোচ্ছে না । শুধু চোখে চোখ রেখে চেয়ে আছেন ।

বীরেশ্বর কানের কাছে মুখ রেখে বললেন - ভেবো না ! আমি তোমাকে রাজরাণী করে রাখব । শুধু একবার ' হ্যাঁ ' বলে দেখ । অবশ্য না বললেও আমার কিছু এসে যায় না ।

হ্যাঁ বলে দিলে সময় দেব ; না বললে এখনই এখান থেকে তুলে নিয়ে যাব ।

তমালী নিজেকে যথাসম্ভব শান্ত রেখে বললেন - দেখুন, আমি বাবা-মার একমাত্র সন্তান ; তাঁরা আমাকে মেহনত করে বড় করে তুলেছেন । অন্তত তাঁদের একবার জানাই !

বীরেশ্বর বললেন - তার মানে তুমি রাজী ? ওকে ! জানিয়ে দাও । আমি বাইরে ওয়েট করছি ।

সর্বোত্তম দাস অর্থাৎ তমালীর বাবা ফোন পেয়ে আতঙ্কে শিউরে উঠলেন । মা শ্রীমতী দাস তো শুনে অজ্ঞান হয়ে যাবার মত দশা করে ফেললেন। সর্বোত্তম দাস মেয়েকে বললেন - সম্মতি জানিয়ে কোনমতে ওখান থেকে কেটে পড় । রাতেই আমরা দিল্লী চলে যাব । প্রয়োজনে গাড়ি ভাড়া নিয়ে এখান থেকে বেরিয়ে যাব ।

তমালী বললেন - ঠিক আছে বাবা । আমি এখনই বেরোচ্ছি ।

তমালীর এবং তাঁর বাড়ীর লোকেদের সম্মতি পেয়ে বীরেশ্বর তো নাচতে শুরু করলেন । বললেন - তবে আর দেরী কেন ? চল, সামনের মন্দিরে যেয়ে তোমার সিঁথি রাঙিয়ে দিই । রাতেই বাড়ীতে তুলব ।

তমালী তো মহা ফ্যাসাদে পড়লেন । ভেবেছিলেন বীরেশ্বর সম্মতি পেলে নিয়ম মেনে বিয়ের ব্যবস্থা করবেন । দুই বাড়িতে যোগাযোগ হবে । এ তো যেন উলট পুরাণ । তিনশ ষাট ডিগ্রি ঘুরে যথাস্থানে ।

অনুনয় করে বললেন - দোহাই আপনার । বিয়ে বলে কথা। হুটোপুটি করতে নেই । আমরা রেডি হই , আপনার বাড়ীতেও রেডি হতে বলুন । তারপর নিয়মানুযায়ী বিয়ে হোক না !

বীরেশ্বরের মুখে চওড়া হাসি । আর রাবণের মত গোঁফে তখন ভ্রুকুটি খেলা করছে । বললেন - মুখ থেকে কথা বেরিয়ে গেলে আমি আমার বাপকেও চিনি না । আমার কথার কোন নড়চড় হবে না । চল ।

তমালী কেঁদে ফেললেন। হাতে পায়ে ধরে কত অনুরোধ উপরোধ করেও যখন লাভ হল না ; তখন মরীয়া হয়ে রুখে দাঁড়ালেন ।

বীরেশ্বরের এমন কাণ্ড দেখে জিমের সকলে একবাক্যে তার প্রতিবাদ করতে লাগলেন। বীরেশ্বরের আসল স্বরূপ বেরিয়ে এল ।

হাতে উঠে এল ওয়েভলি এম কে ৬ পিস্তল। দু'বার শুন্যে গুলি ছুঁড়ে দেখিয়ে দিলেন আওয়াজ ফাঁকা নয় । যে যেমন এসেছিলেন সকলেই সরে পড়লেন ।

নিরুপায় তমালী মন্দিরে সিঁথিতে সিঁদুর নিয়ে বীরেশ্বরের সঙ্গে রওনা দিতে বাধ্য হলেন ২৬/২ সূর্য্যসেন স্ট্রীটের দিকে ।

সর্বোত্তম দাস থানায় ডায়েরী করলেন - সামওয়ান বীরেশ্বর রক্ষিত কিডন্যাপড হিজ ডটার তমালী দাস ফ্রম এ জিম হোয়েন সি ওয়াজ অন দ্য ওয়ে টু হোম ।

ডিউটিরত অফিসার ডায়েরী নিলেন । এটা তাঁর ফর্মালিটি রক্ষা করতে । তিনি জানেন বীরেশ্বরকে । কিছু একশন নিতে গেলেই পার্টির লোকজন এসে থানা ভাঙচুর, মারধোর করবে ।

তিনি প্রথমে বোঝানোর চেষ্টা করলেন সর্বোত্তম দাসকে ।

বললেন - আপনি যদি বলেন এখনই আপনাকে বীরেশ্বরের বাড়ীতে নিয়ে যাচ্ছি । বীরেশ্বর তো মেয়েদের নিয়ে কখনও কোন কাণ্ড ঘটায়নি ; অন্তত তেমন কোন রিপোর্ট আমরা পাইনি ।

মিঃ দাস বললেন - চলুন যাওয়া যাক ।

অফিসারটি ভারপ্রাপ্ত ইনচার্জকে ঘটনাটি জানালেন। কি কথা হল জানা না গেলেও অফিসার সর্বোত্তমকে নিয়ে চললেন বীরেশ্বরের বাড়ীতে।

তখন সেখানে মহা ধুমধামে বধূবরণ পালা চলছে । শঙ্খ, বাদ্য, আরত্রিক দিয়ে নববধূকে বরণ করছেন বীরেশ্বরের মা সরোজিনী দেবী এবং বাবা ত্রৈম্বকেশ্বর রক্ষিত ।

বাড়ীতে পুলিশ এসেছে শুনে বীরেশ্বর নিজে এসে অভ্যর্থনা জানালেন - আসুন আসুন অফিসার। খুব আনন্দিত হলাম আপনারা এসেছেন বলে ।

সর্বোত্তম বাবুর পরিচয় পেয়ে প্রণাম করলেন শ্বশুরমশাইকে । সর্বোত্তম গর্জে উঠলেন - দেখুন দেখুন অফিসার, একটা ক্রিমিনালের কাণ্ড দেখুন নিজের চোখে । এই যে ছেলে ! ( বলা বাহুল্য বীরেশ্বরকে লক্ষ্য করে বললেন ) তোমার স্পর্ধা দেখে তো অবাক হচ্ছি । কি ভেবেছ দেশে আইনকানুন নেই ?

বীরেশ্বর অত্যন্ত নম্র স্বরে বললেন - আমি তো কোন অন্যায় করিনি ? বিশ্বাস না হলে নিজের মেয়েকেই জিজ্ঞেস করে নিন !

( চলবে )



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Action