Unmask a web of secrets & mystery with our new release, "The Heel" which stands at 7th place on Amazon's Hot new Releases! Grab your copy NOW!
Unmask a web of secrets & mystery with our new release, "The Heel" which stands at 7th place on Amazon's Hot new Releases! Grab your copy NOW!

Prantik Biswas

Drama Inspirational Tragedy

4.8  

Prantik Biswas

Drama Inspirational Tragedy

কড়চা #১৮ | পয়লা যখন একলা

কড়চা #১৮ | পয়লা যখন একলা

4 mins
546


১৫ এপ্রিল ২০২০

 

মিথ্যে বলবো না। গত তিন-চারদিন একটু দমে গেছিলাম, মনটা একটু খারাপ ছিল। কারণ, সব রাজ্যই দেখলাম লকডাউনের সময়সীমা বাড়াচ্ছে ৩০শে এপ্রিল অব্দি; আর গতকাল সকালে তো এদেশের প্রধানমন্ত্রী সেটাকে আর একটু বাড়িয়ে ৩রা মে পর্যন্ত করে দিলেন। বিনাযুদ্ধে আপনাদের ধরাশায়ী করব, এটা যদিও আশা করিনি, কিন্তু বাস্তবে টের পাচ্ছি যুদ্ধটা দিনকে দিন বেশ কঠিন হচ্ছে। তবে লকডাউন বাড়ানোর অর্থ একটাই - আমাকে নিয়ে এখনো আপনাদের মনে চিন্তা, ভয় সবকিছুই আছে, আপনারা আমাকে সমীহ করছেন। এটা মাথায় আসতেই আবার কিরকম যেন চাঙ্গা হয়ে গেলাম।


আমার আর আপনার অসুস্থতার মধ্যে যদি কেউ থাকে - সেটা কিন্তু আপনি নিজে। নিয়ম মেনে সাবধান হয়ে আপনি যদি ঘরে নিজেকে বন্দি করে রাখেন, অতিথি হিসেবে আমাকে বরণ করার কোনো প্রশ্নই উঠবে না। এবার ধরুন আপনি বাইরে বেরোলেন, আপনার শরীরে আমি এন্ট্রি পেলাম কোনওভাবে। তখন আমার অস্তিত্ব আর আপনার মৃত্যুর মাঝে আপনি ছাড়া আর কে আছে বলুন তো? ঠিক ধরেছেন - ডাক্তার! আর স্বাস্থ্যকর্মীরা। তাই এবার ওদের পিছু নিয়ে কি হালচাল সেটা বোঝার ইচ্ছে হয়েছে আমার...


গতকাল দেখি বৈশাখী গুপ্ত মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে, ডক্টরস চেম্বারে; একলা। ডক্টর বৈশাখী গুপ্ত, বয়স চৌঁত্রিশ। চোখের কোণে জল, যদিও দানা বাঁধার আগেই শুকিয়ে গেছে সেটা। সরকারী হসপিটালের এই ওয়ার্ডটাকে রাতারাতি কোভিড ওয়ার্ড করা হয়েছে। অনেক কিছু চেষ্টা চলছে, কিন্তু বৈশাখী বুঝতে পারছে যে আসল কাজের জায়গায় অনেক ফাঁকফোকর থেকে যাচ্ছে। কিছু কর্তাব‍্যক্তিরা, যাঁরা এই কোভিডের ব‍্যাপারে ডিসিশান নিচ্ছেন তাঁরা ডাক্তার নন বলে বেশ কিছু খুঁটিনাটি বোঝেন না। বোঝা বা জানার কথাও নয়। তার কারণ, এই মেডিক্যাল সায়েন্স যে শুধু বহুদিন ধরে পড়তে হয় তা নয়, অনেকদিন ধরে সেই জ্ঞানটাকে হাতেকলমে ব‍্যবহার করে রপ্তও হতে হয়। বৈশাখীর অ্যাকাডেমিক কেরিয়ার গর্ব করার মতো, বরাবর ফার্স্ট হয়েছে - জয়েন্টের মেডিক্যালে, এম বি বি এস আর এম ডি তে। কিন্তু মেডিক্যাল কলেজের প্রথম ক্লাসে ও যে শিক্ষা সারা জীবনের জন্যে পেয়েছিল তা হল - এটা শুধুমাত্র সায়েন্স নয়। দুই আর দুই চার ছাড়া অন্য কিছুও হতে পারে। সেই সংখ্যাটা কত হতে পারে সেই সম্ভাবনা আন্দাজ করার জন্যেও চাই প্রচুর অভিজ্ঞতা। দু'ঘন্টার ট্রেনিং দিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের তৈরী করা যায় না একটা প্যাণ্ডেমিক ওয়ার্ডের জন্যে। হাতে বন্দুক ধরিয়ে দিলেই কি আর কাউকে সত‍্যিকারের সৈনিক করে তোলা যায়! এই হাসপাতালে ভেন্টিলেটর-ট্রেণ্ড এক্সপিরিয়েন্সড ডাক্তার বলতে ও একা। ব্যাকআপ হিসেবে অন‍্য কেউ নেই। দশদিনের ট্রেনিং কি করে এক - দু'দিনে কাউকে দেওয়া সম্ভব! ও চেষ্টা করছে, কিন্তু রোগীর ঢল নামলে কি ও একা সামাল দিতে পারবে! এছাড়াও টেস্টিং কিট, পি পি ই ও আরও অনেককিছু ছোটবড় চিন্তাভাবনা ওর মাথায় ঘুরছে। এসব নিয়ে বৈশাখী বেশ কিছুটা বিচলিত।


তবে এইজন্য ও কাঁদছিল না। কাল ছিল একটা বিশেষ দিন - বৈশাখের প্রথম দিন, ওর জন্মদিন। মা ফোন করে দুঃখ করছিলেন, পায়েস করেছেন সকালবেলা উঠেই। যদিও জানেন যে মেয়ে এখন কলকাতায়, সেখানেই আটকে পড়েছে। কবে আসতে পারবে তারও কোনো ঠিক ঠিকানা নেই। ফোন করে মেয়েকে জিগ্যেস করছিলেন পায়েসটা ফ্রিজে রাখলে কি ৪ঠা মে অব্দি থাকবে? এবার বলি শুনুন, আমি কলকাতায় হানা দেওয়ার সাথে সাথেই বৈশাখীর বাবা, মা ওকে বাড়ি চলে আসতে বলেছিলেন। মেয়ে আসেনি, আসতে চায় নি। বলেছিলো, দায়িত্বের কাজ, শেষ করে তবেই আসবে একেবারে। আসল ছবিটা হলো, ও ক্লান্ত হয়ে গেছে এই ক'দিনের লড়াইয়ে। একা থাকে, বাড়িতে থাকলে দোকান, বাজার, রান্না সবই নিজেকে করতে হয়। এই পরিস্থিতিতে নিত‍্যপ্রয়োজনীয় জিনিষ এমনকি দুধের জন্যেও লম্বা লাইনে দাঁড়াতে হয়। দোকানও খোলা থাকে না বিকেল হলেই। নিজের জন্যে যুদ্ধটা এখানেই সীমিত থাকলে হত, ও সামলে নেওয়ার চেষ্টা করতো। কিন্তু এর ওপর আছে উল্টোদিকের ফ্ল্যাটের বাসিন্দাদের সন্দেহ। ও যেহেতু কোভিড হাসপাতালে আছে - ভাইরাস যেন ওর গায়ে সর্বত্র!


এই দেখুন, আপনাদের একটা কথা তো বলাই হয় নি। অনেকদিন ধরেই তো সবাই ঘরবন্দি হয়ে রয়েছেন, জীবনটা বিস্বাদ হয়ে উঠেছে, তাই তো। কাঁহাতক আর টিভি দেখা যায়! 'লাইভ' খেলা বা অন‍্য কোনো অনুষ্ঠান দেখার কোনো সুযোগই নেই। পর্দায় খালি খবরের আতসবাজি আর সেখানেও মালমশলা আমিই। এরকম পরিস্থিতি কারোরই ভালো লাগার কথা নয়। ক‍্যালেণ্ডারে চোখ পড়ে না, বার-তারিখ কোনোটারই খেয়াল থাকছে না। সময় অথচ থেমে নেই। গুটি গুটি পায়ে তিথি মেনে দোরগোড়ায় হাজির নতুন বছর। বাংলা নববর্ষ। মনে পড়ে নিজের ছোটবেলার কথা? অক্ষরমালার জ্ঞান হয়েছে, সংখ‍্যাও পড়তে পারেন। কোথাও '১লা' লেখা আছে দেখলে বলতেন 'একলা'। বড়রা হাসতো, বলতো - বোকার হদ্দ, ওটা 'একলা' নয়, 'পয়লা'। এবছর কিন্তু আপনাদের ছোটবেলার সেই ভুল বলাটাই বেজায় সত‍্যি হয়ে গেল আমার করুণায়! এরকম একলা বৈশাখ কখনো আগে নিশ্চয়ই দেখেননি, অন্তত ফ্লু ভাইরাস আমাকে যা বললো! কেমন ভেল্কি দেখলেন এই কদিনে - সারা দেশে ৫০০ থেকে লাফিয়ে ১০,০০০। ক্রিকেটের জগতে লিটল মাস্টার, সাচ্, দাদা, বিরাট এইসব নামীদের কাছে এই সংখ‍্যা একটা চ‍্যালেঞ্জ - পৌঁছনোর, টপকে যাওয়ার ...। আমার লক্ষ‍্য এত কম নয়। সেটা লাখ-লাখ। কি বুঝলেন! আমি থামতে শিখি নি, অনন্ত ইনিংস খেলাই আমার উদ্দেশ্য।


ধন্যবাদ - শ্রী অমরনাথ মুখোপাধ্যায়



Rate this content
Log in

More bengali story from Prantik Biswas

Similar bengali story from Drama