স্বাদ বদলের গল্প
স্বাদ বদলের গল্প
"ও মা, বড্ড খিদে পেয়েছে। কিছু খেতে দাও না গো!" ডাইনিং টেবিলে ভাতের থালা দেখতে না পেয়ে শাশুড়িকে উদ্দেশ্য করে আবদার করল সায়নীকা।
"দুপুরে এক ঘণ্টার ব্রেকে নাক না ডেকে এসে খাবারটা খেলে এই অসময়ে খিদেটা পেত না। কিন্তু কে কার কথা শোনে!"
শাশুড়ি চন্দ্রিমাদেবীর কথায় সায়নীকা অসহায় মুখে বলল, "মা, আমাকে বকবে পরে, আগে কিছু দাও না খেতে। খিদের চোটে পেটে গুড়গুড় শব্দ হচ্ছে।"
বৌমার করুণ অবস্থা দেখে চন্দ্রিমা দেবী টিভির রিমোটটা পাশে রেখে উঠে গেলেন। রান্নাঘর থেকে সুজির উপমা আর কিছু পাকা পেঁপের টুকরো এনে তিনি ডাইনিং টেবিলে রাখলেন।
সকালের জলখাবারের পর বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত কিছু খায়নি সায়নীকা, তাই খাবার দেখে সে দ্রুত খেতে গিয়ে জোরে বিষম খেল। চন্দ্রিমা দেবীর কাছে এটা এখন পরিচিত দৃশ্য। তিনি জলের গ্লাসটা এগিয়ে দিয়ে বললেন, "কালকে সকালে একটু ফেনা ভাত করিস তো আমার জন্য। আবার একটা দাঁত আমার যাবে যাবে করছে।"
সায়নীকা ঢকঢক করে জল খেয়ে এক চামচ উপমা মুখে দিয়ে বলল, "মা, কালকে রবিবার।"
কথাটা শুনেই চন্দ্রিমাদেবীর মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেল। কালকে রবিবার! তার মানে ছেলে সপ্তকের রান্না করার দিন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ছেলের অদ্ভুত সব রান্নার স্বাদ নিতে হবে! শাশুড়ি মায়ের মুখের অবস্থা দেখে সায়নীকা বুঝতে পারল, তিনি রবিবারের কথা একদম ভুলে গিয়েছিলেন। প্লেট থেকে একটা পেঁপের টুকরো শাশুড়ি মায়ের মুখে দিয়ে সে বলল, "আর একটু পরে আমি কাজ শেষ করে দিচ্ছি। সন্ধ্যায় বাজার করতে যাওয়ার সময় আমার সাথে ডেন্টিস্ট দেখিয়ে নেবে আগে। বুঝলে!"
চন্দ্রিমা দেবী কোনো উত্তর দিলেন না, কেবল মনে মনে তার দুশ্চিন্তা প্রকাশ করলেন, "এত তাড়াতাড়ি রবিবারটা আবার চলে এল!"
সায়নীকা নীরবে হাসতে হাসতে খাবারটা শেষ করে আবার নিজের কাজে মন দিল। কিছুক্ষণ পর তৈরি হয়ে হ্যান্ডব্যাগ আর বাজারের থলে নিয়ে সে সদর দরজার কাছে আসতেই দেখল, চন্দ্রিমা দেবী তার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছেন।
"কত দেরি করিস! তাড়াতাড়ি চল। ডাক্তার দেখিয়ে এসে লিস্ট মিলিয়ে বাজার করতে গিয়ে দেখব অর্ধেক বাজার উঠে গেছে।" এই কথা বলেই শাশুড়ি সামনের দিকে হাঁটা লাগালেন।
সায়নীকা চন্দ্রিমাদেবীকে দেখে মৃদু হাসল। তার মনে হলো, রান্না করা শুধু প্রয়োজন বা শখ নয়। রান্নার প্রস্তুতি থেকে পরিবেশন পর্যন্ত প্রতিটি ধাপই ভালোবাসার এক সুন্দর প্রকাশ।
