STORYMIRROR

Sharmistha Mukherjee

Drama Tragedy Crime

3  

Sharmistha Mukherjee

Drama Tragedy Crime

শ্যামাঙ্গিণীর আখ্যান:পর্ব ১৭

শ্যামাঙ্গিণীর আখ্যান:পর্ব ১৭

6 mins
239





কলকাতার বিখ্যাত মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ মৌসুমী দাশগুপ্তার অধীনে চিকিৎসা চলছে ভাবিকার এবং ওনার সাথে ভাবিকার চিকিৎসার ব্যাপারে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন গুজরাটের ডাঃ পাটেল, ডাঃ আচার্য্য এবং ডাঃ দেশাই । ডাঃ আচার্য্য এবং ডাঃ দেশাইয়ের সাথে আলাপ আলোচনা করে কলকাতার ডাঃ মৌসুমী দাশগুপ্তা মিঃ জোতানিয়া ও শ্যামাকে জানান , " পুরুষ এবং অন্ধকারের ট্রমা কাটতে আরও অনেক সময় লাগবে ভাবিকার কারণ ওর সাথে যে ঘৃণ্য অপরাধ ঘটেছিল সেটা ওর অবচেতন মনে কাঁটার মতো বিঁধে আছে যেটা ওর পক্ষে না ভুলে যাওয়া সম্ভব না মেনে নেওয়া সম্ভব , আর সেই অত্যাচারের ঘটনা ভুলে যেতে বা মানিয়ে নিতে পারছে না বলেই অন্ধকার ভীতি ও পুরুষের প্রতি ভয় ভাবিকার কাটছে না । যতো দিন অতিবাহিত হবে হয়তো সেই ঘটনা আস্তে আস্তে ফিকে হতে শুরু করবে ভাবিকার মন থেকে তখন হয়তো সে আবার স্বাভাবিক হয়ে উঠবে । কিন্তু ঠিক কতদিনে বা কতো বছরে সে স্বাভাবিক হয়ে উঠতে পারবে সেটা বলা খুব মুশকিল, তাই অপেক্ষা করা ছাড়া আর অন্য কোনো উপায় নেই । 

এভাবে দেখতে দেখতে কেটে যায় এক বছর তবুও স্বাভাবিক হয়ে উঠতে পারে না ভাবিকা । যদিও শারীরিক কোনো দূর্বলতা বা সমস্যা নেই একেবারেই , তার সমস্যাটা শুধুমাত্র মানসিক । এখনও মাঝেমধ্যে ঘুমের মধ্যে আতঙ্কে গুমড়ে কেঁদে ওঠে সে , হঠাৎ করে লোডশেডিং হলেই ভয়ে চিৎকার করে উঠে হয় রমাদিকে না হয় মামমামকে ( শ্যামা ) যাকে সামনে পায় জড়িয়ে ধরে কাঁপতে থাকে । এছাড়াও ওদের ঘরে কোনোরকম পুরুষ আসাই নিষিদ্ধ যদিও বা কোনো বিশেষ কারণে কারোর আসার কথা থাকে তাহলে সোনালী বা রমাদি ভাবিকাকে নিয়ে ভাবিকার ঘরের দরজা বন্ধ করে বসে
 থাকে । এভাবেই নানা টানাপড়েনের মধ্যে দিয়ে চলতে থাকে চারটে নারীর বাঁচার লড়াই । 

একে একে কেটে যায় দেড় বছর, এখনও মানসিকভাবে খুবই বিপর্যস্ত ভাবিকা । এখনও মাঝেমধ্যে সামান্য কিছু কিছু কারণে ভয়ে দিশেহারা হয়ে ভাবিকা ভীষণভাবে হিংস্র হয়ে ওঠে তখন তাকে সামলাতে হিমসিম খেতে হয় শ্যামা, রমাদি আর সোনালীকে ।‌ এই দেড় বছর ধরে ভাবিকার দাদা জিগনেশ , দাদাজি - দাদিমা, বাড়ির সকলে , বাবা মিঃ জোতানিয়া ও আঙ্কেল মিঃ ঢোলকিয়া এরা প্রত্যেকেই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন যে কবে ওনারা আবার আগের মতো আসতে পারবেন ভাবিকার সামনে , কবে আবার ভাবিকা ফিরে পাবে তার স্বাভাবিক জীবন ।

দেড় বছর নিজের পরিবারের সাথে সম্পর্ক নেই ভাবিকার তবুও কোনোদিন এক মূহুর্তের জন্যেও কাউকে দেখার বা যোগাযোগ করার ইচ্ছা প্রকাশ করে নি , ওর কাছে ওর একমাত্র পরিবার আর প্রিয়জন মাত্র ঐ তিন ভিন্ন বয়সী নারী । তবে কিছু কিছু কারণে যখন ভাবিকা খুব হিংস্র হয়ে ওঠে তখন তাকে সামলাতে হিমসিম ওরা কিন্তু সে আবার ঠিক হয়ে উঠতেই অনুশোচনায় সারাদিন কেঁদে বুক ভাসায় । তাই শ্যামা, রমাদি আর সোনালী সবসময় খুবই সতর্ক থাকে ভাবিকাকে নিয়ে তবে ওরাও তো মানুষ তাই ভুলচুক হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয় । 


এর মধ্যেই একদিন ভাবিকা আর সোনালী বসার ঘরে বসে একটা মুভি দেখছিল তখনই হঠাৎ করেই আতঙ্কে চিৎকার করে সারা ঘর কাঁপিয়ে তোলে ভাবিকা , সাথে সাথেই টিভি বন্ধ করে দিয়ে সোনালী ভাবিকাকে জড়িয়ে ধরতেই ভাবিকা সজোরে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দেয় সোনালীকে। তারপর ছুটে গিয়ে ডাইনিং টেবিলের নীচে ঢুকে দুই হাঁটু বুকের কাছে জড়ো করে চোখ বন্ধ করে কাঁদতে
 শুরু করে । এদিকে ভাবিকার চিৎকার শুনে রান্নাঘর থেকে রমাদি আর নিজের বেডরুম থেকে ছুটে আসে শ্যামা । সোনালীকে " কি হয়েছে " জিজ্ঞাসা করতেই সে বলে ,
 " আমার খুব বড়ো ভুল হয়ে গেছে 
মাসীমণি । আসলে আমরা দুজন একটা মুভি দেখছিলাম , প্রথম থেকে মাঝামাঝি পর্যন্ত মুভিটা বেশ মনোযোগ দিয়ে দেখছিল দিদিয়া কিন্তু যখনই একটা সিনে বেশ কয়েকজন গুন্ডা মিলে জোর করে মানে রেপ সিনের মতো তখনই ভয়ে চিৎকার করে ওঠে দিদিয়া । আমারই ভুল হয়েছে, আগে থেকেই চ্যানেলটা বদলে দেওয়া উচিত ছিল কিন্তু মুভি দেখার নেশায় দিদিয়ার বিষয়টা একেবারেই মাথা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল । আমার সত্যিই খুব ভুল হয়ে গেছে
মাসীমণি । "

সোনালীর মুখে সব কথা শোনার সাথে সাথেই রমাদি মেয়ের গালে সপাটে চড় কষিয়ে বলে , " অকম্মার ঢেঁকি একটা , এতো সিনেমা দেখার নেশা তোর যে তুই বেমালুম ছোটো দিদিমনির মানসিক অবস্থার কথা ভুলে গেলি ? আজকে যদি ছোটো দিদিমনির কিছু হয় তাহলে তোকে খুন করে ফেলবো একেবার এই বলে রাখলুম, দূর হয়ে যা আমার চোখের সামনে থেকে । " মায়ের কাছে খুব বকুনি আর চড় খেয়ে লজ্জায় - অভিমানে কাঁদতে কাঁদতে সোনালী ছুটে চলে যায় রান্নাঘরে দিকে । 

ওদিকে সোনালীকে দোষারোপ করে চড় মেরে বকাঝকা করায় শ্যামা রেগে যায় রমাদির উপর তারপর ধমকে বলে ওঠে , 
" আহ্ ! রমাদি , ঐটুকু মেয়েটাকে মেরে - বকে কি হবে বলোতো, খুব শান্তি পেলে তাই না ? আর কোনোদিনও তুমি আমার সামনে ওকে কিছু বলবে না, আমার আড়ালে তোমরা মায়ে - মেয়েতে যা খুশী করো । আরে ওকি ইচ্ছাকৃত করেছে নাকি যে তুমি ওর গায়ে হাত তুললে ? এখন আসো দেখি ভাবিকার কি অবস্থা । " এই বলে রমাদি আর শ্যামা খুব ধীর পায়ে এগিয়ে যায় ডাইনিং টেবিলের দিকে তারপর দুজনেই আস্তে করে বসে টেবিলের নীচে উঁকি দেয় । টেবিলের নিচে আঁটোসাঁটো হয়ে বসে ভয়ে কাঁপতে থাকা ভাবিকার দিকে তাকিয়ে শ্যামা বলে ,
" কোনো ভয় নেই সোনা , চলে আয় আমার কাছে । আমি আছি তো , ভয়ের কিছু নেই , আয় বেরিয়ে আয় আমার কাছে । " এই বলে টেবিলের নিচে হাত ঢুকিয়ে ভাবিকাকে ছোঁয়ার সাথে সাথেই হিংস্র শ্বাপদের মতো ভাবিকা কামড়ে ধরে শ্যামার হাত , শ্যামা একবার চিৎকার করে উঠেও আবার দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে অন্যদিকে রমাদি চিৎকার করতে থাকে , " ও ছোটো দিদিমনি , আরে করো কি ? করো কি ? তুমি যে তোমার মামমামের হাত কামড়ে রক্ত বের করে দিচ্ছো, একবার তাকিয়ে দ্যাখো কি করছো তুমি । দ্যাখো তোমার মামমামের হাত কেটে কিভাবে রক্ত পড়ছে । " রমাদির এইভাবে ক্রমাগত চিৎকার শুনে শ্যামার হাতটা নিজের মুখ থেকে বের করে রক্ত দেখেই অজ্ঞান হয়ে যায় ভাবিকা । ভাবিকা জ্ঞান হারাতেই তাকে টেবিলের নিচ থেকে বের করে রমাদি , শ্যামা আর সোনালী তিনজনে মিলে ধরাধরি করে ওর ঘরের বিছানায় শুইয়ে দেয় । সোনালী দৌড়ে গিয়ে বসার ঘরের ওয়ারড্রব থেকে ফার্স্ট - এড্ বক্স বের করে এনে শ্যামার হাতের কামড়ের ক্ষতটা ভালো করে পরিষ্কার করে ওষুধ লাগিয়ে দিতে দিতে বলে , " মাসীমণি , তুমি বরং একটু বেরিয়ে গিয়ে টিটেনাস নিয়ে আসো কারণ খুব খারাপভাবে দাঁতের দাগ বসে গেছে, কেটেও গেছে অনেকটাই । তুমি বরং যাও টিটেনাস নিয়ে আসো , দিদিয়ার কাছে আমি আর মা বসে থাকবো যতোক্ষন না তুমি বাড়িতে ফিরে আসছো । যাও মাসীমণি, দেরী কোরো না । " সেইসময় হঠাৎ করেই শ্যামার বেডরুম থেকে মোবাইল বেজে ওঠার আওয়াজ শুনে শ্যামা সোনালীকে বলে ,
" আচ্ছা ঠিক আছে দেখছি কি করা যায় , তুই আগে যা আমার মোবাইলটা ঐ ঘর থেকে এনে দে । কি হোলো তাড়াতাড়ি যা, কি জানি কে এতোবার করে ফোন করছে ! "
শ্যামার কথামতো এক ছুটে গিয়ে শ্যামার বিছানার উপর থেকে মোবাইলটা এনে শ্যামার হাতে দিয়ে সোনালী বলে , " আঙ্কেল জির ফোন, পাঁচটা মিসকল এলার্ট আছে মাসীমণি । "  

সোনালীর কাছ থেকে ফোনটা নিয়ে মিঃ জোতানিয়াকে ফোন করে শ্যামা ।

মিঃ জোতানিয়া : ( ব্যতিব্যস্ত হয়ে উদ্বিগ্ন কন্ঠে ) " আরে ! ক্যায়া হুয়া , ফোন কিঁউ নেহি উঠা রহি থি ? অভি অভি ম্যায়নে সিসিটিভি ফুটেজমে দেখা কি ভাবিকানে তুমহারি হাত পর জোরসে কাটা অউর বুরি তর্হাসে খুন নিকাল দিয়া । জল্দহী তুমহে টিটেনাস ইঞ্জেকশন লাগওয়ানা পড়েগা , দের মত্ করো , অভি যাও । "


 মিঃ জোতানিয়ার কথা শুনে শ্যামা বলে ,
 " আপ ইঁউহি টেনশন কর্ রহে হ্যায় । মুঝে কুছ নেহি হোগা, ম্যায় বিলকুল ঠিক হুঁ । "


শ্যামার কথা শুনে মিঃ জোতানিয়া ধমকের সুরে বলেন, " ক্যায়া কুছ নেহি হোগা ? অভি যাও মেডিসিন শপমে অউর নেহিতো মুঝে লে যানা পড়েগা । আচ্ছা, তুম তৈয়ার হোকে নীচে আ যাও, ম্যায় আ রাহা হুঁ । "


মিঃ জোতানিয়া সাথে যাবে শুনেই শ্যামা ব্যতিব্যস্ত হয়ে বলে ওঠে , " আরে নেহি নেহি , ম্যায় অভি যা রহি হুঁ । "

এই বলে ফোন রেখে একটা সালোয়ার কামিজ পড়েই লিফটে চেপে সোজা নীচে পৌঁছতেই দ্যাখে মিঃ জোতানিয়া যথারীতি অপেক্ষমান তার জন্য , অগত্যা মিঃ জোতানিয়ার সাথেই তাকে যেতে হোলো মেডিসিন শপে । সেখান থেকে বেরিয়ে একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর থেকে কিছু প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনে দুজনেই আবার ফিরে যায় নিজস্ব নিজস্ব ফ্ল্যাটে । 



 ********* To Be Continued 


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama