নাস্তিক
নাস্তিক
আজ মহাষ্টমী।মন্ডপে ঠাকুরের সামনে সবাই দাঁড়িয়ে অঞ্জলি দিচ্ছিল। এককোণে ফাঁকা জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিল রজত, মাথাটা নীচু করে। তাঁর আসার কোন ইচ্ছাই ছিল না। নেহাত বিতস্তা জোর করে নিয়ে এল, তাই।
উদাত্তকন্ঠে পুরুত মশাই মন্ত্রপাঠ করে চলেছেন, কিন্তু রজতের কানে একবর্ণও ঢুকছিল না। ভগবান টগবান কোনদিন মানেনি সে,কোনদিন মন্দির টন্দিরের সামনেও দুদণ্ড দাড়ায়নি, বরাবরের নাস্তিক সে। শুধু মা যতদিন বেঁচে ছিল, মায়ের আদেশে প্রতিবছর অঞ্জলি দিতে আসতে হত। মা এই বছর মাসকয়েক আগে মারা গেছেন, তাই ঠিক করেছিল এবারে আর আসবে না। কিন্তু কপাল! তবে রজত একথা স্পষ্ট করে বলে দিয়েছিল মন্ডপে সে যাবে, কিন্তু অঞ্জলি টঞ্জলি সে দিতে পারবে না। সাফ কথা।
মা চলে যাবার পর থেকে নাস্তিক ভাবটা কয়েকগুণ বেড়ে গেছে রজতের। সারাজীবন গাধার মত খেটে গেছে মা সংসারে। বদলে কি পেয়েছে? কিচ্ছু না। যে ভগবানের জন্য মা এত পূজো অর্চনা করেছেন সারাজীবন, সেই ভগবান তাঁকে কি দিল? স্ট্রোক এবং অকালে মৃত্যু। এখনো মায়ের মৃত্যুটাকে মন থেকে মেনে নিতে পারেনা সে। সবার জন্য সারাজীবন করে করে মায়ের স্বাস্থ্য কখন ভেঙ্গে পড়েছিল, তা মা টের পাননি। কোন
সুযোগ দেয়নি রোগটা, তার আগেই সব শেষ। আর ঠাকুর সেইসময় কি করেছে? চুপ করে থেকে মজা দেখেছে। সেই থেকেই রজতের ভগবানের প্রতি বিদ্বেষ জন্মে গেছে। ভগবান বলে কিচ্ছু নেই, তিনি জড়বস্তু, মানুষের জন্য কোন কিছু করার ক্ষমতা তার নেই।
“নিজের মাকে এইভাবে অস্বীকার করবি রজত?”
কে বলল? চমকে ওঠে রজত। অবিকল মায়ের মতন গলা। কিন্তু মা তো...। পরক্ষণেই আবার চমকে ওঠে সে। যেখানে মা দুর্গার মুখ থাকার কথা, সেখানে তার মায়ের মুখটা বসানো। মা তাঁকে বলছেন,”আমায় অঞ্জলি দিবি না রজত?”
রজত ভয়ে ভয়ে চারিদিকে তাকাল। সবাই মন দিয়ে একনিষ্ঠভাবে অঞ্জলি দিচ্ছে। কারোর কোন ভাবান্তর নেই। এর মানে কি সে একাই এরকমটা দেখল!
“সব মানুষের মধ্যেই ভগবান থাকে। সব মায়ের মধ্যে দুর্গা অধিষ্ঠান করেন। তাই তার অস্তিত্ব সর্বত্র বিরাজমান,তাকে অস্বীকার করা মানে মূর্খতা। দেখ মা দুর্গা আমার মাধ্যমে তোকে তার প্রমাণ দিলেন।এরপরেও তুই তার অস্তিত্বে অবিশ্বাস করবি?মাকে দেখেও এভাবে মুখ ফিরিয়ে চলে যাবি রজত?”
রজত আর কথা বলতে পারল না। জীবনে প্রথমবারের মতন তার হাত করজোরে বুকের উপর উঠে এল, সেইসাথে চোখ বেয়ে নেমে এল একরাশ অশ্রুধারা।