Sharmistha Mukherjee

Others

4  

Sharmistha Mukherjee

Others

শ্যামাঙ্গিনীর আখ্যান 💔 পর্ব ৪

শ্যামাঙ্গিনীর আখ্যান 💔 পর্ব ৪

5 mins
435



এসব কথা সহ্য করতে না পেরে শ্যামা সম্রাটের গালে সজোরে একটা চড় কষিয়ে এক ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে দৌড়ে বেডরুমে ঢুকে ভিতর থেকে ছিটকানি বন্ধ করে দেয় । 

তারপর বিছানায় ঘুমিয়ে থাকা ছোট্ট নব্যাংশকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ে । কলেজ জীবন থেকে কালকে রাতে ঘটে যাওয়া ঘটনার আগে পর্যন্ত যে মানুষটাকে সে চিনতো - জানতো আজ সেই মানুষটা ওর কাছে সম্পূর্ণ অচেনা - অজানা । বিছানায় শুয়ে কাঁদতে কাঁদতে কখন যেন ঘুমিয়ে পড়েছিল সে, ঘুমটা ভাঙ্গলো পাশে শুয়ে থাকা ছোট্ট নব্যাংশের কান্নার শব্দে ।


আবারও ছোট্ট ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে বুক ভাসালো হতভাগিনী তারপর আস্তে করে উঠে গিয়ে দেখলো ঘরে কোথাও সম্রাট নেই, বুঝতেই পারলো আনন্দের জোয়ারে ভেসে আজকে একটু বেশি তাড়াতাড়িই অফিসে চলে গেছে । কোনোরকমে শ্লথ গতিতে পা টেনে টেনে রান্নাঘরে গিয়ে ছেলের জন্য দুধের বোতল নিয়ে আসে তারপর ছেলেকে কোলে নিয়ে বোতলের দুধ খাওয়াতে খাওয়াতে আবারও কেঁদে চলে, অন্যদিকে পরণের জামা ভেসে যেতে থাকে স্তনের অমৃতধারায় । কালরাতে শরীর জুড়ে নর্দমার পাঁক লেগেছে, বিষাক্ত হয়ে গেছে স্তনামৃত তাই তা আর কোনোভাবেই ছোট্ট ছেলের মুখে তুলে দিতে পারলো না অভাগিনী মা শ্যামা । বোতলের দুধ পান করতে করতে কোলেই ঘুমিয়ে পড়লো ছোট্ট নব্যাংশ ।


সেই অভিশপ্ত রাতের পর থেকে প্রায় অনেক রাত কেটেছে পরপুরুষের শয্যাসঙ্গিনী হয়ে আর টাকা - পয়সা, জমি - বাড়ি - গাড়ি আরো অনেক সম্পত্তি করে ফুলেফেঁপে উঠতে থাকে নপুংসক সম্রাট । পরের দিকে তো শুধুমাত্র মিঃ জোতানিয়া এবং অফিসের বড়ো বড়ো কর্মকর্তারা ছাড়াও মন্ত্রীমহল - অন্যান্য বড়ো সরকারী - বেসরকারী উচ্চমহলেও চড়া দামে শ্যামাকে শয্যাসঙ্গিনী হতে বাধ্য করতে থাকে সম্রাট । শুধুমাত্র নব্যাংশের মুখের দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে কয়েকটি মাস সহ্য করে হতভাগিনী, বাঁধা দেওয়ার উপায় নেই তাহলেই অশ্রাব্য গালিগালাজ, মেরে ফেলার হুমকি, লাথি - ঘুষি এমনকি শুনতে হোতো নিজের সন্তান নব্যাংশের ক্ষতি করার চড়া হুমকি । তাই অগত্যা চুপ করেই থাকতে হোতো শ্যামাকে ।


এরপর থেকে শ্যামা ছলে - বলে - কৌশলে নিজের রূপের জাল বিস্তার করে ধীরে ধীরে মিঃ জোতানিয়ার বিশ্বাস অর্জন করে ওনাকে ভালোবাসা ও সোহাগের জালে একেবারে আবদ্ধ করে ফেলে । প্রায় মাস নয়েক পর মিঃ জোতানিয়া প্রচুর অর্থ ও সম্পত্তির বিনিময়ে এক প্রকার জোর করেই শ্যামাকে ডিভোর্স দিতে বাধ্য করে এবং ছেলের দেখাশোনার ভারও পায় শ্যামা । সম্রাটের হাত থেকে শ্যামা পুরোপুরি মুক্ত হলেও সারা জীবনের মতো বাঁধা পড়লো মিঃ জোতানিয়ার হাতে তবে একটা ব্যাপারে শ্যামা নিশ্চিন্ত কারণ তাকে একমাত্র মিঃ জোতানিয়ার শয্যাসঙ্গিনী হয়ে থাকতে হবে অন্য কোনো পুরুষের শয্যায় তাকে আর যেতে হবে না । মিঃ জোতানিয়া শ্যামাকে কলকাতার অভিজাত এলাকায় একটি বহুতল অ্যাপার্টমেন্টের চৌদ্দ তলায় ফ্ল্যাট কিনে দেন এবং তা এমনভাবে সাজিয়ে দেন যা দেখলে যে কোনো সাধারণ মানুষের চক্ষু চড়কগাছ হতে বাধ্য । তবে শ্যামার বিশেষ অনুরোধ মিঃ জোতানিয়া এক সপ্তাহ সেই ফ্ল্যাটে আসবেন না কারণ ঐ এক সপ্তাহের মধ্যে শ্যামার মা ডাঃ পামেলা বোস এসে তার ছোট্ট নাতি নব্যাংশকে নিয়ে চলে যাবেন মুম্বাইয়ে , সেখানেই স্থায়ীভাবে থাকবে নব্যাংশ । 


যদিও শ্যামার নতুন ফ্ল্যাটের ঠিকানা একমাত্র মিঃ জোতানিয়া ছাড়া আর কেউই জানতো না । ফ্ল্যাটের ঠিকানা যাতে মা না জানতে পারে সেইজন্য সে নিজেই নব্যাংশকে পৌঁছে দিতে যায় মুম্বাইয়ে মায়ের বাড়িতে । সেখানে দিন দুয়েক থেকে আবার ফিরে আসে কলকাতার ফ্ল্যাটে । ঠিক মাস খানেক পর শ্যামা একদিন মাকে ফোন করে বলে , " মা আমি একটা বিদেশী কোম্পানিতে চাকরি পেয়েছি এবং স্যালারিও অনেক তবে মাঝে মাঝে কলকাতার বাইরে এমনকি ভারতবর্ষের বাইরেও যেতে হতে পারে । "


শ্যামার মা ডাঃ পামেলা : " হ্যাঁ ঠিক আছে সেতো ভালো কথা মন দিয়ে কাজ করিস আর অতীতে যা হয়েছে সব বের করে দে মাথা থেকে । এখন থেকে ভালো করে বাঁচ , শুধু নিজের জন্য আর দাদুভাইয়ের জন্য তোকে ভালো করে বাঁচতেই হবে । দাদুভাইকে নিয়ে তোর চিন্তা করতে হবে না আর আমার যা আছে তাতে আমাদের দুই দিদা - নাতিতে মিলে সাচ্ছ্যন্দে কেটে যাবে । তুই শুধু নিজের খেয়াল রাখিস আর রোজ একবার করে ফোন করিস তাহলে আমিও নিশ্চিন্ত হতে পারি । আর হ্যাঁ , অফিসে বেশি দিনের ছুটি পেলেই চলে আসবি আমার আর দাদুভাইয়ের কাছে । ঠিক আছে ভালো থাকিস , সাবধানে থাকিস । আমি ফোন রাখলাম । " 


 শ্যামার মা ফোন রাখতেই শ্যামা হাউহাউ করে কেঁদে ওঠে কারণ মায়ের কাছে চাকরির ব্যাপারে সে সম্পূর্ণ মিথ্যা বলতে বাধ্য হয়েছে, আসলে সেতো এখন খুব উচ্চশ্রেণীর পতিতা ছাড়া কিছুই নয় । না তবে পতিতা ঠিক নয় বরং বলা ভালো মিঃ জোতানিয়ার রক্ষিতা বা পোষা মেয়েমানুষ । নিজের উপরেই ভীষণ ঘেন্না জন্মায় শ্যামার কিন্তু কিছু করারও নেই মৃত্যুকে আলিঙ্গন করা ছাড়া তবে সেটাও সে করতে পারবে না নিজের সন্তান ও মায়ের কথা ভেবে তাই নিজের ভাগ্যকে অনিচ্ছা সত্ত্বেও মেনে নিতে বাধ্য হয় শ্যামা ওরফে মিস এলিসা । এই " এলিসা " নামটা দিয়েছে মিঃ জোতানিয়া যার অর্থ " Dedicated to God " অর্থাৎ এক কথায় দেবদাসী বলা চলে । এখানে যে মিঃ জোতানিয়া নিজেকে ভগবান হিসেবে বোঝাতে চেয়েছেন তা পরিস্কার বুঝতে পারে শ্যামা , বুঝতে পারলেও কিছুই করার নেই কারণ শত পুরুষের শয্যায় ভোগ্য হওয়ার থেকে এবং সম্রাটের হাত এই মিঃ জোতানিয়াই তাকে আর ছোট্ট নব্যাংশকে রক্ষা করেছেন । তাই মানুষটা প্রকৃতার্থে খারাপ হলেও ভগবানও বটে । 


মিঃ জোতানিয়া ছিলেন বিপত্নীক, স্ত্রী গত হয়েছেন প্রায় বছর কুড়ি আগে । ওনার স্ত্রী দ্বিতীয় সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় প্রাণ হারান । মিঃ জোতানিয়ার ছেলের বয়স তখন ছিল ছয় বছর এবং দ্বিতীয় সন্তান মেয়ের বয়স একদিনও না । তারপর থেকে মিঃ জোতানিয়া আর বিয়ে করেননি ঠিকই কিন্তু শরীরের চাহিদা মেটাতে বহুবার বহু নারীর সাথেই লীলা খেলায় মেতেছেন । কিন্তু এতো বছরেও ওনার মনের কাছাকাছি কোনো নারীই পৌঁছাতে পারেনি যেটা একমাত্র পেরেছে শ্যামা ওরফে মিঃ জোতানিয়ার এলিসা । 


বর্তমানে মিঃ জোতানিয়ার ছেলের বয়স ছাব্বিশ আর মেয়ের বয়স কুড়ি । ওরা দুজনেই থাকে গুজরাটে । শুধু মিঃ জোতানিয়া কর্মসূত্রে কখনো কলকাতায় , কখনো গুজরাটে আবার কখনো ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে অথবা ভারতের বাইরে কোথাও থাকেন । 


একদিন মিঃ জোতানিয়া শ্যামাকে ডেকে বলেন , " শুনো , এলিসা, ম্যায় তুমসে বেহত প্যায়ার করতা হুঁ , লেকিন তুমহে পত্নীকা দর্জা কভী নেহি দে সকতা । অবসে তুমহারি সারি জিম্মেদারী অউর ইহা তক্ কি তুমহারি বেটে কি ভী জিম্মেদারী মেরা হ্যায় , ম্যায় তুম দোনোকি কভীভি কোই কমী মেহসুস নেহি হোনে দুঙ্গা । ইসকে বদলে তুমহে ব্যস হার ওয়াক্ত মেরে করীব রহেনা হোগা । য্যায়সে কে মান লো কভী - কভী মেরে সাথ বাহার যানা , মেরে সাথ বড়ী বড়ী পার্টিয়োমে যানা , ম্যায় তুমহারি ঘরমে যবতক রহু তবতক হর্ তর্হাসে মেরা খাতিরদারী করনা । ক্যায়া হুয়া মেরে জান , কোই শিকায়ত ? সু ছে এলিসা ?তোমে গুস্সে ছো ? "




  ******** To Be Continued 


Rate this content
Log in