লকডাউন (১৫)
লকডাউন (১৫)
সকাল থেকেই সব কাজের ফাঁকে একটা চিন্তা মাথায় আসছে- কেমন আছে জোৎস্না ? দিনে দিনে করোনার আক্রান্ত সংখ্যা বাড়ছে। অবস্থা ভালো নয়। দুপুরে কাজের শেষে ফোন করলাম জোৎস্নাকে। অনেকক্ষণ রিং হওয়ার পর অপর প্রান্তে জোৎস্নার গলা। প্রথমেই জিজ্ঞাসা করল আমরা সবাই কেমন আছি ? দিল্লিতে বোন কেমন আছে? সবাই কেমন আছে জানবার জন্য আজি নাকি আমকে ফোন করতো। টিভিতে খবর দেখে ওর খুব চিন্তা হচ্ছিল। আমি জানতে চাই ওখানের কী অবস্থা? সবাই কেমন আছে? জ্যোৎস্না জানায়, কাজে কেউ বেরোতে পাচ্ছেনা। তাই সবাই ভালো আছে, শুধু খাওয়ার চিন্তা। এই ভাবে চললে খাবার কী করে জোগার হবে কে জানে! জোৎস্না শ্বশুরবাড়ি থাকে না। গোবিন্দপুরেই থাকে। মিশনে বড় ছেলে পড়াশুনো করে। একি ছদের তলায় জ্যোৎস্নারা দিদা,মামা-মামি, তাদের ছেলে মেয়ে সবাই মিলে প্রায় বারোজন মানুষ থাকে। এরা দিন আনে দিন খায় । হঠাৎ করে লগডাউন হয়ে এরা দিশেহারা। আমি জানতে চাইলাম, প্রশাসন থেকে সাহায্যের ব্যবস্থা করেছে? জোৎস্না জানায় একবার পাঁচ কিলো চাল পেয়েছিল কিন্তু সে আর কতদিন! আমি জানতে পারি ভোরবেলায় এক বাড়ি কাজ করতে যেতো । আমি বলি সম্ভব হলে সেই বাড়িতে গিয়ে
ওদের ব্যাংক ডিটেলস নিয়ে আসতে যাতে প্রয়োজনে জোৎস্নাকে আমরা সাহায্য করতে পারি। সে জানায় কাল সকালে গিয়েই সে আমায় ব্যাংক ডিটেলস জানাবার জন্য ফোন করবে। ফোনটা রাখলাম। মনটা খারাপ হয়ে গেল। এক অন্য ভারতবর্ষ। এক ভারতবর্ষ প্রয়োজনের অতিরিক্ত বাজার করে চলেছে আর অন্য ভারতবর্ষের বাজার করা সম্ভব হচ্ছেনা।
ফোন রেখে মন খারাপ হয়ে যায়। দুপুরে এই বিষয়ে প্রাণনাথের সঙ্গে কথা বলি। সে তক্ষনি ফেসবুকে পরিচিত একজনের সঙ্গে কথা বলে তার ব্যাঙ্ক ডিটেলস যোগার করে। বাড়ির অ্যাড্রেস জানানোর জন্য জোৎস্নাকে ফোন করলে দেখা যায় সে তার বরকে নিয়ে যে বাড়িতে কাজ করে সেখানে পৌঁছে গেছে। এক সময় সেই পাড়ায় থাকতাম তাই পরিচিত বেড়িয়ে গেল। যে বাড়িতে কাজ করে সেই বাড়ির দিদির অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠাতে বলে। প্রাণনাথ সেই অ্যাকাউন্টেই টাকা পাঠায়।
পরের দিন ফোন আসে জ্যোৎস্নার, যে বাড়িতে কাজ করে সেই দিদি টাকা দিয়ে দিয়েছে। বাড়ি ফেরার পথে চাল, ডাল,তেল প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে বাড়ি ফিরেছে। আমার কেন জানি হঠাৎ মন ভালো হয়ে গেল।