লকডাউন ( ১৮ )
লকডাউন ( ১৮ )


আবার নতুন সকাল । দিন চলেছে অলস ছন্দে। কাজ করতে করতে ভাবলাম বহুদিন কাকু–কাকির খোঁজ নেওয়া হয়না। আজ ফোন করব। আসলে ফোন এখন নিজের কাছে থাকেই না।মেয়ের অনলাইন ক্লাস চলে। সম্ভব হলে ভিডিও কল করে মা-বাবা, কাকু - কাকি আমি একসঙ্গে কথা বলব। কাকু জানুয়ারিতে কিছু দিন নার্সিংহোমে ছিলেন। অসুখ বিসুখকে খুব একটা পাত্তা দেননা। যতক্ষন না অসুখ ঘাড়ে এসে বসে এই বয়সেও ইচ্ছা হলেই রাত নটায় নিজে গাড়ি চালিয়ে কাকিকে নিয়ে উপস্থিত হন,মা-বাবার কাছে। আগে মা-বাবার সঙ্গে দেখা করার পর সিঁড়ি দিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে উঠে আসতেন আড়াই তলায়- আমার ফ্ল্যাটে শাশুড়িমার সঙ্গে দেখা করতে। গত একবছর ধরে আর্থারাইটিসের জন্য আসতে পারেননা। সিঁড়ি বেয়ে আড়াইতলায়। পাশেই আমি থাকি ফোন করলে সপরিবারে আমরা দেখা করতে নেমে আসি, বাড়ি ফেরার সময় সঙ্গে নিয়ে আসি বলরাম মল্লিক ও রাধারমণ মল্লিকের মিষ্টি।
কাকু নার্সিংহোমে যখন ছিলেন একদিন ভিজিটিং আওয়ার্সে গিয়ে দেখি কাকু খুব উত্তেজিত – সামনে দাঁড়ানো সিস্টারের হাতে একটা ছাল ছাড়ানো আপেল। কাকু সিস্টারকে বলছেন – ‘ আমার নার্সিংহোমে্র বিলে আপনি পুরো আপেলের দাম লিখবেন আর আমাকে দেওয়ার সময় আপেলের ছাল ফেলে অর্থাৎ সমস্ত পুষ্টি ফেলে দিয়ে আপেল খেতে দিচ্ছেন, আপনি জানেন আপেলের সব পুষ্টি আপেলের ছালেই থাকে।’ আমি জানতে চেয়েছিলাম কাকু কেমন আছেন? উত্তরে কাকু জানান, ডাক্তারবাবু এসে বলেছেন কাল জেনারেল বেডে শিফট করে দেবেন। আগের থেকে শারীরিক অবস্থা ভালো হলেও গতকাল সারা রাত ঘুম হয়নি । পাশের বেডের পেশেন্ট সারা রাত চিৎকার করেছেন। আমি বলি নিশ্চই ওনার খুব কষ্ট হচ্ছিল কাকু জানান ভদ্রলোক আসার পর থেকে দুটাকা ফেরত পাবার জন্য সারা রাত চিৎকার। সিস্টারদের, ওয়ার্ড বয়দের বলছিলেন তাঁর প্রাপ্য দুটাকা ফেরত দিতে। সিস্টার বলেছিলেন-‘আপনার নামে কোনো দুটাকা এখনো এসে পৌঁছায়নি। এসে পৌঁছালেই দেওয়া হবে।’ সিস্টার আরো জানতে চান দুটাকা দিয়ে ভদ্রলোক কী করবেন ? তাঁর উত্তরে ভদ্রলোক বলেছিলেন দুটাকা জমিয়ে হরলিক্স কিনবেন। আরো দুটাকা পেলে গেঙ্গি কিনবেন। এই কথা শুনে ওয়ার্ড বয় হেসে বলেছিল দুটাকা দিয়ে আজকের দিনে কী হয়? এই কথা শুনে ভদ্রলোক রেগে গিয়ে আরো চিৎকার করে বলতে থাকেন কত দুটাকা, কত এক টাকা কত পাঁচ টাকা মিলে একশ টাকা হয় সে জ্ঞান আছে। সব মূর্খের দল। সিস্টার ছুটে এসে ভদ্রলোককে শান্ত করার চেষ্টা করেন। কাকু বলেন, আগামী কাল যেখানে জেনারেল বেডে শিফট হবেন সেখানে বেড যেন জানলার পাশে থাকে। কাকুর কাছে জানতে চেয়েছিলাম বেডের পাশে জানলা থাকলে কী সুবিধা হবে ? কাকু জানান নেচারের কাছাকাছি থাকলে তবেই তো তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবেন । আজ পুরনো কথার ভিড়ে অনেক রাত হয়ে গেল দেখি আগামীকাল ফোন করব।