Nityananda Banerjee

Fantasy Thriller

4  

Nityananda Banerjee

Fantasy Thriller

ললন্তিকা ধারাবাহিক

ললন্তিকা ধারাবাহিক

5 mins
382


পর্ব এগারো


কবি সাহিত্যিক আরণ্যক বসুরায় গর্বের সঙ্গে স্বীয়পক্ষীয় বিশল্যকরণী নিয়ে যখন আলোচনা সভায় ঢুকলেন ; তখন ললন্তিকার সর্বাঙ্গ ঘামতে শুরু করেছে। 

শেষ আশাটুকুর এমন করুণ পরিসমাপ্তি সে কল্পনাতেও আনেনি । প্রথম দিকে যে রঙীন ছবি সে এঁকে রেখেছিল অন্তরের গভীরে আজ এক লহমায় তা' ভেঙে চুরমার হয়ে গেল ।

মি: জগন্নাথ মিত্র মহাশয় তাঁর আনীত রিপোর্টে একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে তুলে দিলেন সিনিয়রের হাতে। মি: সিদ্ধান্ত পাঠ করলেন সেই রিপোর্ট এবং ললন্তিটকাকে জানালেন সে যে কেসে নিজের দাবী প্রতিষ্ঠিত করেছে তা বালির বাঁধ ছাড়া কিছু নয় ।

ললন্তিকার দুই চোখ জলে ভরে গেল । মি: মিত্র তাকে সান্ত্বনা দিলেন । নামজাদা লোকেদের বিরুদ্ধে মামলা আনা যে কত রিস্কি তা প্রমাণ করতে আর কিছু বাকি নেই । 

সিদ্ধান্ত সাহেব বললেন - মিস সেন; আমি দু:খিত । আপনাকে কোন সাহায্য করতে পারলাম না । তবে একটা পরামর্শ দিতে পারি। মিউচুয়াল আণ্ডারস্ট্যাণ্ডিঙের মধ্যে যদি একটা মীমাংসায় আসেন ।

আরণ্যক বসুরায় বললেন - ওনার ইচ্ছে হলে মামলা করতেই পারেন, তবে আমি যে মানহানির মামলা দায়ের করব সে ব্যাপারে একশো শতাংশ নিশ্চিত ।

ললন্তিকা ফ্যালফ্যালে চোখে সিদ্ধান্তের প্রতি চেয়ে রইল ।

মি: সিদ্ধান্ত বললেন - মি: বসুরায় , আপনি কি চান ?

আরণ্যক বললেন - মামলা হলে প্রতিমামালা তো করতেই হবে ।

- আমি কিন্তু একটা অন্য কথা বলছিলাম। আপনি একজন সাহিত্যিক। সমাজে লেখক সাহিত্যিকদের নিজস্ব একটা ঘরাণা আছে আর সম্মান তো সবার উপরে । এমন একটা ন্যাক্কারজনক পরিস্থিতি থেকে - আমি অনুরোধ করছি - আপনি বিরত থাকলেই মঙ্গল ।

- সে তো বুঝি স্যার কিন্তু প্রতিপক্ষ কি তা বুঝবে ?

বলে আড় চোখে ললন্তিকাকে দেখে নিলেন কি তার প্রতিক্রিয়া ।

মি: মিত্র বললেন - যদি উনি সম্মত হন , আপনি কি রাজী হবেন ?

আরণ্যক বসুরায় এর কোন প্রতিক্রিয়া দিলেন না।ললন্তিকা ভাবতে থাকল । তাকে এক প্রান্তে ডেকে নিয়ে মি: সিদ্ধান্ত বললেন - দেখুন মিস সেন ! মি: বসুরায় যদি মানহানির মামলা আনেন ; আপনি তো নিশ্চয় হেরে যাবেন । তখন তিনি যদি লাখ লাখ টাকা দাবী করে বসেন ---

ললন্তিকা বলল - সবই বুঝতে পারছি স্যার । লাখ লাখ কেন বিশ হাজার টাকা দিতেও আমি অপারগ ।

মি: সিদ্ধান্ত বললেন - হাজারের ব্যাপার নয় মিস সেন । স্বনামধন্য মানেই ভি আই পি স্তরীয় । আদালত তো আর আপনার আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করবে না ; হয়তো কোটি টাকাও জরিমানা করতে পারে অথবা জেল অদবা দুটোই । সেজন্য বলছিলাম মামলা তুলে নিন । অবশ্য আপনি এর জন্য কিছু অঙ্কের টাকা দাবী করতেই পারেন। কারণ ঘটনাটা তো মিথ্যে নয়। কিন্তু তার সত্যাসত্য প্রমাণ করাই অসাধ্য ।

ললন্তিকা বেশ কিছুক্ষণ ভেবে নিল । তারপর বলল - কতটাকা দেবেন উনি?

- আপনি একবার বলে দেখুন।

- কমপক্ষে বিশ লাখ দিলে আমি মামলা তুলে নিতে রাজী আছি । আপনি ওকে বলুন ।

- আমি তো বলতে পারব না মিস সেন । আমাদের সামনে আপনাকেই তা' বলতে হবে । কেন না এ বিষয়েও তো একটা আইনি কন্ট্রাক্ট করতে হবে !

ললন্তিকা পরিষ্কার বুঝে গেল মামলা করা চলবে না এবং মি: বসুরায়ের প্রভাব প্রতিপত্তি এত বিশাল যে সে ইচ্ছে করলেই মামলা উল্টে দিতে পারে ।

মি: মিত্র ললন্তিকার পক্ষে কথা বললেন। আরণ্যক বসুরায়কে বললেন - মি. বসুরায়, মিস সেন যদি মামলা প্রত্যাহার করে নেয় ক্ষতিপূরণ বাবদ আপনি তাকে কতটা পরিমাণ অর্থ দিতে পারবেন ?

মি: বসুরায়ের সঙ্গে মি: সিদ্ধান্তের এ বিষয়ে ইতিমধ্যেই কথা হয়ে গেছে। সেই মত দু'লাখ টাকা তিনি সঙ্গেই এনেছেন ।

বললেন - ও কত চায় ?

ললন্তিকা বলল - জীবন ধারণের মত অন্তত বিশ লাখ।

মি: আরণ্যক বসু বললেন - তা হলে মামলাই চলুক বরং।

আমি বড়জোর লাখ দুয়েক দিতে পারি।

মি: সিদ্ধান্ত বললেন - তাহলে তো মিটেই গেল। কি বলেন মিস সেন ?

- লাখ পাঁচেক পেলেও ভালো হোত। সে যখন হবে না; তখন দু'লাখই সই। 

ললন্তিকা ভেবে নিল যা পায় তাই লাভ । আবার আরণ্যকের ভাবনা - যাক, বাঁচা গেল । এবার ললন্তিকা চেপ্টার ক্লোজড বলেই ধরে নিলাম ।

চুক্তিপত্র তৈরি হল । 

* আমি মিস ললন্তিকা সেন এতদ্বারা ঘোষণা করিতেছি যে মাননীয় সাহিত্যিক শ্রী যুক্ত আরণ্যক বসুরায় মহাশয়ের সহিত কার্য্যকারণ সম্পর্কিত অচলাবস্থা নিরসনে আমার প্রাপ্য বাবদ টা.২০০০০০-০০ ( দুই লক্ষ টাকা ) নগদ ভুগতান হেতু তাঁর বিরুদ্ধে আমার আর কোন বৈধ বা অবৈধ সম্বন্ধ রহিল না । অদ্য ১৪ই আশ্বিন ১৪২৮ বঙ্গাব্দ শনিবার অপরাহ্ন তিন ঘটিকা হইতে আমাদের জটিল সম্পর্কের অবসান হইল । ভবিষ্যতে আমি কোনদিন কোনপ্রকারে শ্রীযুক্ত আরণ্যক বসুরায় মহাশয়কে কোন বিষয়ে জ্বালাতন করিব না।

নিবেদন ইতি

বিনীত মিস ললন্তিকা সেন। *

স্বাক্ষর করে দিল ললন্তিকা । আর দু'লাখ টাটা নগদ নিয়ে মি: জগন্নাথ মিত্রের সঙ্গে প্রস্থান করল ।

মি: সিদ্ধান্ত আরণ্যককে বললেন - ইজ্জতের মূল্য দুই লক্ষ কিন্তু আমার পারিশ্রমিক আশা করি এর চেয়ে অন্তত কিছু বেশী নিশ্চয়ই।

হাসতে হাসতে আরণ্যক বসুরায় বললেন - অর্থ দিয়ে আপনার মূল্যায়ণ হয় না । তবে দক্ষিণা হিসাবে পাঁচ লক্ষের চেক অবশ্যই আপনার প্রাপ্য ।

মি: সিদ্ধান্ত বললেন - চেক বা অনলাইন ট্রান্সফার চলবে না । আপনি কাল আমাকে নগদ অর্থ দিয়ে যাবেন ।

মি: বসুরায় বললেন - প্লীজ আমার সঙ্গে আসুন। আমি এখনই আপনিকে ক্যাশ দিয়ে দেব ।

- তার আর প্রয়োজন হবে না মি: আরণ্যক বসুরায়। আপনার কথাই আমার কাছে যথেষ্ট । কোন তাড়া নেই আপনি আগামীকাল নিয়ে আসবেন ।

- সে দিক দিয়ে দেখতে গেলে মি: জগন্নাথ মিত্রেরও পাওনা রইল । তিনিও যথেষ্ট হেল্প করেছেন।

আরণ্যক মিত্রের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বললেন ।

মি: সিদ্ধান্ত বললেন - তার কোন প্রয়োজন নেই। আমি কসাই নই। ওই টাকাই আমরা ফিফটি ফিফটি ভাগ করে নেব ।

আরণ্যক বসূরায় নমস্কার জানিয়ে বিদায় নিলেন ।

বাড়িতে কনকলতা দেবী একলা রয়েছেন। শনিবারের বিকেলটা তাঁকে নিয়ে বেড়াতে যাবার কথা আছে। আরণ্যক জলদি গাড়ি চালিয়ে বাড়ির দিকে চললেন।

দু লক্ষ টাকা ললন্তিকার নিকট অনেক মনে হল । যা হোক কিছু প্রাপ্তি তো হল । 

ললন্তিকাকে মি: জগন্নাথ মিত্র তার বাড়ি পৌঁছে দিলেন। অতগুলো টাকা নিয়ে বাসে যাওয়া উচিত নয় ভেবে বললেন - আপনাকে বাড়িতে পৌঁছে দি !

ললন্তিকা আপত্তি করল না । বাড়ির দরজায় নেমে মি: মিত্রকে আপ্যায়ণ করল। কিন্তু সময়াভাবের জন্য মি: মিত্র তার অনুরোধ রাখতে পারলেন না । 

হঠাৎ করে গাড়ি থেকে নামতে দেখে ( তাও আবার প্রাইভেট কারে ) লোকটার সন্দেহ হল । না জানি আবার কাকে বলির পাঁঠা করল মেয়েটা। কৌতূহল চেপে রাখতে না পেরে সটান তার পিছু পিছু বাড়িতে ঢুকে পড়ল সে ।

চমকে পিছনে তাকাতেই দেখল তার দাদা । বলল

- ও তুই! আমি তো ভীষণ ভয় পেয়ে গেছলাম রে দাদা।

- কোথায় ছিলি দুপুর থেকে ? আমি হন্যে হয়ে খুঁজে মরেছি।

- উকিলের কাছে গেছলাম ।

- তা কি হল কেসটার ?

- মিটিয়ে নিলাম রে ! উকিলকে বলে কেস উইথড্র করে নিলাম।

- ভুল করলি । জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল করে বসলি । আমি হাণ্ড্রেড পার্সেন্ট সিওর ছিলাম তুই জিতে যাবি। হায় ভগবান ! এ কি করলি ?

- আগে সবটা শোন , তারপর ভুলত্রুটি ধরবি ।

- কি বলবি আর? তোর মত ভীতু মেয়ে জীবনে দেখিনি।

ললন্তিকা সব ঘটনা খুলে বলল । আরণ্যক ডসুরায়ের গায়ে হাত দেওয়া চাট্টিখানি কথা নয় রে । অনেক চিন্ত ভাবনা করে দেখলাম ; অবশ্য উকিলও সম্মতি দিল তাই উঠিয়ে নিলাম কেস । 

- পরিবর্তে কিছু পেলি ?

- তেমন কিছু না । মাত্র দু'লাখ ।

- যাক ভালো হল । রেখে দে টাকাটা । 

এমন সময় দরজা থেকে আওয়াজ হল কে যেন ডাকছে

- অর ? ও অর !

অর বলল - আসছি ।

( ক্রমশ )



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Fantasy