STORYMIRROR

Sharmistha Mukherjee

Drama Tragedy Crime

3  

Sharmistha Mukherjee

Drama Tragedy Crime

শ্যামাঙ্গিণীর আখ্যান

শ্যামাঙ্গিণীর আখ্যান

6 mins
14


সকাল সাড়ে নয়টার সময় অপারেশন থিয়েটারের বাইরে অপেক্ষারত মিঃ জোতানিয়া , জিগনেশ , মিঃ ঢোলকিয়া এবং জিগনেশের হবু স্ত্রী জুহি । ঠিক সকাল দশটায় সকলের হৃদস্পন্দন চতুর্গুন বাড়িয়ে দিল অপারেশন থিয়েটারের বাইরে হঠাৎ জ্বলে ওঠা লাল আলো । নর্মাল পেশেন্ট হলে হয়তো কোনো হানির আশঙ্কা একটু হলেও কম থাকতো কিন্তু অপারেশন থিয়েটারের ভিতরে যার অপারেশন শুরু হয়েছে সে রয়েছে কোমায় , তাই ভয়ে ও হানির আশঙ্কায় সকলের নিঃশ্বাস প্রায় আটকে যাবার মতো অবস্থা ।


অপারেশন থিয়েটারের ভিতরের অবস্থাও আরও ভয়াবহ । ডাঃ বোস ও ডাঃ পাটেলের কপালে জমেছে বিন্দু বিন্দু ঘাম , পাশেই সাজিয়ে রাখা Long and Heavy Mayo Scissor , Short and Long Weighted Vaginal Speculums with an extra - long blade , Jorgensen Scissors , Long Allis Clamps , Heaney Right - Angled Hysterectomy Retractor ইত্যাদি ইত্যাদি জটিল নামাঙ্কিত বিভিন্ন ধরনের অপারেশনের সরঞ্জাম । Neuro Surgery Headlight পরিহিত ডাঃ বোস ও ডাঃ পাটেল শুরু করেন ভাবিকার অপারেশন । 


অপারেশন শুরু হওয়ার প্রায় ঘন্টাখানেক বাদেই হঠাৎ করে ভাবিকার হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে যায় আর তৎক্ষণাৎ ( Defibrillator )

ডেফিব্রিলেটর ডিভাইস দ্বারা শক্ দিতে দিতে চতুর্থ বারের প্রচেষ্টায় ভাবিকার হৃদস্পন্দন পুনরায় স্বাভাবিক ছন্দে ফিরে আসে । টানা সাড়ে তিন ঘন্টা যুদ্ধ চলে ভাবিকা আর দুই ডাক্তারের মধ্যে এবং অবশেষে অপারেশন ভালোভাবে সফল হয় । যেহেতু ভাবিকার ক্ষেত্রে ' অ্যাবডোমিনাল টোটাল হিস্টেরেক্টমি ওপেন সার্জারি ' ( Abdominal Total Hysterectomy Open Surgery ) করা হয়েছে তাই এতো দীর্ঘ সময় লেগেছে । যদিও বা ভাবিকার হৃদস্পন্দন পুনরায় শুরু হয় তবুও তার কোমা অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি । সাড়ে তিন ঘণ্টা পর বন্ধ হয়ে যায় অপারেশন থিয়েটারের বাইরের জলন্ত লাল আলোটি এবং ভিতর থেকে একে একে বাইরে বেরিয়ে আসেন ডাঃ পামেলা বোস ও ডাঃ পাটেল । ওনাদের বেরিয়ে আসতে দেখে অপেক্ষারত ভাবিকার বাড়ির সবাই ছুটে যায় , প্রত্যেকেরই চোখে- মুখে ভয় ও দুশ্চিন্তার ছাপ স্পষ্ট । 



ডাঃ পামেলা বোস বলেন , " Don't worry , the operation was a great success . But Bhavika's coma condition is still not over. অব ভগবানসে প্রার্থনা করে কে ভাবিকা জল্দ সে জল্দ ঠিক হো যায়ে । হামসব উসকো সহিসলামত আপ লোগোকে পাস ওয়াপস্ লানেকি পুরা কৌসিস

করেঙ্গে । Bhavika needs some more time to recover . After some time we will shift Bhavika to ICU again but you will not be allowed to see her today. "


এই বলে ডাঃ বোস ও ডাঃ পাটেল চলে যান সেখান থেকে । কিছুক্ষণ পরেই ভাবিকাকে আবার ICUতে শিফ্ট করা হয় , আবারও শুরু হয় যমে - মানুষে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই এবং ওষুধপত্র - চিকিৎসার যন্ত্রপাতির দুর্বিষহ উপস্থিতি ।



একে একে পার হয়ে যায় দিন পেরিয়ে রাত , রাত পেরিয়ে দিন , পার হয়ে যায় সপ্তাহ পেরিয়ে মাস । ধীরে ধীরে শ্লথ গতিতে কাটতে থাকে একেকটা মাস পার হতে হতে কেটে যায় চার - চারটে মাস । পঞ্চম মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে সন্ধ্যা ছয়টা নাগাদ ক্ষীণ - দুর্বল দৃষ্টিতে চোখের পাতা অল্প খুলতে সক্ষম হয় মৃত্যুঞ্জয়ী ভাবিকা । 



অন্যদিকে মিঃ জোতানিয়ার বন্ধু প্রাক্তন ডিজিপি মিঃ আশিস ভাটিয়ার পূর্ণ হস্তক্ষেপের জন্য পুলিশ জোর কদমে ভাবিকার গ্যাং রেপ কেসের তদন্ত শুরু করেছিল । অনেক খোঁজ করেও ভাবিকার মোবাইল ফোন কোথাও পাওয়া যায় নি এবং কোনো পরিচিত বন্ধু - বান্ধব মারফৎ জানা যায় নি কার বার্থডে পার্টি ছিল , কোথায় ছিল সেই পার্টি , কারা উপস্থিত ছিল পার্টিতে । সেহেতু পুলিশ ভাবিকার ফোন নম্বর দ্বারা কল রেকর্ড , সদ্য যোগাযোগ করা নম্বর এবং কনভারসেশন রেকর্ডের মাধ্যমে খোঁজ পেয়ে যায় কার বার্থডে পার্টি ছিল এবং কোথায় হয়েছিল সেই পার্টি । 



সেদিন বার্থডে উপলক্ষে নিজের ফার্ম হাউসে পার্টি দিয়েছিল বিখ্যাত গহনা ব্যবসায়ী মিঃ ধর্মেশ জরিওয়ালার একমাত্র ছেলে পূরব জরিওয়ালা । He is a spoiled child of rich parents. বাবার পাশাপাশি মায়ের রোজগারও নেহাত কম ছিল না । পূরবের মা মিসেস নীরজা জরিওয়ালার কয়েকটি শহরজুড়ে রয়েছে ' Bellissimo Diva Beauty Salon ' - এর মোট পনেরোটি 

ব্রাঞ্চ ( Bellissimo মানে ইতালীয়ান ভাষায় Beautiful ) । ধনী বাবা - মায়ের একমাত্র সন্তান হওয়ার দরুন পূরব যেমন ছিল অত্যন্ত আদরের তেমনি ছিল সাক্ষাৎ শয়তানের বরপুত্র । এমন কোনো নেশা ছিল না যা সে করেনা তাছাড়াও পয়সার জোরে করে না এমন কোনো কাজ ছিল না । বন্ধুমহলে সে ছিল সবার মধ্যমনি এবং অর্থ জোগানোর খনি । 


পুলিশের তদন্ত শুরু করার খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে পূরব এবং তার বাকি নয় বন্ধু গা ঢাকা দেয় । পুলিশ অনেক খোঁজাখুঁজি করে প্রায় একমাস পর ' ভাবিকা রেপ কেস ' এর প্রধান অভিযুক্ত পূরবকে গ্রেফতার করেছিল তার এক দূর সম্পর্কের আত্মীয়র বাড়ি থেকে তারপর ভয়ানক কঠিনভাবে জেরা শুরু করেছিল ‌। পূরবের মোবাইলের সকল ভিডিও সার্চ করতে গিয়ে পুলিশ ভাবিকার সাথে ঘটা রেপের বেশ কিছু ভিডিও পেয়েছিল এছাড়াও বাকি অভিযুক্তদের ফোনের কল রেকর্ড , ম্যাসেজ ইত্যাদি থেকেও বহু অসামাজিক তথ্য আবিষ্কার করেছিল । পূরবের মোবাইল থেকে পাওয়া সবচেয়ে বড় নিরাশাজনক ঘটনা ছিল ভাবিকার সাথে ঘটা রেপের সময় সেখানে আরও তিনটি মেয়ের উপস্থিতি যারা সম্পূর্ণ অত্যাচারগুলো মদ্যপান করতে করতে তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করেছিল । এই সমস্ত দৃশ্য দেখে প্রাক্তন ডিজিপি মিঃ আশিস ভাটিয়া সহ পুরো পুলিশমহলের মাথায় জ্বালিয়ে দিয়েছিল রাগ ও ঘৃণার গনগনে আগুনের লেলিহান শিখা । 



পূরবের বাবা মিঃ ধর্মেশ জরিওয়ালা এবং মা নীরজা দেবী অনেক চেষ্টা করেও আইনের শিকল থেকে মুক্ত করতে পারেন নি । একে একে ধরা পড়েছিল বাকি সকল ধর্ষণকারী অভিযুক্তরা এবং মেয়ে জাতির কলঙ্ক সেই তিনটি মেয়ে । কোর্টে তাদের বিচার শুরু হয়েছিল বটে তবে কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী রেপ ভিকটিম ভাবিকার বয়ানও ছিল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ যা পুলিশের পক্ষে নেওয়া সম্ভব হয়নি ভাবিকার দীর্ঘ কোমা অবস্থায় থাকার জন্য । যদিও ভাবিকার সাথে ঘটা সম্পূর্ণ ধর্ষণের ভিডিও এবং আসামীদের শিকারোক্তি নিয়ে কোর্ট দুই মাস পর ৩৭৬ ধারা এবং অন্যান্য অসামাজিক কার্যকলাপের জন্য ভারতীয় দন্ডবিধির বিভিন্ন ধারা অনুযায়ী পূরব সহ বাকি নয়জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছিল । ধর্ষণের সময় সেখানে উপস্থিত থাকা তিনটি মেয়ের ক্ষেত্রে মোটা অংকের জরিমানা ও তিন বছরের কারাদণ্ড হয়েছিল । 



পূরব ও অন্যান্য অভিযুক্তরা শাস্তি পাওয়ার স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন মিঃ জোতানিয়া , জিগনেশ সহ বাড়ির সকলেই । 



ভাবিকার অপারেশন হওয়ার পর থেকে পঞ্চম মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে কোমা অবস্থা থেকে ফিরে আসে ভাবিকা । তবে জ্ঞান ফেরার পর যখন ডাঃ পাটেল ভাবিকার সামনে যায় তখন ভাবিকা প্রচন্ড আতঙ্কে কাঁপতে কাঁপতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে । এভাবে কয়েকবার এই ঘটনা ঘটায় খুব দুশ্চিন্তায় পড়েন ডাঃ পাটেল । শুধু তাই নয় ভাবিকার সামনে মিঃ জোতানিয়া , জিগনেশ অথবা যেকোনো পুরুষ গেলেই সে আতঙ্কে অজ্ঞান হয়ে যায় বারংবার । এছাড়াও কেউ হাতে গ্লাভস না পড়ে ভাবিকাকে ছুঁলেই সাথে সাথে তার শরীর ভয়ানক ফুসকুড়িতে ভরে যাচ্ছে যাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হয় Cholinergic Urticaria ( কোলিনার্জিক আর্টিকেরিয়া / কোলিনার্জিক ছত্রাক ) । এছাড়াও প্রচন্ড জ্বরে পুড়ে যেতে থাকে সর্বাঙ্গ , শুরু হয় মারাত্মক শ্বাসকষ্ট , বুকে ও মাথায় অসম্ভব যন্ত্রনা । এই সকল সমস্যা ছাড়াও আরও একটি সমস্যা দেখা দেয় ভাবিকার মধ্যে , সে চোখ বন্ধ করতে এমনকি চোখ বন্ধ করে ঘুমোতেও ভয় পায় । অন্ধকার হলেই ভয়ে দিশেহারা হয়ে আর্তচিৎকার করে উঠে ঠকঠক করে কাঁপতে থাকে আবার কখনো কখনো অজ্ঞান হয়ে যায় । দুইজন বিশিষ্ট মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ( Psychiatrist ) - এর পরামর্শ অনুযায়ী ভাবিকার চিকিৎসা করার আগেই তাকে হালকা ডোজের ঘুমের ওষুধ দেওয়া হয় যাতে তার ভয়ের কবলে পড়ে কোনোরকম মারাত্মক কিছু না ঘটে এবং ডাক্তার - নার্স ছাড়া বাড়ির লোককেও অবশ্যই গ্লাভস পড়তে হবে । 





   ******** To Be Continued 


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama