শ্যামাঙ্গিণীর আখ্যান : পর্ব ১৬
শ্যামাঙ্গিণীর আখ্যান : পর্ব ১৬
সকাল পাঁচটার সময় হঠাৎ রান্নাঘরে বাসনের টুংটাং শব্দ শুনে ঘুমটা ভেঙে যায় শ্যামার , কোনোরকমে টলমল পায়ে রান্নাঘরে এসে রমাদিকে দেখে অবাক হয়ে ঘুম জড়ানো গলায় বলে , " কি ব্যাপার রমাদি , তুমি এতো ভোরবেলায় কি
করছো ? এতো তাড়াতাড়ি ওঠার কি দরকার বলোতো ? "
রমাদি : ( জিভ কেটে ) " এমা ! আমি তোমার ঘুমটা নষ্ট করে দিলাম তাই না ? আসলে ছোটো দিদিমনি কালকে রাতে ঐ ছোটো বাটির এক বাটি স্যুপ খেয়েছে, সেকি এখনো পেটে আছে বলো ? তাই আমি একটু দুধ গরম করে কর্নফ্লেক্স ভিজিয়ে দিলাম , কর্নফ্লেক্সটা একটু নরম হলেই ভালো করে মেখে ছোটো দিদিমনিকে ঘুম থেকে তুলে খাইয়ে দেবো । অসুস্থ মানুষ ভালো করে না খাওয়া - দাওয়া করলে সুস্থ হবে কেমন করে বলো ? যা ঝড় - ঝাপটা গেছে এইটুকু মেয়েটার উপর দিয়ে....... ।"
এই বলেই চুপ করে যায় রমাদি । শ্যামার এবার আবার অবাক হবার পালা । সত্যিই একেই বলে মায়ের জাত , শ্যামা নিজেও বোঝে কারণ সেও তো এক সন্তানের মা । শ্যামা আলতো হেসে বলে , " সত্যিই রমাদি , তোমাকে যতো দেখছি ততো অবাক
লাগছে । তুমি সত্যিই একজন প্রকৃত মা তা না হলে নিজের সন্তান ছাড়াও অন্যের জন্য এতোটা ভাবা কি সম্ভব ? তুমি ধন্য রমাদি , আজ থেকে আমিও লড়াই শুরু করবো যতদিন না ভাবিকা সম্পূর্ণরূপে সুস্থ হয়ে উঠছে । "
রমাদি : ( একটু হেসে ) " কি যে বলো দিদিমনি , আমি আর এমন কি করলাম । আসলে আমারও তো একটা মেয়ে আছে , তাই খুব ভয় হয় । ছোটো দিদিমনির এই করুণ দশার কথা ভাবলে বুকের ভিতরটা কেমন মোচড় দিয়ে ওঠে গো বড়ো
দিদিমনি । আমার মেয়েটাও বড়ো হচ্ছে তাই চারিদিকে এতোসব কান্ড দেখে হাত - পা ঠাণ্ডা হয়ে যায় । "
এই বলতেই দুফোঁটা চোখের জল গড়িয়ে পড়ে রমাদির দুই গাল বেয়ে , শ্যামা রমাদির চোখ মুছিয়ে দিয়ে তাকে এমনভাবে জড়িয়ে ধরে যেমনভাবে সে তার মাকে জড়িয়ে ধরলে নিজের ভারাক্রান্ত মনটা শান্তি খুঁজে পায় ।
রমাদি ভাবিকার ঘরে খাবার নিয়ে গিয়ে আগে সোনালীকে ঘুম থেকে তুলে দেয় পড়াশোনার জন্য তারপর ভাবিকার মাথার পাশে বসে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে , " ছোটো দিদিমনি , ওঠো দেখি , একটু কিছু খেয়ে তারপরে আবার ঘুমিয়ে পড়বে ক্ষণ । এখন একটু ওঠো , কালকে রাতে অল্প স্যুপ খেয়েছো , নিশ্চয়ই খুব ক্ষিদে পেয়েছে তোমার তাই না ? ওঠো , অল্প করে খাইয়ে দেই তোমাকে । "
নিজের মাথায় স্নেহের পরশ পেয়ে ভাবিকা আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকায় রমাদির মুখের দিকে , রমাদির দুই হাতেই সার্জিক্যাল গ্লাভস দেখে অবাক হয়ে সে প্রশ্ন করে ,
" আপ গ্লাভস কিঁউ পহেনে হুঁয়ে হ্যায় ? "
তার পায়ের ধারে বসে থাকা শ্যামাকে তখনও খেয়াল করেনি সে কিন্তু ভাবিকার প্রশ্ন শুনে রমাদি শ্যামার দিকে তাকাতেই ভাবিকাও শ্যামাকে দেখে আলতো করে হেসে আস্তে করে উঠে বসে । শ্যামার দুই হাতেও তখন একই রকম সার্জিক্যাল গ্লাভস দেখে অবাক হয়ে তাকায় রমাদি এবং শ্যামার মুখের দিকে তারপর আবার প্রশ্ন করে , " আপ দোনোনে গ্লাভস কিঁউ পহেনে হুঁয়ে হ্যায় ? "
শ্যামা ভাবিকার কাছে এগিয়ে এসে ওর ডান হাতটা নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বলে ,
" তুমহারি তবিয়ত ঠিক নেহি হ্যায় ইসলিয়ে কিসিভি তরহাকি সংক্রমণ সে তুমহে বাঁচানেকে লিয়ে হামনে গ্লাভস পহেনে হ্যায় ।
তুম অব থোড়াসা খালো ফির শো যানা । "
ভাবিকা আস্তে করে মাথা নাড়িয়ে খেতে সম্মতি জানাতেই রমাদি তাকে খাওয়ানো শুরু করে , খাওয়া শেষ হলে ভেজা টাওয়েল দিয়ে তার মুখটা মুছিয়ে দিয়ে শ্যামা বলে ,
" অব তুম শো যাও , ম্যায় হুঁ তুমহারে পাস । "
ভাবিকা তাড়াতাড়ি করে শ্যামার হাত ধরে বলে , " আন্টি , ম্যায় অব অউর শোনা নেহি চাহতি । ম্যায় আপসে কুছ দের বাতে করনা চাহতি হুঁ , ক্যায়া আপ মুঝসে থোড়ি দের বাতে করেঙ্গী ? "
শ্যামা : ( ভাবিকার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে হেসে ) " কিঁউ নেহি ? বোলো, ক্যায়া বাতে করনি হ্যায় ? অগর তুমহে কুছ পুঁছনা হো তো পুঁছ সকতি হো । "
ভাবিকা : ( একটু চুপ করে থেকে )
" আন্টি , এক বাত্ পুঁছু ? "
শ্যামা : ( মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানিয়ে )
" হাঁ, পুঁছো । "
ভাবিকা : " আপ মেরে পাপ্পাকো ক্যায়সে জানতি হ্যায় ? "
ভাবিকার প্রশ্ন শুনে চুপ করে থাকে শ্যামা সেটা বুঝতে পেরে ভাবিকা বলে , " অগর আপ বাতানা নেহি চাহতি তো কোই বাত নেহি । "
শ্যামা : ( একটু ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ) " অগর ম্যায় কহুঁ কে , ম্যায় তুমহারি পাপ্পাকা গার্লফ্রেন্ড হুঁ , ক্যায়া তুম ইয়েকিন করোগি ? "
ভাবিকা : ( ভ্রু কুঁচকে শ্যামার দিকে তাকিয়ে ) " ক্যায়া ? ইয়ে ক্যায়া কহে রহি হ্যায় আপ ? "
শ্যামা : ( একটু হেসে ভাবিকার হাতদুটো ধরে ) " তুমহে ইয়েকিন নেহি হুয়া হ্যায় না ? লেকিন ইয়ে বাত বিলকুল সাচ হ্যায় । উনহোনে মুঝে কাঁহা হ্যায় কে, ওহ্ মুঝে কভিভি পত্নীকা দর্জা নেহি দে সকতা লেকিন.......... । "
ভাবিকা : ( একভাবে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে )
" লেকিন ? .….. লেকিন ক্যায়া ? আচ্ছা পাপ্পাতো আপসে বেহত বড়হা হ্যায় ফির কিঁউ আপ ...….....…..… । "
শ্যামা : ( একটু হেসে ) " হাঁ, ইয়ে বাত তো সাচ্ হ্যায় লেকিন ইসকে পিছে বহত বড়হা স্টোরি হ্যায় যো ম্যায় তুমহে অভী নেহি বাতা সকতি, পহেলে যব তুম পুরি তর্হাসে হো যাওগি সবকুছ বাতাউঙ্গী । তুমনে আপনি মাঁকো নেহি দেখা অগর তুমকো ম্যায়ভি পসন্দ নেহি আয়ি তো কোই বাত লেকিন ম্প জল্দ সে জল্দ ঠিক হো যাও । তুমহারি পাপ্পা তুমহে লেকর বেহত তনাওমে রহেতে রহেতে হ্যায় আজকাল । "
ভাবিকা : ( শ্যামার মুখের দিকে তাকিয়ে )
" ক্যায়া আপ মেরে পাপ্পাকো পসন্দ করতি হো ? ক্যায়া আপকো বুরা নেহি লগতা কে , ওহ্ আপকো পত্নীকা দর্জা নেহি দে
সকতা । "
শ্যামা : ( সজোরে হেসে উঠে ) " হুমমম , ইয়েসব তুমহে ফির কভী বাতাউঙ্গী , অব তুম বোলো , তুম আপনি পাপ্পাসে মিলনা চাহতি হো ? "
এই কথা শুনে রীতিমতো গলদঘর্ম অবস্থা হয় ভাবিকার তখন শ্যামা বলে , " ঠিক হ্যায়, ঠিক হ্যায় , কোই বাত নেহি । কিসিসে মিলনেকি কোই জরুরত নেহি হ্যায় । ম্যায়, রমাদি অউর সোনালী হার ওয়াক্ত হ্যায় তুমহারে সাথ , so don't worry dear . "
এই কথা বলে শ্যামা ভাবিকাকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে
থাকে ।
এইভাবেই ভালো - মন্দের নানা টানাপড়েনের মধ্যে দিয়ে ধীরে ধীরে কেটে যায় তিন - চার মাস । ভাবিকা আর শ্যামার মধ্যকার সম্পর্কটা হয়ে ওঠে মা - মেয়ের সম্পর্কের মতোই , শ্যামাকে সে বসায় মায়ের স্থানে মানে ভাবিকা শ্যামাকে আন্টির বদলে বাংলা ভাষায় ' মামমাম ' ডাকতো । রমাদি , সোনালী , মামমাম , ভাই নব্যাংশ ( শ্যামার ছেলে ) আর দাদিমা ( শ্যামার মা ডাঃ পামেলা বোস ) এদের নিয়েই ভাবিকা নিজস্ব একটা জগৎ তৈরী করে নেয় । এদের সকলের অফুরন্ত ভালোবাসা আর সেবা - যত্নে অনেকখানি সুস্থ হয়ে ওঠে ভাবিকা , সম্পূর্ণরূপে ঠিক হয়ে যায় তার স্পর্শভীতি বা Aphenphosmphobia কিন্তু অন্ধকার ভীতি ( Nyectophobia ) আর পুরুষভীতি ( Androphobia ) তখনও ঠিক হয়নি তাই অন্ধকার ও পুরুষ উভয়ের থেকে তাকে সবসময় সাবধানে রাখা হোতো যাতে কোনোভাবেই সে আবার অসুস্থ না হয়ে
পড়ে । নিজের মেয়েকে যেহেতু সামনাসামনি দেখার কোনো উপায় ছিল না তাই শ্যামার ফ্ল্যাটের বসার ঘরে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগিয়ে দিয়েছিল মিঃ জোতানিয়া যা শুধুমাত্র ভাবিকা বাদে বাকি সকলেই জানতো ।
To Be Continued
