অঙ্কের খাতা
অঙ্কের খাতা
পরের খাতাটার দিকে চোখ পড়তেই বুকটা দুরদুর করে কেঁপে উঠল সুবিমলবাবুর। খাতার উপরে নামটা জ্বলজ্বল করছে সার্থক সরকার, স্কুল অমুক, রোল নম্বর অমুক। এতক্ষণ অন্য খাতা দেখতে দেখতে ভুলেই গিয়েছিলেন এক না একসময় এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হতেই হবে।
সুবিমলবাবু কলকাতার একটা স্কুলের অঙ্কের শিক্ষক। সার্থক তাঁর একমাত্র ছেলে,এই বছর মাধ্যমিক দিয়েছে। কাকতালীয়ভাবে এবারেই একটা মজার ঘটনা ঘটেছে। সুবিমলবাবুরা থাকেন শ্রীরামপুরে, ছেলে সার্থক সেখানকারই একটা স্কুলে পড়াশুনো করে। মাধ্যমিকে এক জেলার ছাত্রদের খাতা বিভিন্ন জেলার স্কুলে মূল্যায়নের জন্য পাঠানো হয়, এমন কপাল যে এই বছর সার্থকদের স্কুলের খাতা গিয়ে পড়েছে কলকাতার একটা স্কুলে, যে স্কুলে অঙ্কের শিক্ষক স্বয়ং সুবিমলবাবু। ফলে সার্থকের পরীক্ষার ফলভাগ্য এখন সম্পূর্ণভাবে সুবিমলবাবুর হাতে।
সুবিমলবাবুর হাত কাঁপছিল। এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে তা উনি কোনদিন স্বপ্নেও ভাবেননি। অনেক স্বপ্ন তাঁর সার্থককে ঘিরে। সার্থক মাধ্যমিকে অঙ্কে একশোয় একশো পাবে, এই আশায় বুক বেঁধে তাঁকে নিজে হাতে গড়ে পিঠে নিতে কোনদিন কসুর করেননি তিনি। অঙ্কের মাস্টারের ছেলে বলে কথা। সে একশোয় একশো না পেলে মান থাকে?
কিন্তু সার্থকের ঐ বাঁধাধরা পড়ার রুটিনে প্রবল এলারজী। খেলাধূলোতেই তাঁর ধ্যানজ্ঞানটা বেশি, পড়ার প্রতি ন্যাকটা একটু কম। তবে তাই বলে সে খারাপ ছেলে বা গবেট তা মনে করার কোন কারণ নেই। যথেষ্ট বুদ্ধিমান সে, যতটা পড়াশোনা করে ততটুকু যুক্তি দিয়ে বা বুদ্ধি দিয়ে যাচাই করে নেয়, যাতে সেই সঙ্ক্রান্ত আর কোন ধোঁয়াশা মনের ভিতরে না থাকে। সে কারণে নম্বর কম পেলেও সার্থকের পাঠ্য বিষয়ে জ্ঞান কিন্তু কারও থেকে কম নয়। সুবিমলবাবুর আক্ষেপ, যদি সেইসাথে প্রচেষ্টাটুকুও থাকত ছেলেটার, তবে আজ সে ক্লাসের ফার্স্ট বয় হত, মাধ্যমিক দেওয়ার পরে স্ট্যান্ড করবে কিনা সেই বিষয়ে আলোচনা করত লোকে।
টেস্টে অঙ্কে মেরেকেটে পঞ্চাশ পেয়েছিল সার্থক। হেডমাস্টারমশাই ডেকে পাঠিয়েছিলেন সুবিমলবাবুকে। খাতা দেখিয়ে বলেছিলেন, সার্থক প্রতিটা অঙ্কের পদ্ধতি সঠিক, কিন্তু এত বেশি সিলি মিসটেক যে বাধ্য হয়ে নম্বর কম দিতে হয়েছে। মাধ্যমিকে সাধারণত সিলি মিসটেকে পার্ট মারকিং থাকে কিন্তু সার্থকের ভুলগুলো এত যাচ্ছেতাই রকমের যে সেখানে কিছুতেই নম্বর দেওয়া চলে না। এ বিষয়ে সুবিমলবাবু যেন সতর্ক হন।
বাড়ি এসে অপমানে গা জ্বলছিল সুবিমলবাবুর। স্থির করেন, এবারে একটা হেস্তনেস্ত করতেই হবে। কড়া শিডিউল বানিয়েছিলেন সারথকের পড়াশুনোর জন্য। সার্থকের খেলাধূলো চারমাসের জন্য বন্ধ করে দিয়ে নিজেও দিনরাত তাঁকে গাধা পিটিয়ে ঘোড়া বানানোর লক্ষ্যে উঠেপড়ে লেগেছিলেন তিনি। প্রতিদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন সার্থকের মনটাকে পুরোপুরি সিলেবাসের ভিতর ঢুকিয়ে দেওয়ার জন্য,তার সিলি মিসটেকের পরিমাণ শূন্যে নামিয়ে আনার জন্য। ফল একেবারে পাননি, তা নয়, কারণ শেষদিকে সার্থককে বেশ মনোযোগী হয়ে উঠতে দেখেছিলেন, অঙ্ক ছাড়াও বাকি বিষয়গুলিতে নির্ভুল উত্তর লিখতে বেশ সড়গড় হয়ে উঠেছিল।
কিন্তু সব ভাল যার শেষ ভাল। আজ সার্থকের ভাগ্যপরীক্ষার দিন, বিচারক তিনি। অদৃষ্টে তাঁর কি আছে ভগবান জানেন।
একটু জল খেয়ে নিয়ে কাঁপা হাতে কলম নিয়ে খাতা দেখা শুরু করলেন সুবিমলবাবু। পাশে রাখা আছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ প্রদত্ত উত্তরমালা। দুরুদুরু বুকে সতর্ক হাতে সার্থকের উত্তরপত্র দেখার পাশাপাশি আড়ে মিলিয়ে নিচ্ছিলেন উত্তরগুলো।
একটু বাদেই অবশ্য ধাতস্থ হয়ে উঠলেন সুবিমলবাবু। নাঃ তাঁর এত পরিশ্রম বৃথা যায়নি বলেই মনে হচ্ছে। এখনো অবধি দেখা প্রতিটা অঙ্কেরই স্টেপ নির্ভুলভাবে করেছে সার্থক। এবারে মাধ্যমিকের অঙ্কের প্রশ্ন একটু শক্ত হয়েছিল, বিশেষ করে জ্যামিতির এক্সট্রাটা তো অনেক ছেলেই করতে পারেনি। সুবিমলবাবু অবশ্য বিভিন্ন ধরনের এক্সট্রা ছেলেকে করিয়েছিলেন, তবু মনে ভয় ছিল আদৌ পরীক্ষায় ঠিকঠাক করে আসতে পারবে কিনা! এখন দেখলেন না, সার্থক বেশ সুন্দর করেই ছবি এঁকে এক্সট্রাটার সমাধান করেছে, কোথাও নম্বর কাটার জায়গা নেই।
যাক, বড় বড় প্রশ্নগুলো দেখার পালা শেষ। সুবিমলবাবু একটা বড় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। আপাতত যা দেখলেন, তাতে কোন ভুল নেই, ফুল মার্কস পেয়েছে সে। সুবিমলবাবু খাতা দেখার ব্যপারে কড়া বলেই পরিচিত শিক্ষকমহলে। আর মাধ্যমিকে নিজের ছেলের খাতা ভাগ্যবলে দেখার সুযোগ পেয়েছেন বলে যে তাঁকে বেশি নম্বর দিতে পারবেন, তাঁর কোন উপায় নেই। স্ক্রুটিনি, ফাইনাল স্ক্রুটিনি অনেক ব্যপার আছে। আর তাছাড়া সুবিমলবাবু এই ব্যপারে পক্ষপাতিত্ব করবেন, তেমন মানুষও নন।
ছোট প্রশ্ন দেখতে শুরু করলেন সুবিমলবাবু। এখানে তাঁর চিন্তাটা একটু কম, কারণ ছোট প্রশ্ন সার্থক মোটামুটি ভালই পারে, সিলি মিসটেক বা স্টেপ জাম্পের ব্যপার সেখানে থাকে না।
সর্বশেষ প্রশ্নটায় গিয়ে আটকে গেলেন সুবিমলবাবু। এ কি...কি করেছে এটা সার্থক? ত্রিকোণমিতি থেকে অত্যন্ত সহজ একটা প্রশ্ন করা হয়েছিল, sin 90 এর মান কত? উত্তর হবে ১, বেশিরভাগ ছেলেই সেটা পেরেছে। কিন্তু সার্থকের উত্তরের জায়গাটা ফাঁকা কেন?
বিহ্বলভাবে খানিকক্ষণ তাকিয়ে রইলেন সুবিমলবাবু। উত্তরপত্রটা উল্টেপাল্টে দেখলেন, শেষপাতায় দেখলেন করেছে কিনা। কিন্তু নাঃ, কোত্থাও নেই। সার্থক হয় উত্তরটা করতে ভুলে গেছে, অথবা সে করতে পারেনি।
মনটা ভেঙ্গে গেল সুবিমলবাবুর। ইসস এত চেষ্টা করেও সেই একটা খুঁত রয়েই গেল, একশোয় একশো আর পাওয়া হল না সার্থকের। সুবিমলবাবু চশমাটা খুলে একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেললেন। পেনটা হাত থেকে পড়ে গেল তাঁর। ডান হাত দিয়ে কিছুক্ষণ চোখদুটো ঢেকে বসে রইলেন তিনি।
নাঃ হতাশ হননি তিনি। এখনো অবধি যে কটা খাতা দেখেছেন তাঁর মধ্যে খুব কমসংখ্যক ছেলেই নব্বইয়ের ঘরে পেয়েছে। সেখানে তাঁর ছেলে সার্থক হিসেবমতন নিরানব্বই পেয়েছে, আরো বিশেষ করে সেই ছেলে যে টেস্টে পঞ্চাশের বেশি পায়নি। বাবা হিসেবে তাঁর পরিশ্রম বিফলে যায়নি, তাঁর তো গর্ব হওয়ার কথা।
একটু সামলে নিয়ে সুবিমলবাবু ভাবতে বসলেন সার্থক ঠিক কি কারণে এই প্রশ্ন ছেড়ে আসতে পারে। যদি ভুলে গিয়ে থাকে তবে আর কিছু বলার নেই। আর সেটা সার্থকের পক্ষে খুব একটা অস্বাভাবিকও নয়। স্বভাব কি আর সহজে মানুষের পিছু ছাড়ে? কিন্তু সুবিমলবাবু মনে মনে নিশ্চিত, সার্থক প্রশ্নটা করতে ভোলেনি। যদি ভুলত তাহলে প্রশ্নটাকে ঘিরে দু একটা কালির আঁচড় থেকে যেত না। হয়ত কিছু একটা করার চেষ্টা করেছিল। কি সেটা?
সুবিমলবাবু ব্যকুল হয়ে আবার খাতাটা প্রথম থেকে দেখতে শুরু করলেন, যে যে জায়গায় রাফ করেছে সেগুলো মিলিয়ে দেখলেন কোথাও সার্থক কিছু করার চেষ্টা করেছিল কিনা। পেলেন না। ব্যর্থমনোরথ হয়ে খাতাটা মুড়ে সোজা করে রাখলেন তিনি। সেই মুহূর্তে আরেকটা খেয়াল চাপল তাঁর মাথায়।
হ্যাঁ তাই তো? এটা করলে কেমন হয়? নীতিবিরুদ্ধ কাজ যদিও...তবে সুবিমলবাবু নিশ্চিত যে তাঁর ছেলে এই প্রশ্ন পারেনি, তা কিছুতেই হতে পারে না।তাই এটুকু করলে অন্তত কারও সাথে প্রতারণা করা হবে না।
কলম বাড়ালেন তিনি। এক সংখ্যাটা তো আর খুব একটা বড় নয়, কালির আচড়মাত্র। তাই তিনি লিখে দিলেও ধরা পড়ার সম্ভাবনা খুবই কম, প্রায় নেইই। অবশ্য একই কালিতে লিখতে হবে। সুবিমলবাবু চোখ বন্ধ করলেন।
শেষমুহুর্তে তিনি থেমে গেলেন। এ কাজ করা তাঁকে সাজে না। সার্থক যে কারণেই প্রশ্ন ছেড়ে আসুক, আইনত ভুলটা ভুলই। ভুলকে চিহ্নিত করার ক্ষমতা তাঁর আছে, শুধরে ঠিক করার ক্ষমতা তাঁর নেই। সেটা সমস্ত ছাত্রের জন্য প্রযোজ্য, তাঁর নিজের ছেলের জন্যও। হঠকারিতায় ে রকম চিন্তা মাথায় আসার জন্য নিজের উপরেই খুব লজ্জিত হলেন তিনি।
শেষপর্যন্ত তিনি আর সঠিক উত্তরটা বসালেন না, কিন্তু উত্তরটা কাটতেও পারলেন না। খাতাতা তখনকার মতন সরিয়ে রেখে অন্য খাতা দেখতে শুরু হয়ে পড়লেন তিনি।
মাধ্যমিকের পর সার্থকের এখন লম্বা ছুটি। বাবার চাপে মাঝেমধ্যে ইলেভেনের পড়া নিয়ে বসতে হয় ঠিকই, কিন্তু বিকেলের খেলাটা এখন আর বাদ পড়ে না।
সুবিমলবাবু ঠিক করেই রেখেছিলেন, সার্থক কেন ঐ প্রশ্নের উত্তর করে আসেনি, তা তাঁকে জানতেই হবে। এ ব্যপারে সার্থককে তিনি জিজ্ঞাসা করবেন। তাই সেদিন সার্থক খেলার মাঠ থেকে ফিরে আসতেই তিনি বসার ঘরে তাঁর জন্য অপেক্ষা করে রইলেন।
সার্থক বাথরুম থেকে হাত পা ধুয়ে নিজের ঘরে যাচ্ছিল, সুবিমলবাবু তাঁকে ডেকে বললেন,”সার্থক একবার এই ঘরে আয় তো, তোর সঙ্গে কথা আছে।“
সার্থক একটু অনুযোগের সুরে বলল,”কি কথা? আজ আর পড়তে বসতে ভালো লাগছে না বাবা, খুব টায়ারড লাগছে।“
“না, না পড়ার কথা নয়। অন্য একটা কথা বলব। এদিকে আয়।“
অগত্যা সার্থক ঘরে ঢুকল। সুবিমলবাবু তাঁকে নিজের পাশে বসিয়ে তাঁর পিঠে হাত বোলাতে বোলাতে জিজ্ঞেস করলেন,”পরীক্ষা ভাল দিয়েছিলি তো বাবু?”
“আবার ঐ কথা। বাবা এই এক প্রশ্ন তুমি আমাকে পরীক্ষার পর থেকে একশোবার জিজ্ঞেস করেছ, বলছি তো আমার পরীক্ষা ভাল হয়েছে, তুমি কেন বিশ্বাস করছ না বলত? রেজাল্ট বেরোলেই তো দেখতে পাবে।
“ঠিক আছে, ঠিক আছে। আসলে কাল টিউশন ব্যাচে আমার এক ছাত্র পরীক্ষা নিয়ে কথা বলতে এসেছিল তো। বলছিল পরীক্ষার প্রশ্ন তো খুব সহজ হয়েছে, বিশেষত ছোট প্রশ্নগুলো। অন্যবার যে ত্রিকোণমিতি নিয়ে ছেলেদের এত বেগ পেতে হয় সেখান থেকেও এবারে প্রশ্ন এসেছে খুব সোজা, একটা প্রশ্ন তো এত সহজ যে কেউ না পড়াশোনা করে গেলেও সেটা করে দেবে। বলেছে sin 90 এর মান কত? সবাই জানে ওটা ১ হবে। আমার ক্লাসের ছেলেরাও পরীক্ষা দিয়ে খুব খুশি, সবাই বলছে আশির উপর নিশ্চয়ই পাবে। তাই মনে হল তোকে আরেকবার জিজ্ঞেস করি। বাবার মন, বুঝিস তো?
সার্থক একটু ব্যাঙ্গের হাসি হেসে বলল,”ঐ প্রশ্নটার কথা বলেছে তো? আরে ওটা নিয়ে কোন সমস্যা হবারই কথা নয়। প্রিন্টিং মিসটেক আছে, কিংবা আউট অফ সিলেবাস। সবাই নম্বর গ্রেস পাবে।“
সুবিমলবাবু আকাশ থেকে পড়লেন। এসব কি বলছে তাঁর ছেলে? sin 90 এর মান কত আউট অফ সিলেবাস প্রশ্ন? প্রিন্টিং মিসটেক? কি বলতে চায় সে?
সার্থকদের খাতা যে সুবিমলবাবুর জিম্মায়, সুবিমলবাবু তা সার্থককে জানাননি এবং জানাতেও চাননা। তাই একটু আশ্চর্য হওয়ার ভান করে, কিন্তু গলাটা স্বাভাবিক রেখেই বললেন,”তার মানে? তুই ওটা করিসনি?”
“না না, ওটা কি করে করব? কেউ করতে পারবে না। যারা বলছে করেছে, তারা কোণের একক ডিগ্রি আছে ভেবে করেছে। কিন্তু প্রশ্নপত্রটা ভাল করে দেখলেই বোঝা যাবে, sin 90 এর ৯০ কোণটা ডিগ্রি না রেডিয়ান কিছু বলা নেই, সুতরাং হয় ওটা ছাপার ভুল নাহলে ৯০ টা হবে রেডিয়ানে, কারণ রেডিয়ানের কোন একক থাকে না। আর যদি রেডিয়ানে হয়, তাহলে ডিগ্রিতে বের করে আনতে গেলে সেটা ৯০ এর অনেক বেশি হয়ে যাবে, আর সেক্ষেত্রে কি করে বের করতে হয় তা আমাদের সিলেবাসে নেই। সেইজন্য আমি ওটা করিইনি। আমার মনে হয়, ওটায় সবাইকে নম্বর দেওয়া হবে।“
স্তম্ভিত হয়ে চুপচাপ বসে রইলেন সুবিমলবাবু। সার্থকের মা খেতে ডাকছে, সে উঠে চলে গেল। সে চলে যেতেই সুবিমলবাবু নিজের ঘরে ছুটে গিয়ে প্রশ্নপত্রটা খুলে দেখলেন। হ্যাঁ ঠিক তাই, সার্থকের কথা একবর্ণ মিথ্যে নয়।
খুব সামান্যই ভুল। এত সামান্য, যে মাধ্যমিক বোর্ড তো দূর, ছাত্ররা অবধি ব্যপারটা এড়িয়ে যাবে। ডিগ্রি আর রেডিয়ানের তফাত কি সেটা ত্রিকোণমিতির প্রথম অধ্যায়েই ছাত্ররা শেখে কিন্তু পরে তারা যাবতীয় যা কিছু অঙ্ক করে সব ডিগ্রি ধরেই করে।ওটা মাধ্যমিকের ছাত্রদের কাছে অলিখিত নিয়ম। কিন্তু সার্থক আজ চোখ খুলে দিল তাঁর। চিরকাল তাঁকে সবকিছু যুক্তি দিয়ে বিশ্লেষণ করার শিক্ষা দিয়ে এসেছেন, সার্থক প্রমাণ করে দিল, তাঁর সে শিক্ষা বৃথা যায়নি।
সুবিমলবাবু মৃদু হেসে সার্থকের খাতাটা হাতে নিয়ে একবার ভাবলেন। তারপরে পেন নিয়ে কেটে শুন্য বসালেন সেই জায়গায়। তারপরে তাঁর মোট প্রাপ্ত নম্বরটা উপরে বসিয়ে দিলেন।
এখন আর তাঁর দুঃখ হচ্ছে না।সার্থক হয়ত খাতায় একশোয় একশো পায়নি, কিন্তু তাঁর যুক্তি ও বিশ্লেষণী ক্ষমতার জন্য সে অবশ্যই একশোয় একশো পাবার যোগ্যতা রাখে। মনের খাতায় সার্থককে একশোয় একশো দিয়ে একটা গভীর তৃপ্তির নিঃশ্বাস ফেললেন তিনি।