আবহ সংগীত
আবহ সংগীত
মরচে-পড়া ছিটকিনি খোলার মত দিন শুরু হয়। সায়ার দড়িতে কার হাত টান দিচ্ছে, তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নরা তাড়া করে।
আয়নায় তাকিয়ে সিঁথিতে চিরুনির কোণ দিয়ে সামান্য সিঁদুর ঠেকানো। ওতে বিপত্তারিণীর সিঁদুর মেশানো। ধূপ-কাঠি জ্বালিয়ে চারদিকে ঘুরিয়ে নেওয়া। তারপর চা-মুড়ি খেয়েই প্রথম বাড়িটার দিকে হাঁটা।
রাত যেমনই কাটুক, চারটে বাড়ি... সময়ের হিসেব!
হিরোদের ছবিগুলোর রঙ জ্বলে গেছে। গদিটা ফাটা, সিটটাও লগবগে। সারাতে গেলেও গা কড়কড় করে!
দুজনে রুটি-ঘুগনীর দোকান দেওয়া যায়, কিছুতেই রাজী হচ্ছে না!
দেখার কেউ ছিল না... অন্য মেয়েছেলের সঙ্গে বর কেটে পড়েছিল, তিন বছর আগে। দু-বাড়ির কাজ পর্যন্ত বলে কয়ে জোটানো। আজকাল শুতেও আপত্তি করে না। শুধু একবার সিঁদুর কৌটোটা ফেলতে যেতেই টেনে চড় মেরে দিয়েছিল।
রুটি-ঘুগনী, চা-ডিম-পাউরুটি... এসব বিকল্প ভেবেও রিকশাটা ছাড়তে পারছে না রতন। দুদিন আগে...
সন্ধের মুখে, বেল-ফুলের মালা আর কাঠি-আইসক্রীমটা নিয়ে আরতির ঘরে ঢুকতে গিয়েই দেখল আরতির বর পা-ছড়িয়ে মেঝেতে বসে চা খাচ্ছে। আর আরতি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে যত্ন করে সিঁদুর দিচ্ছে সিঁথিতে।
মালা আর আইসক্রীম, দুটোই পড়ে গেল মাটিতে। সেই শব্দ ঘরের ভেতরে যেতেই দ্রুত পিছিয়ে গেল রতন।
কমলা কাঠি-আইসক্রীম গলতে থাকে। সবটুকু গলতে যতটা সময় লাগে... সেও একরকম সৎকার-প্রক্রিয়া। সবটা শেষ হওয়ার অপেক্ষা। রস লীন হবে। পড়ে থাকবে কাঠি-অস্থি।
রাত বাড়লে, মাতাল রিকশাওয়ালাদের মাথার ভেতর আবহ সংগীত বাজে... কেউ বিশ্বাস করে না!