তর্পণ
তর্পণ
একটা সুদীর্ঘ পিঁপড়ের লাইন... একটা বাজ-পড়া গাছের গোড়া থেকে আর একটা ঝোপের আড়ালে চলে যাচ্ছে শরনার্থীদের মত। আর তাদেরই সমান্তরাল... এক চিকচিকে রেখার মত বয়ে চলেছে চিনছাকি নদী।
নদীর জল যেখানে কোমর সমান, সেখানে স্রোতেরও একটা টান আছে। সেখানে শুকনো পাতার সঙ্গে মাঝে মাঝে গাছের শুকনো ডালও ভেসে যায়... কাশ্মিরী হ্রদে শিকারার মত। স্বচ্ছ ধারা, স্রোতে ঢেউ তুললে ঘোলা হয় জায়গায় জায়গায়। পায়ের তলা থেকে আলগা বালি সরিয়ে নেওয়া টান উপেক্ষা করে যে কোমর জলে দাঁড়িয়ে আছে, তার মুখ দেখতে পাচ্ছে না সভ্যতা। সে মুখ ফিরিয়ে আছে পাহাড়ের দিকে। তার পিঠে চাবুক মেরে গেছে চাঁদের ঠান্ডা আলো। তার পায়ের রক্ত চুষে ফুলে উঠেছে সমতলের জোঁক। তার কাঁধের কাছে সদ্য নেভা দাবানলের ছ্যাঁকা।
এ নদীর জলে প্রতিবিম্ব ভেসে ওঠে। পাহাড়, গাছ বা মেঘের প্রতিবিম্ব নয়... হারিয়ে যাওয়া করুণ
মুখচ্ছবি; মাঝনদীতে এসেই চলে যায়।
সে অঞ্জলিপূর্ণ নদীর জল নিয়ে মাথা নিচু করে তাকিয়ে রইল জলের দিকে। একে একে এসে চলে গেল -- প্রবীণ মহীরূহ, মেঘরঙা চিতাবাঘ,হস্তিকুলের লোলচর্ম বৃদ্ধ প্রপিতামহ, সন্তানহারা হরিণী, ডানা ভাঙা বাজপাখি... এবং আরও অনেক কাঁপা কাঁপা প্রতিবিম্ব। অনেকেই অপরিচিত। সবাই হারিয়ে গেছে। আর কোনওদিনই ফিরে আসবে না।
নদীর জল, নদীর বুকে ফিরিয়ে দিয়ে কোমর জলেই ডুব দিল সে। নদীর পাড়ে এসে ঠেকলো তার কোমর থেকে খসে পড়া একটা আধপোড়া ছোট বাঁশি।
ডুব দিয়ে উঠে, সে ধীরগতিতে চলে যাবে নদীর অন্য পাড়ে ... তবুও, এদিকে ফিরে তাকাবে না।
আন্দাজেই পুরুষ বলে কল্পনা করে নেবে?
যে মুখ ফিরে তাকায়নি, তার মুখ কেমন... তা কোন পরিচয়পত্র দেখে শনাক্ত করবে?
পোড়া বাঁশিদের কোনও নাগরিকপঞ্জী হয় না।