Sharmistha Mukherjee

Drama Others

4  

Sharmistha Mukherjee

Drama Others

শ্যামাঙ্গিনীর আখ্যান 💔 পর্ব ১

শ্যামাঙ্গিনীর আখ্যান 💔 পর্ব ১

3 mins
457



 

  বি . দ্র :: এই গল্পটি আমার পূর্বে লেখা " কালো মেয়ের উপাখ্যান " এর সিজন ২ 


আজ যানে কি জিদ না করো

 আজ যানে কি জিদ না করো


ইঁউহি পেহ্লু মে ব্যায়ঠে রহো

ইঁউহি পেহ্লু মে ব্যায়ঠে রহো


আজ যানে কি জিদ না করো 


হায় মর যায়েঙ্গে, হামতো লুট যায়েঙ্গে

অ্যায়সি বাতে কিয়া না করো


আজ যানে কি জিদ না করো

আজ যানে কি জিদ না করো...........



তিলোত্তমা কলকাতার বুকে শীতের কামড় বেশ জাঁকিয়ে বসেছে । তখন রাত প্রায় ১২টা , যদিও কলকাতার বুকে রাত ১২টা মানে কিছুই নয় তবুও শীতের রাত তাই

রাস্তা - ঘাট - চারপাশ প্রায় জনশূন্য । বাড়িতে বাড়িতে হয়তো অনেকেই ঘুমোচ্ছে আবার হয়তো অনেকেই জেগে আছে বিভিন্ন কারণে । 


তিলোত্তমা সুন্দরী কলকাতার বুকে একটি বিখ্যাত অঞ্চলের বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টের চৌদ্দ তলায় সুসজ্জিত ড্রয়িং রুমের সোফায় ক্লান্ত শরীরটাকে এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে ফরিদা খানমের গজলের রস আস্বাদন করছে বছর ত্রিশের শ্যামা অর্থাৎ শ্যামাঙ্গিনী বোস। তার বন্ধ দুচোখের কোল বেয়ে গড়িয়ে নামছে বুকের জমাট বাঁধা কষ্ট । পাঁচ ফুট ছয় ইঞ্চি উচ্চতার কৃষ্ণবর্ণা শ্যামার শরীরের আকর্ষণে বুঝি অবলীলায় আগুনে ঝাঁপ দিতে পারে শতশত কালো ভ্রমরের দল । শ্যামার সামনে কাঁচের টেবিলের উপর রাখা ওয়াইনের বোতল, ওয়াইন ভরা একটি গ্লাস আর একটা অ্যালবাম । ডান হাতের আঙ্গুল দিয়ে আলতো করে দুচোখের জল মুছে সোজা হয়ে বসে ওয়াইনের গ্লাসে চুমুক দেয় শ্যামা কিন্তু কিছুতেই যেন নেশা জমছে না, শুধুমাত্র একটু মাথাটায় হালকা ঝিম ধরেছে এই যা । আসলে গত ছয় বছর যাবৎ রোজ রাতের নিত্যসঙ্গী এই ওয়াইনের বোতল, গ্লাস আর এই পুরানো অ্যালবাম । অ্যালবামের পাতায় পাতায় রয়েছে প্রচুর স্মৃতির মূহুর্ত রয়েছে পালিতা মা ডাঃ পামেলা বোসের সাথে কিছু ছবি , নিষিদ্ধ পল্লীতে তাকে আগলে রেখেছিল দুই মাসিমনি নিশি আর সিতারার ছবি , কলেজের প্রথম ভালোবাসা ও স্বামী সম্রাটের শত টুকরোকে আবারও কোনোরকমে জোড়া লাগানো একটি ছবি আর একমাত্র সন্তান নব্যাংশের অনেক ছবি । এই স্মৃতির পাতায় ঘোরাফেরা করতে করতেই কেটে যায় বহু নিঃসঙ্গ রাত । 


রোজ রাতে ওয়াইনের গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে শ্যামা ভাবে এই তুচ্ছ প্রাণ আর শতহস্তে বলি যাওয়া শরীরটাকে টিকিয়ে রাখার কি কোনো প্রয়োজন আছে ? এইভাবে রোজ তিল তিল করে না মরে আত্মহত্যার পথ বেছে নিলেই তো ভালো কিন্তু মরবে ভেবেও শেষপর্যন্ত মরতে পারে না সে । আসলে দীর্ঘ ছয় বছর ধরে রোজ একটু একটু করে শরীর - মনের দিক থেকে হাত তুলে নিলেও স্বেচ্ছা মৃত্যুটাকে বেছে নিতে পারে না ছোট্ট নব্যাংশের কথা ভেবে ।


আট বছরের ছোট্ট নব্যাংশ মুম্বাইয়ে দিদিমা ডাঃ পামেলা বোসের কাছেই থাকে । নিষিদ্ধ পল্লীর নিষিদ্ধা বান্ধবী সিতারার অনুরোধে ছোট্ট শ্যামাকে যেদিন কোলে তুলে নিয়েছিল গায়নোকলজিস্ট ডাঃ পামেলা বোস সেদিন থেকে তার সাত বছরের পুরনো প্রেমও ধীরে ধীরে শেষ হয়ে যায় । ডাঃ পামেলা বোসের প্রেমিক ডাঃ পার্থ চ্যাটার্জীর বক্তব্য ছিল, 

" আস্তাকুঁড় থেকে তুলে আনা মেয়েটিকে তুমি মেয়ে হিসেবে মেনে নিলেও আমি মানতে পারবো না । তুমি যদি এই মেয়েটাকে নিজের সন্তান হিসেবে রাখতে চাও তাহলে আমার সাথে তোমার কোনো সম্পর্ক থাকবে না । " এই একটা কথাতেই ডাঃ পামেলা তাদের সাত বছরের সম্পর্কে ইতি টেনে সিঙ্গেল মাদার হিসেবেই শ্যামাকে বড়ো করে তোলার সিদ্ধান্ত নেয় । 


দার্জিলিংয়ের একটি কনভেন্ট স্কুলে ডাঃ পামেলা বোসের একমাত্র মেয়ে হিসেবে শিক্ষাযাত্রা শুরু হয়েছিল শ্যামার । পড়াশোনায় খুব প্রখর না হওয়ায় অতি সাধারণভাবে কমার্স গ্রাজুয়েট হয়েই বইপত্র শিকেয় তুলে দেয় সে , তবে বাংলা, হিন্দি, ইংলিশ,গুজরাটি ও ফ্রেঞ্চ ভাষায় ছিল একেবারে সিদ্ধহস্ত । কলেজে পড়াকালীন প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে সম্রাটের সাথে , ধীরে ধীরে সেই প্রেমের সম্পর্ককে ছাপিয়ে তারা বৈবাহিক সূত্রে আবদ্ধ হয় । ওদের হাসি - খুশি জীবনে আরও আনন্দের জোয়ার উছলে ওঠে নব্যাংশের জন্মের পর।


নব্যাংশের এক বছর বয়স তখন, অতি ক্ষীণ পদক্ষেপে শ্যামার জীবনে পদার্পণ করে কালো কালো অসংখ্য ছায়ামূর্তি । না না কোনো অশরীরী নয় দামী বেশভূষা পরিহিত ভদ্র সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিত্বের আড়ালে লুকিয়ে থাকা বুভুক্ষু নারী শরীরভোগী কিছু পুরুষ । 


ছেলের জন্মের এক বছর পরেও শ্যামার শরীরের গঠন ছিল রীতিমতো চোখ ধাঁধানো , গায়ের রং কৃষ্ণবর্ণা হলেও চোখ - নাক - মুখ যেন ভগবান অতি যত্ন সহকারে তুলির টানে রূপবতী করে গড়ে তুলেছেন । তাই শ্যামা কালো হলেও সুন্দরী বলে সেই কলেজ জীবন থেকেই তাকে নিয়ে সম্রাটের খুব অহংকারও ছিল । 




   ******** To Be Continued 


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama