নন্দা মুখার্জী

Abstract Others

3  

নন্দা মুখার্জী

Abstract Others

কালো অতীত

কালো অতীত

3 mins
318


 

 আমার জীবনে ফেলে আসা এক কালো অতীত আছে | যা আজ চল্লিশ বছর ধরে নীরবে একাকীই বয়ে চলেছি | যতদিন বাবা,মা বেঁচে ছিলেন -- তারা ছিলেন আমার অতীতের স্বাক্ষী | কিন্তু আজ আর কেউ নেই,যে সেই অতীতের কথা জানে|

  পনের বছর বয়স তখন | বাড়িতে কেউ না থাকার কারণে আমাদের বাগানের মালির ছেলে সুযোগ বুঝে কোন ফাঁকে উপরে আমার ঘরে ঢুকে আমার মুখ,হাত বেঁধে আমার উপরে যৌন নির্যাতন শুরু করে | তার ইচ্ছা ছিল তার এই খেলা সাঙ্গ করে সে আমায় মেরে ফেলবে | কিন্তু হঠাৎ বাবা , মায়ের আসার গাড়ির আওয়াজ পেয়ে ছুরিটা ঘরের মধ্যে ফেলেই সে ছুঁটে পালিয়ে যায় | 


 আমার প্রতি নরেশের একটা প্রবল রাগ ছিল | নরেশ তার বাবার সাথে বাগানে মাঝেমধ্যেই কাজ করতে আসতো | একবার বাবা ভুল করে গাড়ির মধ্যেই তার মানিব্যাগটা ফেলে গেছিলেন | নরেশকে আমি দেখে ফেলেছিলাম টাকা নিতে এবং বাবাকে সেকথা জানাতে বাবা নরেশের বাবাকে কথাটা জানিয়েছিলেন | মালিকাকু সেদিন নরেশকে খুব মেরেছিলেন | তারপর থেকে তার আমাদের বাড়িতে আসা বন্ধ | সেও সুযোগ খুঁজতে থাকে | বাড়ি ফাঁকা পেয়ে সটান আমার ঘরে উপরে চলে আসে |


 পরের মাসেই মা ধরে ফেলেন আমি কনসিভ করেছি | বাবা তার প্রভাব খাঁটিয়ে চুরির অপবাদ দিয়ে তাকে জেলে দেন | আমাকে বাবা,মা বড় নার্সিংহোমে নিয়ে যান |

 পড়াশুনায় খুব একটা কোনদিনও ভালো ছিলামনা | গ্রাজুয়েশনের পরেই সবকিছু লুকিয়ে আমার বিয়ে দেওয়া হয় | ছেলে রেলের উচচপদস্থ কর্মচারী | সুখী বৈবাহিক জীবন | কিন্তু এক অজানা আশংখায় বুকটা মাঝেমধ্যেই কেঁপে ওঠে | বিয়ের পাঁচ বছরের মাথায়ও যখন আমার কোন সন্তান হলনা তখন ডক্টরের শরণাপন্ন হলাম | পরীক্ষানিরীক্ষার পর নামকরা ডাক্তার জানিয়ে দিলেন নাড়ির একটি মুখ জন্মগত চাপা | সন্তান আসতে পারে কিন্তু আমার জীবনের আশংকা আছে | তখন আমার চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা করছিলো," না, এটা আমার জন্মগত দোষ নয়; ডাক্তারের ভুলের জন্য এরূপ হয়েছে | আগে একবার একজনে ভুল করেছে এবার আপনিও ভুল বলছেন |"কিন্তু ওই কালো অতীতকে তো আমি সামনে আনতে পারবোনা | তাই জীবনের দ্বিতীয় পরাজয়ও মেনে নিলাম | 


 বিয়ের দশবছর পর একটি কন্যাসন্তান দত্তক নিলাম | নিজেরা তাকে কোনদিনও নিজেদের সন্তান ছাড়া কিছু ভাবিনি | উপযুক্ত শিক্ষা দিয়ে ভালো ছেলে দেখে বিয়ে দিলাম | বিয়ের ছমাসের মাথায় জামাইয়ের প্রমোশন হয়ে বিদেশ পারি দিলো আমার মেয়ে সমেত | আর তারা দেশে ফিরলোনা | যোগাযোগ বলতে মাঝে মাঝে ফোনে সামান্য কথা | এটা আমার তৃতীয় পরাজয়|


 সুস্থ্য,সবল মানুষটি খেয়েদেয়ে বাথরুমে গেলো পরে তাকে দরজা ভেঙ্গে বের করতে হল | ব্রেনস্ট্রোক | এখানেও ঘটলো আর একটি পরাজয় | কিন্তু শত পরাজয়ের মাঝেও আমি ভেঙ্গে পড়িনি | একা এই নির্জন বাড়িতে বসে যে কষ্ট আমি প্রতিনিয়ত পাচ্ছি - সব কষ্ট, সব পরাজয়ের থেকেও এই একাকিত্ব আমায় প্রতিনিয়ত পরাজিত করে চলেছে ; যার থেকে আমি বেরোতে পারিনা আর কোনদিনও বেরোতে পারবোও না | এখন যেন প্রতিনিয়ত ওই কালো অতীত অনেক বেশি করে আমার সামনে আসে | কিছুতেই আমি তাকে সরিয়ে আমার জীবনের সুন্দর,সুন্দর মুহুর্ত্বগুলি নিয়ে সময় কাটাতে পারিনা | 


 বসে আছি সেই দিনটির জন্য যেদিন এইসব অতীত থেকে বেরিয়ে আমি পরম নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারবো |

               

 


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract