Shubhranil Chakraborty

Abstract Tragedy

4.2  

Shubhranil Chakraborty

Abstract Tragedy

শেষ থেকে শুরু

শেষ থেকে শুরু

2 mins
361


"নে নে চটপট লেখ। আর খুব বেশি সময় তোকে দিতে পারব না। একটু বাদেই হেডস্যার রুমে ফিরে জিনিসপত্র গুছিয়ে তালা দিয়ে রওনা হয়ে যাবে। ওনার আসার আগেই লকারে রাখা বান্ডিলের মধ্যে খাতাটা ঢুকিয়ে রাখতে হবে। অ্যাটেনডেন্স শিটটাও নিয়ে এসেছি, তোকে এরপর স‌ইও করতে হবে এই শিটে। নে নে কর তাড়াতাড়ি।"

এখন প্রায় চারটে বাজে। আজ মাধ্যমিকের অঙ্ক পরীক্ষা ছিল। নির্ধারিত সময় বারোটায় পরীক্ষা শেষ হয়েছিল। ময়ূখ সময়ে আসতে পারেনি বলে পরীক্ষাও দিতে পারেনি। স্কুলের বাইরে আসার পথে হঠাতই মাথা নীচু করে বসে থাকা ছেলেটাকে দেখে কৌতূহলী হয়ে এগিয়ে গেছিলেন রথীনবাবু।

"কিরে, তোর নাম কি? এখানে বসে আছিস কেন? পরীক্ষা ছিল আজ, দিসনি?"

উত্তর দিতে পারেনি ময়ূখ। কান্নার দমকে শরীর কেঁপে কেঁপে উঠছিল। কোনক্রমে বলতে পেরেছিল দুটো কথা,"মা...আমার মা স্যার..."

দীর্ঘদিন ক্যান্সারে ভুগছিলেন ময়ূখের মা । সকালে ঠিক সাড়ে আটটার সময় এ পৃথিবীর যাবতীয় মায়া কাটিয়ে পরলোকের উদ্দেশ্যে পাড়ি দেন তিনি। প্রাণ বেরিয়ে যাবার আগের মুহূর্ত পর্যন্ত মা-কে ছেড়ে এক মুহূর্ত যায়নি সে...ঠায় বসে ছিল যতক্ষণ না পর্যন্ত প্রদীপ নিভে যায় সম্পূর্ণ। আত্মীয়স্বজনরা অনেক বুঝিয়েও কেউ সময়ে তাঁকে রওনা করাতে পারেনি পরীক্ষাকেন্দ্রের উদ্দেশ্যে। ফলবশত পরীক্ষা সে দিতে পারেনি।

"আমার মায়ের অনেক আশা ছিল স্যার। আমি মাধ্যমিকে খুব ভাল রেজাল্ট করব, জীবনে অনেক অনেক বড় হব। আজ মা আমায় ছেড়ে চলে গেল স্যার, আমি কিচ্ছু ভাবতে পারছিলাম না স্যার, এরপর কি করব না করব। আমার সব শেষ হয়ে গেল স্যার। পরীক্ষা দিতে পারিনি জানলে মায়ের আত্মা কোনদিন শান্তি পাবে না স্যার। জীবনে কোনদিন মাকে সেভাবে কিছু মাকে দিতে পারিনি, আজ তাঁর শেষ আশাতেও জল ঢেলে দিলাম আমি।"

"ওঠ, চল আমার সাথে। কোন কিছু কখনো একেবারে শেষ হয়ে যায় না। তোর মাও শেষ হয়ে যাননি, আছেন তোর আশেপাশেই। আমিও তোকে শেষ হয়ে যেতে দেব না। দেখি কি করা যায়।"

এখন রথীনবাবুর রুমের পিছনের একটা স্টোররুমে বসে গোপনে পরীক্ষা দিচ্ছে ময়ূখ। তিনি জানেন যেটা হচ্ছে সেটা আইনত সিদ্ধ নয়। তবু ছেলেটার পরীক্ষার খাতায় আপ্রাণ লড়াইটা দেখে অলক্ষেই এক-দুফোটা জল চলে এল রথীনবাবুর চোখে। ফিরে গেলেন বহুবছর আগে, স্মৃতিতে ভেসে উঠল স্কুল ব্যাগ কাঁধে নিজের কৈশোরের ছবিটা। একজন মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ঠিক একইভাবে নিঃসাড়ে চিরনিদ্রারত একজন পরম স্নেহময়ী মহিলার পায়ের কাছে কিংকর্তব্যবিমুড় হয়ে বসে আছে। পার্থক্য দুটো, সেদিন ইংরেজি পরীক্ষা ছিল, এবং ছেলেটা সেই পরীক্ষাটা দিতে পারেনি, ফলে তাঁকে একবছরের জন্য হারিয়ে যেতে হয়েছিল অনিশ্চিতের স্রোতে।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract