Sharmistha Mukherjee

Horror Crime Thriller

4.0  

Sharmistha Mukherjee

Horror Crime Thriller

নারী মাংসের লালসা 🗡 অন্তিম

নারী মাংসের লালসা 🗡 অন্তিম

15 mins
270



গেষ্ট হাউস থেকে প্রায় দুই ঘন্টার দূরত্ব পেরিয়ে লোকাল থানায় গিয়ে উপস্থিত হয় সকলে । সকলে মিলে একে একে সব ঘটনা বিস্তারিত জানায় অফিসার ইনচার্জ মিঃ জার্ডিন ডিসুজাকে এমনকি পারিজাত নিজের স্বপ্নের বিবরণও জানায় ওনাকে । 


ওসি মিঃ জার্ডিন ডিসুজা : ( পারিজাতের কথা শুনে হেসে ) " কি স্বপ্ন ? তোমার স্বপ্নের সাথে এই ঘটনার যোগাযোগ আছে বলছো ? It's strange. Are you kidding me ? "


পারিজাত : ( হাত জোড় করে ) " I don't have the audacity to joke with you sir . I am not sure if my dream has any connection with the incident . Sir we all have one request please go to that guest house once . Please Sir . "


 সকলে মিলে হাতজোড় করে অনুরোধ করতে শুরু করলে মিঃ ডিসুজা ওদের সাথে ফোর্স নিয়ে গেষ্ট হাউসের দিকে রওনা হন । 


পারিজাতরা সকলে মিলে গেষ্ট হাউসে ঢুকে যাওয়ার মিনিট কুড়ি বাদে মিঃ ডিসুজা সহ আরও কিছু পুরুষ ও মহিলা পুলিশ সিভিল ড্রেসে গেষ্ট হিসেবে প্রবেশ করে গেষ্ট হাউসের ভিতরে । 

  

সাদা পোশাক পরিহিত কিছু পুলিশ নিষ্কৃতি গেষ্ট হাউসে গেষ্ট হিসেবে ঢুকে কিছুক্ষণ চারপাশ ঘুরে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করেও বাইরে থেকে কিছুই বুঝতে পারে না তাই সেই মূহুর্তে কোনোকিছু বুঝতে না দিয়ে পারিজাত ও বাকী সকলের সাথে মিলে শিকার ধরার জন্য ফাঁদ পাতার পরিকল্পনা করে । 


ওসি মিং জার্ডিন ডিসুজা : ( সকলকে একত্রিত করে ) " শোনো তোমরা, আমার কাছে একটা ভালো প্ল্যান আছে এখানকার রহস্যের পর্দা ফাঁস করার , just like a sting operation . আজকে রাতের দিকে আমাদের দুটো মহিলা কনস্টেবল এবং তোমাদের থেকে দুটো মেয়ে বাইরে ডাইনিং টেবিলে বসে ড্রিংকস করার মিথ্যে অভিনয় করবে । ওয়াইনের বোতলের মধ্যে আমরা আগে থেকেই কোল্ড ড্রিংকস রেখে দেব যাতে সত্যিই কারো অসুবিধা না হয় । তবে ঐ চারজনকেই সামান্য মদ্যপান করতে হবে যাতে দুষ্কৃতীরা কোনো ভাবেই আমাদের প্ল্যান বুঝতে না

 পারে । আমাদের মহিলা কনস্টেবলের মধ্যে থেকে রীনা ও পূজা থাকবে আর আপনাদের মধ্যে থেকে দুজনকে আমার চাই , এবার বলুন কে কে রাজি । একটু ভেবে বলবেন কারণ এই প্ল্যানে যথেষ্ট ঝুঁকি আছে । "


রাতুলের গার্লফ্রেন্ড মৌ : " আমি রাজি , আজ যেভাবেই হোক এই রহস্যের সমাধান করতেই হবে । মিঃ ডিসুজা, আমি রাজি । "


মৌ - এর কথা শুনেই অগ্নির গার্লফ্রেন্ড বর্ষাও বলে ওঠে , " মিঃ ডিসুজা , আমিও রাজি । শুধু বলুন কিভাবে কি করতে হবে । আজ এর শেষ দেখেই ছাড়বো । "


মিঃ জার্ডিন ডিসুজা : " Thank you . তোমরা চারজন ডাইনিং টেবিলে বসে ড্রিংকস করার অভিনয় করবে তারপর এমন ভাব করবে যাতে তোমাদের দেখে মনে হয় তোমরা চারজনই fully drunk তাই ওখানেই টেবিলের উপর মাথা নুইয়ে থাকবে । লেডি কনস্টেবল রীনা আর পূজার কাছে থাকবে গুপ্ত ক্যামেরা যা থেকে আমরা সম্পূর্ণ ঘটনা পর্যবেক্ষণ করতে পারবো । তোমাদের চারজনকে বেহুঁশ দেখে দুষ্কৃতী যে বা যারা আছে তারা নিশ্চয়ই কিছু করার চেষ্টা করবে কিন্তু তোমরা কেউ কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাবে না, চুপচাপ ওদের সাথে চলে যাবে বুঝতে পারলে ? তোমাদের নিয়ে চলে যেতেই আমরাও সাথে সাথেই অ্যাকশন নেবো তাতে ওদের ঘাঁটিতে ঢুকে ওদের ধরতে পারবো এবং বাকীদের উদ্ধার করতে পারবো । Did you understand well ? Does anyone have any problem ? "


সকলেই একসাথে শুধুমাত্র হাত দিয়ে Ok বলে ইশারা করে দেখায় । রাতে ডিনারের মিনিট কুড়ি পর দুই লেডি কনস্টেবল রীনা ও পূজা এবং মৌ আর বর্ষা পূর্ব পরিকল্পিত প্ল্যান অনুযায়ী ডাইনিং টেবিলে গিয়ে বসে । প্রায় ঘন্টাখানেক পর চারজনেই মদ্যপ অবস্থায় বেহুঁশ হয়ে পড়ে থাকার অভিনয় করে তবে সেই সময় মৌ আর বর্ষা দুজনেই ভয়ে দরদর করতে ঘামতে শুরু করে তবুও প্রাণপণে অভিনয় চালিয়ে যায় । 


ওদের চারজনকে প্রায় আধঘণ্টা ধরে বেহুঁশ হয়ে পড়ে থাকতে দেখে তিনজন লোক ওদের সামনে এসে দাঁড়ায় তারপর চারজনকে একে একে পরীক্ষা করে দেখতে থাকে তারা সত্যিই মদ্যপ অবস্থায় রয়েছে কিনা । চারজনের একেবারেই হুঁশ নেই বুঝতে পেরে ঐ তিনজন একে অপরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে তারপর এদিক - ওদিক ভালো করে দেখে নিয়ে আরও একজনকে হাতের মাধ্যমে ইশারা করে ডেকে নেয় । এভাবে মিনিট তিনেক পর চারজন মিলে এক একজন একটি করে মেয়েকে ধরে ধরে নিয়ে যেতে শুরু করে তাদের গুপ্ত আস্তানায় । 


চার দুষ্কৃতী মিলে ওদের নিয়ে যাওয়ার সময় ঘুণাক্ষরেও টের পেল না যে ঐ চারটি মেয়ের মধ্যে দুটি মেয়ের মাধ্যমে গেষ্ট হাউসের একটি রুমে বসে পুলিশ কম্পিউটারের সাহায্যে তাদের গতিবিধি ও গুপ্ত আস্তানায় যাওয়া সবটাই লক্ষ্য করে চলেছে অবিরাম । ওসি মিঃ জার্ডিন ডিসুজার প্ল্যান অনুযায়ী দুই লেডি কনস্টেবল রীনা ও পূজার কাছে গুপ্ত ক্যামেরা ছিল যা বাইরে থেকে কেউ দেখতে পেলেও বুঝতেই পারবে না । লেডি কনস্টেবল রীনার ডান কানের দুলে এবং পূজার জামার একটি বোতামে ক্যামেরা ছিল , sting operation এর জন্যই এইধরনের বেশ কিছু গুপ্ত ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়ে থাকে । 


 ওসি মিঃ ডিসুজা সহ বাকী সকলে কম্পিউটারের স্ক্রিনে দ্যাখে আলো - আধাঁরি পথ ধরে ঐ চারজন দুষ্কৃতী গেষ্ট হাউসের রান্না ঘরের ভেতরে ঢুকে যায় তারপর ডান পাশে থাকা একটি বড়ো কাঠের আলমারি ঠেলে সরিয়ে দিতেই সেখানে আরেকটি দরজা চোখে দেখা যায় । ঐ চার দুষ্কৃতীদের মধ্যে একজন প্যান্টের পকেট থেকে একটা চাবি বের করে সেই দরজা খোলে তারপর একে একে চারজনেই ঐ চারজন মেয়েকে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নেমে যায় বেসমেন্টে । মিঃ ডিসুজা এবং বাকী সকলের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে গুপ্ত ঘরের ভিতরের নৃশংস দৃশ্য দেখে , রীনা ও পূজার গুপ্ত ক্যামেরায় ধরা পড়তে থাকে গুপ্ত ঘরের ভিতরকার হাড় হিম করা দৃশ্য । চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য নানা বয়সী নারী দেহের বিভিন্ন কাটাছেঁড়া অঙ্গ - প্রত্যঙ্গ , পচাগলা ছিন্নভিন্ন নারীদের মৃতদেহ । সেখানে সব মিলিয়ে মোট তিনটি ঘর ছিল । তার মধ্যে একটিতে সব ছিন্নভিন্ন নারীদের মৃতদেহ , দ্বিতীয় ঘরটিতে ছিল কিছু অক্ষত নারী তবে কারোর জ্ঞান ছিল না এবং তৃতীয় ঘরটিতে ছিল দুটি বড়ো বড়ো টেবিল, ইলেকট্রিক করাত, বিভিন্ন মাপের নানা ধরনের ছুরি, কাঁচি, চপার, অজস্র পরিমাণে অজ্ঞান করার এবং অ্যানাসথেসিয়া করার ভর্তি ও ফাঁকা অ্যামপিউল আর ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য সিরিঞ্জ । সারা ঘরটির চারপাশে যেন রক্তের বন্যা বয়ে গেছে , বড়ো বড়ো গামলায় রাখা নারীদের দেহের কাটা অঙ্গ - প্রত্যঙ্গ । 


ঘরের ভিতরের দৃশ্য দেখে মিঃ ডিসুজা সহ বাকী পুলিশদের এবং সকলেই ভয়ে কাঠ হয়ে যায় । 


মিঃ ডিসুজা : " এখন আর এক মূহুর্তও দেরী করা যাবে না , এখনি অ্যাকশন নিতে হবে । Let's go " । 


মিঃ ডিসুজা ফোন করে আরও পুলিশ ফোর্স আগে থেকেই আনিয়ে রেখেছিল গেস্ট হাউসের কাছাকাছি , তারাও মিঃ ডিসুজার নির্দেশে ঘিরে ফেলে গেস্ট হাউসের চারপাশ । মিঃ ডিসুজা সহ প্রায় কুড়িজন অস্ত্রধারী পুলিশ ও পারিজাতরা সকলেই ছুটে যায় গেস্ট হাউসের রান্না ঘরের ভিতরে । 


রান্না ঘরের ভিতরে ঢুকে সকলেই দ্যাখে কম্পিউটারের স্ক্রিনে দেখা সেই গুপ্ত দরজা , পাশেই রয়েছে ঐ আলমারিটিও । সেই দরজাটি খুলে মিঃ ডিসুজা সহ একে একে সকলে সিঁড়ি বেয়ে অতি সন্তর্পণে নীচে নামতে শুরু করে এবং ধীরে ধীরে ঘিরে ফেলে সেই তিনটে ঘরের বাইরের সম্পূর্ণ এলাকা । মিঃ ডিসুজা সহ কিছু পুলিশ প্রথমে একটি ঘরের দরজা খুলে ভিতরে ঢুকেই থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে ভিতরকার নারকীয় দৃশ্য দেখে । পচা - গলা মৃতদেহের গন্ধে সকলের নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয় তবুও মিঃ ডিসুজার নির্দেশে সকল নারী মৃতদেহগুলোকে খুটিয়ে দেখতে থাকে কিছু পুলিশ এবং রিয়া সহ বাকী চারজনকে সনাক্ত করার জন্য পুলিশের সাথে ছিল সন্দীপ ও আকাশ । প্রায় কুড়িটি ছিন্নভিন্ন নারীদের মৃতদেহের ভিতর থেকে পাওয়া যায় রিয়া ও দিয়ার ছিন্নভিন্ন মৃতদেহ । রিয়া ও দিয়ার মৃতদেহের অবস্থা দেখে আৎকে ওঠে সন্দীপ এবং আকাশ দুহাতে চোখ ঢেকে মাটিতে বসে পড়ে । রিয়ার এবং দিয়ার শরীর থেকে স্তন, ঊরুর মাংস ও পেটের কাছের কিছুটা মাংস কেটে নেওয়া হয়েছে । রিয়া ও দিয়ার মৃতদেহ দেখেই সন্দীপ আর আকাশ ছুটে বেরিয়ে আসে সেই ঘর থেকে তারপর বাকী সকলকে সবটা জানাতেই সকলেই কান্নায় ভেঙে পড়ে । ঠিক সেই সময় তিন নম্বর ঘরটি থেকে ভেসে আসে তীব্র ইলেকট্রিক করাত চালনার শব্দ । করাত চালনার শব্দ পেয়েই মিঃ ডিসুজা সহ বেশ কিছু অস্ত্রধারী পুলিশ ছুটে যায় সেই ঘরটির দিকে, তারপর সকলে মিলে একসাথে ঢুকে পড়ে ঘরটির ভিতরে । ঘরটির ভিতরে ঢুকে সকলের হাড় হিম হয়ে যায়, সামান্য তফাতে রাখা দুটি বড়ো টেবিলের উপর শোয়ানো দুটি নগ্ন নারীদেহ । ঐ দুটি দেহের মধ্যে একটি নারীর দুটি স্তন ও ঊরুর মাংস কাটা হয়ে গেছে ইতিমধ্যেই এবং অন্য নারীটির কোমড়ের নীচ থেকে কেটে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে । নীচে গামলায় গামলায় রাখা বেশ কিছু কাটা অঙ্গ - প্রত্যঙ্গ আর কিমা করা মাংস তবে সেই সবই ওখানে থাকা নারীদের শরীর থেকে কাটা । 


ঘরের ভেতরে আচমকা এতো পুলিশ দেখে প্রথমে ঐ চারজন নরখাদক একটু ঘাবড়ে যায় তারপরেই প্রায় সাথে সাথেই ছুড়ি, চপার এবং ইলেকট্রিক করাত নিয়ে হামলা করার জন্য ছুটে আসতেই মিঃ ডিসুজার নির্দেশে দুজন কনস্টেবল প্রথমে শূন্যে ব্ল্যাঙ্ক ফায়ার করে কিন্তু তাতে ওরা ভয় না পেয়ে ধেয়ে আসে । চারজনের মধ্যে একজনের হাতে ছিল চলন্ত ইলেকট্রিক করাত , সে মিঃ ডিসুজার খুব কাছাকাছি পৌঁছোতেই একজন কনস্টেবল আততায়ীর পা লক্ষ্য করে গুলি করতেই তার হাত থেকে চলন্ত করাত গিয়ে আঘাত হানে পাশে থাকা আরেক আততায়ীর হাতে এবং সাথে সাথেই হাতটি কেটে পড়ে যায় মেঝের উপর , চারিদিকে ফিনকি দিয়ে ছড়িয়ে পড়ে রক্ত । দুজন শাগরেদের সাথে আচমকা ঐরকম ঘটনা ঘটায় বাকী আরও দুজন হতভম্ব হয়ে থমকে দাঁড়িয়ে থাকে আর ঠিক তখনই বেশ কিছু পুলিশ মিলে তাদের উপর হামলা করে বন্দী করে । প্রায় জনা পঁচিশ পুলিশ ঐ চারজন আততায়ীর হাতে পিছমোড়া করে হাতকড়া পড়িয়ে কালো কাপড় দিয়ে চোখ বেঁধে নিয়ে চলে যায়

 সেখান থেকে । তারপরেই মিঃ ডিসুজার নির্দেশে সন্দীপকে ডাকা হয় টেবিলের উপর থাকা দুটি মৃতদেহের শনাক্তকরণ 

করার জন্য । নাকে রুমাল চাপা দিয়ে ভয়ে ধীরে ধীরে ঘরে ঢোকে সন্দীপ তারপর টেবিলের উপর থাকা ছিন্নভিন্ন মৃতদেহ দুটি দেখেই ভয়ে - ঘৃণায় মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার সময় সাথে সাথেই মিঃ ডিসুজা তাকে ধরে ফেলে তারপর ধরে ধরে ঐ ঘরটির বাইরে নিয়ে আসেন । 


মিঃ ডিসুজা : ( সন্দীপের চোখেমুখে জল ছিটিয়ে ) " সন্দীপ তুমি কি চিনতে পেরেছো ঐ মৃতদেহ দুটি কার কার ? Tell me . "


 মিঃ ডিসুজার প্রশ্ন শুনে সন্দীপ একবার পিটারের দিকে আরেকবার সৌম্যর দিকে তাকিয়েই মাথা নীচু করে কান্নায় ভেঙে পড়ে । সন্দীপ পিটার ও সৌম্যর দিকে তাকাতেই ওরা বুঝতে পেরে ছুটে যায় তিন নম্বর ঘরটির ভিতরে । ওরা দুজন ঘরটির ভিতরে ঢুকেই টেবিলের উপর ছিন্নভিন্ন এমিলি এবং রাকার লাশ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়ে । অন্যদিকে কিছু পুলিশ দুই নম্বর ঘরটি থেকে ছয়টি মেয়েকে উদ্ধার করে যাদের জ্ঞান ছিল না এবং বহুবার ধর্ষিতা হয়েছে যা তাদেরকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে । তাদের মধ্যে দুটি মেয়ে বছর পনেরোর , দুটি মেয়ে ত্রিশ থেকে পঁয়ত্রিশের মধ্যে , একজন বছর দশের এবং জয়ন্তর গার্লফ্রেন্ড নিশা । ঐ ছয়টি মেয়ে ছাড়াও ছিল মিঃ ডিসুজার প্ল্যান অনুযায়ী পাঠানো চারটি মেয়ে । 



মিঃ ডিসুজা : ( ইন্সপেক্টর বড়ুয়াকে হাত তুলে ডেকে ) " এই বড়ুয়া তুমি সন্দীপদের সকলকে উপরে ফাঁকা জায়গায় নিয়ে যাও আর এক্ষুনি কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্স ডেকে ঐ ছয়টি মেয়েকে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করো । Don't be too late Barua . "


ওসি মিঃ ডিসুজার নির্দেশে ইন্সপেক্টর বড়ুয়ার নির্দেশে দুটি কনস্টেবল সন্দীপ, পারিজাতসহ এবং বাকী সকলকে ঐ গুপ্ত বেসমেন্ট থেকে বের করে বাইরে নিয়ে যায় । বেসমেন্ট থেকে বাইরে বেরিয়ে এসে প্রত্যেকেই কান্নায় ভেঙে পড়ে রিয়া, দিয়া, এমিলি এবং রাকার জন্য । জয়ন্ত নিশার অবস্থা দেখে যেন পাথর হয়ে যায় । 


ইন্সপেক্টর বড়ুয়ার ফোন পেয়ে ঘন্টাখানেকের মধ্যে ছয়টি অ্যাম্বুলেন্স আসে ঘটনাস্থলে এবং নিশা সহ বাকী জ্ঞান না থাকা পাঁচটি মেয়েকে নিয়ে চলে যায় হাসপাতালে । হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সাথে সাথেই তাদের চিকিৎসা শুরু হয় । কিছুদিনের চিকিৎসার পর ছয়জনের মধ্যে পাঁচজন একটু সুস্থ হলেও তাদের ট্রমা কাটেনি তাই আরও কিছুদিন চিকিৎসাধীন থাকতে হবে কিন্তু বছর দশের বাচ্চা মেয়েটির মৃত্যু ঘটে । 


অন্যদিকে সন্দীপসহ প্রত্যেকেরই কমবেশি চিকিৎসা হয় ট্রমা কাটানোর জন্য কিন্তু পারিজাত ? 


প্রায় মাস ছয় - সাতেক ধরে রোজ একই স্বপ্ন দেখে আতঙ্কিত পারিজাতের স্বপ্ন অদ্ভুত ভাবে সত্যি হয়ে যায় নিষ্কৃতি গেষ্ট হাউসে । বহু নারীর মৃতদেহ , মনে মনে ভালোবেসেও মুখে প্রকাশ না করতে পারা মেয়ে রিয়া এবং বাকী বান্ধবীদের ছিন্নভিন্ন লাশ স্বপ্নের থেকে বেরিয়ে এসে যেন সত্যি হয়ে যায় পারিজাতের

 জীবনে । পারিজাত কিছুতেই নিজের চোখকে বিশ্বাস করতেই চাইছে না তাই ক্রমাগত তারস্বরে চীৎকার করে বলতে থাকে,

 " This is not true. These can't be true. How can everything seen in a dream come true ? How is it possible doctor ? আমি যদি জানতাম আমার স্বপ্নে দেখা সবকিছু সত্যি হবে তাহলে কাউকে এখানে আসতেই দিতাম না । " হাসপাতালের বিছানায় বসে দিনরাত শুধু এইসব কথাই চীৎকার করে আওড়াতে থাকে আর কথায় কথায় প্রচন্ডভাবে হিংস্র 

হয়ে ওঠে , এরফলে পারিজাতকে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখতে বাধ্য হয় ডাক্তার । 


পারিজাতরা যে ষোলজন মিলে দার্জিলিং জেলার অন্তর্গত চম্পাসারি গ্রামের কাছে সিতংয়ে ঘুরতে এসেছিল তাদের প্রত্যেকের অভিভাবকদের সেখানে ডেকে পাঠান মিঃ জার্ডিন ডিসুজা । নিশাও ধীরে ধীরে একটু সুস্থ হয়ে ওঠে , সকলেই প্রায় স্বাভাবিক হয়ে যায় বেশ কিছুদিনের মধ্যেই কিন্তু পারিজাত পাগলামি দিনে দিনে বাড়তে থাকে । মিঃ ডিসুজা ও পারিজাতের বাবা - মা তার এই সমস্যার কথা জানতে চাইলে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ মুরলী নায়ার বলেন , 

" This condition is due to Parijat's excessive stress . He became mentally ill after seeing a terrible dream every day for six months . As a result of insomnia for a long time, he started to become mentally ill a little bit every day. In medical terms this is called Nightmare Disorder . "


পারিজাতের বাবা : ( কাঁদতে কাঁদতে হাতজোড় করে ) " ওর ঠিক হতে কতোদিন সময় লাগবে ডাক্তার ? ওকি সত্যিই পাগল হয়ে গেল ? দয়া করে ওকে সুস্থ করে

 দিন ডক্টর । "  


এমিলি, রিয়া - দিয়া ও রাকার অভিভাবকেরা সন্তান হারানোর শোকে কান্নায় ভেঙে পড়ে , চারজনের দ্বারা প্রায় বারোবার ধর্ষিত নিশার অভিভাবকদের অবস্থাও যথেষ্ট খারাপ । 


মিঃ ডিসুজার নির্দেশে নিষ্কৃতি গেষ্ট হাউসের দুই বাবুর্চি , একজন রিসেপশনিস্ট ও একজন কেয়ারটেকার এই চারজন আততায়ীর জেরা শুরু হয় জোরকদমে । 


টানা তিন দিন ধরে দিন - রাত জেরা ও মারধর চলতে থাকে, অন্যদিকে মিঃ ডিসুজা সহ বাকীরা অর্থাৎ পারিজাত বাদে বাকি সকলেই সেই জেরা কম্পিউটারে তা দেখতে থাকে । 


ইন্সপেক্টর বড়ুয়া : ( চেয়ারে হাত পিছমোড়া করে বাঁধা কেয়ারটেকারের দুই গাল সজোরে টিপে ধরে ) " তাড়াতাড়ি বল তোরা এইভাবে মেয়েগুললোকে মেরে কেটে কি করতিস ? তাড়াতাড়ি বল নাহলে একটা একটা করে হাতের আঙুল কেটে দেব তারপর বুঝবি শরীরের অঙ্গ কাটলে কেমন লাগে । "


মুখে ভয় দেখিয়ে কোনো লাভ না হওয়ায় ইন্সপেক্টর বড়ুয়া সত্যিই কেয়ারটেকারের বাঁ হাতের তর্জনী কেটে ফেলে দিতেই কেয়ারটেকার মুখ খোলে । 


কেয়ারটেকার : ( চীৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে ) " বলছি বলছি, আমি সব বলছি । বছর দেড়েক আগে আমাদের গেষ্ট হাউসে একটা পরিবার এসেছিল ঘুরতে , বাবা - মা আর দুই ভাইবোন । মেয়েটি খুবই সুন্দর ছিল দেখতে আর শরীরটাও ছিল নজরকাড়া । বাবুর্চি নরেন্দ্রর প্রথম নজর পড়ে মেয়েটির উপর তারপরেই আমাদের তিন জনকে ডেকে দেখায় মেয়েটিকে , মেয়েটির বয়স ছিল পনেরোর আশেপাশে । তৃতীয় দিন খুব ভোরবেলায় মেয়েটি গেষ্ট হাউসের পিছনের বাগানে দিকে যায় ছবি তুলতে আর সেখান থেকেই নরেন্দ্র আর বিপিন মেয়েটিকে তুলে নিয়ে চলে যায় রান্নাঘরের ভিতরে থাকা গুপ্ত আস্তানায় । সেখানে নিয়ে গিয়ে মেয়েটিকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে ওরা দুজন মিলে ধর্ষণ

 করে । এভাবেই চলতে থাকে দু - তিন দিন । 


ইন্সপেক্টর মিঃ বড়ুয়া : " মেয়েটির বাবা - মা খোঁজ করে নি ? দু - তিন মেয়ে নিখোঁজ অথচ পুলিশকে কোনো কিছু জানায় নি ? 


কেয়ারটেকার : " একটা কথা বলা হয় নি স্যার , নরেন্দ্র যে কোনো লোকের হাতের লেখা হুবহু নকল করতে পারে । আমাদের গেষ্ট হাউসে যারা থাকতে আসে তাদেরকে একটা ফর্ম পূরণ করতে হয় ইংরেজি ও

 বাংলা ভাষায় । আসলে এই ফর্মের বুদ্ধিও নরেন্দ্রর নিজের কারণ ঐ ফর্ম পূরণ করলে তার দেখে ও হাতের লেখা নকল করে । ঐ মেয়েটিকে তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় নরেন্দ্র মেয়েটির নাম করে তার বাবা - মায়ের নামে একটা চিঠি লেখে যার জন্য মেয়েটির বাবা - মা অনেক কান্নাকাটি করেছে, মেয়েটিকে গালমন্দ করেছে কিন্তু খোঁজ করে নি । "


মিঃ বড়ুয়া : ( ভ্রু কুঞ্চিত করে ) " Strange ! বাবা - মা মেয়েটিকে না খুঁজে উল্টো গালমন্দ করেছে ? কিন্তু কেন ? কি লেখা ছিল ঐ চিঠিতে ? "


কেয়ারটেকার : " ঐ চিঠিতে মেয়েটির হাতের লেখা নকল করে নরেন্দ্র লিখেছিল - 


 মা - বাবা, 


 আমি চলে যাচ্ছি আমার ভালোবাসার মানুষটির সাথে । তোমরা আমাকে কোনোদিন খোঁজার চেষ্টা কোরো না । আমি যাকে ভালোবাসি তার সাথেই আমি থাকতে চাই । 


        তোমাদের মুনিয়া  


এই চিঠি পড়ে মেয়েটির বাবা রাগে ফেটে পড়ে আর চিঠির সত্যতা যাচাই না করে উল্টো গালাগাল করে এই গেষ্ট হাউস ছেড়ে

 চলে যায় । ওদিকে টানা পাঁচ দিন মেয়েটির ওপর অকথ্য অত্যাচার চলে আমাদের চারজনের ফলে মেয়েটি মারা যায় । মেয়েটি মারা যেতেই বিপিন আর আমি খুব ভয় পেয়ে যাই লাশটা কি করা হবে তাই ভেবে কিন্তু তখনই............ " এই বলে চুপ করে যায় কেয়ারটেকার । 


মিঃ বড়ুয়া : ( কেয়ারটেকারের দুই গাল সজোরে টিপে ধরে ) " কি হোলো, চুপ করে গেলি কেনো ? কিন্তু তখনই কি হয়েছিল ? চুপ করে থেকে কোনো লাভ নেই

 তাড়াতাড়ি বল । "


কেয়ারটেকার : " মেয়েটির লাশটির কি করা হবে তা ভেবে যখন আমরা পাগল হয়ে যাচ্ছি ঠিক তখনই নরেন্দ্র বললো , ' মেয়েটিকে আমরা চারজন মিলে কুচি কুচি করে কেটে ফেলবো । তখন বিপিন বলেছিল, ' যাইহোক কাটার পরেও তো সেগুলো ফেলার ব্যবস্থা করতে হবে আর তখন কি হবে ভেবে দেখেছিস ? ' বিপিনের কথা শুনে আমরা আবার চিন্তায় পড়ে যাই । নরেন্দ্র মিনিট দশেক চুপচাপ থেকে তারপর বলে, ' ঐ মাংসগুলো আমরা রান্না করে খেয়ে ফেলবো । রান্না এমনভাবে করতে হবে যাতে তার স্বাদ মুখে লেগে থাকে তাহলে এই গেষ্ট হাউসের সব অতিথিদেরও সেই মাংসের নানান খাবার তৈরি করে খাওয়ানো হবে । ' তারপর থেকে এখনো পর্যন্ত ঐ একই পদ্ধতিতে চলতে থাকে নারী অপহরণ , ধর্ষন - হত্যা । 


কেয়ারটেকারের কথাগুলো শুনে মিঃ ডিসুজার মুখ থেকে অজান্তেই বেরিয়ে আসে একটা শব্দ , " ক্যানিবালিজম ? "


অগ্নির গার্লফ্রেন্ড বর্ষা : ( ভ্রু কুঞ্চিত করে ) 

" ক্যানিবালিজম ? সেটা কী ? "


পিটার : ( কান্না ভেজা ক্লান্ত গলায় ) 

" ক্যানিবালিজম মানে নর মাংস ভক্ষণ । ক্যানিবাল অর্থাৎ নরখাদক আর এই ক্যানিবাল থেকেই হয়েছে ক্যানিবালিজম । প্রাচীন যুগ থেকে এখনো পর্যন্ত বহু জায়গায় বহুবার এই নরমাংস ভক্ষণের কাহিনী শোনা যায় , পরে তুমি গুগল সার্চ করে ভালো করে জেনে নিও । "


বর্ষা : ( চোখ দুটো গোল গোল করে অবাক হয়ে ভয় মিশ্রিত স্বরে ) " তার মানে ওরা এতোদিন ঐসব মেয়েদের মেরে তাদের মাংস খেয়ে নিয়েছে ? "


অগ্নি : ( বর্ষায় দুই কাঁধে হাত রেখে ) " শুধু তাই নয়, এই কয়েকদিন আমরা সবাই যে সমস্ত মাংসের রেসিপি খেয়েছি তার সবগুলোই ছিল ঐসব হতভাগ্য মেয়েদের মাংস । "


অগ্নির কথা শুনে প্রত্যেকেরই গা গুলিয়ে উঠলো বমি হয়ে যাওয়ার উপক্রম হোলো সবার এবং রাতুলের গার্লফ্রেন্ড মৌ সব শুনে

 ঘৃণায় বমি করার জন্য ছুটে চলে যায় বাথরুমের দিকে , মৌয়ের পিছন পিছন ছুটে যায় রাতুলও । 


ওসি মিঃ জার্ডিন ডিসুজা : ( ভ্রু কুঞ্চিত করে ) " কিন্তু আমি এখনো কিছুতেই বুঝে উঠতে পারলাম না যে পারিজাত এইসব ঘটনা পাঁচ - ছয় মাস আগে থেকেই স্বপ্নে দেখলো কি করে ? ভবিষ্যতে যে ঘটনা ঘটতে চলেছে তা অনেক আগে থেকেই স্বপ্নে দেখতে পাওয়ার ঘটনা সত্যিই বিরল , সিনেমা - সিরিয়ালে এই ধরনের অনেক কিছু দেখেছি ঠিকই কিন্তু বাস্তবেও যে এমনটা হতে পারে তা পারিজাতকে নিজের চোখে না দেখলে হয়তো বিশ্বাসই করতে পারতাম না । সবথেকে দুঃখের বিষয় হোলো ছেলেটার এতো অল্প বয়সে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়া, জানি না কবে সে আবার স্বাভাবিক অবস্থায়

 ফিরবে । "


অন্যদিকে জেরা করার রুমে তখন রীতিমতো তুলোধুনা করা হচ্ছে নরেন্দ্র ও বিপিনকে কারণ এই নৃশংস হত্যাকান্ডের এবং ক্যানিবালিজমের মূল পান্ডা ছিল এরা দুজনেই । কিছুক্ষণ পর মিঃ ডিসুজা গিয়েও একটু হাত গরম করে আসেন । টানা সাতদিন জেরা ও মারধর চলার পর ওদের আদালতে হাজির করা হয় । মিঃ ডিসুজা ও অন্যান্য পুলিশ আধিকারিকদের তত্তাবধানে নিহত ও আহত মেয়েদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করা হয় । আদালতের বিচারের দিন প্রত্যেকটি আহত ও নিহত মেয়েদের পরিবারের লোকজন এবং পারিপার্শ্বিক সমগ্র মহিলাদের সহোযোগিতা ও ন্যায়বিচারের দাবীতে বিচারক নরেন্দ্র ও বিপিনকে ফাঁসির আদেশ দেন । বাকী দুজন অর্থাৎ কেয়ারটেকার ও রিসেপশনিস্টের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড হয় এবং নিষ্কৃতি গেষ্ট হাউসটিকে বরাবরের জন্য বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করেন বিচারপতি । 


এই ঘটনার বছর পাঁচেক পরে সকলেই আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসলেও পারিজাতের মানসিক অসুস্থতা বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য তার ঠাঁই হয় শহরতলির একটি নামকরা অ্যাসাইলামে । 




    ********** সমাপ্ত **********


  


    






Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror