মুখবই
মুখবই
হাতের সব কাজ গুছিয়ে এসে এতক্ষনে একটু শান্তিতে বসলো মধুজা। বিছানার পাশের টেবিলটা থেকে ফোনটা তুলে নিয়ে পাড়ি জমালো ভার্চুয়াল জগতে। গৃহিনীদের তো দুপুর বেলাটাই একমাত্র ফাঁকা সময়। এই সময়টায় তাঁরা দুনিয়ার সব চিন্তা ভুলে নিজের মতো করে সময় কাটায়।
ফেসবুকের নিউসফিড স্ক্রল করতে করতে মধুজার চোখ আটকায় ওর বান্ধবী পর্ণার পোস্টে। বিবাহবার্ষিকীতে পর্ণার বর পর্ণাকে সারপ্রাইস ট্যুরে প্যারিস নিয়ে গেছে, আবার বিশেষ একটা উপহারও দিয়েছে ওকে। বান্ধবীর পোস্টে লাভ রিঅ্যাক্ট করে মিষ্টি একটা কমেন্ট লিখে ফেসবুক বন্ধ করে হোয়াটস্যাপে অন হয়।
কিছুক্ষন এরওর স্টেটাস দেখে, হোয়াটস্যাপে ওদের লেডিজ গ্রূপটার চ্যাট বক্সে ঢোকে।
"এখানেও পর্ণা!" কয়েকটা ম্যাসেজ পড়ে মনে মনে বিরক্তবোধ করলো মধুজা।
"যত গুন ভগবান পর্ণার বরকেই দিয়েছে। এই এক আমার বর! না মনে রাখে আমাদের বিবাহবার্ষিকী আর না কারোর জন্মদিন!"
রাগে গজগজ করতে ফোনের নেটটা বন্ধ করতেই ফোনটা বেজে উঠলো। সুমিত ফোন করছে।
"হ্যাঁ, বলো..."
অপর প্রান্তের মানুষটার এমন রাগী আওয়াজ শুনে সুমিত এর কারণ জিজ্ঞেস করে। সঙ্গে সঙ্গে মধুজা সুমিতকে এক ঝাড় শুনিয়ে ও কেন ফোন করেছিল জিজ্ঞেস করলো।
"আমার একটু ফিরতে দেরি হবে । অফিসের এক কলিগের জন্মদিন আজ। তাকে সবাই মিলে পার্টি দিচ্ছি। তাই...." মিউমিউ করে বললো সুমিত।
কথাগুলো শুনে মধুজা আবারও সুমিতকে খানিক ঝেড়ে দিয়ে, "তোমাকে বিয়ে করে আমার জীবনটাই বরবাদ হয়েগেছ
ে।" বলে ফোনটা কেটে দেয়।
এদিকে বাকি সময়টা মধুজার হটাৎ রেগে যাওয়ার কারণ অন্বেষণ করতে থাকে সুমিত। হাজার চেষ্টা করেও বোধগম্য হলো না ওর দোষটা কোথায়! "নাহ, দরকার নেই পার্টিতে যাওয়ার। এর থেকে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরি, নাহলে আবার মধুজার রোষের মুখ পড়তে হবে।"
যেমন ভাবনা তেমন কাজ। সুমিত বাড়ি আসলে মধুজা ওকে প্রশ্ন করে, ও কেন তাড়াতাড়ি ফিরলো?
সুমিত কি বলবে ভেবে না পেয়ে বলে, "তোমার কথা খুব মনে পড়ছিলো তাই গেলাম না।"
কথাটা শুনে সুমিতের দিকে অদ্ভুত ভঙ্গিতে চাইলো তনুজা। "লিস্ট হাতে ধরিয়ে দিলেও বাজারে গিয়ে অর্ধেক জিনিস আনতে ভুলে যায় যে, তার কিনা আমার কথা মনে পড়েছে! নাটক..." বরকে আবারও এক প্রস্থ শুনিয়ে রাতের রান্না সারতে যায় মধুজা।
বৌয়ের ঝাড়ন শুনে বদহজম হওয়ার আগে এন্টাসিড খুঁজতে হবে। এই ভেবে সুমিত ছেলের ঘরে যায় রহস্য উন্মোচন করতে। ছেলে এ বিষয়ে কিছু জানেনা। তবে সে নাকি বাবার সাহায্য করতে পারে, যদি বাবা তাকে একটা গেমিং ল্যাপটপ কিনে দেয়। সুমিত পড়ে মহাবিপাকে। সে বৌয়ের মান ভাঙাতে চায় কিন্তু এতগুলো টাকার গচ্চা দিতে মোটেই রাজি নয়। অগত্যা খালি হাতেই ফিরে এলো।
নৈশভোজ সেরে সবাই ঘুমিয়ে গেলেও সুমিত বসে বসে অনলাইন নিউস অ্যাপে ঢুকে খবরগুলোতে চোখ বোলাতে থাকে। হটাৎই টুং করে শব্দ হয়ে ফেসবুক থেকে নোটিফিকেশন আসে।
'ইট'স মধুজা পাল'স বার্থডে টুডে। উইশ হার ওয়েল!!'
সুমিত নিজের মনে মৃদু হেসে ওঠে, "ভাগ্গিস মুখবই আছে!"