Prantik Biswas

Abstract Comedy Others

4.5  

Prantik Biswas

Abstract Comedy Others

কড়চা#১১নিঃশ্বাসে বিষ মুখোশ নিস

কড়চা#১১নিঃশ্বাসে বিষ মুখোশ নিস

4 mins
508


০৪এপ্রিল ২০২০

 

এসেই যখন পড়েছি দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় এই দেশে, তখন যেন তেন প্রকারেণ আমার এলেম তো দেখাতেই হবে। বস্ তো পাঠিয়েছেই সেই কারণে।


ছোঁয়া লাগাও, রোগে ভোগাও আর যমের দুয়ারে পৌঁছে দাও। এটাই তো আমার একমাত্র কাজ। অনেককাল আগে এই দেশেরই এক কবি গান কবিতা লিখে নোবেল প্রাইজ পেয়েছিল। চৈত্র মাস শেষের মুখে, বৈশাখ আসবো আসবো করছে। আর কিছুদিন পরেই সেই কবিকে নিয়ে এদের মাতামাতি শুরু হওয়ার কথা। এবার তা হবে না। আমিই হতে দেব না। আমি যে এদের সঙ্গে এক মরণখেলায় মেতেছি - কানামাছি ভোঁ ভোঁ, যাকে পাবি তাকে ছোঁ। কি, কেমন মজা! এদেশে এসেছি তাই এদের ওই কবির ঢঙেই বলি - কোথাও আমার ছড়িয়ে পড়ার নেই মানা ... । আমি তাই ইচ্ছেমতন ঘুরে বেড়াচ্ছি, আজ এখানে তো কাল সেখানে। ঘুরছি আর কড়চায় সবকিছু লিখে রাখছি।


আজ পিছু নিয়েছি এক তথ্যপ্রযুক্তি কর্মীর। এরা নিজেদের পরিচয় দেবার সময় বলে - আইটিতে আছি। কেন বলে সেটা আজ বুঝলাম। সারাক্ষণ কম্পিউটার স্ক্রিনে আই দুটি লাগিয়ে বসে থাকে ভাই বা বোনটি! সকাল থেকে রাত। প্লেনের পাইলট থেকে অফিসের চাপরাশি, বেশিরভাগ চাকুরেই কিন্তু আমার এই অতর্কিত হানার একটা সুফল পেয়েছে - এই কদিন কাজ না করেই মাইনে ঘরে তুলেছে। কেননা সোশ‍্যাল ডিস্ট‍্যানসিং-এর সরকারী নির্দেশ মানতে গিয়ে এদের ঘ‍র বন্দি হয়ে থাকতে হয়েছে। কিন্তু আইটির লোকেরা তো আগে থেকেই প্রয়োজন হলে বাড়ি থেকে কাজ বা ওয়ার্ক ফ্রম হোম করত। তাই এদের কাজ বেড়েছে বই কমেনি। তা এই কেজো লোকটা, (নাম ধরা যাক ইণ্ডিয়ান বলে আই) বউ আর চার বছরের একটা ছেলেকে নিয়ে থাকে দমদমে, এয়ারপোর্টের কাছাকাছি। ওর কাজের জায়গা একটা নামী বহুজাতিক সংস্থার আইটি বিভাগ। রোজই তাকে অনলাইন মিটিং করতে হয় ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, চীনের কলিগদের সাথে। আজ এক মিটিংয়ে ও ওর চেক কলিগের (নাম ধরা যাক সি) সাথে কথা বলছিল আর অপেক্ষা করছিল ওদের আর এক আমেরিকান কলিগের (নাম ধরুন এ)।

সি - 'এ' জয়েন করবে কিনা জানো?

আই - বুঝতে পারছি না, শিডিউল তো পেরিয়ে যাচ্ছে। তুমি কি খবর পেয়েছ যে নিউ ইয়র্কে উনিশ বছর আগের নাইন-ইলেভেনে যতজন মারা গেছিল, করোনায় তার থেকে বেশি মারা গেছে এখন পর্যন্ত! সংখ‍্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে তিন হাজারের ওপর!

সি - বলো কি!

আই - হ্যাঁ, তাহলে আর বলছি কি! ওরা প্রথমে ব‍্যাপারটাকে কোনো পাত্তাই দেয় নি, হাল্কাভাবে নিয়েছিল। সেই ভুলের মাশুল এখন কড়ায়গণ্ডায় গুনছে। করোনা বাবাজী ট্রাম্পকে তাসখেলার ভাষায় ওভারট্রাম্প করে দিয়েছে।

সি - আমরা কিন্তু সে ভুলটা করি নি, গোড়াতেই আটঘাট বেঁধে ওকে আটকানোর যথাসাধ‍্য চেষ্টা করেছি। তাই আক্রান্তের সংখ্যা সেরকম ভাবে বাড়তে দিই নি।

আই - তা তো বটেই। এতদিনে মাত্র সাড়ে চার হাজার। তোমাদের দেশের একটা ভিডিও পেয়েছি হোঅ্যাটসঅ্যাপে। দেখলাম, যারাই বাড়ির বাইরে বেরোচ্ছে তারা নির্দেশমত নিয়ম মেনে মাস্ক পরে নিচ্ছে। তাতে সংক্রমণ বাড়ে নি, কমিউনিটি বা ক্লাস্টার ইনফেকশন যথেষ্ট কম হয়েছে।

সি - হুমম, বিশেষজ্ঞরা বলছে যে অনেকে হয়ত আক্রান্ত, কিন্ত কোনরকম লক্ষণ না থাকায় সে নিশ্চিন্ত হয়ে বাইরে যাচ্ছিল কোনো মাস্ক ছাড়াই। আর এভাবেই নিজের অজান্তে তার নিঃশ্বাসের বিষ ছড়িয়ে দিচ্ছিল অন্যদের।

আই - কিন্তু সব মাস্ক তো এই ভাইরাসকে আটকাতে পারবে না?

সি - সেটা ঠিক কিন্তু কিছুটা তো পারে; তাই এখন অনেক। এই মাস্ক পরাটা বাধ‍্যতামূলক করে দেওয়ায় ইউরোপের অন্যান্য জায়গার তুলনায় আমরা অনেক ভালো অবস্থায় আছি।

আই - কিন্তু এত মাস্ক কি বাজারে ছিল?

সি - না, না, তা কি করে হয়! প্রচার শুরুর পর যাদের কাছে সেলাই মেশিন ছিল তারা ঘরে বসেই মাস্ক বানাতে শুরু করে প্রতিবেশীদের মধ‍্যে বিনামূল্যে বিলিয়ে দেয়। দিন কয়েকের মধ্যেই লক্ষ লক্ষ মাস্ক তৈরি হয়ে যায়।

আই - ব্রিলিয়ান্ট আইডিয়া! আমাদের এখানেও খবরের কাগজে ক্যাম্পেনিং চলছে, বলছে মাস্ক পরে বেরোতে। মাস্ক যদি নাও জোটে তাহলে নিদেনপক্ষে রুমাল বা টিসু পেপারে মুখ ঢাকতে বলছে।

 

এদের কথাবার্তা শুনে মনে মনে একটু চিন্তা হলো, তবে কি এরা কোমর বেঁধে তৈরি হচ্ছে! মুচকি হাসলাম। আমি তো তৈরি হয়েই ময়দানে নেমেছি, তোরা তৈরি হতে থাক, দেখি লড়াইটা কেমন জমে! ডেঙ্গু ভাইরাস হাই তুলছিল। ও প্রায় বাঙালি হয়ে গেছে। বর্ষা এলেই এখানে জলে ইলিশের খলবলি শুরু হয়। পাতে পড়লেই তারিয় তারিয়ে খায় আর খাওয়ার পরেই ভোঁসভোঁস করে ঘুমোয়। সেই সময়েই পোঁপোঁ পিনপিন করে ওড়া মশার হুলে চেপে ও আসরে নামে। চিমটি কেটে ওর জড়তা কাটালাম, বললাম,

- এই মুখোশের কথা শুনে তো মনে হচ্ছে আমার কেস জন্ডিস!

ও আরেকটা হাই তুলে বিজ্ঞের মতো বলল,

- চিন্তা নেই ভায়া। এদেশে আমার অনেকদিনের আসাযাওয়া। এদের নাড়ীনক্ষত্র সব আমার নখদর্পণে। এদেশের প্রায় সবকটা মানুষই মুখোশ আঁটা!

- কেন?

- আরে, কেন আবার কি। থাকো কিছুদিন এখানে, নিজেই সব বুঝবে। এরা মুখে এক, কাজে আর এক।

- সব্বোনাশ! তা আবার হয় নাকি! আমি তো জানি মুখোশ-সাঁটা হয় সব দেশের রাজনৈতিক নেতারা।


- ও, বিশ্বাস হচ্ছে না বুঝি! ওই দেখো,ওই যে লোকটা দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ওর ফর্দতে লেখা পাঁচ কিলো আটা...

- আরে, তাতে কি প্রমাণ হলো?

- ওইটাই তো প্রমাণ। ব‍্যাটা নিজের ফেসবুক ওয়ালে আজই পোস্ট করেছে যে এই অসময়ে খাবার জিনিস হোর্ডিং করবেন না; অথচ গিয়ে দেখ ওর বাড়িতে এখনো কুড়ি কিলো আটা মজুত আছে, তবু আবার লাইনে দাঁড়িয়েছে।

- বাপরে বাপ, বলো কি!

- রোসো ভায়া, আরো আছে...আগের সপ্তাহের সেই বছর পঞ্চান্নর মাসিমা, যে তার বরের ফেসবুক ফ্রেন্ডলিস্টে পাঁচজন অচেনা মহিলার সন্ধান পেয়েছিল! তুমিও তো সে কথা লিখেছো। মনে পড়ছে?

- হ‍্যাঁ, লিখেছিলাম তো!

- মাসিমা সেই পাঁচজনের সঙ্গেই মিতালি করেছেন।

- সে তো ভালোই!

- আরে, কি করে ভালো হয়! আমার কাছ থেকে জেনে নাও ওনার প্রোফাইলে নাম, ছবি, বয়স, রিলেশনশিপ স্টেটাস কোনোটাই সঠিক নয়! সব ফেক! বরকে স্পাই করতে হবে তো…

 

তবে কি জানেন, ডেঙ্গু যতই বলুক বেশ কিছু ভালো লোকও আছে। হোটেল, রিসর্টকে চটজলদি হসপিটাল বা ডাক্তারদের কল রুম বানিয়ে ফেলা, ট্রেনের বগিকে রোগীদের জন্য আইসোলেশন ওয়ার্ডে বদলে ফেলা, রাস্তায় থাকা লোকজনদের মুখে খাবার তুলে দেবার ব‍্যবস্থা করা এসবও তো হচ্ছে দেখছি। এদেশেই...


ধন্যবাদ - শ্রী অমরনাথ মুখোপাধ্যায়



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract