তিন জনে:-
তিন জনে:-


সকাল থেকে শরীর খারাপ লাগছে তিথির। মাথা ঘুরছে, বমি বমি ভাব। তার শাশুড়ী মা সুজয়া দেবী একটু বুঝতে পেরেছেন মনেহয়। মুখে এক চিলতে হাসি টেনে বললেন
-- সুখবর আছে মানে হচ্ছে বউমা।
তিথি এই ক্লান্ত শরীরেও একটু হেসে বলে
-- তাই যেন হয় মা।
আসলে বিগত ৩ বছর ধরে অনেক চেষ্টা করেও তিথি আর অর্পণ বাবা মা হাওয়ার সুখ থেকে বঞ্চিত। অনেক ডাক্তার, বদ্যি, মানত, চিকিৎসা করেও সম্ভব হচ্ছিল না তিথির পক্ষে মা হওয়া।এত্তবছর পরে তিথির শরীরে মাতৃত্বের লক্ষণ গুলি দেখতে পাচ্ছেন সুজয়া দেবী। শাশুড়ি মায়ের কথায় আশান্বিত হয় তিথিও। অর্পণ নিজেও সৎসাহে তিথি কে নিয়ে সেদিন রওনা হয় ডাক্তার খানায়। সমস্ত টেস্ট রিপোর্ট নরমাল আসলে পরে স্বভাবতই খুশির জোয়ার সুজয়া দেবীর পরিবারে। সবকিছু চলছিল সুন্দর ভাবেই, তিথি আর অর্পণ তখন সাদাচোখে নতুন অতিথির আগমনের স্বপ্নে বিভোর। তিথি ক্রমাগত পার করে চলেছে গর্ভাবস্থার একের পর এক ধাপ। সুজয়া দেবী যথেষ্ট যত্ন নিতেন তিথির। অনেক আশীর্বাদ করতেন তিথি কে। উৎসুক ছিলেন নিজের নাতি না নাতনির মুখটি দেখার জন্য। আকুল উৎসাহে প্রহর গুনছিলেন সুজয় দেবী। কিন্তু যেখানে সুখের আলো সেখানে দুঃখের আঁধার বোধ করি দ্রুততার সঙ্গে চলে আসে। তিথি আর অর্ণব সঙ্গেও তাই হলো।
হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে অকালেই সুজয়া দেবী সমস্ত মায়া কাটিয়ে হারিয়ে গেলেন তেপান্তরের দেশে। মনমরা হয়ে পারে থাকে তিথি। ক্রমে ক্রমে তিথির স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটতে থাকে তখন। অর্ণব এই অবস্থায় তাকে বাপের বাড়িতেই রেখে আসে। সেখানে গিয়ে নিজ পরিবারের সঙ্গে থাকতে থাকতে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করে তিথি।
আজ সেই বিশেষ দিন আগত। আজ তিথির ডেলিভারি। অর্ণব সহ পরিবারের সকলের মনে চাপা উত্তেজনা। বেশ কিছু সময় পরে নার্স এসে সুসংবাদটি প্রদান করেন যে তিথি এক কন্যাসন্তানের জননী হয়েছে। সকলের মুখে খুশির ঝলকানি। অর্ণব তিথির কাছে গিয়ে মাথায় হাত রাখে। তিথির কোলে ছোট্ট দুধের শিশুটি, তার ছোট্ট ছোট্ট পা দুটোকে আগলে রেখেছে তিথি আর অর্ণবের হাত। পরম মমতায় তিথি কন্যার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে সোনামনির মধ্যে কিন্তু তার ঠাম্মার প্রতিচ্ছবি দেখতে পাচ্ছি, ঠাম্মার নামের সঙ্গে মিল রেখে এর নাম হবে সৃজয়া। অর্ণবের চোখে তখন আনন্দাশ্রু....