Sharmistha Mukherjee

Tragedy Others

4  

Sharmistha Mukherjee

Tragedy Others

শ্যামাঙ্গিনীর আখ্যান 💔 পর্ব ৫

শ্যামাঙ্গিনীর আখ্যান 💔 পর্ব ৫

5 mins
348



শ্যামা : ( একটু মুচকি হেসে ) " আরে নেহি নেহি, মুঝে কোই শিকায়ত নেহি হ্যায়, ম্যায় খুশ হুঁ । ইসকে এলাবা আপ মেরি ইতনা খ্যায়াল রাখ্ রহে হ্যায় মেরে লিয়ে ইতনাহি কাফি হ্যায় । ম্যায়ভি আপকো শিকায়তকা মৌকা নেহি দুঙ্গি ।


শ্যামার কথা শুনে মিঃ জোতানিয়া হো - হো করে হেসে উঠে বলেন , "আরে বাহোমে আজা জানেমন " বলেই এক ঝটকায় শ্যামার হাত ধরে টেনে নিজের উরুদ্বয়ের উপর বসিয়ে শ্যামার মাথা ধরে টেনে ঠোঁটের মাঝে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দেন । প্রচন্ড ঘৃণায় শ্যামার শরীর শিউরে উঠলেও তা নিজের মনের ভিতরেই দাফন করে অভিনয় চালিয়ে যায়‌ । সেদিন প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে শ্যামা ওরফে মিস এলিসার শরীরটাকে ভোগ করে মিঃ জোতানিয়া চলে যান । সেদিন ওনার রাতের ফ্লাইট গুজরাটে ফেরার, কলকাতায় ফিরবেন দিন সাতেক পরে । গুজরাটে যেহেতু ওনার বাড়ি তাই সেখানে শ্যামাকে নিয়ে যান নি তিনি । 


মিঃ জোতানিয়া চলে যেতেই যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল শ্যামা । একবার মনে মনে ভাবে হঠাৎ করে মুম্বাইতে গিয়ে মা আর ছেলেকে সারপ্রাইজ দেবে , ওদের সাথে থাকবে দিন তিনেক কিন্তু শরীরটা বিশেষ একটা ভালো নয় দেখে যাওয়া বাতিল করে দেয় । আসলে মিঃ জোতানিয়া যেই কয়েকদিন শ্যামার কাছে থাকেন সেই কয়েকদিন শ্যামার শরীরটাকে হিংস্র নেকড়ের মতো ছিঁড়ে - খুড়ে খান । তার উপর যাতে কোনোভাবেই গর্ভবতী না হয়ে পড়ে তার জন্য বেশ কিছুদিন নিয়ম করে খেতে হয় গর্ভনিরোধক ট্যাবলেট । এতেই শ্যামার শরীর একেবারে বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে । মুখে কিছুই বলতে না পারলেও মনের ভিতরে ভিতরে প্রত্যহ গুমড়ে মরে মন্দ কপালিনী । 


মিঃ জোতানিয়া সন্ধ্যা হতেই চলে যান তারপর শ্যামা ভালো করে সাবান - শ্যাম্পু দিয়ে স্নান সেরে বসার ঘরে এসি চালু করে, সোফার সামনে রাখা কাঁচের টেবিলের উপর সাজিয়ে রাখে ওয়াইনের বোতল, গ্লাস আর এক প্যাকেট মার্লবোরো মেন্থল সিগারেট তারপর মিউজিক সিস্টেমে একটা গান চালায় যেই গানটি ওর জীবনের সাথে পুরোপুরি মিলে যায় । ঐ গানটা প্রায়ই শোনে সে তাতে নিজের উপর ঘৃণা আরো বেড়ে যায় তার সাথে বেড়ে যায় ওয়াইন ও সিগারেটের পরিমানও । 


বাঁ হাতে ওয়াইনের গ্লাস আর গান হাতে মার্লবোরো , এক পায়ের উপর আরেকটা পা তুলে চোখ বন্ধ করে গান শুনতে থাকে

 শ্যামা -


 " পুড়িয়ে দিলাম , উড়িয়ে দিলাম ,

  বুকের মাঝে গুঁড়িয়ে দিলাম

  তোর নরকের খবর পেলাম না

 

  ছাই মেখেছি শরীর জুড়ে 

  তোর শ্মশানে পলাশ ওড়ে

  তোর চাদরে ..........

  তোর চাদরে আদর পুড়ে

  তোর চাদরে আদর পুড়ে

   পুড়ছে কাজলরা.........

   তোর নরকের খবর পেলাম না ।


   ভাঙ্গবি কতো , গড়বি কাকে ?

   মরবে পাখি ভোরের ডাকে

   দেখবে বসে অন্ধ যতো

   মন্দ কাকে বলে ?

   তোর নরকের খবর পেলাম না ।


   যতোবার , যতোবার ছুঁয়েছি কাঁচ

   তুই জল হয়ে গেছিস

   তুই কান্না হয়ে ,

   দেওয়ালে দেওয়ালে পাথর 

   তোর শরীর আমার শহর

   একলা হয়েছে নিজের অসুখে ।


   কাফন দিলাম , দাফন দিলাম

   তোর কবরে গোলাপ দিলাম ।

   তোর নরকের খবর পেলাম না 

   তোর নরকের খবর পেলাম না ।



গানটা শেষ হতেই চোখ খোলে শ্যামা তারপর এক নিঃশ্বাসে পানপাত্র খালি করে ব্যালকনিতে কাঁচের রেলিংটার সামনে দাঁড়িয়ে শরীরটাকে যতোটা সম্ভব ঝুঁকিয়ে দেয় সামনের দিকে , নীচে পড়ে গেলে মৃত্যু অনিবার্য কারণ চৌদ্দ তলার উপর থেকে নীচে পড়লে বাঁচার কোনো উপায় নেই । এইটা ওর জীবনের নিত্যকার ঘটনা হয়ে গেছে , রোজই ভাবে নিজেকে শেষ করে দেবে কিন্তু মা আর ছেলের মায়ার জালে আটকে আবারও পিছিয়ে আসে । শ্যামা জানে মায়ার জাল অবরুদ্ধ করে রেখেছে মৃত্যুর পথ তবুও রোজ সে চেষ্টা করে যদি কোনোদিন কোনোভাবে ক্ষণিকের জন্য ছিঁড়ে যায় সেই মায়ার জাল আর চোখের নিমেষে মৃত্যু এসে পালাবে তাকে নিয়ে । হাউহাউ করে কাঁদতে কাঁদতে ব্যালকনিতে রাখা চেয়ারের উপর ধপ করে বসে পড়ে সে তারপর চোখ বন্ধ করে এলিয়ে দেয়

 ক্লান্ত - নেশার্ত শরীরটাকে । 


নিজের উপর নিজেই খিল খিল করে হেসে ব্যঙ্গ করে বলে, " ওরে শ্যামা, একটা সময় ছিল যখন তোর কোনোরকম নেশাই ছিল না এমনকি চা - কফিও খেতিস না পাছে নেশায় পরিনত হয় সেই ভয়ে । আর এখন দ্যাখ, দ্যাখ তোর কি অবস্থা ভালো করে দ্যাখ, অ্যালকোহল আর নিকোটিনের নেশায় বুঁদ হয়ে আছিস । তুই তো একসময় ওয়ার্কোহলিক ছিলি আর এখন অ্যালকোহলিক । তোর লজ্জা করে না ? " আবার পরক্ষণেই নিজেকে স্বান্তনা দিয়ে বলে , " জানি রে শ্যামা, তোর খুব কষ্ট, মনের ভিতরটা জ্বলেপুড়ে একেবারে খাঁক হয়ে গেছে । রোজ রাতে কয়েক গ্লাস গলাধঃকরণ না করলে যে ঘুম আসবে না তোর , আর কতোদিন না ঘুমিয়ে বাঁচা যায় বল ? সত্যিই তুই নিরুপায়, মনের জ্বালা হয়তো নেশায় কমে না ঠিকই কিন্তু ক্ষণিকের শান্তিতো মেলে এই অনেক । " এই বলে আবারও ডুকরে কেঁদে ওঠে , তারপর ধীরে ধীরে উঠে টলমল পায়ে কোনোরকমে বেডরুমে গিয়ে শুয়ে পড়ে । 


 এইটা রোজ রাতের ঘটনা তবে মিঃ জোতানিয়া থাকলে রাতে নেশার পরিমাণ দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেয় শ্যামা নিজেই কারণ সম্পূর্ণ হুঁশ থাকলে নিজের শরীরটাকে মিঃ জোতানিয়ার হাতে তুলে দিতে পারবে না সে । শ্যামা নেশায় বুঁদ হয়ে মৃতদেহের মতো পড়ে থাকে মিঃ জোতানিয়ার সামনে তারপর মিঃ জোতানিয়ার খেলা শুরু হয় শ্যামার শরীর নিয়ে , একজন বছর পঞ্চান্নের পুরুষ শারীরিক খেলায় মেতে ওঠে আর একজন বছর আঠাশের প্রায় অচৈতন্য নারীর সাথে ।


এইভাবেই দেখতে দেখতে কেটে যায় প্রায় আড়াই বছর । রোজকার মতো সকাল সাতটা নাগাদ কাজ করতে আসে রমাদি । রমাদির কাছে শ্যামার ফ্ল্যাটের দরজার একটা চাবি রাখাই থাকে তাই শ্যামার ঘুমের কোনো ব্যাঘাত ঘটে না । রমাদি ঘরের সমস্ত কাজ সেরে সকাল নয়টা নাগাদ শ্যামার জন্য এক বাটি হ্যাঙ্গওভার স্যুপ ট্রেতে সাজিয়ে নিয়ে গিয়ে শ্যামা দিদিমণিকে ঘুম থেকে ডেকে তোলে , এইটা রোজ সকালেই করে থাকে রমাদি । আসলে এই আড়াই বছর ধরে শ্যামার সাথে সবসময় থেকে একেবারে নিজের ঘরের লোক হয়ে গেছে শ্যামার আদরের রমাদি । রমাদিও শ্যামার জীবনের সমস্ত ঘটনাই জানে এবং শ্যামাকে ভীষণ ভালোবাসে একবারে নিজের বোনের মতো ।


চাইনিজ পদ্ধতিতে হ্যাঙ্গওভার স্যুপ বানানো শ্যামা নিজের হাতেই শিখিয়েছে রমাদিকে । আগের দিন রাতের পুরো নেশা , ঝিমঝিমে শরীর , মাথা ভার অর্থাৎ পুরো হ্যাঙ্গওভার কাটিয়ে দেয় এই এক বাটি হ্যাঙ্গওভার স্যুপ।

প্রত্যহ সকালে ঐ স্যুপ খেয়ে হাত - মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে যোগাসন করে শ্যামা তারপর সকাল দশটায় হালকা ব্রেকফাস্ট, ব্রেকফাস্ট বলতে দুই পিস বাটার টোস্ট আর একটা যে কোনো ফল । দুপুরে বারোটা নাগাদ রমাদি মেয়েকে স্কুল থেকে নিয়ে ফিরলে তারপর তিনজনে একসাথেই লাঞ্চ করে । 


রমাদি একজন বছর চল্লিশের বিধবা মহিলা। ওনার একটাই চৌদ্দ বছর বয়সী মেয়ে আছে, নাম সোনালী । বর্তমানে সে ক্লাস টেনের ছাত্রী । ক্লাস এইট পাশ করার পর অভাবের তাড়নায় মেয়ে স্কুল ছাড়িয়ে দিতে বাধ্য হয় রমাদি কিন্তু শ্যামার সাহায্যে আবারও স্কুলে ভর্তি হয় । শ্যামার আর্থিক সহায়তায় সোনালী ক্লাস নাইন পাশ করেছে আর এবার মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবার পালা ।

সোনালীর প্রথম বোর্ডের পরীক্ষা তাই সায়েন্স গ্রুপ , আর্টস গ্রুপ এবং ইংলিশের জন্য আলাদা আলাদা টিচার ঠিক করে দেয় শ্যামা । রমাদি সকাল সাতটা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত থাকে শ্যামার ফ্ল্যাটে তারপর বাড়ি ফেরার পথে মেয়েকে কোচিং সেন্টার থেকে নিয়ে বাড়িতে ফিরে যায় । শ্যামা অবশ্য একটা অটো ঠিক করে দিয়েছে রমাদি ও সোনালীর সর্বত্র যাতায়াতের

 জন্য । বলতে গেলে রমাদি ও সোনালীর প্রায় সব প্রকার দায়িত্ব শ্যামা তুলে নিয়েছে বলে নিজের কাঁধে । তাই শ্যামাকেও মাথায় তুলে রাখে ওরা দুই মা - মেয়ে মিলে । 




  ********* To Be Continued 


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy