ক্ষমতার গর্ব
ক্ষমতার গর্ব
উচ্চবিত্ত কুলিন ব্রাহ্মণ মোহন চট্টোপাধ্যায়ের একমাত্র মেয়ে রিনু। তাদের ঘরের নিয়মের ভীষণ কড়াকড়ি। মোহন বাবুর নিজস্ব ব্যবসা আছে। তিনি এম-এম-এ, তাই রাজনৈতিকগত ভাবে তার স্থান ভীষণ পোক্ত। সুপুরুষ চেহারা, তাই মেয়েরাও প্রয়োজনের চেয়ে একটু বেশী তার সাথে মেলামেশা করে, অবশ্য তার চেহারা সেজন্য দায়ী নাকি রাজনৈতিক অবস্থান তা বলা বড় শক্ত। মোহনবাবুর স্ত্রী পূজা এসব কাজে বাঁধা দিলেও, তার জন্য তাকে ঘরের ভেতরে প্রায় মারধোর খেতে হয়। কানাঘুষো শোনা যায় যেসব মেয়েরা তার একটু বেশী কাছে গেছে, তারাই কিন্তু বেশ ভাল চাকরিতে বহাল হয়েছে। সেটা মোহনবাবুর কীর্তি, নাকি মানুষের কুৎসা, সেকথা জানা যায়নি। বাবলু তার ডান হাত। যাবতীয় বেআইনি কাজ বাবলু করে। কিন্তু বাবলু মেয়েঘটিত বিষয়ে নিজেকে জড়ায় না, বলা ভাল , অন্যায় কাজ করলেও মনের কোন এককোনায় কিছু আদর্শ হয়ত বাকি রয়ে গেছিল, তাই মেয়েদের সে বড় সম্মান করে। কেউ কেউ বলে বাবলুর বোন বুল্টি রেপ ও খুন হবার পর থেকেই বাবলু এই অসামাজিক কাজে যোগ দিয়েছে। যদিও কারো কাছে কোন প্রমাণ নেই। মোহনবাবুর দুর্বলতা তার একরত্তি মেয়ে রিনু। হঠাৎ করেই পূজার শরীর অসুস্থ হওয়ায় বাবলু যায় স্কুল থেকে রিনুকে আনতে । স্কুলের বাইরে রিনু টা টা করতে করতে বলে
--বাই সাবিনা। সি ইউ টুমরো।
বাবলু সেদিন মোহন বাবুকে বলে
--দাদা রিনুদিদির কত বন্ধু হয়েছে। ওবড় হয়ে ঠিক আপনার মত হবে। সেদিন বাড়ি ফিরে মোহনবাবু রিনুকে আদর করতে করতে জিজ্ঞেস করলেন
---রিনু কার পাশে তুমি বসো স্কুলে?
---বাবা, আমিতো সাবিনার পাশে বসি!
---কেন ক্লাসে আর কেউ নেই?
---সাবিনা আমার প্রিয় বন্ধু, বাবা সাবিনার পাশে বসলে কী হবে?
---উফব মুখেমুখে কথা বল না রিনু। যাও পড়তে বস।
রিনুও স্টাডিতে পড়তে বসে। মোহনবাবু দু তিন পাত্তর গলায় ঢালতেই নেশাটা চাগিয়ে উঠল, জড়ানো গলায় বলতে লাগলেন
---আমি শালা কাল ঐ স্কুলে গিয়ে বলব, আমার মেয়েকে যেন ঐ মধ্যবিত্ত মুসললমান মেয়েটার পাশে না বসায়। নাহলে শ্লা এক টাকা দেবনা। স্কুলের কোর কমিটির সাথে কথা বলব আমি। জানে আমার ক্ষমতা কতটা? এই এরিয়ার আমি নেতা, আমার কথাতেই সব হয়। শ্লা, যতই বলি সব মানুষ সমান, ঠাকুর্দাদা বাবার আমলের রীতি মন থেকে মোছা সহজ নাকি? মেয়েটার মাও মাগীটা সেরকম ,সবসময় জ্ঞান দিচ্ছে,মাইরি!
রিনুর মা ধুপ দেখাতে দেখাতে বললেন
--তো কী শেখাব, কেমন করে লোক ঠকাতে হয়, চুরি করতে হয়, যেটা তুমি অহরহ করছ।
--এই মাগী মুখ খুললে, তোরে মাটিতে পুঁতে দেব।
রিনু পড়তে বসেছিল, চিৎকারের চোটে উঠে এসে দরজার আড়াল থেকে সব শোনে। গুটিগুটি পায়ে এসে বলে
--ও বাবা ,মাকে তুমি মাগী কেন বল?
--ওটা আদরের ডাক সোনা! বড়দের সবকথায় কেন কান দাও । গো টু ইওর স্টাডি।
পরের দিন স্কুলে মোহনবাবু মেয়েকে নিয়ে বললেন
----টিচার সুপারিন্ডেন্ট কে? আমি কথা বলতে চাই।
এক সুবেশী সুন্দরী মহিলা আসতেই , রিনুর বাবা তার পুরো শরীর জরিপ করলেন কামাতুর দৃষ্টিতে, তারপর বললেন
--আপনারা আমার মেয়েকে ঐ মুসলমান মেয়েটার পাশে কেন বসান?
--কেন মেয়েটি কি ডিসটার্ব করেছে।
রিনুর সপ্রতিভ উত্তর
--না সাবিনা আমায় বিরক্ত করেনা।
--রিনু তুমি চুপ কর, মেয়েটা মুসলিম। আমরা কুলিন ব্রাহ্মণ বংশ, কিছু নীতি মেনে চলতে হয় আমাদের।
--স্কুলে, স্যর জাতপাত শেখান হয় না। সব মানুষ সমান এটাই শেখান হয়। ও শিশু। তাছাড়া এতগুলো স্টুডেন্ট। বুঝতেই পারছেন স্যার।
--ফালতু বকবেননা। আপনার ভাটের কথাশুনতে আসিনি আমি। আপনারা জানেন, আমি কে? একজন নেতার ক্ষমতা?আমার, আমার মুখের ওপর কথা বলছেন?
এত কথাকাটাকাটির জন্য অন্য কিছু স্টাফ এসে পড়ে সেখানে। তারা ওনাকে দেখেই খবর দেন ।
--এই তুই চুপ কর, আচ্ছা স্যর সিওরলি দেখব, আপনি প্রিন্সিপ্যালের রুমে চলুন।
মোহনবাবুকে খাতির করে নিয়ে যাওয়া হয় প্রিন্সাপ্যালের কেবিনে। প্রিন্সাপ্যাল ওনাকে দেখেই বিগলিত গলায় বলেন
--স্যার আপনি এসেছেন, কি খাবেন ?একটু কফি বলি। এই সামান্য বিষয় আমায় একটা চিঠি পাঠিয়ে দেবেন স্যার আপনার পিএ কে দিয়ে, আপনি কেন কষ্ট করতে গেলেন। রিনুকে বসানো হবেনা ওর পাশে। এবারে ঠিক আছেতো স্যার।
রিনু সব কিছুই শোনে চুপ করে। একটুপরে জিজ্ঞেস করে,
---বাবা ও বাবা, জাত কি করে যায় বাবা, হেঁটে হেঁটে, কই আমি যে দেখতে পাইনি।
স্কুল থেকে বেরিয়ে রিনুর বাবা ফোন করলেন তার খাস বান্দা বাবলুকে। বলল
--স্কুলে একটা পরী আছে, কি সাইজ মাইরি, যদি একরাতের জন্য আনতে পারিস তোর চাকরিটা পাকা।
বাবলু একটু পরেই বলল
--ও তো মুসলমান, নাম ফরিদা, স্যার জানেনতো আমি এসব...
কথা শেষ করতে না দিয়েই মোহনবাবু বললেন
--মজা লুটবো তার আবার মুসলমান, তুই আনতো। তাছাড়া ওকে একটু শেখাতেওতো হবে সবাই সমান , ...
বলেই হা হা করে হাসতে শুরু করলেন।
বাবলুর চোয়ালটা শক্ত হয়ে গেল। ফোনটা রাখতেই বাবলু বলল
--এই তোরা দাদাকে বলে দিস, আমি মেয়েদের দালাল নই, আর অমন চাকরির মুখে আমি শ্লা মুতি। শ্লা নিজেকে বলে কিনা হিন্দু, মুসলমানের ছোঁয়া লাগলে গোবর মুখে দেয়, আর সেই জাতের মেয়েকে বিছানায় তুললে এদের জাত যায় না। শ্লা থু থুউউ...
এই বলে মুখ দিয়ে থুউউ করে থুতু ফেলল রাস্তায়।বাবলু তার জ্যাকেটটা গলিয়ে বাইক স্টার্ট দিয়ে বেরিয়ে গেল।