শ্যামাঙ্গিণীর আখ্যান: পর্ব ১৫
শ্যামাঙ্গিণীর আখ্যান: পর্ব ১৫
ভাবিকা : ( মুখের স্যুপটা গলাধঃকরণ করে খুব ধীর গলায় ) " আমার নাম ভাবিকা । "
রমাদি : ( অবাক হয়ে ভ্রু কুঁচকে ) " কী ? ভাবি ? ভাবি মানেতো বৌদি , এটা কেমন নাম ! "
রমাদির কথা শুনে আবার মুচকি মুচকি হাসতে থাকে শ্যামা আর সোনালী । তখন সোনালী বলে , " উফ্! মা তুমি পারো বটে , দিদিমনির নাম ভাবি না ভাবিকা । কি যে উল্টোপাল্টা বলো তুমি । "
রমাদি : ( আবার মুখটা কাঁচুমাচু করে )
" ধূর ! আমি ঐসব নাম মনেও রাখতে পারবো না তার চেয়ে বরং ছোটো দিদিমনি বলে ডাকবো । বড়ো দিদিমনি আর ছোটো দিদিমনি, ব্যস এইটুকুই মনে রাখা ভালো । "
এই বলে ভাবিকাকে ধীরে ধীরে স্যুপ খাওয়াতে থাকে । অনেক সময় নিয়ে একটু একটু করে স্যুপটা শেষ করে ভাবিকা । এতোদিন স্যালাইনের মাধ্যমে গুচ্ছ গুচ্ছ ওষুধ আর ন্যাসোগ্যাসট্রিক টিউবের মাধ্যমে খাওয়ানো হয়েছে তাকে তাই আজকে প্রায় মাস ছয়েক বাদে সরাসরি মুখে খেয়ে মনে মনে খুব তৃপ্ত হয় সে ।
পুরো স্যুপটা খুব ধৈর্য ধরে খাওয়ায় রমাদি তারপর তোয়ালে দিয়ে মুখটা মুছিয়ে দিতে দিতে বলে , " জানোতো ছোটো দিদিমনি, আমি আগে কোনো স্যুপই বানাতে পারতাম না , বড়ো দিদিমনি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে আমাকে অনেকরকম স্যুপ বানানো শিখিয়েছে । যেমন ধরো - ভেজিটেবল স্যুপ , চিকেন সুইট কর্ন স্যুপ , হট অ্যান্ড সাওয়ার চিকেন স্যুপ , চিকেন নুড্যল স্যুপ , হ্যাঙ্গওভার স্যুপ , মিক্সড ভে........ "
রমাদি আরও বলতে যাবে তখনই শ্যামা বলে ওঠে , " থাক্ থাক্ অনেক হয়েছে রমাদি আর বলতে হবে না । এখন ওকে বরং বিশ্রাম নিতে দাও , রাত অনেক হোলো তুমি আর সোনালী যাও গিয়ে ডিনার করে নাও । এই রমাদি একটা কাজ করো , আমার খাবারটা বরং এখানেই দিয়ে দাও আমি ভাবিকার সাথে গল্প করতে করতে খেয়ে নেব । "
রমাদি : ( একটু হেসে ) " আচ্ছা বড়ো দিদিমনি ঠিক আছে আমি তোমার খাবার গুছিয়ে দিয়ে যাচ্ছি এক্ষুনি । ভালো কথা , তা তুমি কি এখানেই ঘুমোবে রাতে ? কিন্তু...... "
শ্যামা : ( রমাদির কথা শেষ হতে না দিয়ে )
" আর কোনো কিন্তু নয় রমাদি , আমাকে তুমি বরং এখানেই নীচে বিছানা করে
দাও । "
রমাদি : ( আমতা আমতা করে ) " আমি বলি কি দিদিমনি, তুমি বরং তোমার ঘরে গিয়ে শুয়ে পোড়ো । আমি আর সোনালী এখানেই মেঝেতে বিছানা করে শুয়ে পড়বো তবে রাতে যদি কোনো অসুবিধা হয় তাহলে তোমাকে ডাকবো । তুমি কোনো চিন্তা কোরো না । ছোটো দিদিমনির শরীর খারাপ তার উপর তুমিও যদি অসুস্থ হয়ে পড়ো তাহলে আমি কোন দিকে যাবো বলোতো দেখি , তার চেয়ে তুমি তোমার ঘরে শুয়ে পড়বে । কি বলো ছোটো দিদিমনি ? "
ভাবিকা : ( একটু আলতো হেসে ) " ঠিকই তো কাঁহা হ্যায় রমাদি । আপ যাকে শো
যাইয়ে , ম্যায় ঠিক হুঁ । "
শ্যামা : ( একটু ভেবে ) " ঠিক আছে রমাদি, তাহলে তুমি আর সোনালী খেয়ে আসো তারপর আমি আমার ঘরে চলে যাবো । তবে তোমরা একটু মোটা করে বিছানা করে নিও নয়তো ঠান্ডা লেগে যাবে , দেখি আমি কালকেই একটা গদি কেনার ব্যবস্থা
করবো । "
রমাদি : ( একটু হেসে ) " ও নিয়ে তুমি চিন্তা কোরো না , কিছু হবে না আমাদের । আমি গিয়ে তোমার খাবারটা এখানে এনে দেই , তুমি আর ছোটো দিদিমনি গল্প করতে
থাকো । "
এই বলে রমাদি রান্নাঘরের দিকে চলে যায়, সোনালী তখন বসার ঘরে পড়াশোনায় ব্যস্ত ।
মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই একটি থালায় শ্যামার জন্য খাবার সাজিয়ে এনে দিয়ে শ্যামাকে বলে , " নাও দিদিমনি, এবার তুমি খেয়ে নাও দেখি , আমি আর সোনালীও খেয়ে নেব এক্ষনি । "
এই বলে রমাদি আবার রান্নাঘরের দিকে যেতে যেতে সোনালীকে বলে , " এই সোনা, খেতে আয় । "
রাতের খাবার শেষ করে সোনালী আর রমাদি ভাবিকার ঘরে ঢুকলে শ্যামা ভাবিকার মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দিয়ে চলে যায় নিজের ঘরে । যদিও তার মধ্যেই ভাবিকার রাতের নিয়মিত ওষুধগুলো ভাবিকাকে খাওয়াতে ভোলে নি শ্যামা ।
রমাদি : ( ভাবিকার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে ) " ছোটো দিদিমনি , আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি তুমি একটু ঘুমোবার চেষ্টা করো । "
ভাবিকা : ( একটু হেসে ) " ঘুম তো নেহি আ রাহা হ্যায় রমাদি । কি করবো বোলো ? তুম যাকে শো যাও । "
রমাদি : ভাবিকার মাথায় বিলি কাটতে কাটতে ) " না না, তুমি ঘুমিয়ে পড়লে তারপর আমি শুয়ে পড়বো । আমার কোনো অসুবিধা হবে না, তুমি ঘুমাও । ঠিক আছে ঘুম যখন আসছে না তাহলে চোখটা বন্ধ করে থাকো , আমি তোমার মাথায় আস্তে আস্তে হাত বুলিয়ে দিচ্ছি দেখো ঠিক ঘুম চলে আসবে । "
রমাদির কথা শুনে একটু হেসে বাধ্য মেয়ের মতো চোখটা বন্ধ করে থাকে ভাবিকা আর ঘন্টা খানেকের মধ্যে ঢলে পড়ে গভীর ঘুমের কোলে । ভাবিকা ঘুমিয়ে পড়ার পর রমাদি তার পাশ থেকে উঠতে গিয়ে দ্যাখে ভাবিকা তার শাড়ির আঁচলটা শক্ত মুঠো করে ধরে আছে , এটা দেখে রমাদির খুব মায়া হয় । সে ভাবিকার হাতের মুঠো থেকে আঁচলটা না সরিয়ে তার মাথার ধারে বসেই শরীরটা এলিয়ে দেয় একটু আর সারাদিনের ক্লান্তিতে নিমেষেই ঘুম নেমে আসে তার চোখে । রাত তখন প্রায় আড়াইটা হবে হঠাৎ শরীরে কারো হাতের আলতো ছোঁয়ায় ঘুম ভেঙ্গে যায় রমাদির আর চোখ খুলে তাকাতেই দ্যাখে শ্যামা সামনে দাঁড়িয়ে তাকে ডেকে বলছে,
" এই রমাদি, তুমি এভাবে বসে বসে ঘুমাচ্ছো কেনো ? ভাবিকাতো গভীর ঘুমে এখন , তুমি শুয়ে পড়ো । "
রমাদি : ( ফিসফিস করে ) " আরে ছোটো দিদিমনি ঘুমিয়ে পড়ার পর আমি তার পাশ থেকে উঠতে গিয়ে দেখি সে আমার আঁচলটা মুঠো করে ধরে আছে তাই আমি আর তার পাশ থেকে উঠে যেতে পারিনি । কিন্তু তুমি হঠাৎ উঠে আসতে গেলে কেনো ? তুমি যাও গিয়ে শুয়ে পড়ো , আমি শুয়ে পড়ছি
এক্ষুনি । "
শ্যামা : ( দুদিকে না সূচক মাথা দুলিয়ে )
" না না , আগে তুমি তোমার জায়গায় শুয়ে পড়ো তারপর আমি যাবো । আমি অসুস্থ হলে যেমন তোমার অসুবিধা হবে সেরকম তুমি অসুস্থ হলে আমি , ভাবিকা আর সোনালী তিনজনেই বিপদে পড়ে যাবো । তাড়াতাড়ি নামো বিছানা থেকে, নিজের জায়গায় শুয়ে পড়ো । "
অগত্যা আর কি করে রমাদি , ভাবিকার হাতের মুঠো থেকে আঁচলটা না ছাড়িয়ে কোমড়ের দিক থেকে শাড়ির কুচি কিছুটা খুলে আঁচলটা আরো বাড়িয়ে দিয়ে মেঝেতে করা বিছানায় শুয়ে পড়ে , পাশে তখন সোনালীও বুনছে স্বপ্নের জাল । রমাদির এই মাতৃসুলভ আচরণ দেখে অবাক হয়ে যায় শ্যামা, মনে মনে হেসে বলে , " এই জন্যেই তো আমি আর এতো ভালোবাসি রমাদি " এই ভেবে একটু হেসে " এবার ঘুমিয়ে পড়ো রমাদি " বলে নিজের ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ে ।
********** To Be Continued
