STORYMIRROR

Aritra Das

Fantasy

2.5  

Aritra Das

Fantasy

প্রথম সাক্ষাৎ -অধ্যায় ১

প্রথম সাক্ষাৎ -অধ্যায় ১

4 mins
935


[এই খণ্ডাংশটি 'দ্যা লেজেণ্ড অফ্ রাম সিরিজ'-এর অন্তর্গত তৃতীয় পর্ব ফার্স্ট কন্ট্যাক্ট' গল্পের সূচনা। এর আরও দুটি খণ্ডাংশ এখানে প্রকাশিত হবে। ]


দক্ষিণ, পশ্চিম ও পূর্ব- তিনদিকে সমুদ্রের বেষ্টন ও উত্তরদিকে অতন্দ্র প্রহরায় থাকা হিমালয় পর্বতমালার মাঝামাঝি বিস্তৃত এই ভূভাগ; হিমালয় পর্বতমালা অতিক্রম করে অপরদিকে শুরু হয়েছে প্রায় অখণ্ড এক মহাদেশ যার শেষ হয়েছে উত্তরে, আরও উত্তরে, যেখানে এসে শেষ হচ্ছে পৃথিবীর সীমানা। অনেক দিন আগের কথা, বিশ্ব চরাচরে যখন কেউ ছিল না তখন এই প্রত্যেকটি মহাদেশ সংযুক্ত ছিল স্থলপথেই; কিন্তু সময়ের সাথে সাথে মহাদেশগুলি বিচ্ছিন্ন হতে শুরু করে এবং আস্তে আস্তে তারা পরষ্পরের থেকে দূরে সরে যায়। বর্তমানে মহাদেশগুলি উত্তর গোলার্ধের কাছে এবং ভূমধ্যরেখা সংলগ্ন অঞ্চলগুলিতে মোটামুটি সংযুক্ত থাকলেও দক্ষিণ গোলার্ধে এসে ইতস্তত বিক্ষিপ্ত হয়ে গিয়েছে; বিচ্ছিন্নকরণের প্রভাব দক্ষিণ গোলার্ধে মাত্রাতিরিক্ত বেশি। এর একটা বড় কারণ, সমুদ্রের বহুদূরব্যাপী বিস্তার। তবে মোটের ওপর তর্কের খাতিরে এখনও বলা যেতেই পারে, গোটা পৃথিবীর জমি একটা কেন্দ্রীয় জায়গায় অবস্থিত সমষ্টিগতভাবে।


স্পষ্টঃতই এই বিরাট ভূমিকে প্রতিরক্ষা দানের উদ্দেশ্যে নজরদারি কেন্দ্র স্থাপনা করা হয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে, কিন্তু মূল রাজধানী স্থাপন করা হয়েছে পৃথিবীর সমগ্র ভূমিপূঞ্জের একেবারে শেষপ্রান্তে; ঠিক যেখান থেকে শুরু হচ্ছে অতল বারিধির আধিপত্য। মূল ভূমিপুঞ্জের যৎসামান্য দূরে ‘রৌরব’রাজ্যে স্থাপনা করা হয়েছে রাক্ষসদের রাজধানী।


প্রতিরক্ষার দৃষ্টিকোণ থেকে রাজা রাবণের রাজধানীর এ হেন স্থান নির্বাচন এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। পূর্বতন রাজাদের রাজধানী ছিল ভূমিপুঞ্জের একেবারে মধ্যভাগে, ‘মহেন্দ্র’ পর্বতের নীচে। পর্বতের সুরক্ষার মধ্যে থেকে তারা দেশশাষন করতেন। পৃথিবী বিজয় তাঁদের কৃতিত্ব নয় বটে, কিন্তু এই জয়ের পিছনে তাঁদের অবদান অনস্বীকার্য। প্রযুক্তি ধীরে ধীরে আয়ত্ব করবার পিছনে তাঁদের অনলস পরিশ্রম পরিকল্পনা আজকের উন্নতির পিছনে বড় কারণ। কিন্তু তাও, রাজধানী ভূমিপুঞ্জের একেবারে মধ্যভাগে থাকায় অনেকগুলি সমস্যা তৈরি হয়েছিল।


তার মধ্যে অন্যতম ছিল ‘প্রতি আক্রমণ’। প্রায়ই দেবতাদের ‘ঝটিতি-উড়ান’গুলি ঝামেলায় ফেলত রাজধানীকে। এই উড়ানগুলির সাহায্যে প্রায়ই দেব সৈন্যরা নেমে আসতেন পৃথিবীর বুকে, মাকড়সার মত দড়ি ধরে ঝুলতে ঝুলতে। তাঁদের ঝটিতি আক্রমণের মুখে প্রায়ই ঝামেলায় পড়তেন রাক্ষস সেনারা, কারণ প্রায়ই এই ধরণের হামলাগুলি করা হত সামরিক অঞ্চলের বাইরে, মূলতঃ শিল্পাঞ্চল বা কৃষিক্ষেত্রগুলিতে। ফলে সাহায্য এসে পৌছতে পৌছতে এরা নিজেদের কার্য সেরে ফিরে যেত নিজভূমে, মঙ্গলে।


এই ধরণের আক্রমণ ঠেকাতে প্রতিরক্ষা জাল বিছানোর দরকার ছিল সমগ্র আকাশ জুড়ে। সেই কার্যটিই করে গেছিলেন রাজা স্কন্দবর্মা, রাবণের পিতা। ইনিই ‘প্রতিরক্ষা-ব্যূহ’ বা ‘আকাশ-জাল’এর রচয়িতা। ভূমির ওপরে এক ক্রোশ উচ্চতা থেকে শুরু করে বায়ুমণ্ডলের সর্বোচ্চ স্তর অবধি এই ‘আকাশ-জাল’এর অবস্থান। এর সুরক্ষা সীমার মধ্যে যদি কোন শত্রুযান চলে আসে তবে তা বিনষ্ট হয়ে যাবে। ‘জাল’ শব্দটি এক্ষেত্রে আলংকারিক; পুরোটাই অদৃশ্য শক্তিপুঞ্জ দ্বারা নির্মিত একটি ঠাস-বুনোট ব্যবস্থা যা কিনা অচেনা কোন যান শনাক্ত করতে পারলেই ধ্বংস করে দেবে তাকে পলকের মধ্যেই। রাক্ষসদের নিজস্ব উড্ডয়ন যানগুলির জন্য অবশ্য বিকল্প সংকেত ব্যবস

্থা করে রাখা আছে, ফলে সেগুলিতে কোন সমস্যা হবে না।


এতে না হয় মহাকাশ থেকে আগত বিপদগুলিকে ঠেকানো গেল, কিন্তু সেই সমস্যাগুলির কি হবে যা কিনা একান্তভাবেই…পার্থিব? দানবদের উৎপাত, জন্তু-জানোয়ার যা কিনা তাদের রাজধানীর পারিপার্শ্বিক অঞ্চলগুলিতে প্রচুর, স্থানীয় দেবতারা যারা পৃথিবীর বুকে লুকিয়ে ছিলেন তাঁদের আক্রমণ – সমস্যা রোজ লেগেই থাকত একটার পর একটা।


রাজা হওয়ার পর রাবণ প্রথমেই যে কার্যটি করেন তা হল রাজধানী স্থানান্তর। ভূমধ্যভাগ থেকে রাজধানী সরিয়ে নিয়ে আসেন তিনি সমুদ্রের ওপর একটি বিস্তৃত দ্বীপভূমিতে। এখানে রাজধানী স্থাপনার ফলে প্রযুক্তির সাহায্যে যেমন তাঁর সাম্রাজ্যের প্রতিটি অংশে নজর রাখা সম্ভব, তেমনি রাজধানীর সুরক্ষা বিধানেরও সুবিধা।


এই দ্বীপভূমির সঙ্গে মূল ভূখণ্ডের যোগাযোগের মাধ্যম একটি সেতু মাত্র। দীর্ঘ ও টানা এই সেতুটি রৌরব সাম্রাজ্যকে সংযুক্ত করে রাখে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে। এছাড়া আকাশপথ তো আছেই। বিপুল বারিধি রাক্ষসদের সুরক্ষা দিচ্ছে অতন্দ্র প্রহরীর মত। ‘আকাশ-জাল’সুরক্ষা দিচ্ছে ওপর থেকে আগত যেকোন বিপদকে। আর কি চাই? রাজপ্রাসাদের নিজস্ব কক্ষে খোলা জানালার সামনে দাঁড়িয়ে সেতুটির দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ঠিক এই কথাটাই ভাবছিলেন রাবণ।


পৃথিবী জয়টাই তাঁদের কাছে একটা শক্ত ব্যাপার ছিল। এর জন্য দিবারাত্র অনলস পরিশ্রম করতে হয়েছে তাঁদের। দেবতাদের প্রযুক্তি ও অস্ত্রের জোর রাক্ষসদের থেকে বরাবরই বেশি ছিল। কিন্তু তাঁদের জনজাতির একটা স্বাভাবিক অন্তরায় ছিল সংখ্যা। হেসে উঠলেন রাবণ নিজের মনের অজান্তেই। যারা এত রকমারি প্রজাতির সংখ্যা বৃদ্ধি করে গেলেন তাঁরা নিজেদের সংখ্যার দিকেই নজর দেন নি তেমন! এর ফল ভুগতে হয়েছে সাংঘাতিকভাবে। যুদ্ধক্ষেত্রে প্রথমে দানবদের নিজেদের দলে টেনে নেওয়া, তারপর আত্মীয়তার দোহাই দিয়ে নাগদের নিজ দলের অন্তর্ভুক্ত করা-এই কাজটা অবশ্য বড়দাই করেছিলেন, কিন্তু এইভাবে দিনের পর দিন নিজের দলের সৈন্যসংখ্যা বৃদ্ধি করে অতর্কিতে আক্রমণ করে দেবতাদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়ার যোজনা যে সফল হবে সেটা তিনিও ভাবতে পারেন নি। দেবতাদের ফেলে যাওয়া উন্নত যুদ্ধাস্ত্র ও ব্যোমযানগুলির ওপর গবেষণা করে উন্নততর সরঞ্জাম তৈরি করে মঙ্গল থেকেও এঁদের বিতাড়ন করা গেছে। তবে ‘অলকা’গ্রহে অভিযান চালানো এখনও চূড়ান্ত আলোচনাধীন ও যুক্তি-তর্কসাপেক্ষ বিষয়।


-“আপনি এখনও নিদ্রা যান নি?” – প্রশ্ন করলেন রাবণের স্ত্রী, মন্দোদরি। কখন যে লঘুপদে তিনি ঘরে প্রবেশ করলেন তা রাবণ বুঝতেও পারেন নি।


-“না। এখনও ঘুম আসে নি ভদ্রে। আপনি নিদ্রা যান নি?”


-“মহামন্ত্রী ও মহাসেনাপতি এসেছিলেন একইসাথে। কাল সকাল ১০:৩০ গৎে সৈন্যরা যাত্রা শুরু করবে ‘ঈক্ষকু’র দিকে। এটাই মহারাজকে স্মরণ করাতে এসেছিলেন ওঁনারা।”


অন্যমনস্ক হয়ে কথাটা বলে পালংকের ওপর বসলেন মহারাণী মন্দোদরি। তাঁর গলাটা কেমন যেন উদাস ঠেকল রাবণের কানে।


-“আপনি নিশ্চই আবার আহত হয়েছেন যুদ্ধের কথা শুনে, তাই না ভদ্রে?”


-“অহেতুক রক্তপাত কখনোই কাম্য নয় মহারাজ! যে পক্ষের রক্তই সেটা হোক না কেন।”


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Fantasy