The Stamp Paper Scam, Real Story by Jayant Tinaikar, on Telgi's takedown & unveiling the scam of ₹30,000 Cr. READ NOW
The Stamp Paper Scam, Real Story by Jayant Tinaikar, on Telgi's takedown & unveiling the scam of ₹30,000 Cr. READ NOW

নন্দা মুখার্জী

Fantasy

1  

নন্দা মুখার্জী

Fantasy

মৃতের আত্মকথা

মৃতের আত্মকথা

6 mins
907


(সম্পূর্ণ কল্পনাপ্রসূত একটি গল্প )


     আগে আমাকে সবাই সাতাশ নম্বর বেডের পেশেন্ট বলছিলো ।যে মুহুর্তে আমার মৃত্যু হলো আমি হয়ে গেলাম 'ডেডবডি'। অনেকে আবার সংক্ষিপ্ত করে বডিই বলছিলো ।আগেরদিন সন্ধ্যায় আমার স্ত্রী আমার সাথে দেখা করে গেছে ।তখন আমার খুব তেষ্টা পেয়েছিলো ।ওর কাছে ইশারায় জল খেতে চাইলাম ।যেহেতু আমি ভেন্টিলেশন পেশেন্ট ছিলাম তাই ওরা আমাকে জল দিতে চাইছিলোনা ।আমার স্ত্রী অনেক কাকুতিমিনতি করে তুলো ভিজিয়ে এনে আমার মুখে দু'ফোঁটা জল দিলো । আমি গিলে নিলাম জলটুকুন । সে যেমন ভাবেনি ,আমিও ঠিক তেমনই ভাবিনি এটাই আমাদের শেষ দেখা । সেই মুহুর্তে ছেলেমেয়ে দুটিকে দেখতে খুব ইচ্ছা করছিলো । ইশারায় স্ত্রীকে বললামও ওদের একটু দেখবো ,ওদের পাঠিয়ে দাও । ও বললো হাসপাতলের নিয়মানুসারে একজনই ঢুকতে পারবে , ওরা বাইরে আছে ;আগামীকাল এসে দেখা করবে । এদিকে ভিজিটিং আওয়ার শেষ । স্ত্রী চলে গেলো পরেরদিন আসবে বলে । কত কথা বলতে ইচ্ছা করছিলো কিণ্তু কিছুই বলতে পারছিলাম না । ভেন্টিলেশনে থাকার ফলে মুখে ঢুকানো ছিলো অজস্র নল ; কথা কিছুতেই বলতে পারিনি বিগত ষোলোদিন ধরে । ইশারায় যেটুকু বুঝাতে পেরেছি সকলকে । একবেলা স্ত্রী না আসলে মনেহত কতদিন তাকে দেখিনি । একদিন সে বিশেষ কোন কাজের জন্য সকালে আসতে পারেনি । আমি তো জামাইকেই জিগ্গেস করে বসলাম ইশারায় ,"তোমার মা কোথায় ?"আসলে আমার স্ত্রী এমন একজন মহিলা যে ঘরে বাইরে সমান পারদর্শী । তার উপর আমি সারাজীবন সংসারের যাবতীয় দায়িত্ব দিয়ে নিশ্চিন্তে থেকেছি ।


      যাহোক আবার আমার কথায় ফিরে আসি ।রাত তখন অনেক । কটা বাজে ঠিক বলতে পারবোনা ।আমার শরীর আস্তে আস্তে খারাপ হতে লাগলো । চোখের সম্মুখে নিজের পরিবারের সকলের মুখ এক এক করে ভেসে উঠতে লাগলো । ঠিক সেই মুহূর্তেই স্ত্রী ,ছেলে ,মেয়ে , জামাই প্রত্যেককে খুব দেখতে ইচ্ছা করছিলো । বুঝতে পারছিলাম আমার শেষ সময় এসে গেছে ! গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে । একটু জল পেলে ভালো হত ! কিণ্তু কে দেবে আমায় জল ? এখানে তো আমার নিজের কেউ নেই । সেই সন্ধায় স্ত্রী তিন ফোঁটা জল খাইয়ে গেছে । সারারাত প্রায় সারারাতই কষ্টে ছটফট করেছি । ভোরের দিকে সিস্টর্স ,নার্সদের নজরে আসি । তখনই তারা তৎপর হয় । কিণ্তু ততক্ষনে আমার কার্ডিও এট্যাক করে ফেলেছে । একের পর এক ইঞ্জেকশন তারা পুস করে চলেছে কিণ্তু আমার শরীর আর নিতে কিছুই পারছে না ;সব ওষুধই মুখ দিয়ে বের হয়ে যাচেছ ! পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে আমি চলে গেলাম ।


     প্রায় চার ঘন্টা পরে আমার বাড়ির লোককে খবর দিলো ,"আমি মারা গেছি ।"আমার সেজভাই আমায় দেখে ডুকরে কেঁদে উঠলো । সিস্টার তাকে বাইরে অপেক্ষা করতে বললেন আরও বললেন বাড়ির পুরুষ ছেলেদের খবর দিতে । আমার বডি পরে রইলো সাতাশ নম্বর বেডে । আমি আমার ভাই বেড়োনোর আগেই বেড়িয়ে আসলাম সি.সি.ইউ. থেকে । ভাই এসে একটি বেঞ্চের উপর বসে কাঁদতে লাগলো । আমার আত্মা পাশের এক ভদ্রলোকের ভিতর ঢুকে গেলো । ওই ভদ্রলোক হয়েই আমি নিজেই ভাইকে শান্তনা দিতে লাগলাম । অনেক বুঝালাম তাকে ।


  ইতিমধ্যে আমার বাড়ির প্রচুর লোকজন সেখানে হাজির হয়ে গেলো । আত্মীয়স্বজন , বন্ধুবান্ধব, অন্য ভায়েরা ,আমার স্ত্রীর দিদিরা ,ভাই বৌয়েরা ,স্ত্রীর অনেক বন্ধুবান্ধব -যাদে প্রত্যেককে আমি চিনি ।কিণ্তু আমার চোখদুটি খুঁজছিলো আমার ছেলেকে ।কিছুক্ষনের মধ্যে সেও হন্তদন্ত হয়ে হাজির হয়ে গেলো । আমার মেজভাই তাকে আমার মৃত্যুর খবর জানালো । আমি নেই শুনেই সে হাউ হাউ করে কাঁদতে শুরু করে । আমার মেজভাই তাকে দুই হাতে জড়িয়ে ধরে নিজেও অঝোরে কেঁদে চলেছে । ভাই আমার ছেলেকে কোন রকমে একটা জায়গায় বসায় ।আমিও জায়গা পেয়ে ছেলের পাশে বসি । ইচ্ছা করছিলো ছেলেটাকে বলি , "বাবা তুই এভাবে কান্নাকাটি করলে আমি যে খুব কষ্ট পাচ্ছি । তুই তো এখন অনেক ছোট ;ভালো করে লেখাপড়া শিখে মানুষ হ । তুই মানুষ হলেই আমার আত্মা শান্তি পাবে । তোর মা যে একা হয়ে গেলো । মায়ের দিকে খেয়াল রাখিস । তোর মা যে নিজের ওষুধটাও কিনে আনতে ভুলে যায় ;এটা এখন থেকে তোর দায়িত্ব । দিদি , জামাইবাবুর কাছে সারাজীবনই আদরের ভাই হয়েই থাকিস । ওরা মনে কষ্ট পায় এমন কোন কাজ কখনই করবিনা । আরও অনেক কথায় ওর পাশে বসেই বললাম ;কিণ্তু আমি জানি ও কিছুই শুনতে পায়নি । কি করে শুনবে ও আমি যে আর বেঁচে নেই !"


      জামাই ,ভায়েরা ,স্ত্রীর বন্ধুরা সবাই ছুটোছুটি করছে আমার বডি বের করার সরকারী নিয়মকানুন পূরণ করতে । আমি জানি আমার জামাই আমায় খুব ভালবাসে ,শ্রদ্ধা করে । বেচারা নিজের কষ্ট লাঘব করার জন্য একটু কান্নারও সময় পেলোনা । ওর জন্য আমার বুকের ভিতরটা ফেঁটে যাচ্ছে । কিণ্তু কি করবো ? আমি যে অসহায় !


  আমাকে নিয়ে ওরা রাত এগারোটা নাগাদ আমার বাড়িতে আসলো । আত্মীয়স্বজন , পাড়াপ্রতিবেশীতে বাড়ি ,রাস্তা ভর্তি । আমার স্ত্রীকে ঘিরে মহিলাদের সমাবেশ । সকলেই তার কাছের লোক ! স্বপ্নে পাওয়া দেবতার অবস্থান আমার বাড়িতে । আমি উপরে উঠতে পারছিনা । নীচ থেকেই শুনতে পাচ্ছি আমার স্ত্রী আর মেয়েরা কান্নার আওয়াজ । আমি অসহায় !! কি করবো আমি ? মেয়েকে দেখতে পাচ্ছি ওর মাসির সাথে নীচে নেমে এসে আমার বুকের পরে পড়ে ডুকরে ডুকরে কাঁদতে । কিছুই করার ক্ষমতা নেই আমার ! কিণ্তু তাকে শান্তনা দেওয়ার জন্য আমি অনেক কথাই বলে যাচ্ছি , তার সন্তান হয়ে আসবো কথা দিচ্ছি কিণ্তু নিষ্ঠুর পরিহাস !! তার কানে কোন কিছুই যাচ্ছেনা আমি জানি ।


  হঠাৎ করে মনে হচ্ছে আমার সতের বছরের ছেলেটা কয়েক ঘন্টায় বেশ বড় হয়ে গেছে । দৌড়ে যেয়ে ওর মায়ের কাছ থেকে জামা লুঙ্গি নিয়ে এলো । ওর মা আমার সব থেকে প্রিয় লুঙ্গি ও ফতুয়াটা বের করে কাঁদতে কাঁদতে ছেলের হাতে দিলো । ওই টুকুন ছেলে আমার কি সুন্দরভাবে আমায় লুঙ্গিটা পড়িয়ে দিলো । নানান কাজে হাসপাতাল থাকতেই এদিকে ওদিকে ছুটাছুটি করছে দেখেছি ।


     ফতুয়াটা পড়াতে সকলে আমাকে নিয়ে টানাহেঁচড়া করতে লাগলো । মেয়ে চিৎকার করে বলে উঠলো , "বাবার লাগছে তো ! তোমরা এইভাবে কেনো জামা পড়াচ্ছ ?" আমারও চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা করছিলো , নারে মা আমার লাগছে না ; আমি এখন সব কষ্ট সব ব্যথার উর্ধে । পারলাম না বলতে ! মেয়ে সযত্নে আমায় জামা পড়িয়ে কপালে চন্দনের টিপ একে দিলো । ছেলে তুলসীপাতা এনে আমার চোখের উপর রাখলো ।


     সকলের শেষে দু'তিনজন ধরে আমার স্ত্রীকে নীচুতে নিয়ে এলো । সে কিছুতেই আমার ওই মৃত মুখ দেখবেনা । আমার পাদুটি ধরে বিড়বিড় করে কি সব বলে যাচ্ছিল । আগেরদিন সে আমার সাথে ইশারায় কথা বলে এসছে ;তাই সে আমার ওই জীবন্ত মুখটাই মনে রাখতে চায় । আমার এই মৃত মুখটা দেখলে তার আরও কষ্ট হবে । আমিও চাইছিলাম না সে আমার ওই মরা মুখটা দেখুক । আমি তো তাকে জানি সে কষ্টে কষ্টে পাগল হয়ে যাবে । এমনিতেই সে অসুস্থ্য । ওষুধগুলো খেতেও তার মনে থাকেনা । আমাকেই মনে করে দিতে হত । দুজনের মধ্যে একটা অদ্ভুত বন্ডিং ছিলো ;ছিড়ে গেলো ,চিরদিনের মত ছিড়ে গেলো ! কারও দোষে নয় ,বিধাতার লিখনে । সুন্দর সাজানো গুছানো সংসারটা আমার তচনচ হয়ে গেলো !আমি তো শুধু টাকা রোজগার করে বৌ এর হাতে তুলে দিয়েছি । কি অদ্ভুত বুদ্ধিমত্তায় সে এই সংসারটিকে সোনার সংসার করে গড়ে তুলেছিল । আমার তো চলে যাওয়ার ইচ্ছা ছিলোনা , তবুও যেতে হলো ! আয়ু শেষ ! কত আশা অপূর্ণ থেকে গেলো ! ভীষন কষ্ট হচ্ছে ! আর কোনদিন এদের কারও সাথে আমার দেখা হবেনা ! একটু পরেই এরা আমাকে নিয়ে চলে যাবে ।এই বাড়ি ,আমার ছেলে ,মেয়ে ,জামাই ,আমার স্ত্রী সব্বাইকে ছেড়ে চিরবিদায় !


   আমি চললাম কাঁচ ঢাকা গাড়িতে আমার পরিচিত পথ ,ঘাট ,লোকজন ,প্রিয়জন সবাইকে ছেড়ে এ জীবনের মত !কিণ্তু আমি আবার আসবো -আসবো ঠিক এই পরিবারেই । কারন এই পরিবারের লোকেরা যে ভালবাসা দিতে জানে পরজম্মে অন্য কোথাও গেলে এই ভালবাসা থেকে আমি বঞ্চিত হবো ;এদের মত কেউ ভালবাসতে জানেনা ! আর এদের ছেড়েও আমি থাকতে পারবনা । তাই আজকের মত আমি চলে গেলেও আবার আসবো এদেরই কাছে । তোমরা কেউ আমার জন্য কেঁদোনা । যে শিশু জম্ম নেবে এই পরিবারে তোমরা জেনে রাখ- সে আমি, আমি আবার আসবো , আসবোই আমি , আসতে আমাকে হবেই তোমাদের কাছে ! অপেক্ষা কর,ধর্য্য ধর -আমি পুনরায় আসছি !!


Rate this content
Log in

More bengali story from নন্দা মুখার্জী

Similar bengali story from Fantasy