🍁𝙰𝚗𝚗𝚒𝚎🍀 🍂

Abstract Tragedy

4.7  

🍁𝙰𝚗𝚗𝚒𝚎🍀 🍂

Abstract Tragedy

অতীত এবং বর্তমান

অতীত এবং বর্তমান

4 mins
582



মলয় আর পৃথার তেরো বছরের সম্পর্ক। দুজনেই যেহেতু একে অপরকে খুব ভালোবাসে এবং দুজনেই নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। তাই দুজনের বাড়ি থেকেই কেউ আর ওদের সম্পর্কটাতে আপত্তি করলো না। দুই বাড়ির সকলেই যত শীঘ্র সম্ভব দুজনের চার হাত এক করে দিতে চায়। সেই মতো দুই বাড়িতেই জোর কদমে বিয়ের তোড়জোড় শুরু করে দেয়। কিন্তু মাঝ পথে বাধ সাধলো মলয়।


মলয় ওর এবং পৃথার সম্পর্কটা নিয়ে যতটা নিশ্চিত, ঠিক ততটাই অনিশ্চিত ওদের বিয়ে নিয়ে। তাই বিয়ের দেড় সপ্তাহ আগে মলয় পৃথাকে কল করে বলে যে ও এই মুহূর্তে পৃথাকে বিয়ে করতে চায় না। পৃথা কারণ জিজ্ঞাসা করলে মলয় বলে " আমার নিজেকে মানসিক ভাবে প্রস্তুত করানোর জন্য আরও কিছু সময় লাগবে। আমি হটাৎ করে এতো দায়িত্ব নিতে পারবো না। আমরা আরও কটা বছর পরে বিয়ে করবো। "


পৃথা মলয়কে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করে কিন্তু কোনো লাভ হয় না। মলয় নিজের সিদ্ধান্তে অটল। তাই পৃথা মলয়কে আর জোর না করে বাড়ির সকলের সাথে কথা বলে বিয়েটা ক্যানসেল করে দেয়।


বিয়ে ক্যানসেল হওয়ার পরেও পৃথা মলয়ের সাথে যথেষ্ট সহজ ভাবে মিসছিলো। কিন্তু যত সময় যেতে থাকে ততো ওদের সম্পর্কের বাঁধন আলগা হতে থাকে। একটা সময়ের পর মলয় পৃথার সাথে সবরকম ভাবে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। 


অফিসের একটা মিটিং এর জন্য আজ প্রায় সাত বছর পর মলয় এবং পৃথার সাক্ষাৎ হয়। এক মুহূর্তে জন্য দুজনেরই মনে পুরানো সব আবেগগুলো ভেসে বেড়ায়। কিন্তু পৃথা সঙ্গে সঙ্গে নিজের ভাবনা চিন্তা গুলোকে বাদ দিয়ে প্রফেশনাল ভাবে পুরো ব্যাপারটা হ্যান্ডেল করে। মিটিং শেষে পৃথা মলয় এর সাথে আলাদা করে কোনো কথা বলার চেষ্টা না করেই ওখান থেকে চলে যায়। 


পৃথার এরূপ আচরণ দেখে মলয় মনে মনে ভাবতে থাকে যে এ কি সেই পৃথা? যে ওর সব না বলা কথাগুলো বুঝতে পেরে যেত? তাহলে আজ কেন পৃথা ওর মনের কথা বুঝতে পারলো না? কেন বুঝতে পারলো না যে আজ ও পৃথার সাথে একবার কথা বলতে চাইছিলো। কিভাবে কেউ এতোটা বদলে যেতে পারে? রাস্তায় ভিড়ের মাঝে চলতে চলতে এসব ভাবতে ভাবতে মলয় ভুলবশত কারোর সাথে ধাক্কা খেলে তাকে সরি বলার জন্য তাঁর দিকে তাকাতেই দেখে সে আর কেউ না বরং পৃথা। 


মলয় পৃথার সাথে কথা বলার জন্য বিনীতভাবে পৃথাকে আবেদন করলে পৃথা মলয়ের আবেদন অগ্রাহ্য করতে পারে না। 


দুজনে একসাথে সেই পার্কের সামনে এসে থেমে যায় যেখানে একটা সময়ে ওরা প্রায় আসতো। দুজনে পার্কের একটা বেঞ্চের দুই প্রান্তে নীরব হয়ে বসে থাকে। নীরবতা ভঙ্গ করে মলয় বলে ওঠে "অনেক বদলে গেছো। আগে... "


মলয়কে থামিয়ে দিয়ে পৃথা বলে " হ্যাঁ। আগের থেকে অনেক বদলিয়েছিনে নিজেকে। ভালো লাগেনি বুঝি এই বদলটা? "


মলয় : না মানে আগের থেকে অনেক কনফিডেন্ট লাগছো। দেখে বেশ ভালো লাগলো।


পৃথা : এই আত্মবিশ্বাসটার জন্য এখন আর কেউ আমাকে সহজে ঠকাতে পারেনা। আর যদিওবা....


পৃথাকে পুরো করতে না দিয়ে মলয় বলে " ঠকানো!!! আমি তোমায় ঠকাইনি পৃথা। "


পৃথা ম্লান হেসে বলে " আমি কখন বললাম যে তুমি আমায় ঠকিয়েছো? "


মলয় : পৃথা... জানি আমি ভুল করেছি। আমার ওভাবে বিয়েটা ক্যানসেল করা উচিত হয়নি।


পৃথা : আজ হটাৎ এমন মনে হওয়ার কারণ? 


মলয় : আজ নয়। বিগত সাত বছর ধরে এই একটা কথাই বারবার মনে হয়েছে। আমি... আমি ভয় পেয়ে গেছিলাম। হটাৎ করে এতো দায়িত্ব, এতগুলো সম্পর্ক এগুলোর জন্য আমি মন থেকে তৈরী ছিলাম না।


পৃথা : তাই জন্যই তুমি ধীরে ধীরে আমাদের সম্পর্কটাকেও ভেঙে দিলে।


মলয় : আমি জেনে বুঝে করিনি। বিশ্বাস করো পৃথা। এমন অনেক কিছু যেগুলো ভেবে আমি সত্যিই খুব ভয় পেয়ে গেছিলাম। জানো পৃথা দাদা-বৌদির বিয়ের পর একেঅপরের প্রতি ওদের বদলে যাওয়া আচরণ দেখে, একেঅপরের জন্য পরিবর্তিত মনোভাব দেখে, রোজ রোজ ওদের মধ্যে হওয়া অশান্তিগুলোকে দেখে আমার মধ্যে আমাদের সম্পর্কটা নিয়ে অজানা সংশয় সৃষ্টি হয়। তাই আমার মনে প্রশ্ন জাগে বিয়ের আগে আমাদের সম্পর্কটা যেমন আছে তেমনই কি বিয়ের পরেও থাকবে? এখন যেমন তুমি আমাকে বুঝতে পারো তখনও কি তুমি আমাকে এভাবেই বুঝতে পারবে? আমি কি তোমাকে বুঝতে পারবো? সংসারের সব দায়-দায়িত্বগুলোকে গ্রহণ করার পরও কি আমরা আমাদের স্বপ্নগুলোকে বাস্তবায়িত করতে পারবো তো? নিজেদের লক্ষ্য ছুঁতে পারবো তো? যদি না পারি তখন কি হবে? তখন তো পেছনে ফেরার কোনো সুযোগ থাকবে না আমাদের কাছে। 


পৃথা তাচ্ছিল্য করে হেসে বলে, " আমাদের নাকি শুধু তোমার? তুমি কি কোনোদিনও আমার কথা ভেবে দেখেছিলে? আসলে কি জানো তো তুমি কোনোদিনও আমাকে নিজের মনে করোনি। তাই জন্যই যখন তোমার মনে আমাদের সম্পর্কটা নিয়ে সংশয় এবং ভীতির সঞ্চার হয়েছিল তখন তুমি সেটা আমাকে বলার প্রয়োজনই মনে করোনি। আর তাই জন্যই বোধহয় একটা সময় পর তুমি আমার থেকে দূরে সরে গেলে। "


পৃথার দিকে তাকিয়ে মলয় বলে " আমি জানি আমি অন্যায় করেছি। কিন্তু বিশ্বাস করো গত সাত বছর ধরে আমি একটা মুহূর্তও শান্তিতে থাকতে পারিনি। আর না এগোতে পেরেছি না পিছোতে পেরেছি। " 


নিজের ঋস্ট ওয়াচে একবার চোখ বুলিয়ে পৃথা বলে " এই সব অপ্রাসঙ্গিক চর্চাগুলো এখন বাদ দাও বরং। অনেক দেরি হয়ে গেছে। বাড়ি যাও। আর বেশি দেরি হলে আমার মেয়েটা আবার কান্নাকাটি জুড়ে দেবে। "


পৃথার কথা শুনে মলয় মাথায় যেন আকাশ থেকে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে মলয় বিস্মিত কণ্ঠে পৃথাকে বলে " মেয়ে!!! তো... তোমার মেয়ে মানে.... "


মলয়ের কথা পুরো হওয়ার আগেই পৃথা দৃঢ় কণ্ঠে বলে ওঠে " হ্যাঁ... আমার চার বছরের মেয়ে রিনি। কি ভেবেছিলে? আমি এখনও তোমার পথ চেয়ে বসে আছি। না!!! আমি এগিয়ে গেছি। জীবনের অমসৃন এবং উঁচু-নিচু পথে চলার জন্য একজন ভরসা যোগ্য মানুষ আমার হাতটা ধরে আজীবন আমার পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে। তাই আমিও পিছনে না ফিরে তাঁর হাতটা শক্ত করে ধরে রেখেছি। " 


মলয় পৃথার দিকে আহত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দেখে পৃথা বলে " তোমার সাথে এতো বছর পর হটাৎ সাক্ষাৎ হয়ে বেশ ভালো লাগলো। ভালো থেকো মলয়। " বলে ওখান থেকে যেতে লাগলো। মলয় ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে সেদিকে চেয়ে থাকে।


©Copyright Reserved




Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract