রাইকিশোরী
রাইকিশোরী
দিবাবসানে পশ্চিম আকাশের লালিমা ছড়িয়েছে আকাশে, নদীর জলেও।
রাইকিশোরী নদীর জলের দিকে তাকিয়ে, অস্তরাগের লাল আলোয় নদীর জলের রঙ রক্তবর্ণ ধারণ করেছে। অশ্রুমাখা মুখখানিতে সেই লালিমার আভা পড়েছে। দূরে ঐ বাঁশি বাজে, বাঁশির সুরে একি আকুতি , দুই কর্ণে হাত ছাপা দিয়ে কেঁপে ওঠে তার সর্বাঙ্গ। শরীর মন জ্বলে যায় , সেই
"কানের ভেতর দিয়া মরমে পশিল গো
আকুল করিল মনপ্রাণ!"
গৃহে তার স্বামী ননদিনী প্রতিক্ষায়, জলপূর্ণ কলসখানি তার পাশে রাখা। অবশ্য সংসারে তার জন্য কি বা বর্তমান, তার স্বামী তাকে স্ত্রী অপেক্ষা সেবাদাসী বা ক্রিতদাসী ভাবেন, ননদিনীর প্ররোচনায় শারীরিক অত্যাচার না করলেও বাক্য দিয়ে বধ করেন প্রতিনিয়ত। সেই প্রভাত হয়, আর তারপরেই আসে অন্ধকার রাত্রি, সারাদিনের শ্রমের পরে, তার মনের সন্ধান নেব
ার কেউ নেই। একাকী পথ চলে সে।
বাঁশির শব্দের আকুতিতে রাইকিশোরী উঠে দাঁড়ায়, কখন যে চলতে শুরু করেছে তা সে নিজেও জানে না। নদীর তীর থেকে কখন কন্যা রাধাচূড়ার তলায় এসেছে তা সে নিজেও জানে না। শ্যামবর্ণা কিশোর বাঁশিতে তুলেছে নূতন সুর নূতন তান। মোহময় সেই অনিন্দ্য সুন্দর কিশোর কখন যে তার হাতখানি ধরেছে তা সে বুঝতেই পারে নি।
সম্বিত ফিরতেই শিহরিত রাইকিশোরী উত্তরীয়খানি জড়িয়ে দৌড়ে এসে ঘরে দোর দেয়। নয়ণ হতে অশ্রু ঝরে পড়ে। এ কি অদ্ভুত দোলাচল, স্বামী, সংসার সকল থাকতেও সেই মরমীয়া বাঁশি তার মনপ্রাণকে আকুল করে তোলে। অজ্ঞাত আবেশে নিমজ্জিত রাইকিশোরীর দুই চোখে অশ্রু। বাইরে ঘন ঘন বিদ্যুৎ ঝলসে ওঠে, নেমেছে বারিধারা। মনের মন্দির রাইকিশোরীর শূণ্য। বিগ্রহ নাই, সেই মন্দিরে আজ আগুন লেগেছে। বড্ডো জ্বালা বড্ডো কষ্ট।