Manab Mondal

Action Crime Thriller

4.0  

Manab Mondal

Action Crime Thriller

মধুচন্দ্রিমা

মধুচন্দ্রিমা

5 mins
213


আমি একজন সাধারণ মানুষ। আত্মীয় বিহীন চাকুরী জীবন কাটাই প্রবাসে।চাকুরীর ছুটি পাই নি , ওদের বিয়েতে যেতে পারিনি। ওরা আমার উপর খুব রেগে ছিলো। তাই ওদের হানিমুনের জন্য লাটাগুড়িতে একটা রিসোর্ট বুকিং করে ট্রেনের টিকিট কেটে নিয়ে এসেছিলাম সাথে যাতে বেশি ঝামেলা করতে না পারে ওরা।সুজাতা ও নিখিল দুজনে ছোটবেলার বন্ধু, ওদের প্রেমের ঘটকালি করে ছিলাম আমিই। এখন ওদের প্রেম পরিণতি পেয়েছে বিয়ে মাধ্যমে।নিখিল সরকারি কর্মচারী আর সুজাতা বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করে। বিয়ের পর তাঁদের সেই ভাবে একসাথে কোথাও যেতে পারেনি। নিখিল ও সুজাতার ইচ্ছে থাকলেও  কাজের চাপে সেইভাবে ছুটি পাওয়া সুযোগ ছিলোনা। বিয়ের সাতমাস কেটে গেছে হানিমুনে যায় নি।অফিস থেকে একসপ্তাহের ছুটি নিতে কোন অসুবিধা নেই। তাই লাটা গুঁড়ি বেস্ট। প্রকৃতির বুকে শান্ত পরিবেশ।আমি জানতাম না নিখিলের বড়ো গাড়ি কিনে নিয়েছে । ওরা ঠিক করলো গাড়িতেই যাবে ওরা। বেশ একটা এডভেঞ্চার হবে । সুজাতা ওর বান্ধবী দিয়াকেও সাথে যাবার জন্য রাজি করালো । আমার সাথে ওর সেটিং করাবে ওরা এবার।

সকাল সকাল ব্রক ফ্যাস্ট সেরে রওনা দিলাম চারজনে মিলে । ঘন্টা দশকের বেশি রাস্তা কিন্তু অনেক বেশি রাস্তা সময় লাগলো লাগলো আমাদের । তবে কোন অসুবিধা হলো না ছোট খাটো মজা খুনসুটি আর রাস্তায় ধাবায় খাওয়া দাওয়া ।যেখানে সেখানে live আর সেলফি তুলতে গিয়ে দেড়ি হয়ে গেলো। পৌঁছাতে আরেক বিভ্রাট আমি তো একটা রুম বুকিং করেছিলাম। সেখানে ম্যানেজার কাম কেয়ারটেকার এর সাথে কথা বলতে গিয়ে জানতে পারলাম ও আমাদের আর একটা রুম দিতে পারবে আজ। কিন্তু দিয়া সাথে তো রুম শেয়ার সম্ভব নয় । ম্যানেজার অনেক বুঝিয়ে বলেন আজকের দিনটা অন্য কোনো হোটেল এ কাটিয়ে নিন । আসলে এটা কটেজ চারটে রুমই আছে । আমি ভাবনা চিন্তা করে নিখিলকে বলে বেরিয়ে পরলাম অন্য কোথাও একটা রুম দেখি ।

রাতটা নয়টা বেজে গেছে। তবে এখানে গুগলের হোটেল এ সার্চ করলে কোন লাভ নেই । কারণ আমাদের রিসোর্ট টা একটু ভিতরে । সাম্প্রতিক আমার সেফ প্রায় জলের দরে কিনেছে এটা আর কেনার পর থেকে একটা অসুবিধা হচ্ছে তাই বিশেষ করে আমার এখানে আসা। কাছাকাছি একটা রিসোর্ট পাওয়া যায় কিনা তার খোঁজ করছি। এমন সময় একজন বয়স্ক লোক এসে বললেন " বাবু আপনাদের রুম চাই? তা কটা রুম লাগবে? "

বললাম "আপাতত আজ রাত জণ্য একটা রুম যথেষ্ট ।সকালে একটা বন্দোবস্ত করে নেবো। " ভদ্রলোক টি বললেন "আচ্ছা আসুন আমার সাথে, আমি নিয়ে যাচ্ছি । যথারীতি ভদ্রলোকের সাথে হাঁটা দিলেন, অনেকটা হাঁটার পর আমি ভদ্রলোক কে জিজ্ঞাসা করলাম " আর কতদূর? "

লোকটি উত্তর দেয় "এই তো রিসোর্টটা এর পিছনে একটি জঙ্গল আছে তার পিছনে, ভয় পাবেন না বাবু এখানে তেমন কোনো জন্তু জানোয়ার নেই?" রাত বাড়ছে ওদিকে নিখিল দিয়া আর সুজাতা খবর নিতে অনেকবার ফোনে ট্রাই করছে কিন্তু ফোনে নেটওয়ার্ক নেই তাই কল ডিসকানেক্ট হয়ে যাচ্ছে। প্রায় ঘন্টা খানেক চলার পর আমি লোকটিকে বললাম " আপনি তো আচ্ছা লোক মশাই একটু একটু করে একঘন্টা হাঁটিয়ে দিলেন? কোথায় আপনার হোটেল আর কখনই বা এই জঙ্গল শেষ হবে?"

লোকটি আমার কথায় দাঁড়িয়ে যায় আর পিছন ফিরে তাকাতেই আমি আঁতকে উঠলাম, লোকটির মুখ বলতে তেমন কিছু নেই পুরোটাই ফাঁকা শুধু দুটো চোখ কেমন যেন ফ্যাকাসে আর সারা মুখে অসংখ্য পোকা, যেন তার মুখের সমস্ত মাংস খেয়ে নিয়েছে।অন্য কেউ হলে হঠাৎ ই তা দেখে ভয় পেয়ে যাবে । কী করবে কিছু বুঝতে পেরেবে না ‌দৌঁড়াতে থাকে কিন্তু এতো ঘন জঙ্গলের মধ্যে সে কোনদিকে যাবে বুঝতে পারেবে না। কিন্তু আমার বুঝতে বাকী রইল না এই সেই অশরীর আত্মা যার জন্য। এখানে পর্যটকরা এসে আর বাড়ি ফিরছে না।,,,,,,

আমি আগে থেকেই প্রস্তুত ছিলাম। লোকটি এতোক্ষনে বুঝতে পেরে গেছে ও আমার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। তবে ও জানায় কেন আমাকে এখানে নিয়ে আসা হয়েছে কী উদ্দেশ্য তার? কেন এভাবে অতৃপ্তি আত্মা নিয়ে ঘুরতে হচ্ছে?লোকটি আমাকে মারবো কেন কাউকে সে মারতে চায় নি, আমাকে সে করুন ভাবে বলে " আপনার সাহায্য পেলে আমি আমার এই পৈশাচিক শরীর ত্যাগ করে নতুন জন্ম লাভ করবো।"

জানতে চাইলাম " তা কিভাবে সম্ভব?"

লোকটি বললো " আপনারা যে হোটেলে এসেছেন তার প্রাক্তন মালিক আমার স্ত্রী কে শারীরিক নির্যাতন করে, তাকে জ্বালিয়ে মেরে ফেলেছিলো। কিন্তু হোটেলের মালিকের প্রচুর টাকা তারা পুলিশকেও কিনে রেখেছিলো, আমার স্ত্রী কে বাঁচাতে পারলুম না, আর তার দোষীদের কেও শাস্তি দিতে পারলাম না, আমিও মরে গিয়ে এই বাড়িতেই ঘোরা ফেরা করতে লাগলাম। ভয় দেখিয়ে ওর হোটেল ব্যবসা বন্ধ করতে চাইলাম। কিন্তু লাভ হলো না । হোটেলের মালিক গ্রামের অনেক মেয়েদেরর সাথেই এরকম শারীরিক অত্যাচার করেছে। কিন্তু পুলিশের কাছে মুখ খোলেননি কেউ ভয়ে। আমি চাই আপনারা তাকে হাতে নাতে ধরুন আর তাকে উচিত শিক্ষা দিন ।"

রিসোর্ট ফিরে নিখিল , দিয়া ও সুজাতা সব গল্পটা বললাম । বিশ্বাস করলো, কারণ তাঁদের সাথে রিসোর্ট ম্যানেজারও বললো "হ্যাঁ এটা সত্যি যে রিসোর্ট প্রাক্তন মালিক গ্রামের মেয়েদের সাথে শারীরিক নির্যাতন করে, আর এতদিন ধরে এই পাপ কর্ম আমিও দেখেছি কিন্তু কিছু বলতে পারিনি, আমিও সাধারণ ছেলে ।মুখ খুলে কোন লাভ হবে না কিন্তু আজ আর নয় আমি আপনাদের কে সাহায্য করবো । কারণ আমার একটা পুরানো হিসাব নেবার আছে।"

 রঞ্জন মানে ম্যানেজার আমাকে আর নিখিলকে সেই রুম টা দেখিয়ে দিলো যেখানে হোটেলের মালিক এই কুকর্ম করে।রুম এ গিয়ে একটা ক্যামেরা লুকিয়ে রাখে। সুজাতাকে বললাম গ্রামের একজন সাধারণ মেয়ে সাজতে। ফোন করা হলো। হোটেলের মালিক আসতেই ম্যানেজার কে বললো " আজ রেডি তো নতুন মেয়ে,"

ম্যানেজার জানায় "হ্যাঁ " । রুম এ গিয়ে সুজাতাকে দেখে মালিক খুব খুশি,।দরজা বন্ধ করতেই সুজাতা ঘাবড়ে না । সে এই রুম এ একা নয় তার সাথে লোকটি আছে, মালিক ।যেই না কাছে আসা সুজাতা বললো" মেয়েদের সাথে এরককম কাজ করতে লজ্জা বোধ হয়না, আমি পুলিশে জানবো"

কিন্তু মালিকটি কোনো কর্ণপাত না করে, বললো "আমি এরকম আগেও করেছি, পুলিশ আমার কেনা গোলাম, আমার কেউ কিছু করতে পারবে না," এই কথা শেষ হতেই । মালিক দেখলো দেয়ালে প্রকান্ড একটা ছায়ামূর্তি তারদিকে হাত বাড়াচ্ছে।মালিক বললো " কে তুমি?"

লোকটি বললো "চিনতে পারছো বাবু আমি শ্যাম, যার স্ত্রীকে তুমি শারীরিক অত্যাচার করে জীবন্ত পুড়িয়ে মেরেছিল । আর আমাকেও ছাড়োনি, আমি সেই আজ প্রতিশোধ নিতে এসেছি, "

মালিকটি বললো "তুই তো মরে গেছিস কী প্রতিশোধ নিবি? আমি তোদের দুজনকেই মেরেছিলাম আজ আবার ও মারবো!"

লোকটা বলল "বাবু ভুল করছেন মৃত মানুষকে আর মারা যায়না এবার আপনার পালা,"

মালিকের গলা টিপে ধরলো লোকটি। পুরো ঘটনাটার ভিডিও রেকর্ডিং করা হয়েছিল যাতে পুলিশের কাছে প্রমান দেয়া যায়, সুজাতা রুমএর দরজা খুলে দিতেই। ম্যানেজার, নিখিল, দিয়া সবাই এসে যায়, ম্যানেজারকে দেখে মালিকটি বললো তুমিও আমার সাথে বিস্বাসঘাতকতা করলে?" ম্যানেজার উত্তরে জানায় না " স্যার আজ আমি সাহস করলাম সত্যির সঙ্গ দেবার। "

মালিকের মৃত্যুর ভিডিও পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হলো। পৈশাচিক আত্মা নিখিলকে জানায় তার নামে পিন্ড দান করলে সে শান্তি পাবে, কলকাতায় ফিরে এসে তারা তাই করল।ম্যানেজার এর সাত বছর জেল হলো । কারণ ভিডিওতে কোথাও ভুতের ছবি পাওয়া গেলো না। রঞ্জন মানে ম্যানেজার জানালো সে খুন করছে। কারণ তার বোন ওই মালিকের লালসার শিকার হয়ে ছিলো। 

যাইহোক পুরো ঘটনাটায় নায়ক ছিলাম আমি। তাই সবকিছু ভালোয় ভালোয় মেটাতে পেরে নিজেকে সুপার ম্যান ভাবতে শুরু করছিলাম। আমার বীরত্বের গল্প ফুলিয়ে ফাপিয়ে বলছিলাম। কিন্তু একটা আডায় তখন দিয়াকে সবাই প্রোপজ করার কথা বললো। সব বীরত্ব সাহস আমার বেলুনের মতো ফেটে গেলো। আর সুপার হিরোটাও কোথায় যেনো হারিয়ে গেলো।

,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Action