Soumo Sil

Horror Action Thriller

3  

Soumo Sil

Horror Action Thriller

কনিকা অরণ্যের বিভীষিকা

কনিকা অরণ্যের বিভীষিকা

16 mins
243


বৈশাখ মাসের সন্ধ্যেবেলা, সবেমাত্র সূর্য অস্ত গেছে বাহিরে মৃদুমন্দ বাতাস বইছে। তীব্র গরম থেকে বাঁচতে নিধি বারান্দায় এসে দাঁড়ালো। এমন সুন্দর বাতাস তার গা ছুঁতেই প্রাণটা জুড়িয়ে গেল। নিধি চেয়ারটা টেনে বসতে যাবে এমন সময় নিচের দিকে তাকাতেই খেয়াল করলো একটা কমলা রঙের খাম মাটিতে পড়ে আছে, সে খামটা তুলে হাতে নিতেই বুঝতে পারলো দুপুরে সে যখন ঘুমাচ্ছিলো তখন পিওন এই খামটা দিয়ে গেছে। খামটা খুলে ভিতর থেকে বেরিয়ে এলো একটা চিঠি। চিঠিটা চোখের সামনে এনে পড়তে থাকলো - 

"প্রিয় বন্ধু নিধি,

আশা করি ভালো আছিস। আমি তোর কলেজবেলার বন্ধু ক্রান্তি, অনেক দিন হলো তোর সাথে কোনো দেখা হয়নি তাই ভাবলাম চিঠি লিখে তোর সাথে দেখা করি। আমি বন দপ্তরে ফরেস্ট অফিসারের চাকরি করি,আমার এখন ছুটি চলছে তাই ভাবলাম এর মধ্যে তোর সাথে দেখাও হয়ে যাবে। আমার ঠিকানা - হাকিমপুর গ্রাম, কণিকা অরণ্য। এই ঠিকানায় এসে বলবি ফরেস্ট কোয়ার্টার যাবো তাহলে যে কেউ দেখিয়ে দেবে। তোর আসার অপেক্ষায় রইলাম।"

                                ইতি ক্রান্তি।

নিধির মনে পড়ে গেল তার কলেজের কথা। সে আর ক্রান্তি একই কলেজে পড়তো এবং দুজনেই ছিল ভূগোলের ছাত্র। তদের মধ্যে বেশ ভাব ছিল। কলেজ শেষ হয়ে যাবার পর ক্রান্তির সাথে আর তার কখনো দেখা হয়নি। আজ আবার দীর্ঘ ৭বছর পর চিঠি লিখে দেখা করার কথা জানিয়েছে তার এই কলেজ বেলার বন্ধুটি।

নিধি বেশ মনে মনে খুশি হলো এটা ভেবে যে ক্রান্তির এখনো তাকে মনে আছে। সে আর বেশি দেরি না করে হলদিবাড়ি গ্রামে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করল। পরেরদিন সকালে ব্যাগপত্র গুছিয়ে ৯টার সময় বেরিয়ে গেল স্টেশনের উদ্দেশ্যে, ৯টা ৪০-র ট্রেন আছে। স্টেশনে পৌঁছে যথারীতি নির্ধারিত সময় ট্রেনে চেপে বসলো নিধি। হাকিমপুর গ্রাম পৌঁছতে টাও ঘন্টা দশেক সময় লাগবে, তাই একটা লম্বা হাই তুলে নিধি ট্রেনের সিটে গা হেলিয়ে দিলো। ট্রেন মাঝখানে ৩০মিনিট দাঁড়িয়ে ছিল, তাই ট্রেনটা হাকিমপুর স্টেশনে পৌঁছলো ৮টা ২০ নাগাদ। নিধি নেমে পড়লো ট্রেন থেকে, স্টেশনে লোক কম, সে হাঁটতে হাঁটতে কিছুটা এগিয়ে একটা সরু প্যাসেজের মধ্যে দিয়ে নেমে স্টেশনের বাহিরে রাস্তায় এসে দাঁড়ালো। এ পথঘাট তার একদমই অচেনা তার উপর গ্রামের রাস্তা তেমন লোক জন নেই, সামনে ২-৩ তে ঠেলা রিকশা দাঁড়িয়ে ছিল। নিধি একটু এগিয়ে গিয়েই তারই মধ্যে থেকে একটা রিকশাওয়ালাকে উদ্দেশ্য করে বললো "ও ভাই শুনছেন বলি কেউ কী আমায় কণিকা অরণ্যের কাছে ফরেস্ট কোয়াটারে নিয়ে যাবেন?" রিক্সাওয়ালাটা তার কাছে এসে বলল "হ্যাঁ বাবু যাব তবে কিন্তু ১৫ টাকা ভাড়া লাগবে।" নিধি এখানকার কিছুই চেনে না তাই ভাড়া দিতে রাজি হয়ে গেল, ফরেস্ট কোয়াটারে পৌঁছে মাত্র ১০ মিনিট লাগলো। সে রিকশা থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে কোয়াটারের গেটের দিকে এগিয়ে গিয়ে একটু জোরে ডাকলো "ক্রান্তি এই ক্রান্তি আছিস?" ভিতর থেকে একটা দরজা খুলে ক্রান্তি বেরিয়ে এলো, পুরোনো বন্ধুকে চিনতে তার কোনো অসুবিধা হলো না। নিধিকে উদ্দেশ্য করে বললো "আয় ভিতরে আয়, আমি তো ভাবতেই পারিনি তুই চিঠি পাওয়ার সাথে সাথেই চলে আসবি।" নিধি বন্ধুকে সামনে পেয়ে জড়িয়ে ধরলো বললো "কত দিন পরে তোর সাথে দেখা, তোকে তো চেনাই যাচ্ছে না রে তুইতো পুরো সাহেব হয়ে গেছিস। "ক্রান্তি বললো "চল ভিতরে চল হাত মুখ ধুয়ে খেয়ে নে তারপর অনেক গল্প হবে।"

বেশ কিছুক্ষন পরে....

ক্রান্তির জন্য নিধি গরম গরম লুচি ভেজে নিয়ে এসে বলল "নে আগে এগুলো খেয়ে নে তারপর গল্প করবো।"

খাওয়া শেষ করে ক্রান্তি জিগ্যেস করলো "কী রে নিধি এসব খাবার গুলো তুই বানিয়েছিস।" নিধি বললো "হ্যা রে আমার কাজের লোকটা কিছুদিনের ছুটিতে গেছে তাই এই সময়ে আমাকেই রান্না করতে হচ্ছে, তারপর বল তোর দিনকাল কেমন চলছে? কী করছিস তুই ?" নিধি বললো "এইতো আমি শহরের একটা প্রাইমারি স্কুলে ভূগোল পড়াই, তুই বল চিঠিতে লেখা দেখলাম তুই বন দপ্তরের অফিসার, তোর কেমন চলছে?" ক্রান্তী বললো "আর বলিস না ভাই বাঘ হাতির পিছনে দৌড়াতে দৌড়াতেই আমার সারাদিন কেটে যায়।" নিধি প্রশ্ন করলো "তোদের কণিকা অরণ্যে বাঘ হাতিও আছে?" ক্রান্তি বলল "হ্যাঁ আছে বৈকি তবে বাঘ, হাতি অরণ্যের গভীরে থাকে তাদের থাকার জন্য আলাদা আলাদা বাসস্থান রয়েছে। একটু থেমে বলল মাঝে মাঝে কিছু বাঘ,হাতী অরণ্যের এদিকেও চলে আসে খাবার খুঁজতে, মাঝেমধ্যে তো হাতি গ্রামের দিকেও চলে যায় গিয়ে বাড়িঘর গুলোতে হানা দেয়।" এসব শুনে নিধি বললো, "তোর এখানে থাকতে ভয় করে না।"

ক্রান্তি বলল "আরে ভয় কিসের জঙ্গলের জন্তু-জানোয়াররা তো প্রাণী এরা সাধারণত মানুষদেরকে ক্ষতি করে না। তবে এদেরকে কে উত্তক্ত করলে এরা তখন লোকালয় চলে গিয়ে ক্ষতি করে। " নিধি মৃদু হাসলো, ক্রান্তি বললো "নে নে এখন শুয়ে পর অনেক রাত হলো কাল সকালে তোকে কণিকা অরণ্য ঘুরে দেখাবো।"

পরের দিন সকালে খানিকটা হইচইতেই নিধীর ঘুম ভেঙে গেল, পাশে দেখলো পাশে ক্রান্তি নেই। আড়মোরা ভাঙতে ভাঙতে বাইরে এসে দেখলো একদল গ্রামবাসী হইচই করছে আর তাদেরই মধ্যে থেকে একজনের সাথে ক্রান্তি কথা বলছে। নিধি একটু এগিয়ে এলো, জানতে পারলো গ্রামবাসীদের মধ্যে একজন বয়স্ক লোককে বাঘে মেরে ফেলে রেখে গেছে। ক্রান্তি গ্রামবাসীদের বুঝিয়ে সুঝিয়ে গ্রামের দিকে পাঠিয়ে নিধি কে নিয়ে ঘরের ভিতরে এলো। ক্রান্তি বললো " জানিস তো, এদিকে পরিস্থিতি ভালো না বুঝলি আবার বাঘ বেরিয়েছে একটা লোককে তো মেরেও ফেলেছে, জলখাবার খেয়ে নিয়ে একবার গ্রামে দেখতে যাবো। তুই কিন্তু ঘর থেকে কোথাও বেরোস না অচেনা জায়গা যেকোনো বিপদ হয়ে যেতে পারে। " নিধি জেদ ধরে বললো "আমিও তোর সাথে গ্রামে দেখতে যাবো।" ক্রান্তির হাজার আপত্তি সত্ত্বেও নিধির জেদের কাছে অবশেষে হার মেনে ক্রান্তি বললো "আচ্ছা ঠিকাছে নিয়ে যাবো, জলখাবার খেয়ে নে আগে তারপর বেরোবো। "

খাওয়া শেষ করে তারা যখন গ্রামে গিয়ে পৌঁছলো তখন ঘড়িতে ১০টা বাজছে, মৃতদেহের কাছে পৌঁছতেই নিধির গায়ের লোম খাড়া হয়ে গেল সে যা দেখলো কোনোদিন তা ভুলতে পারবে না, সে এক হারহিম করা দৃশ্য, মৃত লোকটির বুকটা কেউ যেন মাঝখান থেকে আড়াআড়ি ভাবে চিরে ক্ষতবিক্ষত করে দিয়েছে,তীক্ষ্ণ নখ দিয়ে কেউ মুখ থেকে চোখ দুটো খুবলে বার করে নিয়েছে তাতে আরও বিভসব লাগছে। এ দৃশ্য নিধির বেশিক্ষন সহ্য হলো না তাই সে সেখান থেকে একটু দূরে সরে গেল। ক্রান্তি তখনো মৃতদেহের পাশে দাঁড়িয়ে মৃতদেহটাকে ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। বেশ কিছুক্ষণ মৃতদেহের পাশে দাঁড়িয়ে থাকার পর ক্রান্তি এবার সরে এলো এসে নিধির পাশে দাঁড়িয়ে ফিসফিস করে বলল "বাঘতো এমন ভাবে চোখ খুবলে নেয় না, জানিস তো ব্যাপারটা অন্য কিছু মনে হচ্ছে দেখতে হবে ভালো করে।" সারা গ্রামে এক ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, গ্রামের লোকরা নিজেদের মধ্যে নানান কথা বলাবলি করছে। ক্রান্তি নিজের মনে ফিসফিস করতে করতে নিধিকে নিয়ে আবার ফরেস্ট কোয়ার্টারে ফিরে এলো।

দুপুরে খাওয়ার সময় নিধি প্রশ্ন করে বসলো " আচ্ছা ভাই তখন তুই বললি না যে বাঘ তো এমন ভাবে চোখ খুবলে নেয় না তাহলে ব্যাপারটা কী একটু খুলে বলবি? আমার না কেমন যেন ভয় করছে " একটু চুপ করে থেকে ক্রান্তি বললো "ব্যাপারটা কি আমিও ঠিক বুঝতে পারছি না, সব প্রশ্নের উত্তর ওই কণিকা অরণ্যে রয়েছে কাল সকাল সকাল আমাদের কণিকা অরণ্যে ঢুকতে হবে। " এই বলে অর্ধেক খেয়ে চিন্তিত মুখ নিয়ে ক্রান্তি টেবিল ছেড়ে উঠে গেল।

সেই রাতে দুজনের কারোর চোখেই আর ঘুম এলো না, পরের দিন সকাল হওয়ার অপেক্ষা করতে থাকলো। ভোরের দিকে চোখটা লেগে এসেছিলো তাই নিধি ঘুমিয়ে পড়লো। একটু সকাল হতেই আবার ফরেস্ট কোয়ার্টারের বাহিরে কিছু লোকজনের চেঁচামেচি শোনা গেল। তারা দুজনেই এবার ঘর থেকে বাইরে এসে যা শুনতে পেল তা শুনে তারা হতোভম্ব হয়ে গেল, গ্রামের লোকজন দের মুখে শুনতে পেল আজকে ভোরের দিকে আবার একজনের মৃতদেহ ওই গ্রামেতে পাওয়া গেছে। তারা দেরি না করে তৎক্ষণাৎ বেরিয়ে পড়লো গ্রামের দিকে, সেখানে গিয়ে তারা আবার আগের মতো দৃশ্য দেখতে পেলো এইবারের দৃশ্য আরও ভয়ানক ছিল মৃত লোকটির বুক চেরা চোখ দুটো উপড়ানো তার উপর কেউ পেটের নারীভুঁড়ি বার করে নিয়েছে, গ্রামের লোকগুলোর ভয়ার্ত মুখ ক্রান্তিকে বেশ ভাবিয়ে তুললো। এইবার তারা ঠিক করলো আজকেই তারা কণিকা অরণ্যে প্রবেশ করবে।

তারা বাড়ি গিয়ে কনিকা অরণ্যে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি শুরু করলো। মাঝখানে ক্রান্তি বলে বসলো "যে তোকে এখানে অরণ্যে ঘুরতে ডাকলাম আর দেখ তুই এখানে এসে ফেঁসে গেলি।" ক্রান্তি বললো "কখন কি হয় কেউ তো বলতে পারেনা আর দেখ না অরণ্যে যাব একটা এডভেঞ্চার হবে তুই অত ভাবিস না, এটাতে একটু ভয়ও আছে আবার একটা রহস্য উদ্ঘাটনার আন্নন্দ রয়েছে। "

ক্রান্তি মৃদু হেসে বললো "দেখ না এমন সময় ছুটি দিয়েছে যে আমার কাজের লোকটাও নেই তার ওপর আবার অরণ্যে তেমন কোন গার্ডও নেই সবাই ছুটি তে গেছে।" তখন নিধি বলল "আরে তুই অত ভাবছিস কেন আমি তো তোর সঙ্গে আছি আমি তো যাচ্ছি তোর সাথে। "

এই বলে তারা দুটো টর্চ, কিছু শুকনো খাবার, দুটো জলের বোতল আর একটা তাঁবু খাটানোর কাপড় গুছিয়ে ব্যাগ কাঁধে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো কণিকা অরণ্যের উদ্দেশ্যে, ১ঘন্টা হাঁটার পরে তারা অরণ্যের বেশ কিছুটা গভীরে পৌঁছলো, তখন বেলা ১টা বাজছে, মাঝে মাঝে দূর থেকে হাতির ডাক ভেসে আসছে গাছের উপরে নাম না জানা পাখি কর্কশ গলায় ক্রমাগত ডেকে চলেছে।

একটা বড়ো মেহগিনী গাছের নিচে তারা বসে পড়লো তাদের সাথে আনা শুকনো খাবার গুলো কিছু খেয়ে রেখে দিলো। কিছুক্ষণ পর তারা আবার হাঁটতে শুরু করল, বেশ কিছুটা যাওয়ার পর তারা সামনে একটা জঙ্গলে ভরা ওয়াচ টাওয়ার দেখতে পেল এবং সেটার চারপাশের জঙ্গল ভেঙে এগোতে লাগল, জঙ্গলের শুকনো পাতা ডালপালার খোসাখোসানি শব্দ হচ্ছিলো আর তার সাথেই দূর থেকে বন্য জন্তুর ডাক শোনা যাচ্ছিলো তাতে পরিবেশটা অন্য রকম হয়ে উঠলো, পৌঁছে গেল তারা ওয়াচ টাওয়ারে। ভিতরে প্রবেশ করতেই দেখতে পেল চারপাশটা ধুলোয় ভরা। এতক্ষণ পর নিধি বলে উঠলো "ভাই ক্রান্তি ছাড় এই ওয়াচ টাওয়ার থেকে আমরা কিছুই পাবো না উল্টে সাপ খোপ থাকতে পারে।" নিধির কথায় সায় দিয়ে ক্রান্তি বলল "ঠিকই বলেছিস চল এখান থেকে বেরিয়ে পড়ি। "

এই বলে তারা বেরিয়ে পড়লো সেখান থেকে তারা যত এগোতে লাগলো ততোই অরণ্য আরও ঘন হতে লাগলো বন্য জন্তু আর পাখির ডাক শোনা গেল। মনে হতে লাগলো এত বড়ো বড়ো গাছপালার মধ্যে দিয়ে সূর্যের আলো ঠিক মতো মাটি ছুঁতে পারছে না, কেমন যেন একটা আলো ছায়া ভাব। এইভাবে অরণ্যের মধ্যে দিয়ে অনেকটা পথ হাঁটার পর ক্রান্তি বললো "দেখ ভাই সন্ধে হচ্ছে আমাদের আর না এগোনোই ভালো সামনে অন্য জন্তু থাকতে পারে তার চেয়ে আমরা বরং এখানেই কাপড় বিছিয়ে তাঁবু ফেলে দি।" ক্রান্তির কথায় সায় দিয়ে নিধি বললো "আজকের রাতটা তাহলে আমরা এখানেই তাঁবু ফেলে থাকি কাল সকালে আবার অরণ্যের ভিতরে এগিয়ে দেখা যাবে।"

তাদের সাথে আনা শুকনো খাবার গুলো তারা ভাগ করে খেলো, অরণ্যে রাত নামতেই বন্য জন্তু আর হাতির ডাকের শব্দ তীব্র হল। ক্রান্তি যেহেতু ফরেস্ট অফিসার তাই এগুলোর সঙ্গে সে অভ্যস্ত কিন্তু নিধি প্রথমবার অরণ্যে এসেছে এবং রাত কাটাচ্ছে তাই তার এইবার একটু ভয় ভয় করতে শুরু করলো। নিধিকে একটু সাহস যোগাতে ক্রান্তি বলে উঠলো "ভয় পাস না আমাদের সঙ্গে যে টর্চ গুলো আছে ওই টর্চ গুলো জ্বালিয়েই আমরা সারারাত এই তাঁবুর ভেতরে বসে পাহারা দেবো। " কান্তি মনে মনে ভাবছে যে তাকে একবার দেখবো যে এরকম পরস্পর দুখানা মানুষকে নৃশংস ভাবে মেরে ফেলল। ক্রান্তি মনের ভাব প্রকাশ না করে নিধিকে বলল "তুই শুয়ে পড় আমি সারারাত জেগে পাহারা দিচ্ছি। " নিধির তো জঙ্গলে এরকম ভাবে রাত কাটানোর অভ্যাস নেই তার তাই তার ঘুম চলে এসেছিল তাই কিছু না বলে তাঁবুর ভিতরে একপাশে শুয়ে পড়ল।

গভীর রাতে হটাৎ কিছু একটা শব্দে নিধির ঘুম ভেঙে গেল, ঘোর কাটিয়ে ওঠার আগেই সে শুনতে পেলো বাহিরে কে যেন গর্জন করছে আর সেই শব্দে যে কারোর রক্তহিম হয়ে যাবে, এ শব্দ যে কোনো বাঘের নয় সে সেটা ভালো করেই বুঝতে পারলো বাঘ এমন বিকট শব্দে গর্জন করে না, এ শব্দ শুনে মনে হচ্ছে এ যেন বজ্রপাতের শব্দের চেয়েও ভয়ঙ্কর। নিধি টর্চ টা জ্বালিয়ে পাশে তাকাতেই অবাক হয়ে গেল সে দেখতো পেলো তাঁবুর ভিতরে তার বন্ধু ক্রান্তি নেই, বাহিরের জীব টির গর্জন তখন আরও জোরালো হয়েছে মনে হচ্ছে সে তাঁবুর খুব কাছেই আছে। নিধি কোনো কিছু না ভেবে বুকে সাহস এনে কম্পিত দুটো পায়ের উপর ভর করে সে বেরিয়ে গেল তাঁবুর বাহিরে। বাহিরে বেরিয়ে সে যা দেখলো তাতে তার পুরো শরীর ভয়ে ঠান্ডা হয়ে গেল। দেখতে পেলো তাঁবুর বাহিরে তার বন্ধু ক্রান্তি অজ্ঞান হয়ে পরে আছে আর তার থেকে মিটার পাঁচেক দূরে একটা অদ্ভুত প্রাণী ক্রমাগত গর্জন করে যাচ্ছে, প্রাণী টার শরীর বিশাল আকৃতির, মুখটা গোলাকার আর সেই মুখের দুইপাস দিয়ে লম্বা লম্বা দুটো দাঁত বেরিয়ে এসেছে, রাতের অন্ধকারে প্রাণীটির চোখ দুটো আগুনের ভাঁটার মতো লাল টকটকে হয়ে আছে, সে টর্চের আলোয় দেখতে পেলো প্রাণীটির পায়ের নখ গুলো তীক্ষ্ণ এবং লম্বা। সে এইবার লক্ষ করলো প্রাণীটি জোরে গর্জন করতে করতে তাঁদের দিকে এগিয়ে আসছে, নিধি এক মুহূর্ত দেরি না করে টার বন্ধুকে এক প্রকারের টেনে হিচড়ে নিয়ে গিয়ে তাঁবুর ভিতরে প্রবেশ করলো তখনো বাহিরে বিশালকার ভয়ানক প্রাণীটি গর্জন করে যাচ্ছে তাতে নিধির কানে তালা লাগার উপক্রম হলো। সে কী করবে বুঝতে না পেরে সঙ্গে করে আনা জলের বোতল থেকে জলের ছিটে ক্রান্তির মুখে দিয়ে বলতে লাগলো "ক্রান্তি এই ক্রান্তি কিরে ভাই চোখ খোল " অনেক ক্ষণ ডাকাডাকির পরে অবশেষে ক্রান্তি চোখ খুললো। চোখ খুলতেই নিধি তাকে টেনে ধরে বসালো, নিধি জিজ্ঞেস করলো "কিরে তুই তাঁবুর বাহিরে কী করে গেলি? আর পরে গেলি কী করে?" ক্রান্তি একটু বিস্ময়ের সুরে ধরা গলায় বললো "আ আমি তাঁবুর বাহিরে পঃ পরে ছিলাম!" ক্রান্তি বললো "হ্যাঁ রে বাহিরে কী ভয়ানক একটা প্রাণী ছিল আর তুই তাঁবুর পাশে পরে ছিলি আমিই তো তোকে তুলে ভিতরে নিয়ে এলাম।" ততক্ষনে প্রাণীটার গর্জন আর শোনা যাচ্ছে না হয়তো সে চলে গেছে। বেশ কিছুক্ষন চুপ থাকার পর ক্রান্তি বললো "জানিস তো তুই যখন ঘুমিয়ে পড়েছিলি তখন বাহিরে থেকে কিছু একটা ডাকছিলো তাই আমি দেখতে বাহিরে গিয়েছিলাম তারপর দেখতে পেলাম কিছুটা দূরে কার যেন একজোড়া লাল চোখ জ্বলছে আর সেটা আমাদের তাঁবুর দিকেই এগিয়ে আসছে তারপর আর আমার কিছু মনে নেই।" কিছু টা থেমে বললো "জানিস তো ভাই এই জায়গাটা না ভালো নয় আমাদের আর থাকা ঠিক হবে না আমরা কালই সকালের আলো ফুটলে এখন থেকে কোয়াটারে ফিরে যাবো তারপর ফরেস্ট গার্ড আরও লোকজন নিয়ে এসে দেখবো প্রাণীটা কী!"

এইসব কথা বলতে বলতেই ভোরের আলো ফুটে গেল, তখন সকাল ৬টা বাজে অরণ্যে সকালের পরিবেশটা যেন একটু অন্যরকম থাকে ঠান্ডা হাওয়া দিচ্ছে আশেপাশে অনেক পাখি ডাকছে। এইরম আবহাওয়ার মধ্যে বেরিয়ে তারা দুজনেই কিছুটা স্বস্তি অনুভব করলো, তারা এক মুহূর্তও দেরি না করে তাঁবু গুটিয়ে বাগপত্র গুছিয়ে বেরিয়ে পড়লো কোয়াটারের উদ্দেশ্যে। যাওয়ার পথে অনেক রকমের জন্তু জানোয়ারের সাথেই তাদের সাক্ষাৎ হলো, সব বাধা কাটিয়ে অবশেষে সন্ধে ৭টার দিকে তারা কোয়াটারের কাছে এসে পৌঁছলো।

পরের দিন সকালের কথা,

আবার একই রকম ভাবে গ্রামবাসিরা বাহিরে কোলাহল করছে আজকে ভোরে আবার নাকি একজনের মৃতদেহ দেখতে পেয়েছে গ্রামের মাতব্বর, এই মৃতদেহটাও আগের মতোই বিভসৎ ভাবে আঁচড়ানো চোখ খুবলানো। গ্রামবাসীরা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করতে লাগলো "এ নিশ্চই অরণ্যের অপদেবতা জেগে উঠেছে! সবার অমঙ্গল হবে এইবার।" ক্রান্তি এইবার বাহিরে এসে দাঁড়ালো গ্রামবাসীদের উদ্দেশ্যে চেঁচিয়ে বললো "থামো তোমরা থামো সবাই", "আমার কথা তোমরা মন দিয়ে শোনো আজকেই আমরা এর একটা বিহিত করবো, তোমরা আজকে সন্ধের পর কাল সকাল হওয়া অবধি কেউ ঘরের বাহিরে বেরোবে না, কথাটা যেন সবার মনে থাকে, তারপর আমি দেখছি।" গ্রামবাসীরা এইসব শুনে নিজেদের মধ্যে "অপদেবতা জেগে উঠেছে ও কাউকে ছাড়বে না" বলাবলি করতে করতে গ্রামের দিকে চলে গেল। গ্রামবাসীদের জন্য ক্রান্তির খুব মায়া হতে লাগলো, একটার পর একটা গ্রামবাসী মারা যাচ্ছে। ক্রান্তি ঘরে এসে নিধিকে বললো "আমাদের যা করার আজকে রাতেই করতে হবে তুই বরং আজকের রাতটা আমার কোয়াটারেই থাক, আমি আর আমার দলবল মিলে রাতে অরণ্যের ভিতরে যাবো" এই শুনে নিধি বললো "কাল তো আমি তোর সাথেই অরণ্যে গেলাম আমার তো কিছু হয়নি তোর যদি কোনো বিপদ হয় তাহলে! না ভাই আমি যাবো তোর সাথে। " অনেক করে বোঝানোর পরে ক্রান্তি তার সাথে নিয়ে যেতে রাজি হলো। ক্রান্তি ফরেস্ট ডিপেরমেন্টের হেড অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেল।

ক্রান্তি যখন ফিরে এলো তখন বিকেল ৫টা বাজছে, তার সাথে এসেছে ৬টা সসস্ত্র ফরেস্টগার্ড একজন ড্রাইভার আর দুজন পুলিশের লোক। সে নিধিকে ডেকে তাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো বললো "এই যে এ আমার কলেজের বন্ধু নিধি আজকে আমাদের সাথেই রাতে অরণ্যে যাবে। "

সন্ধে বেলা খাওয়া দাওয়া শেষ করে, সন্ধ্যে ৭টা বেজে ৩৫মিনিটে তারা সবাই মিলে গাড়ি করে রওনা হলো কণিকা অরণ্যের উদ্দেশ্যে, তাদের সাথে ছিল বন্দুক,কয়েকটা বাঁশের লাথি আর বেশ বড়ো একটা মোটা দড়ি। অরণ্যে প্রবেশ করার সাথে সাথেই দূর থেকে বন্য জন্তুর ডাক ভেসে আসতে লাগলো, মাঝে মাঝে রাতচড়া পাখির ডাক কানে ভেসে আসছিলো। অরণ্যের বেশ খানিকটা ভেতরে প্রবেশ করার পর গাড়ির ড্রাইভার বলে "উঠলো বড়োবাবু গাড়িটা এখানেই থামাই, সামনে ঘন জঙ্গল গাড়ি আর বেশি দূরে এগোবে না।" ড্রাইভারের কোথায় সায় দিয়ে ক্রান্তি বললো "ব্যাস ব্যাস এখানেই তুমি গাড়ি থামাও, নিধি তুই গাড়ির ভিতরে বসে থাকবি আর দুজন পুলিশের লোককে নির্দেশ দিলো তারাও যেন গাড়ির ভিতরে থাকে এবং গার্ডদের উদ্দেশ্যে বললো তোমরা আমার সাথে চলো।" এই বলে ক্রান্তি ৬টা গার্ডকে নিয়ে একটু সামনে এগিয়ে একটা বট গাছের ঝুড়ি ধরে ঝুলে গাছের নিচু একটা ডালে চড়ে বসলো সাথে গার্ডদের নির্দেশ ছিল "তোমরা সবাই সুবিধা মতো আসে পাশের গাছের ডালে চড়ে বসো আর দেখতে থাকো কোনো বিশালকার জন্তু আসছে কিনা।"

নিধি গাড়িতে থেকে ক্রান্তির এইসব কার্যকলাপ লক্ষ করছিলো সে জানতোই না ক্রান্তি এত ভালো গাছে চড়তে পারে, সে চুপ করে পুলিশের লোক দুটোর সাথে গাড়ির ভিতরে বসে সেই বিশালকার প্রাণীর দেখা পাওয়ার অপেক্ষা করতে লাগলো। মাঝে মাঝেই একটা পেঁচা কর্কশ গলায় ক্রাও ক্রাও করে ডাকছিলো তাতে অরণ্যের পরিবেশটা আরও ভয়ানক হয়ে উঠছিলো মাঝেই মাঝেই দূর থেকে হাতির ডাক শোনা যাচ্ছিলো, কাছে কোথাও এক পাল শিয়াল একসাথে হুক্কা হুয়া করে ডেকে উঠলো, রাতে সেই ডাক শুনলে যে কারোর ভয়ে ধরে যাবে। তারপর হটাৎই কেমন যেন গোটা অরণ্যটা নিশ্চুপ হয়ে গেল, চারিদিকে থমথমে পরিবেশ সৃষ্টি হলো যেন ঝড় আশার আগে কোনো পূর্বাভাস দিচ্ছে। এ যেন কিছুর অশনি সংকেত!

নিধির মন টা খুব কু গাইতে লাগলো, বেশ কিছুক্ষন সব কিছু নিস্তব্ধ থাকার পর হটাৎই যেন ভূমিকম্প শুরু হলো অরণ্যের মাটি ভয়ানক ভাবে কাঁপতে শুরু করলো গাছপালা গুলো ভয়ানক ভাবে দুলতে লাগলো গাছের উপর বসে থাকা ক্রান্তি আর গার্ডিগুলো কোনো রকমে গাছের ডাল আঁকড়ে শক্ত করে বসে থাকার চেষ্টা করছিলো তখনই আকাশ ফাটানো এক গর্জনে অরণ্য কেঁপে উঠলো, চারিদিকে একটা প্রবল ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি হলো, গর্জনটা আরও তীব্র হতে লাগলো মনে হতে লাগলো একসাথে অনেকগুলো বজ্রপাত একসাথে হচ্ছে সে গর্জন কী ভয়ানক তা বর্ণনা করা যাবে না। নিধি বুঝতে পারলো সেই ভয়ানক প্রাণীটি ক্রমশ এগিয়ে আসছে তাঁদের কাছাকাছি তার গলা দিয়ে কোনো স্বর বার হচ্ছে না। প্রাণীটির গর্জন আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে, নিধি সেই মুহূর্তে ভাবতে লাগলো তার এই অরণ্যে না আসাই উচিত ছিল ঠিক তখনই ভয়ঙ্কর প্রাণীটি একটা গার্ডের গাছের নিচের এসে হাজির হলো সেই ভয়ানক দাঁত বিশিষ্ট প্রাণীটি যাকে গ্রামের সবাই অরণ্যের অপদেবতা বলছিলো, আজকে তার চোখ দুটো আগেরদিনের থেকে আরও বেশি জ্বল জ্বল করছে মনে হচ্ছে আগুনের দুটো গোলা ঠিকরে বাহিরে বেরিয়ে আসবে, ঠিক সেই মুহূর্তে ঘটলো অঘটন প্রাণীটির তীব্র গর্জনে অরণ্যের গাছ মাটি কেঁপে উঠতেই গাছের উপরে থাকা একজন গার্ড উপর থেকে মুখ থুবড়ে মাটিতে পড়লো তৎক্ষণাৎ প্রাণীটি তার দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে তার বড়ো বড়ো ধারালো নখ দিয়ে গার্ডিটার পেটটা এক টানে চিরে দিয়ে মুখ লাগিয়ে রক্ত খেতে লাগলো, ই দৃশ্য নিধি সহ্য করতে পারলো না মুখ নিচু করে ফেললো। এইসব দেখে সহ্য করতে না পেরে হাতের কাছে থাকা একটা গাছের ডাল ভেঙে নিয়ে ক্রান্তি লাফ মারলো গাছ থেকে আর তাকে লাফ মারতে দেখে বাকি গার্ডগুলো গাছ থেকে লাফিয়ে নিচে নামলো। এইবার প্রাণীটির চোখ গেল ক্রান্তির দিকে, চোখ গুলো হিংস্র আগুনেরমতো জ্বলছে যেন মানুষ পেলে ছিঁড়ে খাবে। এইবার আর নিধি চুপ করে বসে থাকতে পারলো না সশব্দে গাড়ির দরজা খুলে এগিয়ে গেল বন্ধুকে বাঁচাবার উদ্দেশ্যে, নিধিকে লক্ষ করে পিছন পিছন দুটো পুলিশও ছুটলো। আজকে করে হতে চলছে স্বয়ং ভগবানও জানেন না, ততক্ষনে প্রাণীটি ক্রান্তির উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে পিছন থেকে ৫টা গার্ড নিধি আর দুটো পুলিশ প্রাণপণ চেষ্টা করছে প্রাণীটার হাত থেকে নিধিকে ছাড়াতে কিন্তু কিছু তেই কিছু করা যাচ্ছে না প্রাণীটার গায় এতটাই জোর যে অতগুলো মানুষও তাকে টানতে পারছে না। সে তার ধারালো নখ বসালো ক্রান্তির বুকের উপর, ঝলকে উঠে রক্ত ছিটকে পড়লো আসে পাশের মাটিতে, এতক্ষনে নিধি একটা গার্ডের হাত থেকে টার বন্ধুকটা কেড়ে নিয়ে ট্রিগার চেপে ধরে গুলি চালাতে লাগল প্রাণীটার পেট লক্ষ্য করে, তাকে দেখা দেখি বাকি গার্ডগুলো এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে লাগলো প্রাণী টাকে লক্ষ্য করে, এক পাশ থেকে দুটো পুলিশ সঙ্গে করে আনা লাঠিগুলো উঠিয়ে গায়ের সর্বত্র জোর দিয়ে প্রাণীটাকে আঘাত করতে লাগলো। বন্দুকের গুলি আর লাঠির আঘাতে প্রাণীটি মাটিতে লুটিয়ে পড়ে ছটপট করতে করতে প্রবল জোরে গর্জন করতে লাগলো তাতে আবারও সারা অরণ্য কেঁপে উঠলো মনে হতে লাগলো যেন পুরো অরণ্য জুড়ে ভূমিকম্প শুরু হয়েছে, পায়ের তলার মাটি থর থর করে কাঁপছে গাছ গুলো একটা আর একটা গাছের সাথে ধাক্কা খাচ্ছে, তখনো নিধি রাগে ক্রোধে এলোপাথারি গুলি করেই যাচ্ছে। একটা সময় গর্জন থেমে গেল সেই ভয়ঙ্কর প্রাণীটার দেহ মাটিতে নিস্তেজ হয়ে পড়ে রইলো। পুরো অরণ্যটা কিছুক্ষনের জন্য নিস্তব্ধ হয়ে গেল সেই ভয়ানক কম্পনও থেমে গেল। বোঝা গেল ভয়ঙ্কর প্রাণীটি মারা গেছে।

কিছুটা ধাতস্ত হওয়ার পর নিধি ক্রান্তির দেহটার কাছে গেল অনেক ডেকে তোলার চেষ্টা করলো তাকে কিন্তু সে আর উঠলো না, আর সে কোনোদিনও উঠবে না! প্রাণীটা মারা যাওয়ার আগে ক্রান্তিকে মেরে দিয়ে সে মরেছে। নিধির চোখ দিয়ে দুফোটা জল টপ টপ করে ঝরে পড়লো ক্রান্তির নিথর দেহটার উপরে।

পরেরদিন ভোরে নিধি সবাইকে নিয়ে কোয়াটারে ফিরে গেল, কালকে রাতের ঘটনার পর থেকে কেউ কোনো কথাই বলছে না, কেমন যেন সবাই গুম মেরে গেছে। ক্রান্তির দেহটা সৎকার করে সেইদিন বিকেলের ট্রেনেই নিধি ভারাক্রান্ত মন নিয়ে তার বাড়ির পথে রওনা হলো, ট্রেনটা হাকিমপুর ছাড়ার আগে নিধি মনে মনে বললো "এখানে আর একমুহূর্তও নয়।"

হাকিমপুর গ্রামের গ্রামবাসিরা সেই বিভীষিকাময় ভয়ঙ্কর জন্তুর হাত থেকে রক্ষা পেয়ে গেল কিন্তু নিধি হারালো তার পুরোনো কলেজের বন্ধুকে,শুধু পড়ে রইলো কিছু স্মৃতি আর নিস্বার্থ ভালোবাসায় ভরা বন্ধুত্ব। সে কোনোদিন ভুলতে পারবে না কণিকা অরণ্যের সেই বিভীষিকাময় রাতের কথা, চোখ বুঁজলেই তার কানে বাজবে অরণ্য কম্পিত প্রবল গর্জন।।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror