শুভর দিদি
শুভর দিদি


শুভ মাদুর পেতে বসে পড়াশুনো করছিল। সামনে উচ্চমাধ্যমিক, তারপরে মেডিকেল এন্ট্রান্স। কাজেই এখন মাথা তোলবার সময় নেই।
শুভর ছেলেবেলাকার স্বপ্ন সে ডাক্তার হবে। খুব ছোটবেলায় শুভর বাবা মা মারা যায়। ক্যান্সারে ভুগছিলেন শুভর বাবা। সেরকম ভাল উপার্জন ছিল না, ফলে একরকম বিনা চিকিৎসাতেই তার মৃত্যু হয়। শুভর বাবা মারা যাওয়ার পর তার মাও আর বেশিদিন বাচেননি। বাবার মৃত্যুর পরই ছোট্ট শুভ সংকল্প করে ফেলেছিল সে ডাক্তার হবে, গরিবের সেবা করবে স্বল্পমূল্যে বা বিনামূল্যে।
শুভর বাড়িতে লোক বলতে শুভ আর তাঁর দিদি কল্পনা। বাবা মা মারা যাওয়ার পর দিদিই তাঁকে সন্তানের মতন মানুষ করে তুলেছে।এদিক সেদিক কাজকর্ম করে সংসারের খোরাক জুগিয়েছে,শুভর পড়াশুনোর খরচ চালিয়েছে। নিজের আর সেভাবে পড়াশুনো করা না হলেও শুভর পড়াশুনো কখনো বন্ধ হতে দেয়নি সে।
দরজায় আওয়াজ হল। তাঁর মানে দিদি এসে গেছে। বইটাকে উপুড় করে রেখে শুভ গিয়ে দরজা খুলল।
কল্পনা এসেছে। শুভ দরজার সামনে থেকে সরে দাঁড়াল। কল্পনা ধীর পায়ে ঘরে ঢুকল। একবার শুন্যদৃষ্টিতে পুরো ঘরটা নিরীক্ষণ করে শুভকে বলল,”পড়ছিলি?”
“হ্যাঁ দিদি। কিন্তু...তুমি এত দেরি করলে কেন?”
“বলেছি না, আমার জন্য একদম চিন্তা করবি না। আমি ঠিক চলে আসব। শুধু তুই মন দিয়ে পড়াশুনো করে যা। মনে আছে তো, তোকে ডাক্তার হতে হবে?”
শুভ মাথা নীচু করে।
কল্পনা শুভর গালে হাত বোলায়। তারপর স্নেহার্দ্র কণ্ঠে বলে,”মন দিয়ে পড়াশুনো করছিস তো শুভ? আমাদের সংসারের আশা ভরসা কিন্তু সব তোকে ঘিরেই।“
শেষের কথাগুলো বলতে বলতে কল্পনার গলা ধরে আসে। শুভ একটু বিচলিত হয়ে বলে,”দিদি, এত চিন্তা করিস না। সব ঠিক হয়ে যাবে। অনেক রাত হয়ে গেছে,তুই আর দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সময় নষ্ট করিস না। ফ্রেশ হয়ে জামাকাপড় ছেড়ে নে,তারপরে খেয়ে নিবি চল।“
কল্পনা চোখ মুছে বলে,”আসছি।“
কল্পনা গমনোদ্যত হতেই শুভ হঠাত বলে ওঠে,”এই দিদি একবার দাঁড়া।“
“কি হল?”
“তোর ঘাড়ের কাছে ওটা কিসের দাগ?কেটে গেছে মনে হচ্ছে?”
চমকে ওঠে কল্পনা,”কাটা দাগ?নাতো!”
শুভ এগিয়ে এসে ঘাড়ের সেই জায়গায় একটা আঙ্গুল রেখে বলে,”হ্যা এই তো আমি দেখতে পাচ্ছি, এইখানে। কি করে কাটল? জ্বালা করছে না?”
কল্পনা বলল,”কি জানি কিভাবে কাটল। আমি তো বুঝতেই পারিনি।“
“ঠিক আছে তুই ফ্রেশ হয়ে আয়, তারপরে ওখানে ওষুধ লাগিয়ে দেব।“
কল্পনা “ঠিক আছে” বলেই ঊর্ধ্বশ্বাসে বাথরুমে গিয়ে দরজাটা বন্ধ করে। একঝলক বাথরুমের আয়নাটার দিকে তাকিয়ে নিজের মুখটা দেখল। অবিন্যস্ত চেহারা,গালে অল্প একটু স্নো পাউডার এখনো লেগে আছে, গা থেকে এখনো পুরোপুরি বিলীন হয়নি উগ্র পারফিউমের গন্ধটাও। এক মুহূর্তের জন্য গাটা ঘুলিয়ে ওঠে ঘেন্নায়,লজ্জায়।
বাথরুমের কলটা চালিয়ে দিয়ে হাউ হাউ করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে কল্পনা।