আচ্ছা
আচ্ছা
এই নিয়ে আজ পর পর চার দিন ধারেই চাল-ডাল নিয়ে যেতে হ'ল। একটা খাতা আছে, সেই খাতায় নবীন কাকা হিসেব লিখে দেয়। তারিখ, জিনিসের নাম আর দাম। নবীনও জানে, মাসের শেষ হয়ে গেলেও এই ধার সবটা শোধ হবে না। তবু অনেকদিনের চেনাজানা। প্রতিবেশী। বিপদে-আপদে সামান্য ক'টা টাকার জন্য তাগাদা দিতে মন চায় না। আবার ছাড়তে শুরু করলে ব্যবসাটাই ছেড়ে দিতে হয়।
রুনুর মা আজকাল আর দোকানে আসে না। মেয়েকেই পাঠায় জিনিস আনতে। রুনুর হাতের কাঁচের চুড়িগুলো যেন আরও বড়ো হয়ে গেছে, ঢলঢল করছে। মাথার চুলও যেন সামান্য পাতলা হয়ে গেছে কপালের কাছে। অপুষ্টি? না দুশ্চিন্তা? নবীন কাকার সঙ্গে বিশেষ কথা হয় না। বলার মত আর আছেই বা কী?
হয়ত ছুটতে ছুটতে এসেছে। ঘামছে, জোরে জোরে নিঃশ্বাস পড়ছে। নবীন জিনিসগুলো ঠোঙায় পুরতে পুরতে বলল 'জল খাবি?' রুনু মাথা নেড়ে বুঝিয়ে দিল-- ‘না’। হাত পেতে ঠোঙা দুটো নিয়ে পেছন ফিরতেই নবীন বলল "দু মাসের মাল নিয়ে বাকি তো হাজার পার হয়ে গেল রে। মাকে বলিস একটু।" রুনু ঠোঙাদুটো বুকের কাছে ধরে পেছন ফিরে বলল "আচ্ছা।"
এর বেশি কিছু বলার নেই। রুনুর বাবা জামিন না পাওয়া অবধি এমন অনেককেই 'আচ্ছা' বলে যেতে হবে রুনু আর ওর মাকে।
"আচ্ছা আচ্ছা করে কি চলে মা? আমার দিকটাও তো দেখতে হবে। মাকে বলবি পরের বার যেন নিজে আসে দোকানে।"
রুনু আবার 'আচ্ছা' বলে মাথা নেড়ে এগিয়ে যাচ্ছিল। হঠাৎ নবীন জিজ্ঞেস করল - "হ্যাঁরে... তোর বয়স কত হল রে?"
ঠোঙা দু'টো সামলাতে গিয়ে রুনুর হাত থেকে ঠক করে পড়ে গেল হিসেবের খাতাটা।