লকডাউন (১৯)
লকডাউন (১৯)


আবার একটা করোনার ভয়ে ভীত নতুন সকাল করোনা মুক্ত সকাল আমরা কবে দেখবো কে জানে! আজ সকালে উঠেই ঠিক করলাম, আজ কাকু ও কাকির খবর নেব। মেয়ের বিকেল পাঁচটার পর ক্লাস নেই। মা-বাবকেও সঙ্গে নিয়ে রাত আটটায় ভিডিও কনফারেন্স। দেখা হবে মানুষগুলোর সঙ্গে প্রযুক্তির উন্নতিকে কাজে লাগিয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে খানিকক্ষণ গল্প করা যাবে।
ঘড়ির কাঁটা এগোতে লাগলো। ঠিক আটটার সময় প্রযুক্তির রথে চেপে দেখা হল। জানা গেল কাকু ও কাকি ভালো আছেন। কাকুর কাছে শুনলাম আজ থেকে কাকুর কোমরে ব্যথা। কাকির কাছে শুনলাম কাকুর কোমরে ব্যথার ইতিহাস। কাকুর ছাদ ভর্তি টব। তাদের যত্নআত্তি করতে গিয়ে কাকুর কোমরে ব্যথা। ছাদের কলের কাছে বালতি। বালতির ভিতরে আছে মগ প্রত্যেকবার নিচু হয়ে বালতি থেকে জল দিতে গিয়ে কোমরে ব্যথা হয়েছে। শুধু কী জল? গাছের কী শুধু জল হলে হবে? সার চাই। লকডাউনের বাজারে সারের ব্যবস্থা কাকু বাড়িতেই করেছেন কাকু বিকেলে কাকিকে, সারদিন চার দেওয়ালের মধ্যে আবদ্ধ না থেকে একটু ফ্রেশ এয়ারের জন্য ছাদে যেতে বলেছিলেন। কাকিও পতিব্রতা নারীর মত কোমরে বেল্ট পরে চড়লেন ছাদে। পড়ন্ত বিকেল। পাখিদের দল বেঁধে বাড়ি ফেরা দেখে, সবে গুনগুণ সুরে গেয়ে উঠলেন- ‘অমল ধবল পালে লেগেছে মন্দ মধুর হাওয়া দেখি নাই কভু দেখি নাইএমন তরণী বাওয়া’। ইস্ কিসের যেন বিটকেল গন্ধ।গা গুলিয়ে উঠছে। হঠাৎ দেখেন ভাঙ্গা বালতির মধ্যে পচে যাওয়া শাক সবজি কিছু অংশ। কী বিচ্ছিরি গন্ধ। সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে কাকি জানতে চাইলেন বালতির মধ্যে বিটকেল গন্ধযুক্ত ওটা কী ? কাকু নাকি বিগলিত হেসে জবাব দিয়েছিলেন, নিজ চেষ্টায় সার তৈরির প্রচেষ্টা। বাজার থকে আসা শাকসবজি ধোয়ার পর যা থাকে শুধু তাই নয় পচা টমেটো , পচা পটল যখন থেকে গাছে সার দিচ্ছি গাছগুলো যেন হাত তুলে আশীর্বাদ করছে। কাকি বাবকে অভিযোগ করেন -‘দেখুন মেজদা আপনার ভাইয়ের অবস্থা’ বাবা হেসে চায়ে চুমুক দেন। আমরা প্রত্যকে এক কাপ চা হাতে নিয়েই বসেছি। অনেকদিন পর মা, কাকি ও আমি গান করি। ঘড়ির কাঁটা এগোতে থাকে। আজকের মত ভিডিও কনফারেন্স শেষ করি। ভালো কাটলো আজকের দিন।