Priyanka Chatterjee

Abstract Tragedy

2  

Priyanka Chatterjee

Abstract Tragedy

মায়ের ডাক

মায়ের ডাক

3 mins
612


আবাসনের প্রথমতলার ওয়ান বি ঘরের বেলটা বাজিয়ে যাচ্ছি। রাত প্রায় নটা।দরজা খুলছে না দেখে আমার ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে দরজা খুলে দেখি মা আসছে ধীরে ধীরে। ঢুকেই বলি 

--কি গো মা কতক্ষণ লাগে বলতো, মরে গেছিলে নাকি??

মা সেই এক রকম ভাবে বললো

-- দাঁড়া বাবা সময় লাগেতো। জানিস দিপু আমার মন বলছিল তুই আজ আসবি।

আমি শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে বললাম 

--কেন??

আজ যে তোর জন্মদিন। আমার মনে ছিল কিন্তু মা এর মুখ থেকে শুনতে চাই ছিলাম। মিতুরতো মনেও নেই। একবার আমায় উইশ করলনা। ভুলে গেছে। আগে মন খারাপ হতো,এখন আর হয় না।

প্লেনটা ল্যান্ড করতে একটু দেরি করল আবহাওয়া খারাপ ছিল। দমদম থেকে ক্যাব পেতে দেরি হল। মিতু আমার স্ত্রী।আমি তথাগত। কাজের জন্য বিদেশে যেতে হয়েছিল। মিতু এই কদিন ওর বাবা মা এর কাছে গেছে। ও জানে আজ আমি ফিরবো। তাও ফোন করেনি।অগত্যা আমি করলাম। মিতু বললো 

--তুমি তো ভুলে গিয়েছিলে আজ পিন্টুদার ছেলের পৈতে। আমি কাল বাদে পরশু ফিরবো।

ভীষণ বিরক্ত লাগলেও কিছু করার নেই।ক্যাব ড্রাইভারকে বললাম আপনি গাড়ি ঘুরিয়ে নিন। মা এর কাছেই যাই। ওই একটা মানুষের ওপরতো যত জোর খাটে। কত পুরোনো কথা যে মনে পড়ছিল।

আমি তখন ইঞ্জিনিয়ারিং এর দ্বিতীয়বর্ষের ছাত্র। হঠাৎ খবর এলো বাবা আর নেই। মা তখন থেকেই কেমন চুপ হয়ে গেল। বাবা টাকা পয়সা রেখে যান নি। থাকার মধ্যে ছিল বাড়িটা। মা নিজের গয়না বন্দক দিয়ে বাড়িটা তৈরী করতে সাহায্য করেছিল। বাবাকে বলত

--এই দরজাটা হল আমার বাউটি জোড়া, আর জানালাটা হল সীতেহার। 

মা সেই বাড়িটা প্রমোটারকে দিয়ে দিল। সেই টাকা দিয়ে আমার কলেজের খরচ চালায়। অবশ্য প্রমোটারকাকু মাকে একটা ফ্ল্যাট দিয়েছিল।

ঘন্টাখানেক পরেই মা এর আবাসনের সামনে এসে পৌঁছলাম। বড় শান্তি এখানে। বাথরুম থেকে বেরুতে দেখলাম মা পায়েস হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।মনটা ভরে গেল। রাতের খাবার খেয়ে শুতে গেলাম ,মা মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো 

---তোকে জন্মদিনের পায়েস না খাইয়ে মরেও শান্তি নেই দিপু।

আমার সব জন্মদিনে মা পায়েস করে। খুব খুশি হয়েছিল মা, যখন মমতাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলাম। কিন্তু মিতু চায়নি একসাথে থাকতে। তাই অশান্তি না করে মাকে না জানিয়ে অন্য ফ্ল্যাট বুক করি। মা খুব কষ্ট পেয়েছিল। মুখে কিছু বলেনি। আমি মাকে টাকা পাঠাতাম মিতুর আপত্তি করতো কখনো কখনো যদিও। অন্যমনস্ক হয়ে গেছিলাম। হঠাৎ শুনতে পেলাম মা বলছে 

--শোন বাবু আলমারির ড্রয়ারে লকারের চাবি আছে। ওখানেই ফ্ল্যাট এর দলিল আর ব্যাঙ্কের কাগজপত্র আছে। আমি তোর পাঠানো টাকা জমিয়ে এফডি বানিয়েছি। তুই নমিনি আছিস। 

আমি বিরক্ত হয়ে বললাম থামোতো। বড় বাজে বক তুমি। মিতু না থাকায় খুব ভালো লাগছিল মাএর সান্নিধ্যে পুরোনোদিনের মত। ক্রিম কালারের শাড়িটায় মাকে বেশ লাগে।

কখন ঘুমিয়ে গেছি জানিনা। বেল বেজেই চলেছে। আমি মাকে ডাকলাম। শেষে নিজেই উঠে দরজা খুললাম। দেখি তপনবাবু আর সুজন,ওনারা এই আবাসনে থাকেন। আমায় দেখে চমকে উঠলেন। বললো 

--কতবার তোমায় ফোন করলাম পাই নি। ঘরে চাবি দিলাম ঐ তোমাদের কাজের মেয়ে বীণা থেকে নিয়ে। গেট খোলা দেখেই তো বেল দিচ্ছিলাম। বৌদিকেও ফোন করলাম। উনি বললেন 

--তোমরা যা পারো করো। আমায় বিরক্ত কোরোনা।  

আমার মনে পড়ল ফোনতো সুইচঅফ। আমি কিচ্ছু বুঝতে পারছিলাম না। বললাম 

--খুলে বলুন একটু।

তপনবাবু বললেন 

--তোমার মা এর অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে কাল রাতে উনি মারা গেছেন।

আমার মাথা কাজ করছিল না। আমি বললাম 

--কালতো মা ছিল।

তপনবাবু আমায় না ধরলে আমি পড়েই যেতাম।

পরের ঘটনা খুব সংক্ষেপে বলি।হাসপাতালে গিয়ে দেখি মা ওই ক্রিম রঙের শাড়ি পরে চিরশান্তির নিদ্রায় শায়িত। আমার চোখের জল বাধ মানছেনা। দাহ কাজ শেষ করে ঘরে ফিরে এলাম। ড্রয়ার টেনে দেখি আমার গোছানি মা সব গুছিয়ে রেখেছেন তার কুপুত্তুরের জন্য। কিছু করতে পারিনি। ফোন করলাম মিতুকে ,মিতু আগের মতই ঝাঁঝের সাথে কি বলছিল যেন, আমি দায়িত্বজ্ঞানহীন আরো বেশ কিছু কথা, শোনার ধৈর্য্য আমার ছিল না তাই আমি বললাম --সম্পর্ক এখানেই শেষ, ডিভোর্সের পেপারটা তুমি পেয়ে যাবে। 

মোবাইলে ফোন কাটার পরে একনাগাড়ে বিঁপ বিঁপ শব্দ শোনা যাচ্ছে। 


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract