Sharmistha Mukherjee

Abstract Inspirational Others

4  

Sharmistha Mukherjee

Abstract Inspirational Others

উমার আগমন

উমার আগমন

2 mins
359



" আশ্বিনের শারদপ্রাতে বেজে উঠেছে

আলোক মঞ্জীর;

ধরণীর বহিরাকাশে অন্তরিত মেঘমালা;

প্রকৃতির অন্তরাকাশে জাগরিত জ্যোতির্ময়ী জগন্মাতার আগমন বার্তা। "


ঘরে ঘরে চারিদিকে বাজছে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের মহালয়ার সুর । হাসপাতালের প্রসব কক্ষ ( লেবার রুম ) থেকে ভেসে এলো সদ্যোজাত শিশুর কান্নার শব্দ । তখন ভোর চারটে । কক্ষের বাইরে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে হিমালয় ও পরিবারের অন্যান্যরা । সাদা টাওয়েলে মোড়া এক সদ্যোজাত শিশুকে নিয়ে প্রসব কক্ষের দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে এলেন এক নার্স , " Congratulations , আপনাদের বাড়িতে দেবী মা এসেছেন । আজ মহালয়ার পূণ্য তিথিতে স্বয়ং উমা এসেছেন আপনার স্ত্রী মেনকার কোল জুড়ে । আমাদের মিষ্টি খাওয়াতে হবে মিস্টার

মুখার্জী । " মেয়ের ফুটফুটে মুখটা দেখে চোখে জল চলে এলো হিমালয়ের । নার্স সবাইকে সদ্যোজাত উমার মুখটা দেখিয়েই আবার নিয়ে চলে যায় । শিশু কন্যাকে প্রসব করার পর মেনকা তন্দ্রাচ্ছন্ন । সবার সব কথা শুনে পারছে শুধু মুখে কথা নেই , কোনোদিন ছিলও না আর অ্যানাস্থেসিয়া করার দরুন চোখ খোলার ক্ষমতা নেই । স্ত্রী মেনকার কাছে শুধু মাত্র হিমালয় যাবার অনুমতি পেল । ছুটে গিয়ে চুমুতে চুমুতে ভরিয়ে দিলো মেনকাকে । আসলে হিমালয়দের বংশে কোনো মেয়ে সন্তান নেই । অর্থাৎ হিমালয়ের প্রপিতামহরা ছিলেন তিন ভাই । এই তিন ভাইয়ের ঘরে পাঁচটি পুত্র সন্তান । এইভাবে বংশানুক্রমে সবার ঘরে শুধুই পুত্র সন্তান । যুগ যুগ ধরে শোনা যেত পুত্র সন্তান লাভের জন্য আর বংশ রক্ষার তাগিদে যাগযজ্ঞ - পূজার্চনা করা হোতো । অতীত থেকে শুরু করে বতর্মানেও একই চিন্তাধারা -


ছেলে মানে সোনার আংটি

ছেলে মানে বংশধর ,

ছেলেই করে বংশ রক্ষা

মেয়ে - বৌমা তোমরা পর ।

বৌমার যোনিতে বীর্যপাত ঘটিয়ে

পৌরুষত্বের পেটাও ঢাক ,

অথচ সেই বৌমাই পর হয়ে যায়

আর কন্যা সন্তান নিপাত যাক ।


হিমালয়ের পরিবার একেবারেই আলাদা । সেই অতীত থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত কন্যা সন্তান পাওয়ার জন্য নানাবিধ তপস্যা করে চলেছে । অবশেষে বংশ রক্ষার জন্য পুত্র নয় , ঘর আলো করে উমা এলো । হাসপাতাল থেকে বাড়িতে ফিরে সারা পাড়ায় মিষ্টি বিলি করলো হিমালয় । সারা বাড়ি সেজে উঠলো রংবেরঙের আলোর সাজে ।


মেনকার যেহেতু সীজার করে প্রসব হয়েছে তাই হাসপাতাল থেকে সাতদিনের দিন ছুটি

দিলো । হিমালয় ও তার মা গাড়ি করে বৌমা এবং নাতনিকে বাড়িতে নিয়ে আসে । বাড়ির সামনে যেতেই মেনকার চক্ষু

চড়কগাছ । বাড়িটা যেন চেনাই যাচ্ছে না । পুরো বাড়ি সেজেছে নতুন রংয়ে , চারিদিকে ঝলমল করছে অসংখ্য আলোর রোশনাই । বাড়ির গেটের সামনে বরণডালা হাতে হিমালয়ের জ্যৈঠীমা ও ওনাকে ঘিরে আরও জনা কুড়ি আত্মীয় স্বজনদের ভিড় । গাড়ি থেকে বাড়ির গেট পর্যন্ত লাল গালিচার উপর গোলাপের পাপড়ি বিছানো । গেটের সামনে বিশাল ফুলের তোরণ । পাড়ার লোকেরা অবাক হয়ে সেদিন দেখেছিল হিমালয় ও মেনকার কন্যা উমার পিতৃগৃহে আগমন । যেখানে এখনও কন্যা জন্মকে অনেকে বোঝা ভাবে , এখনও অনেক জায়গায় কন্যাভ্রুণ হত্যা চলে অবলীলায় সেখানে এইরকম ভাবে কন্যা সন্তান বরণও হয় ।


  

  🔸🔸🔸🔸 সমাপ্তি 🔸🔸🔸🔸


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract