🍁𝙰𝚗𝚗𝚒𝚎🍀 🍂

Abstract Classics Others

4.5  

🍁𝙰𝚗𝚗𝚒𝚎🍀 🍂

Abstract Classics Others

বাঁকে বিহারি

বাঁকে বিহারি

4 mins
243



উত্তরপ্রদেশের মথুরা জেলা থেকে দশ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ছোট্ট শহর বৃন্দাবন। যা আমাদের কাছে শ্রীকৃষ্ণের লীলাক্ষেত্র হিসেবে বেশি পরিচিত। সেইরকমই একটা লীলাক্ষেত্র হলো বাঁকে বিহারি মন্দির। ৫৫৭ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট এই মন্দিরটি ১৮৬২ সালে স্থাপন করা হয়। 


এই মন্দিরটি পৃথিবীর অন্যান্য মন্দিরগুলির তুলনায় একটু অন্যরকম। এই মন্দিরটি সম্পূর্ণ রাজস্থানী আদলে তৈরী করা হয়েছে। দেয়ালের ভাস্কর্যও বেশ মনোমুগ্ধকর। না, এই মন্দিরটি কেবল নিজের গঠনশৈলীর জন্য অন্যান্য মন্দিরগুলির থেকে আলাদা নয়। এটা পৃথিবীর এমন একটি মন্দির যেখানে কোনো ঘন্টার ধ্বনি শোনা যায় না। এমনকি পুজো করার সময়ও কোনো ঘন্টার ব্যবহার করা হয় না। এছাড়াও এই মন্দিরটিকে সাজানোর জন্য ফুল এবং বেলুন ব্যাতিত অন্য কোনো সাজসজ্জা ব্যবহার করা হয় না। 


এই মন্দিরটি কেবল এই কারণেই বিখ্যাত নয়।মন্দিরে শ্রীকৃষ্ণের যে বিগ্রহটির আরাধনা করা হয়, সেই বিগ্রহেরও একটা ইতিহাস আছে। মন্দিরে শ্রীকৃষ্ণের যে বিগ্রহটির পুজো করা হয়, তা বাঁকে বিহারি নামে জগৎ বিখ্যাত। শ্রীকৃষ্ণের সব মূর্তিগুলোকে কিন্তু বাঁকে বিহারি বলা হয় না। এই মূর্তিটির একটা বিশেষত্ব আছে। এই মূর্তিটি কিন্তু রাধা এবং কৃষ্ণের যুগলমূর্তি। অর্থাৎ ইহা রাধা এবং কৃষ্ণের সম্মিলিত রূপ। কালো বর্ণের এই মূর্তিটি তিন দিক থেকে বাঁকা। ঠোঁটের কাছে, কোমরের কাছে, এবং পায়ের কাছে। এই কারণেই এই মূর্তিটির নাম বাঁকে বিহারি। " বাঁকে " অর্থাৎ "বাঁকা " এবং " বিহারি " অর্থাৎ " যিনি বিহার করতে মানে যিনি এখানে ওখানে ঘুরে বেড়াতে ভালোভাসেন। " অনেকে আবার এই মূর্তিটিকে শ্রীকৃষ্ণের ত্রিভঙ্গ মূর্তিও বলেন। 


বর্তমানে রাধা- কৃষ্ণের এই যুগলমূর্তিটির পুজো যে স্থানে করা হয় সেখানে কিন্তু আগে করা হতো না। মন্দির প্রতিষ্ঠার আগে এই যুগলমূর্তিটি বৃন্দাবনের নিধি বনে পুজো করা হতো। বলা হয় যে, মুঘল সম্রাট আকবরের রাজ সংগীতজ্ঞ তানসেনের গুরু স্বামী হরিদাস জী শ্রীকৃষ্ণের অন্যতম পরম ভক্ত ছিলেন। স্বামী হরিদাস জী নিজের সংগীতকে রাধা-কৃষ্ণের চরণে উৎসর্গ করেছিলেন। উনি যখনি গান গাইতেন তখনি নিজেকে সম্পূর্ণ রূপে রাধা- কৃষ্ণের ভক্তিরসে নিমজ্জিত করে দিতেন। ওনার ভক্তি এবং সংগীতে আকৃষ্ট হয়ে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এবং শ্রীরাধার ওনাকে দর্শন দিতেন।


একদিন স্বামী হরিদাস জীর একজন শিষ্য কিছু ব্রজবাসীদের সঙ্গে নিয়ে নিধি বনে স্বামী হরিদাস জীর কাছে উপস্থিত হন এবং স্বামী হরিদাস জীকে নিজেদের মনোবাঞ্ছা জানান। সকল ব্রজবাসীগণ ওনার মতোই রাধা-কৃষ্ণের দর্শন এবং সান্নিধ্য লাভ করতে চান। ব্রজবাসীদের ইচ্ছা পূরণের জন্য স্বামী হরিদাস জী একাগ্র চিত্তে শ্রীকৃষ্ণের ভক্তিতে মগ্ন হয়ে ভজন গাইতে শুরু করলেন। শ্রীকৃষ্ণ এবং শ্রীরাধা ওনাকে দর্শন দেন। ব্রজবাসীগণের ইচ্ছা পূরণের জন্যই শ্রীকৃষ্ণ এবং শ্রীরাধা স্বামী হরিদাস জীর নিকটে থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। তখন স্বামী হরিদাস জী শ্রীকৃষ্ণকে বলেন, " প্রভু, আমি সাধু। আপনাকে তো লাঙ্গট পরিয়ে দেবো কিন্তু মাতার জন্য নিত্য পরিধান এবং গহনা কথা থেকে আনবো?"

ভক্তের এমন কথা শুনে শ্রীকৃষ্ণ এবং শ্রীরাধা হাসলেন। তারপর ওনাদের যুগল জোড়ি একত্রিত হয়ে একটি কালো বর্ণের বিগ্রহ রূপে স্বামী হরিদাস জীর সামনে প্রকট হয়। স্বামী হরিদাস জী ওই বিগ্রহটির নাম দেন " বাঁকে বিহারি। " এই কারণেই বাঁকে বিহারি বিগ্রহটির একদিকে পুরুষ সজ্জায় এবং অন্যদিকে মহিলা সজ্জায় সাজানো হয়। 


ব্রাহ্মণ সংহিতার অনুযায়ী বলা হয় যে স্বামী হরিদাস জীই নাকি দাপর যুগে শ্রীরাধার অন্যতম প্ৰিয় সখী ললিতা ছিলেন। যিনি কলিযুগে স্বামী হরিদাস জীর রূপে আবির্ভূত হয়েছেন। এই জন্যই স্বামী হরিদাস জী নিধি বনে যে মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করে রাধা- কৃষ্ণের যুগল মূর্তিটিকে ব্যাৎসল্য প্রেমে পুজো করতেন সেখানে ওনার সমাধির উপরে ললিতা জীর একটি চিত্রপট আছে।


স্বামী হরিদাস জী মৃত্যুর পূর্বে বাঁকে বিহারির বিগ্রহটির সেবার দায়িত্ব ওনার ছোটভাই গোস্বামী জগন্নাথ জীকে দিয়ে গিয়েছিলেন। গোস্বামী জগন্নাথ জীর মৃত্যুর পর বিগ্রহটির দায়িত্ব বংশধরদের হাতে চলে যায়। গোস্বামী বংশধররাই নিধি বনের নিকট বর্তমান বাঁকে বিহারি মন্দিরটি স্থাপন করে ওখানে বিগ্রহটিকে প্রতিষ্ঠা করেন।


কথিত আছে, একবার রাজস্থানের এক রাজা বাঁকে বিহারি জীকে দর্শনের জন্য বৃন্দাবন এসেছিলেন। উনি ভগবান বাঁকে বিহারির চক্ষুদ্বয় এর দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে নিজের প্রার্থনা করেন। পরে রাজা নিজের রাজ্যে ফিরে যাওয়ার জন্য মন্দির থেকে প্রস্থান করার কিছুসময় পর মন্দিরের কর্মচারীরা এসে দেখেন ওখানে বাঁকে বিহারি জী নেই। এই খবরটা মন্দিরের পূজারীদের মধ্যে আলোড়ন ফেলে দেয়। বাঁকে বিহারি জীর স্তুতি করার পর পূজারীরা জানতে পেরেছিলেন যে কেউ যদি একাগ্র ভাবে বিহারি জী কে স্মরণ করেন তাহলে বিহারি জী তাঁর ভক্তের ডাকে সাড়া দিয়ে মন্দির ছেড়ে ভক্তের সঙ্গেই চলে যান। অনেক প্রার্থনা করে বিহারি জী পুনরায় মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই ঘটনার পর থেকেই কেউ যাতে ক্রমাগত বিহারি জীর দর্শন করতে না পারেন, তাই বিহারি জীর সেবার নিয়োজিত পুরোহিতরা বিগ্রহের সামনে দু-মিনিট অন্তর পর্দা ফেলে দেন।


এই মন্দিরটির আরও কিছু বিশেষত্ব আছে। যেহেতু স্বামী হরিদাস জী বিহারি জীকে নিজের সন্তানরূপে সেবা করতেন, তাই এই মন্দিরে জন্মাষ্টমী ছাড়া বছরের অন্যান্য দিনগুলিতে মঙ্গলারতি করা হয় না। মনে করা হয় যে, বিহারি জী গভীর রাত পর্যন্ত কুঞ্জে ঘুরে বেড়ান। তাই সকাল নটার আগে বিহারি জীর না নিদ্রা ভঙ্গ করা হয় আর না পূজো শুরু করা হয়।


বৈশাখ মাসের সূর্যের দাবদাহের থেকে স্বস্তি পাওয়ার জন্য অক্ষয় তৃতীয়ার দিন থেকে শুরু হয় শ্রীকৃষ্ণের চন্দন যাত্রা। এই উৎসবটি ২১দিন একুশ দিন ব্যাপী পালন করা হয়। এই উৎসবে প্রত্যহ চন্দন, গোলাপ জল এবং জাফরান এর লেপ তৈরী করে ঠাকুরের সর্বাঙ্গে লেপন করা হয়। যেহেতু সারাবছর বস্ত্র এবং পুষ্পের নিচে বিহারি জীর চরণ ঢাকা থাকে। তাই কেবলমাত্র অক্ষয় তৃতীয়ার দিনটিতেই ভক্তদের বিহারি জীর চরণ দর্শন লাভের সুযোগ হয়। এই শুভ দিনটিতে বিগ্রহের চরণ দর্শন করার জন্য মন্দির প্রাঙ্গনে ভক্তদের ভিড় উপচে পড়ে।


সর্বোপরি, জাতি, ধৰ্ম, বর্ণ নির্বিশেষে দূর-দূরান্ত থেকে ভক্তরা এবং শিল্পপ্রেমীরা বিহারি জীর দর্শন লাভের জন্য এবং মন্দিরটির অসাধারণ ভাস্কর্য দেখার জন্য আসেন।


             _____________




Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract