🍁𝙰𝚗𝚗𝚒𝚎🍀 🍂

Romance Fantasy

4.5  

🍁𝙰𝚗𝚗𝚒𝚎🍀 🍂

Romance Fantasy

নতুন শুরুর গল্প

নতুন শুরুর গল্প

9 mins
429



" এই ফাল্গুনী, তোর কি কনজান্টিভাইটিস হয়েছে নাকি? "


সকাল থেকেই মেজাজটা এমনিতেই বিগড়ে ছিল কিন্তু হটাৎ মেঘার এমন অদ্ভুত প্রশ্ন করাতে মেজাজটা যেন আরও বিগড়ে গেল ফাল্গুনীর। তাই চোখ থেকে বাদামী রঙের রোদ চশমাটা খুলে চোখদুটোকে বড়ো বড়ো করে মেঘার দিকে তাকিয়ে বেশ ঝাঁঝিয়েই বলে উঠলো, " দেখে নে, ভালো করে দেখে নে। "


মেঘা ওর চোখের দিকে দেখেই বুঝে গেছে যে মেয়েটা সারারাত কান্নাকাটির পর্ব চালিয়েছে। তাই তো এখন লাল হয়ে ফুলে যাওয়া চোখদুটোকে ঢাকতে সানগ্লাস পড়ে বসে আছে। কিন্তু হটাৎ করে এমন কি হলো যে মেয়েটা এতো কান্নাকাটি করছে। প্রশ্নটা মানসপটে উদয় হলেও ফাল্গুনীকে এই ব্যাপারে এখন জিজ্ঞেস করাটা ঠিক মনে করলো না। তাই এই মুহূর্তে ফাল্গুনীর মাইন্ডটা একটু চেঞ্জ করার চেষ্টা করলো। কিন্তু মেঘার কোনো কথারই কোনো প্রভাব পড়লো না ফাল্গুনীর ওপর। উপরন্তু সব কথায় মেঘাকে কেমন একটা রূঢ় ভাবে উত্তর দিলো। এবার মেঘা ফাল্গুনীকে মনে উদিত প্রশ্নটা করেই ফেললো, " কি হলো হটাৎ এতো রাগছিস কেন বলতো? সৌমিক কি আবার কিছু করেছে নাকি?" 


মেঘার কথাগুলো শুনে ফাল্গুনীর রাগের পারদটা যেন আরও একটু বেড়ে গেল। তাই তো আবারও একটু রূঢ় ভাবেই বলে উঠলো, " রাগ করার মতোই বিষয়। তুই আমাকে ঘরের মধ্যে সানগ্লাস পড়ে দেখতে পেলি কিন্তু আমি সানগ্লাসটা খোলার পর কিছু দেখতে পেলি না? আর ওই সৌমিকের তো নামও নিবি না। "


ফাল্গুনীর কথা শুনে মেঘা সামনের ছোট টেবিলটা থেকে সানগ্লাসটা হাতে তুলে নিয়ে দেখতে লাগলো। যা দেখে ফাল্গুনী কাচুমাচু মুখ করে উপরওয়ালাকে উদ্দেশ্য করে আপনমনে বলে উঠলো, " এই সব উদো পাবলিকগুলোকেই আমার ভাগ্যেই কেন লিখেছিলে? সবকটাই মাথামোটা। কিছু বুঝেও বোঝে না আর কিছু দেখেও দেখে না। "


ফাল্গুনীর শেষের কথাটা শুনে মেঘা রোদচশমা সমেত কোমরে হাত রেখে সগর্বে ওকে বলে উঠলো, " কিছু না বুঝলে আমি এতদিন ধরে তোর জন্য আসা সুপাত্রগুলোকে রিজেক্ট করালাম কিকরে? "


ফাল্গুনী কোন উত্তর দিচ্ছে না দেখে মেঘা ভ্রূ জোড়া উঠিয়ে ফাল্গুনীর দিকে তাকালে ফাল্গুনী একটু উদাস ভাবে বলে ওঠে, " কিন্তু কি লাভ এতো কিছু করেও? "


মেঘা অবাক হয়ে বলে উঠলো, " কি লাভ মানেটা কি? তোর আর সৌমিকের লাভের ট্রেনটাকে রাজধানীর স্পিডে স্টেশনে নিয়ে 

যাওয়ার জন্যই তো আঙ্কেল-আন্টির সামনে ট্যাংকার ট্যাংকার মিথ্যে মিথ্যে বাহানা করলাম। "


" হ্যাঁ কিন্তু এতকিছুর পরেও তো সৌমিক আমার দিকে সেভাবে তাকায় না। ওর কাছে তো আমি শুধু ওর বেস্ট ফ্রেন্ড। "


মেঘা এবার রোদচশমাটা সামনে থাকা সুদৃশ্য ছোট্ট কাঁচের টেবিলটায় রেখে ফাল্গুনীর পাশে বসে পড়লো। তারপর বলে উঠলো, " আচ্ছা ও নাহয় তোকে নিজের ফ্রেন্ড মানে কিন্তু তুই কি ওকে কখনো কোনো ইশারা করেছিস? মানে তুই কি ওকে কখনো কোনো রকমে বোঝানোর চেষ্টা করেছিস, যে তুই ওকে ফ্রেন্ডের থেকেও একটু বেশিই মনের করিস? "


ফাল্গুনী মেঘাকে প্রত্তুতরে কিছু বলার যেই মাত্র মুখটা খুলতে যাচ্ছিলো, সেই মাত্রই মেঘা নিজের ডান হাতের তর্জনী ফাল্গুনীর ওষ্ঠদ্বয়ের ওপর রেখে বলে ওঠে, " কলেজের তিনটে বছর ভালোই দেখেছি যে তুই ওকে কত ইশারা করেছিস! না, তাই এই প্রশ্নের উত্তর তুই দিস না। "


" মানেটা কি? সেই ক্লাস ইলেভেন থেকে কতরকম ভাবেই তো ইশারা-ইঙ্গিতের মাধ্যমে বোঝানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু মহাশয়ের সেদিকে নিজের দৃষ্টিপাত করলে তো! " ফাল্গুনী মেঘার হাতটা নিজের মুখ থেকে সরিয়ে দিয়ে রাগান্বিত স্বরে বলে উঠলো।


এরপর মেঘা ওকে কিছু বললো না। আর ফাল্গুনী সে তো একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে উদাস ভাবে বসে রইলো। আসলে দুজনেই তো জানে সৌমিক কেমন উড়ো উড়ো স্বভাবের ছেলে। আর সেই স্কুলবেলা থেকেই ফাল্গুনী তো কম চেষ্টা করেনি। রাখি, ভাইফোঁটা আর যা কিছু হয়, সব অনুষ্ঠানেই তো ও সৌমিককে ছাড়া বাকি সব ছেলেদের নিজের ভাই বা দাদা বানিয়ে ফেলেছে। এমনকি ওর মা-বাবা ওর যে জন্য যে পাত্রগুলোকে দেখেছে, তাঁদের মধ্যেও কয়েকজন দাদা বানিয়ে দিয়েছে। আর এই সব কিছুই সৌমিক জানা সত্ত্বেও কোনো ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া করেনি। বরং ফাল্গুনীকে সাপোর্ট করে বলেছে, "আজকাল বিয়ে করে কি হবে? তার থেকে নিজের শর্তে বাঁচো। আর লাইফটাকে এনজয় করো। সত্যিই তোর এই একা জীবন কাটানোর সিদ্ধান্তটা খুব ভালো লেগেছে আমার। ইন্ডিপেন্ডেন্ট ওম্যান। "


সৌমিকের এমন মন্তব্য শুনে একমুহূর্তের জন্য ফাল্গুনীর মনে হলো ছেলেটার মাথায় হাতুড়ি দিয়ে জোরে এক ঘা দিয়ে বলি, " যে ওরে গর্ধব, আমাকে এসব তোর জন্য করতে হচ্ছে। এবার তো একটু বোঝ.... আমার মনের কথাটা। "


কিন্তু না, এই রকম একটা মন্তব্যের প্রত্তুতরে কিছু বলতে পারেনি সেই মুহূর্তে ফাল্গুনী। আসলে মনে মনে কোথাও একটু ভয় এসে জড়ো হয়েছিল ফাল্গুনীর। এমনিতেই সৌমিক এই রিলেসন, বিয়ে এসবে খুব একটা বিশ্বাসী নয়। এতে যদি ফাল্গুনীর মনের কথাটা শুনে সৌমিক ওদের এতো বছরের বন্ধুত্বটাই ভেঙে দেয়, তখন? তার থেকে এই ভালো।


হটাৎই মোবাইলের যান্ত্রিক কম্পনে শান্ত ঘরের নিস্তব্ধতা ভেঙে গেল। স্ক্রিনে সৌমিকের নামটা ভেসে উঠেছে। কিন্তু ফাল্গুনী ফোনটা রিসিভ না করে চুপ করে বসে আছে দেখে বিরক্ত হয়ে মেঘা বলে উঠলো, " সৌমিক কল করছে। কলটা রিসিভ কর। "


এবার ফাল্গুনীর নোনা জলের বাঁধ ভেঙে গেল। গতকাল রাতের মতন আবারও অঝোর ধারা বইতে লাগলো। ফাল্গুনীকে এভাবে কেঁদে ফেলতে দেখে মেঘা কেমন হতোভম্ব হয়ে গেল। তাড়াতাড়ি করে ওকে জিজ্ঞাসা করলো, " কি হয়েছে? তুই হটাৎ কাঁদছিস কেন? "


আধভাঙ্গা গলায় ফাল্গুনী বলে উঠলো, " তুই জানিস সৌমিক আমাকে কেন কল করছে? ওদের এপার্টমেন্টের তিনতলার ফ্ল্যাটটায় পৌলোমী নামে একটা নতুন মেয়ে এসেছে। সৌমিক ওকে খুব পছন্দ করে। গত আড়াইমাস ধরে ওরা একেঅপরকে ডেট করছে। যেটা সৌমিক আমাকে কয়েকদিন আগেই বলেছে। আর কাল আমি আমাদের একটা কমন ফ্রেন্ডের কাছ থেকে শুনলাম ও নাকি আজ মেয়েটাকে প্রপোজ করবে। আমি নিশ্চিত এটাই বলার জন্য সৌমিক আমাকে কাল থেকে বার বার ফোন করছে। " 


এটা শুনে মেঘা কি বলবে তা বুঝতে পারলো না। তাই মৌন থাকাই ঠিক মনে করলো। মেঘা আর ফাল্গুনীর এই কথোপকথনের মাঝে সৌমিক আরও বারপাঁচেক কল করে ফেলেছে। কিন্তু ফাল্গুনী না কল রিসিভ করলো আর না কল ব্যাক করলো সৌমিককে। 


এরপর সকাল গড়িয়ে সন্ধ্যে হয়ে গেল। চারিদিক আলোয় ভরে উঠলো। সকলেই নিজের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির কথা ভুলে পুরোনো বছরকে বিদায় আর নতুন বছরের চাওয়া-পাওয়া আর আশা-আকাঙ্খাগুলোকে একরাশ আনন্দসহ স্বাগত জানানোর শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। কিন্তু মুহূর্তেও ফাল্গুনী ঘর অন্ধকার করে এককোনায় বিষণ্ণতার সাগরে ডুবে বসে আছে। ঠিক এই সময় ফোনটা টুং করে দুবার বেজে উঠলো। ফোনটা হাতে নিতেই স্ক্রিনে সৌমিকের নামটা ভেসে উঠলো। স্ক্রিন লক ওপেন করে ম্যাসেজ বক্সে ঢুকতেই সৌমিকের পাঠানো ম্যাসেজ দুটো দেখে ফাল্গুনীর মুখটা কেমন কঠিন হয়ে গেল। তারপর তাড়াতাড়ি করে চোখের জল মুছে রেডি হয়ে মেঘাকে বগলদাবা করে নিয়ে পৌঁছে গেল ব্লু মুন রেস্টুরেন্টে। যেখানে আজ সৌমিক পৌলোমীকে প্রপোজ করবে।


সৌমিক এতক্ষন রেস্টুরেন্টের এন্ট্রান্সের সামনেই দাঁড়িয়েই অপেক্ষা করছিল ফাল্গুনীর জন্য। ফাল্গুনী আসতেই সৌমিক ওকে বলে উঠলো, " আমি তো ভাবলাম তুই আসবিনা। "


" তোর জীবনের এতো ইম্পরট্যান্ট দিন আর আমি আসবোনা। আফটার অল আমি তো বেস্ট ব্রেন্ড। " মেকি হাসি দিয়ে মনের বিষণ্ণতার মেঘ ঢেকে কথাগুলো বললো ফাল্গুনী।


" সেটাই তো। কিন্তু তুই কাল থেকে আমার ফোন রিভিভ করছিলিস না কেন? এতোবার কল করলাম তুই একটা রিং ব্যাকও করলি না। ব্যাপারটা কেমন যেন গোলমেলে লাগছে। "


" কিচ্ছু গোলমেলে না। আসলে মা-বাবার ঠিক করা আরও একটা পাত্রের সাথে দেখা করতে গেছিলাম। "


" ওহ তাই বল। তা এবারও তো গোল দিয়ে এসেছিস? "


" না, এমন কিছু নয়। আসলে এবারের ছেলেটাকে আমার খুব ভালো লেগেছে। তাই আমি ওকে হ্যাঁ বলে দিয়েছি। " অনুভূতিহীন ভাবে কথাগুলো বলে উঠলো ফাল্গুনী।


অপরদিকে ফাল্গুনীর এই কথাগুলো শুনে সৌমিকের মুখটা কেমন যেন অন্ধকার ছেয়ে গেল। যেটা ফাল্গুনীর খেয়াল না করলেও মেঘা ঠিক লক্ষ্য করলো। তবে মুখে কিছু বললো না। আসলে ফাল্গুনী আর সৌমিকের মধ্যেকার কথোপকথনটা শুনে মেঘা কেমন যেন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছে। মনে মনে ভাবছে যে ফাল্গুনী কিছুক্ষন আগে পর্যন্ত সৌমিকের জন্য কান্নাকাটি করছিল, সে হঠাৎ এসব কি বলছে! এই মেয়ের কি পার্সোনালিটি ডিসর্ডার আছে নাকি!


" সৌমিক তুই তো কোনো সম্পর্কে জড়াতে চাইতিস না, তবে হটাৎ কি হলো? " মেঘা কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞেস করলে সৌমিক একবার আড় চোখে ফাল্গুনীর দিকে তাকালো।


" বুঝতে বেশ সময় লাগলো। তবে পৌলোমীকে ডেট করতে গিয়ে অবশেষে বুঝলাম, আমি সত্যিই ওকে ভালোবাসি। অনেক বেশি ভালোবেসে ফেলেছি। আর সেও আমাকে খুব ভালোবাসে। আর শুধু ভালোবাস'লেই তো হবে না। সারাজীবন ভালোবাসা'টা আগলে রাখার দায়িত্ব'ও নিতে হবে। তাই শুভস্য শীঘ্রম। " 


সৌমিকের এই আবেগী কথাগুলো শুনে ফাল্গুনী নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারলো না।ভালোবাসা নাই বা পেল, বন্ধুত্ব'টা তো আছে। তাই বেস্টফ্রেন্ডের জীবনের এই প্রেসিয়াস টাইম'টাকে নিজের দুঃখের কথা ভেবেছিলাম খারাপ করতে চাইলো না। কথাগুলো মনে আসতেই বেস্ট ফ্রেন্ডের খুশিতে সামিল হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েই নিলো ফাল্গুনী।



এরপর তিনজন মিলে রেস্টুরেন্টের রুফটপে চলে এলো। যেখানে এখন জোরকদমে বর্ষবরণের পার্টি চলছে। চারিদিকে রঙিন আলো, লাউড মিউজিক, হই-হুল্লোড় সব চলছে। কিন্তু এই মুহূর্তে এই মহলটা কেমন যেন বিষাদ লাগছে ফাল্গুনীর। আসলে যা ভাবা হয়, তা তো হয় না সবসময়। আর নিজের প্ৰিয় মানুষটার সামনে মনের আবেগকে লুকানো'টাও বেশ চাপের। তাই একা একা এককোনে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে মেয়েটা।



কিছুক্ষন পর সৌমিক হাতে একটা মকটেলের গ্লাস নিয়ে হাজির হলো ফাল্গুনীর সামনে। ফাল্গুনী ওকে দেখেও কেমন যেন না দেখার একটা ভান করলো। তা দেখে সৌমিক একটু মজা করে বলে উঠলো, " কিরে এখন থেকেই নিজের উড বিকে মিস করছিস এতো? এরপর কি করবি? "


ফাল্গুনী সৌমিকের কথাগুলোকে উপেক্ষা করে দিয়ে কি মনে করে বলে উঠলো, " পৌলোমী অপেক্ষা করছে তোর জন্য। যা ওর কাছে যা। "


ফাল্গুনীর কথায় স্পষ্ট রাগের আভাস ফুটে উঠলো। যেটা সৌমিক ভালোই বুঝতে পারলো। তাই তো ফাল্গুনীকে আরও একটু রাগিয়ে কন্ফার্ম হওয়ার জন্য পৌলোমীর নামে কয়েক ডজন প্রশংসা বাণী শুনিয়ে দিলো। কিছুক্ষনের মধ্যে সৌমিকের ধারণাটা স্পষ্ট মিলে গেল।


এতক্ষন ধরে ফাল্গুনী সৌমিকের মুখে পৌলোমীর প্রশংসা শুনে আর নিজের ভিতরে জ্বলতে থাকা আগ্নেয়গিরিটাকে নিষ্ক্রিয় রাখতে পারলো না। তাই বেশ ঝাঁঝিয়েই সৌমিকে একঝাড় কথা শুনিয়ে পার্টি থেকে চলে যেতেই যাচ্ছিলো। কিন্তু সৌমিক ওকে আটকে দিয়ে বলে ওঠে, " আরে কোথায় যাচ্ছিসটা কোথায়? আমার লাইফের এতো ইম্পরট্যান্ট একটা দিন আর তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড হয়ে আমাকে মরাল সাপোর্ট দেওয়ার জন্য থাকবিনা? না না তুই কোথাও যাবি না। " কথাগুলো বলেই সৌমিক ফাল্গুনীর হাত ধরে ভিড়ের মধ্যে থেকে বেরিয়ে একটা ফাঁকা দিকে চলে এলো। " তুই একমিনিট দাঁড়া। আমি আসছি। " এইটুকু বলে সৌমিক আবার ভিড়ের মধ্যে মিশে গেল। 


" যে আবেগের বসে এখানে এলাম কে জানে! এখন সৌমিক পৌলোমীকে প্রপোজ করবে আর আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাসি মুখে ওদের ফটো তুলবো। " কথাগুলো মনে হতেই ফাল্গুনীর চোখ দুটো সিক্ত হয়ে উঠলো।


পলকের মধ্যে ফাল্গুনীর এই ধারণাটা সম্পূর্ণ মিথ্যে হয়ে গেলো। সৌমিক একটা প্লেটে চোকোফাজ পেস্ট্রি হাতে নিয়ে ফাল্গুনীর সামনে হাঁটু ভাঁজ করে বসে বলে উঠলো, " জানি আমাকে এই ভাবে দেখে তুই একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছিস হয়তো কিন্তু আমি আপকামিং বছরের প্রথম মুহূর্ত থেকে আমার জীবনের শেষ মুহূর্ত অবধি তোর সাথে কাটাতে চাই। দিবি আমাকে সারাজীবন তোর হাতটা ধরতে? "


সৌমিকের বলা কথাগুলো শুনে ফাল্গুনী সত্যিই রীতিমতো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়েছে। মনে হচ্ছে, " এসব কি বলছে সৌমিক! ওর তো পৌলোমীকে এসব বলার কথা ছিল আজ কিন্তু আমাকে কেন বলছে? তার মানে কি সৌমিক...."


শেষের কথাটা মনে হতেই ফাল্গুনী কেমন যেন মূর্তির মতন জমে গেল। 


এদিকে ফাল্গুনী কিছু না বলে চুপচাপ একভাবে ওর দিকে তাকিয়ে আছে দেখে সৌমিক বলে উঠলো, " 

দেখ এই মুহূর্তে আমার কাছে কোনো গোলাপ বা রিং নেই। তাই পেস্ট্রি দিয়েই কাজ চালিয়ে নে প্লিজ। আর কাল তোকে একটা গোটা গোলাপ চারা গিফ্ট দেবো। "


তাও ফাল্গুনী চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে দেখে সৌমিক উঠে দাঁড়িয়ে কি করবে কিছু বুঝতে না পেরে ফাল্গুনীর মুখের সামনে কাঁটা চামচ'টায় পেস্ট্রি'টার সামান্য একটু অংশ লাগিয়ে নাকের কাছে ভাসাতে থাকলো। এর মাঝে ফাল্গুনী অতিরিক্ত উৎসাহের বসে একটু আটকে গিয়ে বলে ওঠে, " তু...তুই কি বললি? তুই কি আ...আমাকে ম্যারেজ প্রপোজাল দিলি? "


" না তো, মিস চকোফাজ পেস্ট্রিকে দিলাম। অফ কোর্স তোকেই দিলাম। "


" কিন্তু তুই তো পৌলোমীকে.... " সৌমিক কথাটা পুরো করতে দিলো না ফাল্গুনীকে । তার আগেই বলে উঠলো, " দেখ ওকে আমি শুধু ডেট করেছি। বাট তুই... তুই আমার একটা বদ অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছিস। যে বদ অভ্যাসটা আমি নিজের কাছে সারা জীবন আগলে রাখতে চাই। "


সৌমিকের আবেগমাখা কথাগুলো শুনেই জমে থাকা বিষাদের মেঘগুলো সরে গিয়ে রোদ খেলে উঠলো ফাল্গুনীর মনে। তাই আর দেরি না করে বলে উঠলো, " তুই আমাকে এভাবেই আমাদের প্রত্যেক এনিভার্সারিতে পেস্ট্রি গিফ্ট করবি তবেই আমি.... "


কথাগুলো শেষ হওয়ার আগেই সৌমিক ফাল্গুনীকে জড়িয়ে ধরে বলল, " আমি নিজে হাতে বানাবো। " 


এভাবেই চারিদিকে আতশবাজির আওয়াজ আর ঝলমলে আলোয় বর্ষবরণের মাঝেই একটা নতুন গল্পের শুরু হলো। ফাল্গুনী আর সৌমিকের গল্প।




Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance