STORYMIRROR

Soumo Sil

Children Stories Inspirational

4.4  

Soumo Sil

Children Stories Inspirational

রক্ত

রক্ত

3 mins
336

মেঘাচ্ছন্ন আকাশ ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি পড়ছে, শতচ্ছিন্ন একটা ছাতা মাথায় দিয়ে এগিয়ে চলেছে তিলক। বয়েস তার ২৫ হবে, লেখাপড়া বেশি দূর করা হয়নি তবে তার বুদ্ধি ভালোই আর এই জন্যই পাড়ায় কোনো দরকারে তার সবার আগে ডাক পড়ে। হাঁটতে হাঁটতে সে তার বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায়, এক চালা টিনের বাড়ি এখানে সে একাই থাকে। বাড়িতে ঢুকে চোখ মুখ ধুয়ে সবেমাত্র ভাতের থালাটা নিয়ে বসেছে, এমন সময় দরজায় টোকা পড়লো। ভাতের থালা রেখে বাহিরে বেরিয়ে দেখে পাড়ার মাতব্বরের ছেলে সিনু এসেছে।তাকে দেখে তিলক জিজ্ঞেস করে কিরে সিনু হাপাচ্ছিস কেন কী হয়েছে ভিতরে আয় বস। সিনু বলে "তিলকদা বসার সময় নেই গো জানো তো ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে কেষ্ট জেঠুর ছেলের মাথা ফেটে গেছে তারপর হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার বলেছে অনেক রক্ত বেরিয়ে গেছে রক্ত দিতে হবে তবে বাঁচবে, একটু থেমে সিনু বলে তিলকদা তুমি কিছু করো গো নয়তো ছেলেটাকে আর বোধহয় বাঁচানো যাবে না।" তিলক তখন বলে "আরে সিনু আমি থাকতে অতো চিন্তা করছিস কেন রে আমি তো আছি নাকি, কোই নিয়ে চ তো দেখি আমাকে হাসপাতালে।" এরপর একটুও সময় অপচয় না করে দুজনে বেরিয়ে পড়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে। কিছুক্ষনের মধ্যেই তারা হাসপাতালে পৌঁছে দেখে কেষ্ট জেঠুর ছেলে অবস্থা অনেকটাই খারাপ হয়ে গেছে, দেরি না করে তিলক ডাক্তারবাবুকে বলে আমি রক্ত দেবো আর ডাক্তারও রুগীর অবস্থা বুঝে একটুও দেরি না করে তিলকের শরীর থেকে রক্ত নিয়ে দ্রুত রোগীকে দিতে থাকে, কিছুক্ষনের মধ্যেই রোগীর অবস্থার উন্নতি হয় আর সেখান থেকে তিলক বাড়ি চলে আসে। এই কেষ্ট জেঠুই কিছু মাস আগে তাকে নিচুবর্ণ বলে চক্রান্ত করে ভিটে-মাটি ছাড়া করেছিল আজ তাই জন্য তিলক এই ছোট টিনের ঘরেতে থাকে। বেশ কিছুমাস পরের কথা ইতিমধ্যেই কেষ্ট জেঠুর ছেলে সুস্থ হয়ে উঠেছে। সেদিন রাস্তা দিয়ে বাজার করে ফিরছিলো তিলক, সেই সময় হটাৎই পিছন থেকে একটি ট্রাক এসে ধাক্কা মারে তাকে, তিলক ছিটকে গিয়ে পড়ে রাস্তার ওপারে, পড়ে গিয়ে তার মাথা আর ঘাড় দিয়ে অঝোরে রক্তপাত হতে থাকে। সে রাস্তার ধারেই অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে থাকে। কিছুটা সময় অতিক্রান্ত হবার পড়ে পথচলতি কয়েকটি মানুষ তাকে ধরাধরি করে তুলে নিয়ে গিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করে দেয়। খবর যায় তিলকের পাড়াতে, পাড়ার কিছু ছোকরা তিলক-কে দেখতে হাসপাতালে যায় কিন্তু গিয়ে তারা জানতে পারে তিলকের রক্ত লাগবে, তার মাথায় এবং পায়ে আঘাত লাগার কারণে শরীর থেকে অনেকটা রক্ত বেরিয়ে গেছে। কিন্তু কেষ্ট জেঠু কড়া ভাবে নিষেধ করে দিয়েছিলো কেউ যেনো তিলক-কে কোনোরূপ সাহায্য না করে কারণ সে নিচুবর্ণের, কেউ যদি তাকে সাহায্য করে তাহলে তাকেও একঘরে করে দেওয়া হবে আর তার এ কথায় সায় দিয়েছিলো গ্রামের মাতব্বরও, অতঃপর যারা দেখতে এসেছিলো তারা নিরুপায় হয়ে যে যার বাড়িতে ফিরে যায়। আস্তে আস্তে তিলকের শরীরের অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। সমাজচ্যুত হওয়ার ভয়ে তার পাড়া থেকে কেউই তার দিকে এগিয়ে আসেনা রক্ত দিতে আর ঘন্টা খানেকের মধ্যেই রক্তের অভাবে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ে তিলক। সে জানতেও পারলো না, যে কেষ্ট জেঠুর ছেলেকে সে রক্ত দিয়ে প্রাণ বাঁচিয়েছিল সেই কেষ্ট জেঠুই তার জীবনের সমাপ্তি রচনা করলো। 


আজও সমাজের প্রতিটা কোনায় কোনায় এমন সমাজবিরোধী ধারণাসম্পন্ন নিকৃষ্ট মনের ব্যাক্তিরা লুকিয়ে আছে, তাদের বিনাশ করলে তবেই সমাজ স্বচ্ছ হবে। বিপ্লবী দের মূল্যবান রক্তের বিনিময় গড়া স্বাধীন দেশ ভারতবর্ষ, তাহলে এই দেশে কেন রক্তের অভাবে মারা যাবে মানুষ?

আপনার মূল্যবান রক্ত দিয়ে এগিয়ে আসুন এবং মানুষের প্রাণ বাঁচান। আপনাকে দেখে উৎসাহিত হয়ে আরো একদল মানুষ রক্তদানের দিকে অগ্রসর হবে। আসুন আমরা সবাই রক্তদান করি এবং জীবন বাচাই। রক্তদান মহৎ দান।।


Rate this content
Log in