Joydip Chatterjee

Abstract Horror Classics

4.3  

Joydip Chatterjee

Abstract Horror Classics

জাল ছিঁড়ে ছিঁড়ে

জাল ছিঁড়ে ছিঁড়ে

3 mins
540


- সিটটার কী হ'ল?

- অ্যাঁ?

- তোমার বসার সিটটা কী হ'ল?

- ও... ভেঙে গেছে।

- তা ভাল করে কাপড় বা কিছু একটা দিয়ে মুড়িয়ে নাওনি কেন? 

- ওই নিয়েছি তো... গামছাটা দিয়ে বেঁধে নিলাম...

- কিন্তু এর ওপর তো বসতে পারবে না... একটু ভাল করে...

- না না... বসা যাবে না। তা কি বসা যায়? লাগবে না? খুব লাগবে বসলে! 

- সেই তো! 

- আজই দুপুরে ভাঙল... ভেঙে গেল, তাই ঘর চলে গেলাম। 

-

- আসলে সিটটা ভাঙতে মনটা এত খারাপ হয়ে গেল... কোনও কিছু ভাঙলে মনটা কেমন খারাপ হয়ে যায়!

- হুম।

- তারপর সন্ধেবেলা ভাবলাম, ঘরে বসে থেকেই বা কী করব? বেরোই একটু! কিছু রোজগারও হবে। 

- সেই... কাজ কী আর বসে থাকে?

- সারিয়ে নেবো... কালই সকালে নিয়ে যাবো সারাতে। 

- হুম, অসুবিধে হবে তোমার। 

- সে হোক। অসুবিধেটা ব্যাপার নয়। আসলে... সব কিছু তো আর ভাঙলে সারানো যায় না। যেটা যায়, সারিয়েই নেবো। 

- নতুন সিট কিনব না, আগেরটাই সেট করে নেবো আবার। 

- করা যাবে?

- চেষ্টা করতে হবে... চেষ্টা করে দেখব না? নতুনই আনতে হবে কোথাও লেখা আছে?

- লেখা থাকলেই বা মানতে হবে কেন?

- একদম! আমার রিকশা, আমার সিট... মানব কেন?

-

- ধ্যাৎ! 

- কী হ'ল?

- একটা মাকড়শার জালের মত কী একটা লাগল মুখে।

- সেকি... হাওয়ায় ভাসছিল হয়ত। 

- জানি না... মাঝে মাঝে হয়... গাছতলা দিয়ে যেতে যেতে। কী কোথায় ভেসে থাকে, ঝুলে থাকে... কে জানে। 

- হুম... কত রকম পোকা-মাকড়। কী সব ওড়ে...

- হ্যাঁ... বললে বিশ্বাস করবেন না... একবার একটা রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে মনে হচ্ছিল একের পর এক জাল ছিঁড়ে এগোচ্ছি। বারবার মুখে এসে মাকড়শার জালের মত লাগছে। 

- এসব ব্যাপার স্যাপার আছে। রাতে অনেকরকম এরিয়া দিয়ে রিকশা চালিয়ে যেতে হয় তো। মাঝে মাঝে চেনা রাস্তাও ব্যোম খেয়ে থাকে। যেন বেওয়ারিশ পড়ে আছে। 

-

- একবার একটা রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে মনে হ'ল বারুদের গন্ধ, ওই বাজী-টাজি পোড়ালে যেমন হয়। একটা বেদির সামনে কেউ উপুড় হয়ে পড়ে আছে। আমি প্যাডেল মেরে চলে গেলাম, মাতাল ফাতাল কে আছে... আমার কী দরকার? পরে শুনলাম দিন পাঁচেক আগে ওখানে পেটোফেটো ছুঁড়েছে। একজন ওই বেদির কাছেই... 

-

- না না... রক্ষে কালীর দিব্যি... নেশা-ফেশা করিনি। কী ছিল কে জানে! 

- এটা লাস্ট ট্রিপ, না এর পরেও আছে?

- কেন?

- না এমনি...

- হা হা হা... মদ আমি ছুঁই না... মা খুব কেঁদেছিল একবার, তারপর থেকে... এখন তো পাতা, তামাক... সেসবও ছেড়ে দিয়েছি। 

- বিড়ি?

- খাওয়াবেন? আজ হেব্বি ঠান্ডা মাইরি! ঠিকই বলেছেন... এটাই লাস্ট। আর টানব না। ঘরে ঢুকে সোজা ক্যাঁতার ভেতর চালান!

- সেই ভাল। 


পনেরো টাকার বদলে কুড়ি টাকা দিয়ে ফেরত নিতে চাইলাম না। বললাম বিড়ি কিনে নাও। বলল, "না দাদা... দিলে ভাল লাগে... কিন্তু বাড়তি টাকা... সেই তো নিজের টাকা খরচ করেই কেনা হবে... হে হে"। 

মনে হ'ল, রিকশাভাড়াটা পারিশ্রমিক, তার সঙ্গে বকশিশ বা উপহারকে মিশিয়ে ফেলতে চাইছে না। 

পকেট থেকে দুটো সিগারেট বার করে দিলাম। বাচ্চা ছেলের মত হেসে সোয়েটারের আড়ালে বুক পকেটে পুড়ে নিলো। 


রিকশায় উঠে প্যাডেল মেরে এগিয়ে যেতে যেতে বলল - "এইটুকু তো রাস্তা, ওইটুকুই সময়... ক'টা কথাই বা হয়। মাঝেসাঝে একসাথে যাওয়া আসা করলে আলাদা ব্যাপার। সিটটা আমি সারিয়ে নেবো কালই... মনটা খুব খারাপ, এখন ঘরেই যাই!"


কাছাকাছি স্ট্যান্ডের রিকশা নয়। আগে দেখিনি, পরেও দেখলে চিনতে পারব না। কান-ঢাকা টুপি পরা রোগা-পাতলা লোকটা দাঁড়িয়ে প্যাডেল করতে করতে দূরে চলে গেল... কোনও কিছু ভেঙে যাওয়ার স্মৃতি আর ব্যক্তিগত মনখারাপ নিয়ে। 

ওই রাস্তার দুপাশে আবার গাছপালা বেশি। লোকটা বলেছিল -- মাকড়শার জাল ছিঁড়ে ছিঁড়ে যেতে হয়!



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract