Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Aparna Chaudhuri

Comedy

1  

Aparna Chaudhuri

Comedy

পুজোর ভোগ খাওয়া ও আড্ডা

পুজোর ভোগ খাওয়া ও আড্ডা

4 mins
1.0K


সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী এই তিনটে দিন আমরা মোটামুটি প্যান্ড্যাল এই থাকি। সকালবেলায় স্নান সেরে, সেজে গুজে অঞ্জলি দিতে যাওয়া। অঞ্জলির পর প্যান্ড্যালে বসে নির্ভেজাল আড্ডা (বাঙালীর মত আড্ডাবাজ জাতির প্রধান উৎসবে আড্ডা হবেনা তা কি সম্ভব?)। তারপর ভোগ খাওয়া। তারপর বাড়ী এসে একটু গড়িয়ে নিয়ে বিকালবেলায় আবার সেজে গুজে মণ্ডপে যাওয়া। সারা সন্ধ্যা পুজোর অনুষ্ঠান দেখা, আড্ডা মারা, চা আর ভেজিটেবিল চপ খাওয়া, তারপর রাতের খাওয়া খেয়ে বাড়ী ফেরা। এই হচ্ছে মোটামুটি আমাদের পুজোর রুটিন।

তখন আমরা সবে সবে নাগপুর গেছি। আমরা বন্ধুরা মিলে ঠিক করলাম, অষ্টমীর দিন সকালে আমরা সবাই এক রকম শাড়ী পরবো। যেমন কথা তেমনি কাজ। সবাই একরকম সাদা ঢাকাই সোনালি পাড় কিনলাম, তার ব্লাউজও বানানো হল। প্রায় পঁয়তাল্লিশ মিনিট ধরে অনেক চেষ্টা করে কাগজের মত কড়মড়ে ঢাকাই শাড়ীটাকে কোনরকমে গোটা ছয়েক পিন লাগিয়ে পরে ফেললাম। শাড়ীর সাথে ম্যাচ করে গলায় একটা সোনার চেনও পরলাম। তারপর ঘামতে ঘামতে পৌঁছলাম প্যান্ডালে অঞ্জলি দিতে। গিয়ে দেখলাম বাকি সবাই এসে গেছে কল্পনা আর অরিজিত ছাড়া। অঞ্জলির পর আমরা সবাই প্যান্ডালে গোল করে চেয়ার সাজিয়ে আড্ডা দিতে বসলাম। একজন খুব sophisticated মহিলা এসে আমাদের গ্রুপের শ্রুতি , বিপাশা, দিয়াদের সাথে গল্প করে গেলেন। শ্রুতি পরিচয় করিয়ে দিলো,” ইনি হচ্ছেন রমা বৌদি, মধুদার স্ত্রী।“ উনি চলে যাবার পরই মিতা বলে উঠলো,” মধুদা মানে কি সেই মধুদা?” সকলের মুখেই একটা দুষ্টুমি ভরা হাসি খেলে গেলো। আমি ভেবলির মত তাকিয়ে আছি দেখে ওরা আমাকে জানাল যে, মধুদা খুবই ভালো মানুষ, শিক্ষিত, ভালো চাকরি করেন কিন্তু ওনার একটাই দোষ। সুযোগ পেলেই জড়িয়ে ধরেন। সেই কারণে উনি প্যান্ডালের যেদিকে থাকেন তার আশপাশটা মেয়েরা এড়িয়ে চলে। এই রকম রসালো আলোচনা যখন দারুণ জমে উঠেছে , হঠাৎ হাপাতে হাপাতে কল্পনার আবির্ভাব। আমরা একসঙ্গে চেঁচিয়ে উঠলাম, “কিরে! এতো দেরি?”

“আর বোলোনা , অরিজিতের কেনাকাটা আর শেষ হয় না। আজ দোকানে গিয়ে পাঞ্জাবি কিনলো। সে কিছুতেই পছন্দ হয় না। ঝাড়া দু ঘণ্টা আমি trial রুমের সামনে দাঁড়িয়ে, আর সে একটার পর একটা জামা ট্রাই করেই চলেছ।“

“তা শেষ মেশ কেনা হল?”

“হ্যাঁ, পরে এসেছে তো, দেখোনা।“ এই সূত্রে বলে রাখি আমাদের অরিজিত দেখতে খুবই সুপুরুষ আর সাজগোজের ব্যাপারে খুব পারফেক্ট । জিম করা পেটানো চেহারা। Branded জামাকাপড় ছাড়া পরেনা। দেখে ওর বয়স বোঝা যায় না। পূজা মণ্ডপে প্রায়ই ওর বিয়ের সম্বন্ধ আসে। একবার তো ব্যাপারটা অরিজিতের মা অবধি গড়ায়, মাসিমা ভীষণ ঘাবড়ে গিয়ে ওর মেয়েকে কোলে নিয়ে সেই ভদ্রমহিলাকে দেখিয়ে তবে তাকে ক্ষান্ত করেন।

ভোগ খাবার জন্য ডাক পড়ল। আমরা কুপন আর চামচ নিয়ে ভোগ খাবার জন্য তৈরি। আমাদের বরেরা অন্য কোথাও আড্ডা মারছিল কিন্তু ডাকশুনে গুটি-গুটি আমাদের কাছে এসে হাজির হল। খাবার লাইনে দাঁড়িয়ে হঠাৎ শান্তনু আমাকে জিজ্ঞাসা করলো, “তোমার গলার চেনটা কোথায়?” আমি গলায় হাত দিয়ে দেখি সত্যি, চেনটা নেই। সব বন্ধুরা মিলে খুঁজতে শুরু করলো। কোথাও পাওয়া গেলনা। তখন মাইকে অ্যানাউন্স করানো হল। মাইকে ধীরেনদার গলা শোনা গেলো, ”একটি সোনার চেন হারিয়ে গেছে, সকলের কাছে অনুরোধ, যদি কেউ পেয়ে থাকেন তো আমাদের অফিসে শ্রীমতী অপর্ণা চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করুন, কুপন নম্বর ১৫১ থেকে ৩০০ ভোগ খেতে চলে আসুন, গাড়ী নম্বর এম এইচ ৫৬৩২ এর মালিককে অনুরোধ করা হচ্ছে গাড়ীটিকে গেটের সামনে থেকে সরিয়ে নিন, একটি সোনার চেন......”

প্যান্ডালে যত লোক ছিল সবাই খুঁজতে লাগলো। কিন্তু কোন ফল হল না। আমার খুব মন খারাপ হয়ে গেলো। কোনোরকমে ভোগ খেয়ে বাড়ির দিকে রওয়ানা হলাম।

বাড়ী এসে আঁচলের পিনটা খুলতেই একটা ঝনাৎ শব্দ করে চেনটা মাটিতে পড়লো। সঙ্গে সঙ্গে আমি ফোন লাগালাম মিতাকে, “চেনটা পেয়ে গেছিরে! সবাইকে বলে দিস। চেনের এসটা আলগা ছিল তাই ওটা খুলে আঁচলের প্লিটের মধ্যে পড়ে গিয়েছিল। বাড়ী এসে পিনটা খুলতেই চেনটা মাটিতে পড়লো।“

“উফ বাঁচালি! এতক্ষণ ধরে তোর কথাই হচ্ছিল।“

বিকালে যখন মণ্ডপে ঢুকছি তখন পরিচিত, অপরিচিত অনেকেই আমাকে জিজ্ঞাসা করতে লাগলো যে আমি চেনটা পেয়েছি কিনা। পেয়েছি শুনে সবাই খুশি।

আমাদের দলের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়েছি। সবাই একসাথে বলে উঠলো, ”আসুন ম্যাডাম! সকালে যা দিলেন।“ বেশ হাসাহাসি হচ্ছে এমন সময় দেখি একজন ভদ্রলোক তীর বেগে আমার দিকে এগিয়ে আসছেন দু হাত বাড়িয়ে,” অপর্ণা আপনি চেনটা পেয়ে গেছেন?” মুহূর্তের মধ্যে মিতা পাশের চেয়ারে সরে গিয়ে আমাকে এক হ্যাঁচকা টানে ওর চেয়ারের উপর বসিয়ে দিলো। ভদ্রলোকের হাতটা আমার মাথার উপর দিয়ে সাই করে বেরিয়ে গেলো। মিতা চাপা গলায় বলল,” মধুদা!”

মধুদা লক্ষ্য ভ্রষ্ট হয়ে কিরকম ভ্যাবাচেকা খেয়ে,”আমি খুব খুশি হয়েছি, খুব খুশি হয়েছি” বলতে বলতে চলে গেলেন। আমি মিতার হাতটা ধরে বললাম “থ্যাঙ্ক ইউ !” ওর সপ্রতিভ উত্তর,” You are always welcome dear!”


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Comedy