নন্দা মুখার্জী

Classics Others

4  

নন্দা মুখার্জী

Classics Others

ঠিকানা

ঠিকানা

4 mins
241



 হাসপাতালের বেডে শুয়ে পুলিসের উচ্চপদস্থ অফিসারের কথার উত্তর দিতে বারবার হোঁচট খাচ্ছিলেন প্রণববাবু। কি করে এটা সম্ভব? অজয় ছিল ক্লাসের ফাষ্ট বয় ।প্ৰতি ক্লাসে সে প্রথম হয়ে উঠতো। তার মেধাশক্তি নিয়ে স্কুল অফিস কক্ষে কতবার আলোচনা হয়েছে। মাধ্যমিকে ৯৭ শতাংশ নম্বর নিয়ে পাশ করেছিল ।উচ্চ মাধ্যমিকের  রেজাল্ট ও সে খুব ভাল করেছিল ।শিক্ষকদের সম্মানকরা ,তাদের মান্য করা ধীর স্থির ভাবে কথা বলা -অজয়ের আজ এই পরিনতি কেন?  হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কিছু দিন আগে আবাসনের কিছু মানুষের সাথে তিনি ডায়মন্ডহারবার কোন একটি জায়গায় পিকনিকে যান | কিছু কিশোর কিশোরীও  তার মধ্যে ছিল। সামনেই ছিল গঙ্গা নদীর পাড় ।খাওয়া দাওয়ার পর ছেলে মেয়েরা ওখানেই হৈচৈ করছিল । সন্ধ্যা হয়ে আসছে সকলকে ফিরতে হবে তিনিও তা্ঁরই মত বয়স্করা মিলে নদীর পাড়ে ওদের খোঁজে যান। হঠাৎ দেখতে পান একটি বাঁশঝাড়ের ভিতর একটি লোককে হাত,পা,মুখ বেঁধে কিছু যুবক ছেলে মিলে ধরে রেখেছে। আর এক জনে তার মাথায় পিস্তল ধরে রেখেছে। নির্ভীক প্রণব বাবু সামনে এগিয়ে গিয়ে চিৎকার করে বলে উঠেন "এই কি করছ তোমরা ?ওকে মারছোকেন "?


সঙ্গে সঙ্গে পিস্তলের মুখটা ঘুরে যায় প্রণববাবুর দিকে| তিনি আবারও বলেন, `তোমরা ওনাকে ছেড়ে দাও'। হঠাৎ তাদের মধ্যে থেকে একটি ছেলে বলে উঠে, আমাদের ঝামেলার মধ্যে আপনি আসবেন না, "মাষ্টারমশাই" । "মাষ্টারমশাই" তারমানে ছেলেটি আমাকে চেনে! তুমি আমাকে চেন? কে তুমি ? কি নাম তোমার? তাদেরযে মধ্য থেকে আর একটি ছেলে হঠাৎ করে কোমর থেকে পিস্তল বের করেই প্রণববাবুর দিকে তাক করে ট্রিগার চাপতে চাপতেই বলে ,"বুড়োর অনেক কিছু জানতে ইচ্ছা করছে। তাই সব জানিয়ে দিলাম।গুলি এসে প্রণববাবুর ডান কাঁধে বিঁধলো।যে ছেলেটি এক জনকে পিস্তল তাক করে দাঁড়িয়ে ছিল সে চিৎকার করে উঠলো ,"এটা কি করলি? "উনি আমার মাষ্টার মশাই" দৌড়ে এসে প্রণববাবুকে নীচ থেকে তুলে মাথাটা কোলের উপর নিয়ে বললো, "মাষ্টার মশাই" খুব কষ্ট হচেছ? কিছুই হবে না আপনার ।"আমি আছি তো" ।কোন রকমে তিনি বললেন, "তুমি কে বাবা"? তুমিকি আমার ছাত্র ? "আমি অজয় মাষ্টারমশাই। অজয় স্যানাল।মনেপড়ছে ?" প্রণববাবুর আবছা আবছা সব মনে পড়তে লাগলো। পরক্ষেনেই তিনি জ্ঞান হারালেন। তারপর তার যখন জ্ঞান ফিরলো হাসপাতালের বেডে, তখন তিনি পুলিশ অফিসারের সামনে বসে।সে দিন অজয়েরা দলেমোট চার জন ছিল। তিনজনই পালিয়ে গেছিল ।কিন্তুঅজয় তাদের টানাটানিতেও তার মাষ্টারমশাইকে ঐ অবস্থায় ফেলে যায় না ।প্রণববাবুর অন্য বন্ধুদের কাছ থেকে সব জেনে পুলিশ অজয়কে গ্রেফতার  করে ।পুলিশ অফিসারএর কথার জবাবে প্রণববাবু বিড়বিড় করতে থাকেন । অফিসার তাঁর কাছে জানতে চান ঘটনার বিবরণ এবং অজয় নামে একটি ছেলেকে যে গ্রেফতার  করা হয়েছে তাও তিনি প্রণববাবুকে জানান ।সে দিন অজয়েরা দলেমোট চার জন ছিল। তিনজনই পালিয়ে গেছিল ।কিন্তুঅজয় তাদের টানাটানিতেও তার মাষ্টারমশাইকে ঐ অবস্থায় ফেলে যায় না ।প্রণববাবুর অন্য বন্ধুদের কাছ থেকে সব জেনে পুলিশ অজয়কে গ্রেফতার  করে ।


পুলিশ অফিসারএর কথার জবাবে প্রণববাবু বিড়বিড় করতে থাকেন । অফিসার তাঁর কাছে জানতে চান ঘটনার বিবরণ এবং অজয় নামে একটি ছেলেকে যে গ্রেফতার  করা হয়েছে তাও তিনি প্রণববাবুকে জানান ।কিছুক্ষণচুপ করে থেকে প্রণববাবু বলেন,"ঐ ছেলেটি তো কোন দোষকরেনি ।ওতো আমাদের সাথে পিকনিকে গেছিল ।প্রণববাবু এক জন আদর্শবাদী, স্পষ্টভাষী, সত্যবাদী শিক্ষক। জীবনে এই প্রথমবার তিনিমিথ্যা বললেন এবং অন্যায়ের সাথে আপোস করলেন ।চল্লিশ বছরের শিক্ষকতাজীবন দিয়ে মানুষ গড়ার কারিগর প্রণববাবু বুঝেছিলেন ,অজয়ের মধ্যে এখনও কিছুটা মনুষ্যত্ববোধ লুকিয়ে আছে ।সুযোগ পেলে হয়তো সে তার ভুল টাকে সংশোধন করে নিতে পারবে। তাই দাঁতে দাঁত টিপে তিনি অফিসারের সামনে মিথ্যার আশ্রয় নিলেন।  প্রমাণাভাবে অজয় বেকসুর খালাস পেয়ে গেল। প্রণববাবুর ধারনা যে মিথ্যা নয় তার প্রমান তিনি হাসপাতাল থেকে বাড়িতেফেরার মাসখানেকের মধ্যে টের পেলেন । একদিনঝড় জল মাথায় করেদুপুরের দিকে অজয়ঠিক তার মাষ্টারমশাইয়ের বাড়িতে উপস্থিত হলো। অকৃতদ্বার প্রণববাবু তার সর্বক্ষনের সঙ্গী কন্যাসমা ,মা-বাবা মরা কাজের মেয়ে চঞ্চলা বেলের আওয়াজ পেয়ে দরজা খুলে অজয়কে দেখে জানতে চায় সে কি চায়? জবাবে অজয় তাকে জানায় মাষ্টারমশাইকে গিয়ে বলুন - "অজয়দেখা করতে এসেছে।" ঘরের ভিতর থেকে প্রণববাবু বললেন , "হ্যাঁ ভিতরে এসো আমি তোমার অপেক্ষাতেই আছি।ভিতরে ঢুকে অজয় তার মাষ্টারমশাইএর পা ধরে কাঁদতে কাঁদতে তার এপথে আসার সমস্ত ঘটনা জানায়। শুনতে শুনতে প্রণববাবুর চোখ দিয়ে জল পড়তে থাকে।  

     উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিংএ যখন তার ফাইনাল ইয়ার তখন সে এক দিন বাড়িতে আসে হোষ্টেল থেকে ।ঘটনা চক্রে সেদিনই বাড়িতে ডাকাত পরে। বাঁধা দিতে গেলে তারা অজয়ের হাত পা বেঁধে দেয় ।মা বাবা এবংতার সামনে অজয়ের ছোট বোনের উপর অত্যাচার করে। চলন শক্তিহীন অসুস্থ বাবা সেই রাতেই হার্ট এ্যাটাকে মারা যান ।মা , বোনের প্রতি ঐরকম অত্যাচার দেখে অসুস্থ হয়ে পড়েন। সে রাতের পরে বোন গুম মেরে যায়। বাকশক্তি হারিয়ে উন্মাদ বোন এখন আছে    এ্যাসাইলামে। কিছু দিনের মধ্যে মা ও মারা যান ।জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণায়, অন্ধ আইনের প্রতি ঘৃণায় পড়া শুনা ছেড়েদিয়ে নিজের হাতেই আইন তুলে নেয় ।তিন বছর পর খুঁজতে খুঁজতে ঐ ঘটনার নাটের গুরুকে সেদিন নাগালের মধ্যে পেয়েছিল যে তার চোখের সামনে তার বোনের জীবনের চরম ক্ষতি করেছিল।আস্তে আস্তে প্রণববাবু অজয়ের মাথায় হাত রেখে জিজ্ঞেস করেন , "এখন কোথাই আছো?" "রাস্তায়।" "সেকি?" "ওটা তো আমাদের ভাড়া বাড়ি ছিল । বোন কে এ্যাসাইলামে দেওয়ার পর আমার তো কোন ঠিকানার দরকার ছিল না মাষ্টারমশাই !" "তুমি আমার কাছে থাকবে এখন থেকে । আমি তো একাই থাকি। গুটিকয়েক ছেলে -মেয়ে পড়তে আসে ।এখন থেকে তুমিই ওদের পড়াবে। জীবনটাকে নতুন করে শুরুকরো।বোনের ভালভাবে চিকিৎসা করে তাকে সুস্থকরে একটা সুন্দর জীবন দাও | আইন তার নিজের পথে চলুক | আমরা সুবিচারের আশায় থাকবো | যা হয়ে গেছে পিছন ফিরে তাকে আর তাকিয়ে দেখ না। আমি তোমার সাথে আছি। আজ থেকে আমার বাড়িটাই তোমার বাড়ি। আর এটাই তোমার ঠিকানা |


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics