ফিরে পাওয়া
ফিরে পাওয়া


অভিষেক আর রিমা ছোটবেলা থেকেই গ্রামের স্কুলে একসঙ্গে পড়াশুনা করেছে। বড় হয়ে উঠেছে একসঙ্গে। বড় হওয়ার সাথে সাথে তাদের মধ্যের বন্ধুত্ব পরিণত হয়েছে ভালোবাসায়। দুজনের এই সর্ম্পকের কথা তাদের বাড়ীর কেউ জানত না।
রিমা বড় হওয়ার সাথে সাথে তার কথাবার্তায় অনেক পরিবর্তন হয়েছে। রিমা একদিন অভিষেক কে বলল ‘জানিস তো অভি জীবনে পয়সাটাই সব। আমি এমন একজনকে বিয়ে করব যে খুব পয়সাওয়ালা হবে, আমি যা চাইব তাই কিনে দিতে পারবে।’ অভিষেক ওকে থামিয়ে দিয়ে বলল ‘বাজে বকিস না রিমা। তুই শুধু আমার, যেদিন থেকে বুঝেছি ভালোবাসা কি, শুধু তোকেই ভালোবেসেছি আর সারাজীবন তোকেই ভালোবাসবো।’ রিমা কোন উত্তর না দিয়ে শুধু একটু হাসলো। তারপর চারদিন ধরে রিমার কোন দেখা নেই।
অভিষেক রিমার বান্ধবী পারুল কে জিজ্ঞাসা করতে সে বলল ‘একি অভি দা তুমি জানোনা ওর তো দুদিন আগে সই করে (রেজিস্ট্রি ম্যারেজ) বিয়ে হয়ে গেছে! ওরা মাসির বাড়ী ঘুরতে গিয়েছিল সেখানে ছেলের ওকে দেখে এত পছন্দ হয় যে পরের দিনই ওকে বিয়ে করে নেয়। ছেলেটি প্রচুর বড়লোক তাই ওর বাবা-মাও রাজী হয়ে যায়।’ অভিষেক বলল ‘তুই ঠিক বলছিস? আমি বিশ্বাস করিনা, রিমা তো আমাকে ভালোবাসে।’ পারুল বলল ওরা সবাই একটু পরেই ফিরবে তুমি নিজেই জিজ্ঞাসা করে নিও।’ কথা শেষ করতে করতেই দূর থেকে রিমা কে তার নতুন বর ও বাড়ীর সবার সাথে আসতে দেখে পারুল বলল ‘অভি দা ওই যে রিমা আসছে।’ অভিষেকের অনুরোধে পারুল অতি কষ্টে রিমাকে রাজী করল অভিষেকের সঙ্গে একবার দেখা করার জন্য।
গ্রামের সব একই ছিল শুধু পাল্টে গেছিল রিমা। রিমা কে দূর থেকে আসতে দেখে অভি মনে মনে বলল ‘কি সুন্দরী ই না লাগছে ওকে! একদিন তো ও শুধু আমার ছিল।’
রিমা ওর সামনে আসতে অভি বলল ‘ তুই কেন এরকম করলি?’ রিমা বলল ‘কি করেছি? সুখে থাকতে চাওয়া কি অন্যায়? আমার বরের অনেক পয়সা, আর তুই বেকার, কবে চাকরী পাবি তার নেই ঠিক, আমি কেন তোর জন্য নিজের জীবন নষ্ট করব? কালকে আমি ওর সাথে মুম্বাই চলে যাচ্ছি, সেখানেই থাকব।’ অভি উত্তর দেওয়ার ভাষা খুঁজে পাচ্ছিল না, শুধু বলল ‘ভালো থাকিস, সুখে থাকিস।’
পরের দিন রিমা চলে গেল। আর অভিষেক (অভি) ও চলে গেল কলকাতায়। এই ঘটনার পর পাঁচ বছর কেটে গেছে। অভির জীবন কিন্তু থেমে থাকেনি। প্রথমে কলকাতায় এসে একটি সোনার দোকানে কাজ করা শুরু করল সে। বছর খানেকের মধ্যে ওর বাবা-মা দুজনেই মারা যান। তখন গ্রামের সব জমিজমা বিক্রী করে অভি কলকাতায় প্রথমে নিজের একটি সোনার দোকান করে তারপর নিজের যোগ্যতায় সে এখন কলকাতার বুকে চারটে শোরুমের মালিক। এবার তার স্বপ্ন মুম্বাই তে একটা শোরুম খোলার। এই জন্য অভি দিন পাঁচেকের জন্য মুম্বাই গেল।
মুম্বাই তে অভি শোরুমের জন্য জমির বিষয়ে কথা বলতে গেল মিষ্টার কুমারের সাথে একটি পাঁচতারা হোটেলে। কাজের কথা শেষ হওয়ার পর মিষ্টার কুমার ড্রিঙ্কস এ চুমুক দিয়ে হাসতে হাসতে বলল ‘আরে অভিষেক বাবু এক তো আপনার উমর কম আছে অর সাদী ভি নেহী হুয়া হ্যাঁয়, ইসলিয়ে ইসসে আচ্ছা কোই গিফ্ট আপকে লিয়ে নেহী মিলা।’ অভি বলল ‘আরে এসবের কোন দরকার নেই’। মিষ্টার কুমার বলল 'পহলে দেখুন তারপর বলবেন’। এই বলে মিষ্টার কুমার উঠে গেলেন গিফ্ট আনতে আর একটু পরে গিফ্ট হিসাবে যাকে নিয়ে এলেন তাকে দেখে অভির চারিদিকের পৃথিবীটা যেন থেমে গেল নিমেষের মধ্যে। অভি দেখল তার সামনে সেজেগুজে দাঁড়িয়ে আছে রিমা। মিষ্টার কুমার বললেন ‘ইয়ে হ্যাঁয় লালী অর আজ রাত কে লিয়ে ইয়ে আপকী। গুড নাইট’ এই বলে উত্তরের অপেক্ষা না করেই সে চলে গেল।
অভি বলল ‘এরকম কি করে হল?’ রিমা বলল ‘মুম্বাই তে এনে আমার বর আমাকে বিক্রী করে দেয়, বাড়ীর কাউকে লজ্জায় কিছু বলতে পারিনি।’ অভি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল ওর মুখের দিকে। রিমা বলল ‘পাঁচটা বছর
প্রতিরাতে বহুলোকের কাছে বিক্রী করেছি নিজেকে তবে আমার অনিচ্ছায়। কিন্তু আজ আমি নিজেকে তোমার কাছে বিক্রী করতে চাই শুধু তোমার ভালোবাসার বিনিময়ে, আমাকে একটা রাতের জন্য সুখী হতে দাও।’ অভি কোন উত্তর দিতে পারল না, রিমার হাত দুটি ধরে বলল ‘শুধু একটা রাত নয় আমি সারাজীবন ধরে তোকে আমার ভালোবাসা দিয়ে কিনে রাখতে চাই। তোকে আমার জীবনে ফিরে পাওয়াই আমার কাছে সব পাওয়ার শ্রেষ্ট পাওয়া' l