Prantik Biswas

Abstract Comedy Inspirational

4.6  

Prantik Biswas

Abstract Comedy Inspirational

কড়চা #২১ । চীনের জন্য চিনচিন

কড়চা #২১ । চীনের জন্য চিনচিন

5 mins
251


২৮ এপ্রিল ২০২০


আমার এদিককার অ্যাসাইনমেন্ট কিন্তু প্রায় শেষের দিকে। বস বলেছে আর কয়েকদিন বাদেই অন্য কোনোখানে পাঠাবেন। বলেননি কোথায়, সে কথা জিগ্যেস করার এক্তিয়ারও আমার নেই। যাইহোক, এই দেশটায় আসার পর থেকে প্রায় দেড়মাস তো কাটিয়ে দিলাম কলকাতা ও আশেপাশের জায়গায়। আগেই তো বলেছি কলকাতা ও এই রাজ‍্যের ওপর আমার দুর্বলতার কথা। কড়চাতে যতোটা পেরেছি সেটা লিখে রেখেছি। আপনারা যদি জিগ‍্যেস করেন কেমন লাগলো তবে আমার সোজাসাপ্টা উত্তর: মন্দ লাগেনি। বাঙালিদের মধ্যে অনেক ভালো-খারাপ, গুণ-দোষ দেখলাম। বলতে দ্বিধা নেই এদের ভালো লেগেছে আমার। এরা জানতে আগ্রহী (যদিও জানার পরক্ষণেই তা মেনে নিতে নারাজ)। এদের পোশাক, খাবার, ভাষা সব ব্যাপারেই পরিবর্তন ভালবাসে,। পাশাপাশি এরা পুরনো ট্র্যাডিশনটাকেও কিছুটা ধরে রেখেছে, একেবারে ফেলে না দিয়ে। তবে আমার যেটা সবথেকে ভালো লেগেছে, তা হলো সব বিষয়ে এদের তর্ক - শুনলে অনেক কিছু জানা যায়, অনেক বিষয়ে ভাবায়!


একটা সেলুনে দেখি আদ্ধেক শাটার নামানো। ভেতরে একজন মাস্ক লাগিয়ে বসে অপেক্ষা করছে। বিকাশ একজনের চুল কাটছে, অল্প দূরে দাঁড়িয়ে। একজনের কাটা শেষ হলেই ফোনে খবর চলে যাচ্ছে পরের কাস্টমারের কাছে। পুলিশের গাড়ি টহল দিচ্ছে বলে এই সতর্কতা। যদিও গতকালই লোকাল থানার ওসি বিকাশকে দিয়ে চুল কাটিয়েছেন ওকে নিজের বাড়িতে ডেকে নিয়ে।

- হ্যাঁরে, কতক্ষণ আর?

- এই তো, আর পনেরো মিনিট। চা খাবেন?

- চা পাবি কোথায়?

- এই তো সুবলদাকে ফোন করলেই চুপিচুপি ডেলিভারি।

- বাঃ। আমার জন্যেও বলিস (যে চুল কাটাচ্ছিল, সে বলে ফেললো)।

- দাদা, আপনি বিজনেস করেন, তাই তো? বাজারের ওপাশে থাকেন মনে হয়...

- না দাদা, থাকি কালীমন্দিরের গায়ে। কলেজে পড়াই। রিটায়ার করব শিগগিরই। সক্রিয় রাজনীতিতে আসব ভাবছি। আপনি?

- চাকরি, কাস্টমসে। তা দাদা কোন রঙের?

- সারা পৃথিবীতে এখন যে রঙ চলছে...বিকাশ কাঁচি থামিয়ে ফুট কাটলো।

ভদ্রলোক ঠিক ধরতে পারলেন না ও কি বলতে চাইছে।

- সেটা আবার কি?

- দাদা, সারা পৃথিবীটাই তো এখন নাকি রেড জোন।

- হুমম।

আরেকজন শাটার তুলে মাথাটা ঝুঁকিয়ে ঢুকলো। মুখ আর নাক ঢাকা নেই, মাস্কটা ঝুলছে গলায় --

- আগে আগে চলে এলাম বিকাশ।

- একটু ঘুরে আসুন না। নাহলে এইটুকুনি জায়গায় এত লোক দেখলে পুলিশ বাটাম দেবে। ব‍্যাটারা টহল দিচ্ছে, নজ‍র রাখছে!

- তোর এই বাটামের কথায় মনে পড়ল, কাল এক বন্ধুকে ফোন করেছিলাম। ওর গিন্নি ফোন ধরে বলল যে ও ব‍্যস্ত আছে, পায়ে মালিশ করছে। কথা বলে জানলাম বাজার করতে গিয়ে দরাদরি করছিল কয়েকটা দোকানে। পুলিশ দিয়েছে এক ঘা। তারপর ফেরার পথে বাড়ির সামনে মোড়ের কাছে এসে সেই ঘটনাটা বাজারমুখো দু'চারজন প্রতিবেশীকে বলতে যাচ্ছিল, এমন সময় আরেকজন পুলিশ হাজির। সেও কষিয়েছে আর এক ঘা। বেচারা কাঁদো কাঁদো হয়ে বলেছে, "স‍্যার, মারের একটা রসিদ করে দিন, নাহলে পরের মোড়ে আবার কেউ ধরে পেটাবে!"

সবাই শুনে সশব্দে হেসে উঠলো। একফাঁকে আমিও তো ঢুকে পড়েছিলাম ঐ সেলুনে, ওদের কথা শুনছিলাম গোপনে। আমিও ঐ কথাটা শুনে মনে মনে বেশ মজা পেলাম। হাসির শব্দে বিকাশের কপালে দুটো ভাঁজ পড়ল। বলে উঠল,

- দাদা, একটু আস্তে। ধরতে পারলে আমার দোকানের লাইসেন্স বাতিল করে দেবে।

- বললেই হল বাতিল করবে। একি চীনে তৈরি পি পি ই কিট নাকি?

- ঠিক বলেছেন। ব্যাটারা নাকি ব্যবহার করা কিট পাঠিয়েছে!

- বলেন কি?

- একদম; হোয়াটস‍্যাপ নম্বরটা বলুন, এক্ষুনি ভিডিও ফরোয়ার্ড করছি।

- চীনের সবকিছুই একদম জালি।

- কেবল এই ভাইরাসটা ছাড়া!

যাঁর চুল কাটা হচ্ছিল তিনি ছাড়া সবাই হেসে উঠলেন। এবার অবশ‍্য আস্তে। বিকাশ বলল,

- দাদা, এবার তো মানতেই হবে যে চীনই এই সবকিছু অনাছিষ্টির মূলে?

- হ‍্যাঁ, বলছে বটে অনেকে, কিন্তু কোনো কিছুই প্রমাণ হয়নি এখনো। চুল কাটতে থাকা ভদ্রলোক এবার মুখ খুললেন।

বিকাশ ওনার গা থেকে চাদরটা খুলে ব্রাশ দিয়ে কাঁধ, মাথা ঝাড়তে ঝাড়তে একটা টিপ্পনী কাটল,

- চীন নিয়ে কথা বললে দাদার আবার বুক চিনচিন করে।

- বলিস কিরে! কোনদিকে ব্যথা করে দাদা, আপনার?

বিকাশ বাঁ চোখ টিপে বলল,

- কোনদিকে আবার! বাঁদিকে...

আবার একচোট হাসির ফোয়ারা। চুলকাটা শেষ হতে ভদ্রলোক উঠে দাঁড়ালেন। বিকাশ ডেটল-জল দিয়ে চেয়ারটার আগাপাশতলা মুছলো। হাতের গ্লাভস ফেলে দিয়ে হাত ধুয়ে আবার একজোড়া নতুন গ্লাভস পরলো। কাস্টমসের ভদ্রলোক এবার উঁচু চেয়ারটায় বসে বললেন,

- তবে যতই আমরা লাল নিয়ে হাসাহাসি করি না কেন, কেরালাই একমাত্র স্টেট যে কিনা সত‍্যি সত‍্যি দেখিয়ে দিল। একজেমপ্লারি পারফরম্যান্স সারা দেশের মধ্যে।

- সেটাই এক্সপেক্টেড!

একশো টাকার একটা নোট বিকাশের হাতে ধরিয়ে বেরিয়ে গেলেন ভদ্রলোক।

- কেরালায় কি হয়েছে দাদা? বিকাশ জিগ্যেস করলো।

- দেশের মধ্যে করোনা তো কেরালাতেই প্রথম আসে। অথচ দেখো ওদের আক্রান্তের বা মৃত্যুর সংখ্যা এখন অন্য রাজ্যের তুলনায় অনেক কম।

নতুন আসা ভদ্রলোক সায় দিলেন ঘাড় নেড়ে। কাস্টমসের ভদ্রলোক এই সমর্থনে খুশি হয়ে আবার মুখ খুললেন।

- জানেন, একেবারে গোড়ায় কিন্তু ওরা ঠিক বুঝতে পারে নি। তারপরেই ছবিটা পালটে গেছে। এখন ওরা ব‍্যাপারটাকে সঠিক গুরুত্ব দিচ্ছে, লড়বার চেষ্টা করছে নানাভাবে। প্রচার চালাচ্ছে, রাজ‍্যবাসীকে সচেতন হতে বলছে। কেউ করোনা-আক্রান্ত কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে জনবহুল জায়গায় বেশ কিছু স্বয়ংক্রিয় স্ক‍্যানার বসিয়েছে বিদেশ থেকে আনিয়ে। ঐ যন্ত্রের সাহায‍্যে আপনি নিজে নিজেই পরীক্ষা করে জানতে পারবেন আপনি করোনার কবলে পড়েছেন কিনা! 

নবাগত এটা শুনে বললেন,

- বাঃ, চমৎকার। একেই তো বলে সরকারি উদ‍্যম। প্রশংসা করতেই হবে। এই প্রসঙ্গে বলি

 - কাগজেও হয়তো পড়েছেন - যেদিন থেকে লকডাউন শুরু হলো সেদিন চোদ্দজন মেয়ে নাকি হায়দ্রাবাদ থেকে ফেরার পথে আটকে গেছিল কর্ণাটক-কেরালা বর্ডারে। কি করবে, কোথায় যাবে এই সব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে ওদেরই একজন নেট ঘাঁটাঘাঁটি করে একটা ফোন নম্বর পায়। পেয়েই সোজাসুজি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে। রাত তখন দেড়টা। অবাক কাণ্ড, মাত্র দু'বার রিং হওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রী নিজেই ফোন তোলেন। সব শুনে ওদেরকে সুরক্ষিতভাবে যার যার নিজের বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।

- এসব গল্প ছাড়ুন দাদা। বোঝেন তো, এরা পলিটিক‍্যাল পার্সন, নির্ঘাত কোনো পাবলিসিটি স্টান্ট হবে!

- হতে পারে, তবে খবরটা কেউই জানতো না। সরকারের তরফ থেকে কোথাও কোনো স্টেটমেণ্টও দেওয়া হয়নি। পরেরদিন এই চোদ্দজন মেয়ের একজন, যে ফোন করেছিল - নাম আথিয়া না কি যেন - ফেসবুকে পোস্ট করে এই ঘটনাটা সকলের সামনে তুলে ধরে।


সবাই চুপ। কাস্টমসের ভদ্রলোকের দাড়ি কাটতে গিয়ে বিকাশ এক মুহুর্ত আনমনা ছিল, ক্ষুরের ব্লেডে সামান‍্য একটু ছড়ে যাওয়ার মতো কেটে যায়। সঙ্গে সঙ্গে ওখানে আফটার শেভ লোশন লাগিয়ে দেয় বিকাশ। অল্প চিনচিন করছিল। ঘটনাটা শুনে সেটা উধাও!


ধন্যবাদ - শ্রী অমরনাথ মুখোপাধ্যায়



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract