মন খারাপ করা
মন খারাপ করা
সকালে জলখাবার করা শেষ হল না তখন দেখছি তার ঘুম ভাঙে নি।এক কাপ চা করে ওঠাতে গিয়ে একরাশ বিরক্তি দেখলাম তার চোখে।আচ্ছা আমি একটু বেশী আশা করে ফেললাম, যাক গে এখন এসব ভাবার সময় নেই।ঐদিকে আবার আমার ভাতের হাঁড়ির মাড়টা উপচে পড়ছে,উফফ সকালে এই সময়টা বড্ড তাড়া।বাবুরে আবার ঘুমোচ্ছিস ।কতবার বললাম না বই নিয়ে বস।ঐ দেখ দিদি ডাকছে,ইশশশ কড়াইএর তলাটা কতটা ধরে গেল। দেখি কি করা যায় ।এ বাবা টিফিন করতে হবে বাবুর।কত ভুল হচ্ছে। তাড়াতাড়ি পরোটা বেলে নি।তোর বাবা কি অফিসে যাবে না?দশটা বাজে তো। রোদ্দুর চলে যাবে,যাই ছাদে কাপড় শুকোতে দিয়ে আসি।আজ আর স্নানটাও ভালো করে হবে না।দিদি তুমি জলখাবার খেয়ে ঘর মুছে নাও।কি বলছ??না গো আমার এক মিনিট সময় নেই। ওদের টিফিন গোছানো আছে।হ্যাঁ দিদি, শরীর টা একটু খারাপ, কিন্তু ওদেরটা আমাকে দেখতে হয় যে। না তোমার দাদা রাত জেগে ঐ হইচই এ কি সিরিজ দেখে,তাই দেরী করে ওঠে।
সবাইকে বোঝালেও আমি বুঝি, আমি আসলে ঐ ঘরের সেই ঝুড়ির মত,যাকে অবহেলায় এককোণে ফেলে রাখে,কিন্তু গরম চাউমিন এর মাড় ঝাড়তে,সবজি ধুয়ে রাখতে,আমাকে লাগে জানেন।মনে হত ভুলে যায় আমাকে ঠিক রাখতে,তারপর বুঝলাম অবহেলা একে বলে।
সেইবারে আমি বড় অবাক হলুম শুনে যে ও নাকি জানে আমার শরীর খারাপ লাগছিল, আমি এটা ভেবে স্বান্তনা দিয়েছিলাম ও কিছু জানত না।কখনো কখনো মিথ্যা বোঝা বড় ভাল।মনটা ভাল থাকে। কিন্তু কখনো সত্যি বড় রুঢ় হয়ে আহত করে। মুখ থেকে নির্গত কিছু শব্দের এত শক্তি তা আমি জানতাম না। দিনের শেষে খুব ক্লান্ত লাগে।দুপুরে ঘুম আসে না। ঐ রেলিঙের ফাঁক দিয়ে দেখি সামনের
আমগাছটাকে। কি সুন্দর স্বাধীন এরা,কতগুলো পাখি কিচমিচ করছে।খুব মন যায় নিজের স্কুটি টা চালাই।বুক ভরে নিঃশ্বাস নি।
দিনের শেষে অন্ধকারনেমে আসে,এ অন্ধকার কি পৃথিবীর একার,একদম না,এ আমার জীবনের হেরে যাওয়া দিকগুলো, যারা উপহাস করে আমায় ।নিঃস্ব আমি রিক্ত আমি।সূর্যাস্তের লাল আবির মাখা আকাশের মধ্যে যেন কেমন এক বিষণ্ণতা। কিন্তু জীবন শেষে সবাইতো রিক্ত হয়ে ঘরে ফেরে,অন্তিম দিনে সাথে কি কিছু যায়? অনেকে বলে পাপ পূণ্য,নাকি সুখ দুঃখের অনুভূতি ? জানি না।মন পাখি ঐ রক্ত রাঙা আকাশে মেলে নিজের উদ্ধত ডানা।ভয়ে আমি চমকে উঠি,বলি "থাম থাম করিস কি,দেখলে এখনি ঝড় উঠবে যে।" পাখিগুলো সবাই ঘরে ফিরে যাচ্ছে ।আমারো মা বাবা আমার ঐ বৈঠকখানা, পুকুর পাড়ের যে রাস্তা দিয়ে স্কুল থেকে ঘরে ফিরতুম ,আমার টিয়া পাখিটা,ঐ রাধা মাধবের মন্দির সবার জন্য মনটা কেমন হু হু করে ওঠে। মনে হয় বলি,"ওরে, তোরা আমায় নিয়ে যাবি? চল না রে।"এক দুটো করে তারা আকাশের মধ্যে উঁকি মারতে শুরু করে।সময় হল সবার ঘরে ফেরা।এটা আমারি বাড়ি তবু কেন মনে হয় ঐ বাড়িটাই আমার। আমার ভেঙে যাওয়া খেলনাবাটি সবের জন্য মনে কেন কষ্ট হয়?দিন শেষে ছেলে আসবে তার ভীষণ ভারি ব্যাগ নিয়ে, মুখে তার ক্লান্তির ছাপ।তারপর আসে কর্তা।তিনি তার জগতে ব্যস্ত । শুরু হয় আবারো এক কাহিনী ।কাজগুলো এগিয়ে যায়, কিন্তু আমি স্পষ্ট বুঝি,আমার সেই অবুঝ মনটা পড়ে আছে ঐ রেলিঙে,যেখান দিয়ে এক ফালি আকাশ দেখা যায়।আমার মনটা পড়ে আছে ঐ স্কুলে যেখানে অপেক্ষা করতাম কখন বাজবে ঘন্টা ।ঢং ঢং ঢং,এখনো বাজে ছুটির ঘন্টা আমার কানে।বড্ড ছুটি নিতে মন চায় যে।