নন্দা মুখার্জী

Romance Inspirational

3  

নন্দা মুখার্জী

Romance Inspirational

ভালোবাসা থেকে যায়

ভালোবাসা থেকে যায়

5 mins
331



  সুন্দরী বলতে যা বোঝায় রিমা কোনদিনও তা ছিল না। কিন্তু তবুও রিমার একটা আলগা শ্রী ছিল। তাকে দেখে কেউ খারাপ দেখতে বলতে পারত না ।এক মাথা ঘন কালো চুল, টিকালো নাক, হরিণী নয়ন কিন্তু গায়ের রংটা অস্বাভাবিক হারে কালো। তাই এত কিছু থাকা সত্ত্বেও রিমাকে ঠিক সুন্দরী বলে কেউ আখ্যা দিতে পারতো না। রিমা তখন এমটেক করছে। ভার্চুয়াল জগতে বেশ কয়েকজন বন্ধু হয়েছে। পড়ার ফাঁকে ফাঁকে রিমা ভার্চুয়াল জগতের এই সব বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিত ।এরই মধ্যে একজন স্পেশাল বন্ধু তার ছিল। নাম ছিল তার সাগর।সাগর গ্রামের ছেলে। ভোলাভালো সরল প্রকৃতির । সাগরের সাথে রিমা ঘন্টার পর ঘন্টা আড্ডা মারতো অধিক রাতের দিকে। চ্যাটিংয়ের মাধ্যমে আড্ডা মারতে মারতে রিমার সাগরকে ভালো লেগে যায়।অপরদিকে সাগরেরও ঠিক তাই ।তারা ঠিক করে দুজনে একদিন দেখা করবে। কিন্তু সাগর গ্রামে থাকে।মেদিনীপুর থেকে কলকাতায় আসলে তাকে একদিন রাতে থাকতেই হবে। তাহলে সাগর কোথায় থাকবে? হোটেল ছাড়া কোন উপায় নেই।  দুজনে মিলে একটা ডেট ফাইনাল করে সাগর কলকাতায় এসে একটা হোটেলে ওঠে। তারপর বিকেলের দিকে সাগর ও রিমা ভিক্টোরিয়ায় দেখা করে। পূর্বের কথা অনুযায়ী দুজনেই যে পোশাক পরে আসে তার কালার আগেই দুজনে ঠিক করে নিয়েছিল। তাই পরস্পরকে চিনতে তাদের একটুও কষ্ট হয়নি।রিমার হাইট ছিল 5 ফুট 4 ইঞ্চি কিন্তু সাগরের হাইট ছিল পাঁচ ফুট। বাড়ির বাগানের গোলাপ দিয়ে সাগর রিমাকে প্রপোজ করেছিল।


সেই মুহূর্তে রিমা কিছু না বললেও পরে তার মনটা একটু খুঁতখুঁত করতো সাগরের হাইট্টা নিয়ে। কিন্তু সাগরের কাছ থেকে সে সরে আসতে পারেনি। রিমার বাড়িতে এ খবর জানাজানি হওয়ার পর রিমার বাবা-মা ভাইয়ের অত্যাচার তার প্রতি বেড়ে যায় ।তারা কিছুতেই তাদের মেয়েকে সামান্য চাকরি করা একটা ছেলের সাথে বিয়ে দিতে রাজি নয়। কিন্তু সাগরদের বাড়িতে খুশিমনে এই সম্পর্ক বাড়ির সকলেই মেনে নেয়। হয়তো পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করতে পারতো।কিন্তু রিমা কখনই চায়নি তার জীবনটা শুরু হোক পালিয়ে গিয়ে। সে চেয়েছিল বাবা-মায়ের মত নিয়ে তাদের আশীর্বাদ নিয়ে যাতে তার বিয়েটা হয়। শেষমেশ তারা বিয়েতে রাজি হয়েছিলেন ঠিকই কিন্তু বিয়ের আসরে তারা উপস্থিত ছিলেন না ছোট ভাই বড় দাদার মত দিদির বিয়ের সমস্ত দায়িত্ব সামলেছে। বিয়ের বছর দুয়েক কোথা থেকে কেটে গেল রিমা নিজেই টের পেল না। তিন বছরের মাথায় তাদের সন্তান এলো সুজন। আর তখনই সাগরের প্রমোশন হলো ।সাগর হয়ে পরলো ভীষণ ব্যস্ত। অফিস আর বাড়ি, বাকি সময় সে থাকত পরিশ্রান্ত।আস্তে আস্তে রিমা ও সাগরের ভিতর একটা দূরত্ব বাড়তে লাগল ।এই দূরত্ব বাড়তে বাড়তে এতটাই হল যে- সে দূরত্ব ঘোচানোর মতন কোন ক্ষমতা রিমার নিজের হাতে ছিল না। সাগরের এই টাকার পিছনে ছোটার নেশাটা রিমা কিছুতেই মেনে নিতে পারছিল না ।


তার মনে হতো অভাব থাক কিন্তু সাগর যেন তার থাকে ঠিক সেই আগের মত। সাগরের সাথে সময় কাটাতে, সাগরের সাথে ঘুরতে রিমার মন চাইতো। কিন্তু সাগরের কাছে সে সময় ছিল না তাই আস্তে আস্তে সে রিমার কাছ থেকে অনেকটাই দূরে সরে গেল। সকাল থেকে রাত অবধি গাধার মত অফিসে পরিশ্রমের পর সাগর যখন বাড়িতে আসত সত্যিই সে থাকত খুব টায়ার্ড। কোন কোন দিন বাড়িতে ফিরে সে দেখতো তার চোখের মনি সুজন ঘুমিয়ে পড়েছে আজ ডাইনিং টেবিলে তার জন্য অপেক্ষা করছে রিমা।কোন কোন দিন সে খেত আবার কোন দিন বা কোন হোটেল বা পার্টি থেকে খেয়েএসে রিমাকে খেয়ে নিতে বলে ঘুমিয়ে পড়তো। দিনের পর দিন সাগরের এই অবহেলা রিমা মেনে নিতে পারে না। তার ভিতরে একটা চাপা কষ্ট শুরু হয় ।যে সাগরকে ভালোবেসে তার সাথে একটা সুখের সংসার করতে চেয়েছিল ।সেই সুখের সংসারে কালবোশাখী হয়ে দেখা দিয়েছে সাগরের টাকার পিছনে ছোটা । রিমা আস্তে আস্তে কেমন নির্জীব মেরে যেতে থাকে। সে খেতে পারেনা, রাতে ঘুমাতে পারে না, চোখের কোনায় কালি পড়ে গেছে কিন্তু সাগরের কোন দিকেই কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। একদিন সকালে অফিস যাওয়ার সময় টেবিলে খাবার না পেয়ে সাগর বেশ কয়েকবার রিমা কে ডাকে। সাড়া না পেয়ে সে রান্নাঘরে ঢুকে দেখে রান্না ঘরের মেঝেতে রিমা অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে।


এক বছরের সুজন তখনো ঘরে ঘুমাচ্ছে ।সে দৌড়ে গিয়ে রিমাকে তুলে নিয়ে সোফার উপরে শুইয়ে দেয়। পাশের বাড়ির বৌদিকে ডেকে সুজন কে দেখতে বলে রিমা কে নিয়ে নার্সিংহোম ছোটে। চারদিন পরে রিমা কে নিয়ে সাগর বাড়িতে আসে। এই কটা দিন শুধুমাত্র রাতেই সাগর বাড়িতে ফিরেছে। সুজন পাশের বাড়িতেই থেকেছে। কান্নাকাটি করেছে ঠিকই কিন্তু তারা সামলে নিয়েছে। রিমাকে ছেড়ে রাতে ছাড়া সে এক সেকেন্ডের জন্য নার্সিংহোম থেকে নড়েনি। এতদিন ধরে রিমা কোন কাজের লোক বাড়িতে রাখতে দেয়নি। সে নিজের হাতেই যাবতীয় কাজ করতো সাগরের কথা অমান্য করে। কিন্তু রিমাকে বাড়িতে এনেই সাগর একটা রান্নার লোক রাখে।আর সর্বক্ষণ রিমার পাশে বসে তার সেবা কবে চলে।--- নিজের কি হাল করেছ দেখেছ?--- তুমি আজও অফিস যাওনি?--- অফিস, পরিশ্রম, টাকা রোজগার সবই তো তোমাদের জন্য ।সেই তোমরাই যদি ভালো না থাকো কি হবে এসব করে?তুমি এতো অবুঝ কেন? কেন বোঝনা আমার এই পরিশ্রম সবই তোমার আর সুজনের জন্য ।এখনো পরিশ্রম করতে পারছি কিন্তু এরপরে বয়স বেড়ে গেলে তো পারবোনা। আমি সময় পাইনা তাই তোমার খাওয়া-দাওয়ার দিকে এভাবে নজর দিতে পারিনা। তারমানে তুমি এইভাবে নিজের শরীরের অবহেলা করবে? তুমি একবারও ভাববে না তুমি ছাড়া আমার আর সুজনের আর কেউ নেই। তোমার কিছু হয়ে গেলে আমরা তো বাঁচতে পারব না। রিমা উঠে বসার চেষ্টা করে, সুজন বাধা দেয়----- আরে কি করছো উঠছো কেন? তোমাকে এখনো ডাক্তারের কথামত 15 দিন শুয়ে থাকতে হবে ।আর এই 15 দিন আমি তোমার পাশে থেকে সবসময় তোমায় সঙ্গ দেবো, তোমার সাথে গল্প করবো আর মাঝে মাঝে একটু আদর করবো ।


আর তুমি চুপ করে এখানে শুয়ে থাকবে। হ্যাঁ এখন একটা কাজ করতে পারো- এখন আমি তোমাকে একটু ধরি; তুমি তোমার মাথাটা আমার হাঁটুর উপর দিয়ে চুপ করে ঘুমিয়ে পড়ো আর আমি তোমার চুলের ভিতরে হাত বুলিয়ে দিই ঠিক সেই আগের মত।-- তুমি এখনো আমাকে সেই আগের মত ভালবাসো?--- বোকা মেয়ে! কেন ভালোবাসবো না?তোমাকে আমি ভীষণ ভালোবাসি কিন্তু সময় পাই না বলে তোমাকে আগের মতো সময় দিতে পারিনা আর এরজন্য তুমি এত কষ্ট পাচ্ছিলে?আমাকে বলে একবার দেখতে পারতে--। আর কক্ষনো আমাকে ভুল বুঝে নিজের শরীরের অযত্ন কোরো না। একটু সুস্থ হয়ে নাও, অনেকদিন কোথাও ঘুরতে যাওয়া হয়না ।আমরা বাইরের থেকে দিন পনেরোর জন্য ঘুরে আসি। রিমা আস্তে আস্তে সাগরের হাঁটুর উপর থেকে মাথাটা তোলার চেষ্টা করে সাগর তাকে সাহায্য করে ।কোনরকমে একটু বসতে পেরেই সাগরকে দুহাতে জড়িয়ে ধরে আর সাগরও রিমাকে দুহাত দিয়ে বুকের সাথে চেপে ধরে। রিমা কাঁদতে কাঁদতে সাগরকে বলে,--- আমি ভেবেছিলাম আমার প্রতি তোমার ভালোবাসা বুঝি ফুরিয়ে গেছে,তাই ভীষণ কষ্ট পেতাম ।আমি তোমায় ভুল বুঝেছিলাম গো আমায় তুমি ক্ষমা করে দাও।অসুস্থ রিমার ঠোঁটের উপরে নিজের তর্জনীটা দিয়ে সাগর বলে,--- আর কক্ষনো তুমি আমাকে ভুল বুঝনা। আমি তোমাকে আমার নিজের জীবনের থেকেও বেশি ভালোবাসি ।তোমার এই অসুস্থতার সময় ডাক্তারের কথা শুনে আমি বুঝতে পেরেছি সত্যিই আমি অন্যায় করেছি এই ভুল আর আমার কোনদিন হবে না। তাই তুমিও আমায় ক্ষমা করে দাও।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance