কর্মফল
কর্মফল
খুব সন্তর্পণে গলির ভিতরে শুয়ে থাকা ঘুমন্ত কুকুরটার লেজে বড় বড় চকলেট বোমদুটো বেঁধে দিল সন্তোষ। আজ কালীপুজো, চারদিকে বাজি ফাটার আওয়াজ ভেসে আসছে, কিন্তু সন্তোষদের পাড়ার এদিকটায় বাজির উপদ্রব একটু কম। তাই বোধহয় কুকুরটা একটু নিরাপদ আশ্রয় ভেবে এখানে শুয়ে রয়েছে।
সন্তোষ পিছন ফিরে ইশারায় তাঁর ভাইকে কোন শব্দ করতে নিষেধ করল। সন্তোষের ভাই ত্রিদিব একটা তুবড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছিল কখন সেটাকে জ্বালাবে ভেবে। দাদার কান্ড দেখে সে বেশ অবাক।
দেশলাই দিয়ে ছোট মোমবাতিটা জ্বালিয়ে পা টিপে টিপে এগিয়ে গেল সন্তোষ। সাবধানে চকোলেট বোমের সলতের মুখটা দেখে নিয়ে মোমবাতিটা ছুঁইয়ে কয়েক পা সরে এল। পড়পড় করে সলতেটা জ্বলে উঠএছে। তাঁর কয়েক সেকেন্ড পরেই...
বিকট আওয়াজ করে বোমদুটো ফেটে গেল। কুকুরটা জেগে উঠে পরিত্রাহি চিৎকার করতে করতে গলির এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত ছোটাছুটি করতে লাগল। বেশ আহত হয়েছে কুকুরটা। তাই দেখে হাসতে হাসতে সন্তোষ ভাইকে বলল, "দেখ দেখ কেমন দৌড় করালাম মালটাকে। হেব্বি মজা লাগে মাইরি এসব করতে। নে এবার তুই তোর তুবড়ি জ্বালা।"
ত্রিদিবের আর তর সইছিল না। দাদা অনুমতি দিতেই সে তুবড়িটা বসিয়ে আগুন দিয়ে সরে এল। কুকুরটা তখনো এদিক ওদিক ছোটাছুটি করছিল। সন্তোষ সেদিকে তাকিয়ে একবার মুচকি হেসে তুবড়ির আলোর ঝলকানি দেখার জন্য পিছন ফিরে তাকাল। পর মুহূর্তেই আবার সেইরকম বিকট আওয়াজ আর চোখের মধ্যে একটা জ্বালাময় অনুভূতির সঙ্গে সবকিছু অন্ধকার হয়ে গেল সন্তোষের সামনে।
তুবড়িটা শেষমুহুর্তে বার্স্ট করেছিল। তারই একটা জ্বলন্ত খোল এসে সজোরে গেঁথে যায় সন্তোষের একটা চোখে। ত্রিদিবের চেঁচামেচিতে বাড়ির সবাই ছুটে আসে এবং তৎক্ষণাৎ ত্রিদিবকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ডাক্তারের তৎপরতায় সন্তোষ প্রাণে বেঁচে যায় এবং তাঁর জ্ঞানও ফিরে আসে, কিন্তু একটা চোখের দৃষ্টিশক্তি চিরকালের মতন নষ্ট হয়ে যায় তাঁর।