Mitali Chakraborty

Abstract Drama Inspirational

3  

Mitali Chakraborty

Abstract Drama Inspirational

উৎসব:-

উৎসব:-

3 mins
264


ছোট্ট গুড়িয়া আজকে খুব খুশি। দাদু দিদার বাড়ি যাচ্ছে সে। শহরতলী থেকে দূরে এক ছোট্ট জায়গা শ্যামলীনগর সেখানেই অবস্থিত নির্মল-কুটির। গুড়িয়ার দাদুর বাড়ি। গুড়িয়ার দাদু উৎপলবাবুর স্বর্গীয় পিতার নামেই এই বাড়ির এরূপ নামকরণ। উৎপল বাবুর স্ত্রী বীণাদেবী ভক্তি বৎসল এক নারী। যবে থেকে বিয়ে হয়ে নির্মল কুটিরে এসেছেন তবে থেকেই একের পর এক পূজাপালনের নিয়ম নীতি এবং পদ্ধতি শিখে নিয়েছিলেন নিজের শাশুড়ি মায়ের কাছ থেকে। কালের নিয়মে ক্রমে ক্রমে বীণাদেবীর শ্বশুর শাশুড়ি সকলেই সংসারের মায়া ত্যাগ করে অচিনপুরে চলে গেলেও বিণাদেবী ভক্তি ভরে এখনও পালন করে চলেছেন বিভিন্ন পূজাপার্বণ সহ নানাবিধ আচার অনুষ্ঠান।


এই বছরও নির্মল কুটিরে উৎপলবাবু আর বীণাদেবীর তত্ত্বাবধানে মাঘ মাসের কৃষ্ণ চতুর্দশীতে নিয়ম মেনে অনুষ্ঠিত হবে রটন্তী কালীপুজা। ঐদিনেউৎসবের আমেজে মেতে ওঠে তখন সমগ্র নির্মল কুটির। অনেক লোক আমন্ত্রিত হন উৎপল বাবুর বাড়িতে মায়ের মহাপ্রসাদ গ্ৰহন করার জন্য। খরচাপাতিও হয় খুব। উৎপল বাবু আর বীণাদেবীর একমাত্র সন্তান তন্দ্রার বিয়ে হয়ে গেছে প্রায় তিন বৎসর অতিক্রান্ত।

পরিবারের উৎসব অনুষ্ঠানে যেনতেন প্রকারেন তন্দ্রা তার কর্তা অবিনাশ আর কন্যা গুড়িয়াকে নিয়ে বাপের বাড়ি আসে। বিশেষ করে এই রটন্তী কালীপূজা এবং দুর্গোৎসবের সময়তো তন্দ্রার বাড়িতে আসা চাইই চাই। কিন্তু এবছরের রটন্তী কালীপুজো করা নিয়ে উৎপল বাবু একটু সন্দিহান ছিলেন। মুখ ফুটে কাউকে কিছু বলতেও পারছিলেন না আর ভেতরে ভেতরে এক চাপা উৎকণ্ঠায় ভুগছিলেন তিনি। উৎপল বাবু এখন রিটায়ার করেছেন। যা পেনশন পান তা দিয়ে দুজনের খাওয়া পড়া হয়তো হয়ে যায় ঠিক ভাবে কিন্তু সমস্যা হয় যখন বীণাদেবী বিভিন্ন পূজাপালি করা নিয়ে অনেক প্রকার জিনিস কেনার ফর্দ ধরিয়ে দেন তাকে। বীণা দেবী বুঝতে পারেন কিন্তু এত বছরের অভ্যাস বশত কোন জিনিস বাদ দেবেন আর কোনটা না,তা ঠাহর করে পান না। এবারও একই অবস্থা।বাড়িতে এত বড় উৎসবের আয়োজন করা তথা তন্দ্রা, অবিনাশ, গুরিয়ার জন্য উপহার তাছাড়া পূজাবাবদ এত খচর আর এত লোকের জন্য মহাপ্রসাদের ব্যবস্থা করা পেনশনের এই স্বল্প টাকায় কিভাবে সম্ভব হবে এই ভাবতে ভাবতেই দিন ফুরিয়ে যায় উৎপলবাবুর। উৎপল বাবুকে চিন্তিত দেখে বীণা দেবীও কেমন আনমনা হয়ে থাকেন। একদিকে এত বছরের প্রচলিত পুজো আর অপর দিকে বহুল ব্যয়ভার। উৎপল বাবুর সঙ্গে কথা বলে যতটা বুঝলেন এই বছর বোধহয় খুব বেশি ঘটা করে কালীপুজো করা সম্ভব হবে না। ভাঙ্গামনে এক দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে কপালে হাত দুখানি জরো করে বীণা দেবী অস্ফুটে বলেন, "মা গো।এইবছর তোমার পূজাটা সাধারণ ভাবে করবো বোধহয় মা।"


নির্মল কুটির ঝলমল করছে আজ আলোক সজ্জায়। থেকে থেকে ভেসে আসছে ঢাকের আওয়াজ। মাঘের হালকা শীতের পরশ গায়ে ছুঁইয়ে অনেকেই আসছেন শ্যামামায়ের অপরূপ রূপ দর্শন করতে। আর


ওই প্রান্তে পন্তক বসিয়ে পরিবেশন করা হচ্ছে মায়ের মহাপ্রসাদ। শ্যামামায়ের মনোহরণ অপরূপ প্রতিমার দিকে নিষ্পলক তাকিয়ে আছেন বীণাদেবী। থেকে থেকে সেই দিনের কথাগুলো মনে আসছে ওনার। সেদিন বিকেলে তন্দ্রা যখন জানতে পারে উৎপল বাবুর আর্থিক অসঙ্গতির কারণ, আর তার ফলে যৎসামান্য আয়োজনে কালীপূজা সম্পন্ন করার কথা সেদিনই সন্ধ্যাবেলা ফোন আসে অবিনাশের। উৎপল বাবুর সঙ্গে কি কথা বলেছিল অবিনাশের সেটা পরে জানতে পারেন বীণাদেবী। ঘটনাটা হয়েছিল এইরূপ। তন্দ্রার কাছ থেকে পুরো ব্যাপারটা শোনার পরেই অবিনাশ ফোন করে উৎপল বাবুকে বলে, "বাবা আপনি চিন্তা করবেন না। তন্দ্রার বিয়ে হয়ে গেছে বলে সে আপনাকে আর্থিক দিক দিয়ে সাহায্য করতে পারবেনা সেটা তো নয়। আমিও তো এক কন্যার বাবা হয়ে গেছি এখন। আমিও বুঝি এখন সব।


আপনি দুশ্চিন্তা করবেন না। আমি আর তন্দ্রা আমরা দুজনে মিলে সাহায্য করবো আপনাকে। আর্থিক টানাটানির জন্য এত বছরের প্রচলিত প্রথাটা ভাঙবেন না বাবা। আর আমরা সবাই আসবো পুজোতে যোগদান দিতে। নিশ্চিন্তে থাকুন আপনি আর মা...."

ছোট্ট নাতনি গুড়িয়া এসে দিদাকে জড়িয়ে ধরতেই সম্বিৎ ফিরে বীণাদেবীর। জল ছলছল চোখে নাতনিকে কোলে নিয়ে দেখেন উৎপল বাবু আর অবিনাশ ওইদিকে অতিথিদের আপ্যায়নে ব্যস্ত আর তন্দ্রা পুজার জোগাড়যন্ত্রে লিপ্ত। নিমেষে ছলাত্ করে বীণাদেবীর চোখ বেয়ে পড়ে একফোঁটা আনন্দাশ্রু। সত্যি, উৎসবের পরিপূর্ণতা তো সেখানেই যেখানে পুরো পরিবারের সকলেই সকলের জন্য ভাবে, সকলের জন্য চিন্তা করে।

    




Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract